Friday, July 4, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | চাকরি কই? চাকরি কোথায়? মোদিজি ধোঁকা দিচ্ছেন
Fourth Pillar

Fourth Pillar | চাকরি কই? চাকরি কোথায়? মোদিজি ধোঁকা দিচ্ছেন

গোটা কয়েক গুজরাতি পয়মালের হাতে কেবল দেশের যাবতীয় সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে

Follow Us :

বেকারের চাকরি নেই, সংসদে মিথ্যে বলছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৪-এর নির্বাচনে মোদি অ্যান্ড কোম্পানি টের পেয়েছে যে রামলালা নাইয়া পার করাবেন না, মানুষ খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চায়, বিদ্যুৎ স্বাস্থ্য শিক্ষা চায়, চায় চাকরি। প্রতিটা নির্বাচনী কেন্দ্রে মানুষের কাছে প্রথম আর প্রধান ইস্যু ছিল চাকরি, বিরোধীরা সেই ইস্যুটাকে ধরেছিলেন, কংগ্রেস বলেছিল এক কোটি বেকারকে ট্রেনি হিসেবে ইনটার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। মানুষ বড় ইস্যু বললেও সব জায়গায় কি সেটা দেখেই ভোট দিয়েছেন, তা দেননি। বহু জায়গাতে স্থানীয় মুদ্দা কাজ করেছে, কোথাও কোথাও মঙ্গলসূত্র হারিয়ে ফেলার ভয় চাকরির উপরে চলে গেছে, কারণ ওটাই যদি নির্ণায়ক ইস্যু হত, তাহলে ওই মুদ্দাতেই সরকারের পড়ে যাওয়ার কথা, বিজেপি ২৪০ থেকে ৪০-এ নেমে যেত। তা হয়নি কিন্তু ভোটের পরেই মোদি অ্যান্ড কোম্পানি সেটা বুঝতে পেরেছেন। আর পেরেছেন বলেই যে এমপ্লয়মেন্ট শব্দটা ১০-১২ বার এসেছিল সেটা এবারে ২৩ বার এসেছে। একেই বলে ঠ্যালার নাম বাবাজি, ওঁরা বুঝতে পেরেছেন এ নিয়ে কিছু একটা করা উচিত। কিন্তু সমস্যা হল ওঁদের নিজেদের তৈরি করা আর্থিক কাঠামো। ওঁদের মাথায় ঘুরছে আমেরিকান প্ল্যান, দেশে গোটা ৫-৬-৭ খানা বড় বড় হাউস থাকবে, বিশ্বজোড়া ব্যবসা করে তারাই আনবে টাকা, তারাই বাড়াবে সম্পদ, তারাই দেশকে নিয়ে যাবে ৫-৬-৭-৮ ট্রিলিয়ন ইকোনমির দিকে। কাজেই ওঁরা ক্ষমতায় আসা ইস্তক সেই বিশাল অ্যাসেট বানানোর কাজে নেমেছেন। তৈরি হচ্ছে আম্বানি, আদানি, ইত্যাদি বিগ হাউস যারা অ্যামাজন, মেটা, অ্যাপল, টেসলা, ভিসা, ওয়ালমার্ট, মাইক্রোসফটের মতো হয়ে উঠবে। অথচ খেয়াল করে দেখুন এই গোটা কয়েক গুজরাতি পয়মালের হাতে কেবল দেশের যাবতীয় সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এঁদের বাইরে কোনও ব্যবসা নেই, দেশের মধ্যে অ্যাকুয়্যার করছেন নানান কোম্পানি তারপর তার ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিচ্ছেন, আবার সেই টাকায় নতুন বন্দর নতুন এয়ারপোর্ট কিনছেন।

এঁদের কেউ মাইক্রোসফট বা ভিসা বা অ্যাপেল হয়ে উঠতে পারেননি, জীবনেও পারবেন না। স্বাভাবিকভাবেই এঁরা ক্যাপিটাল ইন্টেনসিভ, প্রচুর পুঁজির মালিক কিন্তু লেবার ইনটেনসিভ নয়, এখানে চাকরি কম। কাজেই চাকরি হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে আর সেটা ঢাকার জন্য নির্বিচারে মিথ্যে বলতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি সরকারপক্ষকে। প্রধানমন্ত্রীকে কষ্ট করে মিথ্যে বলতে হয় না তিনি একজন প্যাথোলজিক্যাল লায়ার, মুখ খুললেই অনায়াসে মিথ্যে বলেন। ওঁদের হিসেবটা দেখুন, বাজেটের আগেই এই হিসেব দিয়েছেন, দম বন্ধ করে শুনুন না হলে হেঁচকি উঠবে। বলা হল আমাদের ৫৬.৫ কোটি ওয়ার্কফোর্স আছে, মানে যাঁরা কাজ করছেন বা করতে পারেন, এবং তাতে নাকি ৩.২ শতাংশ বেকার, মানে ১৮-২০ লক্ষ বেকার আছেন। ভাবা যায়? দেশের ৮৫ কোটি মানুষকে যে সরকার ফ্রিতে র‍্যাশন দিচ্ছে, তাদের মাত্র ১৮-২০ লক্ষ বেকার, বাকিরা সব্বাই কাজ করছেন। হিসেব? ৪৫ শতাংশ কৃষিতে, ১১.৪ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে, ২৮.৯ শতাংশ সার্ভিস সেক্টরে, মানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ট্যুরিজম, হোটেল ইত্যাদিতে, ১৩ শতাংশ নির্মাণ, কনস্ট্রাকশনে। বাকি ওই ৩.২ শতাংশ বেকার, মানে দেশের বেকার সংখ্যা ওই ১৮-২০ লক্ষ, সরকারি হিসেব তাই বলছে। এরা উন্মাদ নয়, এরা শয়তান। অন্য হিসেব বলছে বেকারত্ব গত ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড ছুঁয়েছে। ওঁরা প্রথমেই বলে দিলেন বেকার? কই? কোথায়? কিন্তু তবুও যা বেকার আছে তাদের জন্য স্কিম ঘোষণা করলেন, পাঁচটা স্কিম। আসব এক একটাকে নিয়ে কিন্তু মজার কথা হল দেশে মাত্র ১৮-২০ লক্ষ বেকার কিন্তু আমাদের নির্মলা মাতাজি দেশের ৫০০টা কোম্পানিতে বছরে ১ কোটি ইনটার্নশিপ মানে শিক্ষানবিশদের ট্রেনিং দেওয়া হবে তাদের ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে দিলেন। ভাবলেনই না যে যাঁরা বেকারই নন, তাঁরা কোন দুঃখে চাকরি ছেড়ে ইনটার্নশিপ করতে আসবেন? আসলে একেই বলে বোকার সাত ভুল, একটা ভুলের সঙ্গে আরও ছ’টা ভুল জড়িয়ে থাকে। তো এসবের মধ্যেই আমাদের সরকার বাহাদুরের সাকার মানে যাদের বেকার বলা হবে না তাদের এক ব্যাখ্যা পেলাম, যেটা থেকে বোঝা যাবে এরা বোকা নয়, এরা শয়তান।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | রেলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এই মোদি সরকার

বলা হচ্ছে আগের বছরে যদি কেউ ৩০ দিন অর্থনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তিনি বেকার নন। মানে এক মহিলা যিনি তাঁর স্বামীর দোকানে চপ ভাজেন, মাইনে পান না, কিন্তু যেহেতু তিনি অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে তাই উনি বেকার নন। তাও মাত্র ৩০ দিন এরকম কিছু করলেই আপনি আর বেকার নন, কী আনন্দ কী আনন্দ। এই হিসেব থেকেই দেখা যাচ্ছে ১৮.৩ শতাংশ এরকম মহিলা আছেন, যাঁরা এরকম কাজ করেন, মাইনে পান না। বেকারত্বের হিসেব নিয়ে ফেরেব্বাজি চলছে। এই এঁদের হিসেব থেকেই জানা যাচ্ছে যে রেগুলার স্যালারি পান, মানে প্রতিমাসে বেতন নিয়ে ঘরে ঢোকেন, এমন মানুষের সংখ্যা ২০১৭–১৮ তে ছিল ২২.৮ শতাংশ, এখন সেটা কমে ২০.৯ শতাংশ হয়েছে, মানে দেশের ওয়ার্কফোর্সের ২০.৯ শতাংশ প্রতিমাসে মাইনে পান। সোশ্যাল সিকিউরিটি ইত্যাদি যে এক বিরাট ঢপবাজি তা এই ছোট্ট হিসেব থেকেই বোঝা যাবে। পিএফ-এর অ্যাকাউন্ট আছে ৩০ কোটি মানুষের, কিন্তু এমপ্লয়ার, নিয়োগকর্তা তাঁর ভাগের টাকাটা দেন মাত্র ৭.৩ শতাংশ কর্মীর, মানে বাকি ওই ২২-২৩ কোটি মানুষ নিজেদের টাকা পিএফ-এ রাখছেন মাত্র, এমপ্লয়ার কোনও টাকা দেয় না। এটা হচ্ছে বাস্তব অবস্থা, আর এগুলো মাথায় রাখার পরে চলুন সরকারের যে স্কিমগুলো নির্মলা মাতাজি ঘোষণা করলেন, সেটা একবার দেখে নিই, বুঝে নিই। এবারের বাজেটে মোট পাঁচটা প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। প্রথমটা হল এমপ্লয়ার বা নিয়োগকর্তাকে মজুরির জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে, মানে তিনি একজনকে চাকরি দিলেন সেখানে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভর্তুকি পেতে পারেন, এরকম এক কোটি চাকরির ভর্তুকি দেওয়া হবে। কিন্তু ওই যে শর্ত প্রযোজ্য, তলায় ছোট্ট করে লেখা থাকে, সেখানে লেখা আছে ওই ছেলেটি যাকে চাকরি দেওয়া হল তার জন্য এই ভর্তুকি তিনটে কিস্তিতে দেওয়া হবে আর প্রথম কিস্তির পরে দু’ নম্বর কিস্তি পাওয়ার আগেই নিয়োগকর্তাকে অন লাইন ফিনান্সিয়াল লিটারেসি কোর্স-এর সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।

ধরুন এক লেদ কারখানার মালিক বা ছোট সাবান কারখানার মালিক, সে এই হ্যাপা পোয়াবে কেন? তার সাধারণ হিসেব জিএসটি ব্যাঙ্ক ইত্যাদির কাজের জন্য একজনকে তো সে রাখবেই, তারপরে সে কেন খামোখা অ্যাকাউন্টিং কোর্স করতে যাবে বলুন তো? আর এমনও নয় যে এগুলো ৫০-১০০ জন নিয়োগের ক্ষেত্রে হবে, ছোট কারখানায় দুই কি তিন কি চার জনের জন্য একজন স্কিল্ড মিস্ত্রি যিনি নিজেই মালিক তিনি অ্যাকাউন্টেন্সি শিখবেন? দু’নম্বর প্রকল্প হল ম্যানুফাকচারিং ইউনিটে প্রথমবার যাকে চাকরি দেওয়া হবে তার ২৫ হাজার পর্যন্ত মাইনের ২৪ শতাংশ মজুরি ভর্তুকি দেওয়া হবে চার বছর ধরে। আবার ওই ছোট্ট লেখাটা দেখে নেওয়া যাক, সেখানে বলা আছে এই ছেলেটি যদি ১১ মাসেও ছেড়ে চলে যায়, মানে ১২ মাসের আগে চলে যায়, তাহলে ওই সাবসিডির টাকা কারখানার মালিককে ফেরত দিতে হবে। মানে সে মাইনে নিল, ৮ মাস কাজ করল, সে চলে গেল, এবার তার টাকা ফেরত দেবে মালিক? তিন নম্বর প্রকল্প, নিয়োগকর্তা প্রতিটা নিয়োগের জন্য এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড ফান্ডে ৩০০০ টাকা ভর্তুকি পাবে। তলায় ক্ষুদে অক্ষরে লেখা আছে ৫০ জন শ্রমিক থাকতে হবে আর তার ২৫ শতাংশ নতুন শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে, তাদের জন্য এই ৩০০০ টাকা সাবসিডি পাবে। মানে এটা যারা কাজ করছে তাদের জন্য নয়, সেখানে নতুন ২৫ শতাংশ নিয়োগ করা হলে মানে ১৪-১৫ জন নতুন নিয়োগ হলে তবে এই ভর্তুকি তাদের জন্য সরকার দেবে। আপনার কাছেপিঠে এরকম একটা ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট দেখান তো যেখানে এক লপ্তে ১৪-১৫ জনের নিয়োগ হচ্ছে। আসলে এই স্কিম কেবল কাগজে কলমে রেখে দেওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে। ৫ নম্বর স্কিম হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং দেওয়া হবে। এরকম স্কিম নতুন কিছু নয়, বহু যুগ ধরে চলে আসছে। ৫ নম্বরটা তো আগেই আলোচনা করেছি, ৫০০টা কোম্পানিতে এক কোটি ইনটার্নশিপের গুলগপ্পো। আসলে বেকারদের জন্য কিছু করার মতো পরিকাঠামো বা আর্থিক ব্যবস্থা এই সরকারের নেই, এদিকে বেকারত্ব বাড়ছে এবং ক্রমশ তা ইস্যু হয়ে উঠছে, তাই কিছু প্রকল্প ঘোষণা করে আপাতত সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মোদি সরকার, নির্মলা সীতারামন এবারের বাজেট বক্তৃতাতে সেটাই বললেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে মনোজিতের হু/মকির অডিও ক্লিপ কলকাতা টিভির হাতে, দেখুন EXCLUSIVE রিপোর্ট
49:41
Video thumbnail
India-Pakistan | ভারত-পাক সম্পর্কে U-টার্ন, কেন? জল্পনা তুঙ্গে, দেখুন বড় আপডেট
44:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | শুনানি শুরু ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার, কতটা চাপে সোনিয়া-রাহুল? দেখুন বড় আপডেট
32:41
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
02:33:06
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | মহাকুম্ভের মৃ/ত্যুর সরকারি হিসেব ভুয়ো? বিবিসির অন্তর্তদন্তে ফাঁ/স চাঞ্চল্যকর তথ্য
01:11:01
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ধৃত মনোজিতের বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্যের চিঠি লালবাজারে
01:08:10
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:44:55
Video thumbnail
Politics | সুপ্রিম-বাতিলের পরে বন্ড ছাপা হল চুপ করে?
03:37
Video thumbnail
Politics | বিজেপির অস্বস্তি বিহার, ভোটার লিস্ট কবে হবে আর?
04:04
Video thumbnail
Politics | ফড়নবিশ গোলমালে ফের শেষ নেই এর?
04:03

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39