skip to content
Sunday, January 19, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | এক আজীবন অবিবাহিত মানুষ জনসংখ্যা বাড়ানোর জ্ঞান দিচ্ছেন
Fourth Pillar

Fourth Pillar | এক আজীবন অবিবাহিত মানুষ জনসংখ্যা বাড়ানোর জ্ঞান দিচ্ছেন

এসব নিছক কথার কথা, আসল বক্তব্য সেই একই আছে, মুসলমানদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে

Follow Us :

ঘোষণা করেই বলা হয় এক সামাজিক সংগঠন, সমাজের জন্য চিন্তা করে, পথ দেখায় ইত্যাদি। হ্যাঁ, আরএসএস, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কথা বলছি। কিন্তু তাদের মাথায় যাঁরা বসেন তাঁরা অবিবাহিত, তাঁদের পরিবার, সন্তান প্রতিপালন, গার্হস্থ্য জীবনের সাধারণ অভিজ্ঞতাটুকুও নেই, এমনও নয় যে তাঁরা কেবল ইশ্বর, আত্মা বা পরমাত্মার কথা বলছেন, সেই সংগঠনের আপাতত কর্তা সরসংঘচালক মোহন ভাগবত জ্ঞান বিতরণ করেছেন, তিনি বলেছেন হিন্দু মহিলাদের অন্তত তিনটি করে সন্তানের জন্ম দিতে হবে। অবশ্য একথা বলার পরেই প্রশ্নটা আসা উচিত ছিল যে আপনার একটি সন্তানেরও জন্ম না দেওয়াকে কীভাবে দেখব? সে যাক, কারণ সেসব প্রশ্ন করার সাহস ইদানিং চতুর্থ স্তম্ভের নেই। কিন্তু কেন তিনি এই কথা বললেন? হঠাৎ ইচ্ছে হল আর বলে দিলেন? না, তিনি এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। আর অন্য সব বিচিত্র ব্যাখ্যা যার কোনও ভিত্তি থাকেনা, এই ব্যাখ্যাও তার থেকে কিছু আলাদা নয়। তিনি জানিয়েছেন যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ২.১ শতাংশের তলায় চলে গেলে সেই দেশ, সেই জাতি অবলুপ্তির পথে চলে যায়। তিনি মনে করছেন যে হিন্দু জাতির জনসংখ্যা বৃদ্ধি এমন এক অবস্থায় গেছে যা হিন্দু জাতির অবলুপ্তির কারণ হবে, তাই তাঁর অ্যাডভাইস, তিনটে করে বাচ্চার জন্ম দিতে হবে। আচ্ছা তিনি এই যে ২.১ শতাংশ পপুলেশন গ্রোথ-এর কথা বললেন, আসুন তার সারবত্তা নিয়ে ক’টা কথা বলা যাক।

পৃথিবীর সবথেকে সমৃদ্ধশালী দেশের অন্যতম হল লুক্সেমবার্গ, মানুষ প্রতি আয়, পার ক্যাপিটা ইনকাম-এর তালিকাতে তারা সব থেকে উপরে, বছরে রোজগার ১৫ হাজার ১৫১ ডলার, সেই লুক্সেমবার্গ-এর পপুলেশন গ্রোথ হল ১.৭ শতাংশ, এবং আজ নয়, দীর্ঘ সাত আট বছর তারা ১.৯ থেকে ১.৭-এর মধ্যেই আছে, বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। মিশরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৫৯ শতাংশ, ইজরায়েল ১.৪৩ শতাংশ, জাপান মাইনাস ০.৪১ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১.০১ শতাংশ, নেদারল্যান্ডস ০.৩৬ শতাংশ, নরওয়ে ০.৭৯ শতাংশ, পাকিস্তান ১.৯১ শতাংশ, স্পেন ০.১২ শতাংশ, সুইজারল্যান্ড ০.৬৪ শতাংশ, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ০.৫৮ শতাংশ, ইউকে ০.৪৯ শতাংশ, আমেরিকা ০.৬৮ শতাংশ আর হিন্দু-মুসলমান সব মিলিয়ে আমাদের গ্রোথ রেট গতবারের তুলনায় ০.৮০ শতাংশ। আর দুইয়ের উপরে কাদের? আফগানিস্তান ২.২২ শতাংশ, অ্যাঙ্গোলা ৩.৩৩ শতাংশ, বেনিন ৩.২৯ শতাংশ, বুরুন্ডি ২.৮১ শতাংশ, চাদ ৩.০১ শতাংশ, কঙ্গো ২.৩৩ শতাংশ, ইথিওপিয়া ২.৪২ শতাংশ। মানে আফ্রিকার প্রায় দুর্ভিক্ষের মধ্যে থাকা দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় এই জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে আমাদের এই সরসংঘচালক চাইছেনটা কী?

এসব নিছক কথার কথা, আসল বক্তব্য সেই একই আছে, মুসলমানদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এবং মজাটা হল সত্যিই বেড়ে যাচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য জনগণনা করতে হবে, ২০২১ সালেই তা হওয়া উচিত ছিল, মোদিজির সরকার এখনও তা করাননি। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ হয়েছিল, যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। যুদ্ধ শেষের পরেই অন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়নি, কিন্তু আজ এক নির্বাচন শেষ, অন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি চালু। মানুষ ভোট দেবে, তার ভোট দেওয়াই কাজ, এসব আমরা জানি। এটাও জানি যে দুটো নির্বাচনের মধ্যে প্রধানত দুটো কাজ সমান্তরালভাবে চলতে থাকে, যাকে নির্বাচনী প্রস্তুতি বলা হয়। প্রথমটা হল জোটে কে কে থাকবে? কে কে থাকলে সমাজের কোন কোন স্তরের ভোট পাওয়া যাবে? না ভাগাভাগিটা গরিব, মধ্যবিত্ত, বড়লোকের মতো পুরনো ব্যাকরণ নয়, ভাগটা হল, মতুয়া, রাজবংশী, কুর্মি, রাজভর, নিষাদ, প্যাটেল, পাতিদার, লিঙ্গায়েত, ভোক্কালিঙ্গা, পাসি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব জাতের কয়েকজনকে মন্ত্রিত্ব দাও, তারা তাদের জাতের ভোট এনে জড়ো করবে, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করে এই কাজটায় এগিয়ে আছেন। এবার দ্বিতীয় কাজ, নির্বাচনের ইস্যু তৈরি করো, না, রোটি কপড়া মকানের ইস্যু নয়, নতুন ইস্যু চাই। নতুন এমন ইস্যু যা মানুষকে আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পিত শত্রু চাই, যাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মানুষকে মাঠে নামানো হবে, সে লড়াইয়ে তাদের পেট ভরবে না, তাদের পরণে বস্ত্র জুটবে না, সে সব ইস্যুর সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের সম্পর্ক নেই, বায়বীয় এমন সব ইস্যু যা মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, তাকেই রাজনীতি বলে। আরএসএস–বিজেপির রাজনীতি, যে রাজনীতিতে বিরোধীরা খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে, যে রাজনীতিকে সামাল দিতে বেসামাল হবে বিরোধীরা, হ্যাঁ সেই সব অস্ত্র বের হচ্ছে বিজেপির দফতর থেকে। ২০১৪ তে মোদিজির নির্বাচনের ইস্যু কী ছিল? কালো টাকা, সুইস ব্যাঙ্কে রাখা টাকা, পেট্রল ডিজেলের হু হু করে বাড়তে থাকা দাম, ধর্ষণ, নারীদের উপর অত্যাচার। প্রতিটা জনসভায় মোদিজি প্রশ্ন করেছেন, পেট্রল কা দাম ঘটনা চাহিয়ে ইয়া নহি? কালা ধন ওয়াপস আনা চাহিয়ে ইয়া নহি? জেতার পরে এসব নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন? বিজেপি ছেড়েই দিন, মোদি-শাহকে? একবারের জন্য? না। কারণ ওগুলো ছিল নির্বাচনে জেতার অস্ত্র, অস্ত্র প্রয়োগ হয়েছে, মানুষ ভোট দিয়েছে, চুকে গেছে। এল ২০১৯। কংগ্রেস দেশ কো খোকলা বনা কে ছোড়া, কংগ্রেসের পারিবারিক শাসন, পাপ্পু আর ইতালিকে হাথ মে দেশ কা শাসন জায়গা, কেয়া? ঘরমে ঘুস কর মারেঙ্গে, সার্জিকাল স্ট্রাইক, দেশপ্রেমেরর বাণী প্রতিটা জনসভায়, যেন বিরোধীরা সব্বাই দেশদ্রোহী, আবার জিতে এলেন। আরও বেশি সমর্থন নিয়ে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | থুতু দিয়ে ছাতু মাখছেন নরেন্দ্র মোদি

এবার আবার নির্বাচন, জাতের ভোট, আদিবাসী ভোটের ঘুঁটি সাজানো হয়ে গেছে, এবার নতুন অস্ত্র চাই। নতুন অস্ত্রে শান দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। অসমে জনসংখ্যা বিল আনা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে, ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ ল কমিশন এই বিলের এক খসড়াও বানিয়ে ফেলেছে। গোদি মিডিয়া এক ধাপ এগিয়ে, সেটাকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিল বলে চালানো শুরু করেছে, ইউনিয়ন সরকারও নাকি এরকম একটা বিল আনবে, এরকম কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের দলের নেতাই যাকে জোকার মনে করে, সেই দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাতেও জনসংখ্যা বিল আনা হোক, উনি রাজ্য ল কমিশন আর সরকারের ফারাক বুঝবেন না এটা স্বাভাবিক, কিন্তু দাবি করেছেন, বাংলায় জনসংখ্যা বিল চাই। এটা বিজেপির সামনের নির্বাচনে এক নতুন অস্ত্র হতে চলেছে, সেই নয়া হাতিয়ার নিয়েই কথা ভাসিয়ে দিলেন মোহন ভাগবত। জানালেন হিন্দু খতরে মে হ্যায়। মুসলমানদের জনসংখ্যা বাড়ছে, হিন্দুরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে, অতএব তৈরি হও। জনসংখ্যার বৃদ্ধি কী দিয়ে মাপা যায়? ফার্টিলিটি রেট দিয়ে, একজন নারীর সারা জীবনে ক’টা সন্তান হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান দিয়ে। তো উত্তরপ্রদেশের ফার্টিলিটি রেট কত? ৩.১, মানে উত্তরপ্রদেশের তিনজন মহিলা প্রায় ৯টি সন্তানের জন্ম দেয়, আর বাংলায়? আমাদের রাজ্যে ফার্টিলিটি রেট ১.৬, মানে উত্তরপ্রদেশের অর্ধেকরও কম। এটা সরসংঘচালকের জানা নেই, যেমন জানা নেই সারা দেশের গড় ফার্টিলিটি রেট ২.২, অর্থাৎ আমাদের বাংলা সারা দেশের চেয়ে অনেক, অনেক ভালো জায়গায় আছে, এবং তথ্য বলছে এ রাজ্যে ফার্টিলিটি রেট যেভাবে কমছে তাতে আগামী ১০-১৫ বছরে এই ফার্টিলিটি রেট ১.১-এ পৌঁছে যাবে। ওদিকে উত্তরপ্রদেশের ওই ল কমিশনের খসড়াতে কী আছে।

অসমের বিল, উত্তরপ্রদেশের ল কমিশনের খসড়াতে বলা হয়েছে মোদ্দা দুটো কথা। এক, দুটোর বেশি সন্তান হলে সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না। এমন নয় যে যাদের দুটোর বেশি বাচ্চা আছে, তাদের উপর এই আইন লাগু হবে, আইন হবার এক লেজিটিমেট, যুক্তিযুক্ত সময়ের পরেই তা লাগু হবে, এবং তাদেরকে স্থানীয় নির্বাচনে, মানে পঞ্চায়েত, মিউনিসিপালিটি, কর্পোরেশন ইত্যাদি নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। তো প্রথমেই একটা কথা ভাবুন, সুধী দর্শক, কতজন সরকারি চাকরি পায়? কতজন নির্বাচনে দাঁড়ায়? এই আইনের খেলাপকারীদের, কিছু কিছু ভর্তুকিও না দেওয়ার কথা আছে, তো তার সংখ্যাই বা কত? আসলে এই আইনের কথা, আইন আনার কথা এক নির্বাচনী অস্ত্র, যার প্রথমভাগ আগেই ছোড়া হয়ে গেছে। কিন্তু সরসংঘচালক বলছেন তিনটে করে সন্তানের জন্ম দিতে হবে। ওদিকে যোগী, হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের বক্তব্য মুসলমানদের জন্য আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, ওদের জন্যই আসলে দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অতএব সেটা আটকাতে জনসংখ্যা বিল আনতে হবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আনা হচ্ছে, অবিজেপি শাসিত রাজ্যে আনা হচ্ছে না, ওরা মুসলমানদের জনসংখ্যার এই বৃদ্ধির কারণ, অতএব সুখীসমৃদ্ধ ভারতবর্ষের জন্য বিজেপিকে ভোট দিন, নির্বাচন এলে এটাই প্রচার। সত্যিটা কী?

উত্তরপ্রদেশে মুসলমান জনসংখ্যা ১৩-১৪ শতাংশ, বাকি হিন্দু। ওখানে ফার্টিলিটি রেট ২.৭। আর বাংলায় মুসলমান জনসংখ্যা ৩৩ শতাংশের বেশি, ফার্টিলিটি রেট ১.৬। ভারতবর্ষে বিহার, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি বহু রাজ্যের থেকে কম, এমনকী কেরালার থেকেও কম। দেশের সবচেয়ে বেশি ফার্টিলিটি রেট কোথায়? পুরো হিসেবটা পাচ্ছি ২০১৬ সালের, উত্তরপ্রদেশ ৩.১, বিহার ৩.৩, মধ্যপ্রদেশ ২.৮, ঝাড়খণ্ড ২.৬, গুজরাট ২.২, অসম ২.৩ আর বাংলা ১.৬। অর্থাৎ হিন্দি গোবলয় আমাদের দেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। এবং সেই সব রাজ্য, যেখানে মুসলমান জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি, সেই রাজ্যগুলোতে ফার্টিলিটি রেট কম, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, এমনকী অধুনা বিজেপি-শাসিত অসমেও অপেক্ষাকৃত কম। আমাদের দেশে, জনসংখ্যা নিয়ে এই চিল-চিৎকার আগেও হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় নসবন্দি অভিযান চলেছিল, ফলাফল কী? ল্যান্সেটের তথ্য বলছে, ১৯৭৫-৮০-তে ফার্টিলিটি রেট ছিল ৪.৯৭, আর ১৯৮০-৮৫-তে সেই হার কমে দাঁড়ায় ৪.৬৮, অর্থৎ সেরকম কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। অথচ ১৯৯৫-২০০০ ফার্টিলিটি রেট ছিল ৩.৪৮, ২০১০-২০১৫তে তা কমে দাঁড়াল ২.৪, কেন? এই সময়ের মধ্যে তো কোনও জনসংখ্যার আইন আনা হয়নি, তাহলে? আসলে খেয়াল করুন, এই সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতি অনেকটা ভালো হয়েছিল, জিডিপি বেড়েছিল, গড় আয় বেড়েছিল, মানুষের হাতে কিছু টাকা এসেছিল, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য মিড ডে মিল দেওয়ার ফলে বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছিল, ১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছিল গরিব মানুষেরা। অর্থনীতির উন্নয়ন জনসংখ্যা হ্রাসের প্রথম শর্ত, মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হলেই তারা সন্তানকে আরও বেশি সুযোগ দিতে চায়, স্কুলে পাঠাতে চায়, ভালো করে মানুষ করতে চায়। তারা নিজেরাই চায় কম সন্তান হোক, উন্নত দেশের জনসংখ্যা কম, বা কমেছে এই কারণেই। এতটাই কমেছে যে তাদের সরকার এখন বলছে, ৩টে সন্তান হলে কিছু বেশি সুযোগ সুবিধে দেওয়া হবে, চীনেও একই অবস্থা। তাদের জনবিস্ফোরণ থামাতে তাদের সরকার বলেছিল একটার বেশি সন্তান নয়, এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও চীনের মানুষজন সন্তানের সংখ্যা কমিয়েছিল। কিছুদিন আগে চীনের সরকার বলেছিল ২টো সন্তান হতেই পারে, এখন বলছে ৩টে সন্তান হোক, কিন্তু মানুষ রাজি নয়। আসলে ফার্টিলিটি রেট কমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে সারা দেশে আয় কমবে, বেকারত্ব বাড়বে, জীবনযাপনের মান কমবে আর জনসংখ্যা আইন করে সামলানো যাবে এমন তত্ত্ব হাস্যকর এবং মিথ্যে। কিন্তু আরএসএস বিজেপি, মোহন ভাগবত, নরেন্দ্র মোদি ঠিক এটাকেই অস্ত্র করতে চান, ইশারা অন্য দিকে, মুসলমানদের জনসংখ্যা বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশের ফার্টিলিটি রেট, আর পাকিস্তানের ফার্টিলিটি রেট প্রায় এক, কেন? আগেই বলেছি। সারা পৃথিবীতে গরিব, পিছিয়ে পড়া দেশের ফার্টিলিটি রেট বেশি, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সেখানে বেশি, কেন? আগেই বলেছি। আমাদের দেশে হিন্দু এবং মুসলমানদের ফার্টিলিটি রেট বেশি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনদের অনেক কম। হিন্দুদের ফার্টিলিটির হার কমছে, কিন্তু তারচেয়ে অনেক দ্রুত কমছে মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার, এটা ওনারা জানেন, কিন্তু চেপে যাচ্ছেন। তাঁদের, মানে সরকারের তথ্য বলছে, সাধারণভাবে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে, মুসলমান জনসংখ্যার ফার্টিলিটি রেট, উত্তর ভারতের হিন্দু জনসংখ্যার ফার্টিলিটি রেটের চেয়ে অনেক কম। ২০০০ সাল থেকে, মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমছে ৫ শতাংশ, তুলনায় হিন্দু জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমছে ১.৫ শতাংশ। এই বাংলায় ফার্টিলিটি রেট দুই জনসমুদায়েরই প্রায় সমান, আমাদের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী অফিসার, এস ওয়াই কুরেশি, এই নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন, সেই তথ্য অনুযায়ী, যদি একই অবস্থা চলতে থাকে তাহলেও, ২১০১ সালে দেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৭০ কোটি, যার মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা হবে ১২৭ কোটি, মুসলমান জনসংখ্যা হবে ৩২ কোটি, সেই বছরে তাঁর হিসেব অনুযায়ী ফার্টিলিটি রেট দাঁড়াবে ২.১। হ্যাঁ, দুই ধর্মের মানুষজনের। তারপরে তা আরও কমতে থাকবে, কিন্তু এটা প্রজেকশন, আসলে তার বহু আগেই কমবে ফার্টিলিটি রেট, তার চাবিকাঠি ওই অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে লুকিয়ে আছে। যদি ফার্টিলিটি রেটের হিসেবেও দেখা যায়, তাহলে আমেরিকার ফার্টিলিটি রেট ১.৭, সুইডেন, ১.৭, বেলজিয়াম ১.৬, নেদারল্যান্ডস ১.৬, ইউকে ১.৬, কানাডা ১.৫, জার্মানি ১.৫, গ্রিস ১.৪, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ১.৪, ইতালি ১.৩। এবং তারা কেউ অবলুপ্তির মুখে নয়। আসলে মূল সমস্যা না সামলাতে পেরে, সেই মূল সমস্যা থেকে মানুষের চোখ ঘোরানোর জন্য, তারা জনসংখ্যা বিলের কথা বলছেন, কখনও কমানোর কথা বলছেন, কখনও বেশি সন্তানের জন্ম দিতে হবে বলছেন। তবে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় আছে, তা হল দেশের জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে সাংসদ, বিধায়ক ইত্যাদির সংখ্যা, এইভাবে গোবলয়ের জনসংখ্যা বাড়লে, অবিবেচক রাজ্য এবং রাজ্য সরকারের কাছে থাকবে বেশি সংখ্যক এমএলএ, এমপি, সেটা একটা সমস্যা বটে।

তাহলে কী দাঁড়াল? আরএসএস–বিজেপি, মোহন ভাগবত, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ আসলে মানুষকে ভুল বোঝাতে চায়, এক চরম অন্যায়, মিথ্যে অস্ত্র নিয়ে মানুষের ভোট পেতে চায়, একথা আজ প্রত্যেককে বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
00:00
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সাজা ঘোষণা, সারাদিন প্রেসিডেন্সির ৬ নম্বর সেলে কী করে কাটালেন সঞ্জয়? দেখে নিন প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | কী কারণে মহাকুম্ভে অ*গ্নিকাণ্ড? ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
00:00
Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
11:46:50
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
02:30
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
03:14
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
11:38