skip to content
Wednesday, March 26, 2025
HomeScrollFourth Pillar | মোদি-শাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
Fourth Pillar

Fourth Pillar | মোদি-শাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

আমাদের প্রধানমন্ত্রীও, একইভাবে সৈন্যের পোশাকে বেঢপ বেমানান হলেও স্বচ্ছন্দ!

Follow Us :

গতকাল শুরু করেছিলাম, আজ শেষ করি। গতকালই বলেছিলাম যে আমেরিকার হলোকাস্ট মিউজিয়ামে, একটা ফলক রাখা আছে, লরেন্স ডব্লু ব্রিট নামে এক মানুষের লেখা, তাতে ১৪টা এমন প্রবণতার কথা আছে, যে প্রবণতাগুলো থাকলে, কোনও দেশে যদি সেই প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে বোঝা উচিত যে ফাসিবাদ ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, বা ফাসিবাদ দখল করেছে সেই দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা, যেমনটা আমরা দেখেছিলাম জার্মানি, ইতালিতে।

গতকাল বলেছিলাম, একটা দেশে যদি জঙ্গি জাতীয়তাবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যদি সেই দেশে সরকার এক বিরাট জনসংখ্যার মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে এক বিরাট শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, যদি সেই দেশে কর্পোরেট ব্যবসায়ীয়া সরকারের প্রশ্রয়ে দুর্নীতি করতে থাকে, যদি সেই দেশের সরকার গরিষ্ঠ জনসংখ্যার ধর্মের ভিত্তিতে চলতে থাকে, যদি মহিলাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে, তাদের রান্নাঘর বা সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে, যদি শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, যদি মানবাধিকার চলে যায়, যদি সংবাদমাধ্যমকে সরকারের নির্দেশেই চলতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে ফাসিবাদ ক্রমশ সেই রাষ্ট্রকে দখল করছে, ফাসিবাদের পদধ্বনি এসে দাঁড়িয়েছে দুয়ারে, দুয়ারে সরকার নয়, দুয়ারে ফাসিবাদ।

আজ আরও চারটে প্রবণতার কথা বলা যাক, এগারো নম্বর প্রবণতা হল, শিল্পসংস্কৃতি বা বুদ্ধিজীবীদের চূড়ান্ত অধঃপতন। তাদের স্রেফ কাঞ্চনমূল্যে কিনে ফেলছে সরকার, কিছু নাছোড় একগুঁয়ে মানুষ ছাড়া, প্রত্যেককে কেনা হচ্ছে, কাউকে পুরস্কার দিয়ে, কাউকে সরাসরি টাকা দিয়ে, কাউকে ভয় দেখিয়ে। সরকারি বদান্যতা পাওয়ার আশায় বাকিরা নাম লেখাচ্ছেন। তাকিয়ে দেখুন, অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, সলমন খানেরা চুপ, পেট্রল ১০০ ছুঁয়ে গেল। তাঁরা চুপ, ছাত্রদের জেলে পোরা হচ্ছে, তাঁরা চুপ। কৃষকরা রাস্তায়, তাঁরা চুপ। টাকা পড়ছে তাঁরা চুপ, শেয়ার বাজার নামছে, তাঁরা চুপ। অথচ সরকারের হয়ে একই ভাষায় টুইট করতে আপত্তি নেই, কারও। তালিকায়, বাংলার মহারাজা থেকে শচীন তেন্ডুলকর থেকে লতা মঙ্গেশকর। যাঁরা বলতেই পারতেন, এটা অন্যায় হচ্ছে, যাঁরা বলতেই পারতেন যে কৃষকদের কথা শুনুন, যারা বললে কাজ হত, তাঁরা চুপ। কেন? ভয়ে না হলে আরও বদান্যতার আশায় বসে আছেন। শিল্পে সংস্কৃতিতে, সিনেমায়, কবিতায় নির্লজ্জভাবে দেশের সমস্যা এড়িয়ে, বিজেপির এজেন্ডা তুলে ধরা।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদিজি ফ্যাসিস্ট, মোদিজি স্বৈরতান্ত্রিক

দুর্নীতি এবং সরকারি প্রশ্রয়ে দুর্নীতি, আর দুর্নীতিতে ডুবে থাকা শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি হল ১২ নম্বর প্রবণতা। প্রধানমন্ত্রী যে গুজরাট থেকে এসেছেন, ঋণখেলাপি, দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া চোর, শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের সিংহভাগ ওই গুজরাট থেকেই এসেছেন, তাঁদের অনেকে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত, তাঁদেরকে প্রধানমন্ত্রী মেহুল ভাই বলে ডাকেন, পাশে বসিয়ে ছবি তোলান, তাদের নিয়ে বিদেশে যান।

১৩ নম্বর প্রবণতা হল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা, বিজেপি মাত্র সাত বছরে, মানুষের ভোটে নির্বাচিত ৯টা রাজ্য সরকার ভেঙেছে, নির্বাচন কমিশন ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলে দিচ্ছেন কবে ভোট হবে, বোঝাই যায়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন কমিশন দেখছে, সাংসদ কেবল নয়, মন্ত্রী বিরোধী দলনেতাদের বলছেন, দেশকে গদ্দারো কো, গোলি মারো শালো কো। অথচ ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসে আছে, আদিত্যনাথ যোগী নির্বাচনী বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছেন, নির্বাচন কমিশন শুনতে পাচ্ছে না। ক্রমশ নির্বাচন হয়ে উঠছে এক বিরাট প্রহসন, মানুষের রায়ে নির্বাচিত বিধায়ক, সাংসদ এখন বিক্রি হচ্ছে টাকার বদলে, গরুর হাটের মতো। এখন তো নির্বাচন কমিশন নিজেই স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ, গন্ডগোল আছে, ঠেলায় পড়ে তারা এটা মেনেছে, এবার আবার নতুন খেলা শুরু করবে।

১৪ নম্বর প্রবণতা হল, মিলিটারি সুপ্রিমেসি। দেশের সৈন্যবাহিনীকে এক পুণ্য গাভী করে তোলা, তাদের সম্বন্ধে কোনও কথা বলা যাবে না, বলা যাবে না যে তাদের এক অংশ মণিপুরে মহিলাদের ধর্ষণ করেছে, বলা যাবে না যে তাদের এক অংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, বলা যাবে না যে তাদের এক অংশ সরকারের নির্দেশে অসত্য কথা বলছে, এসব বলা যাবে না। অন্যদিকে দেখেছেন কখনও, জওহরলাল নেহরুকে, লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে, ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী বা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, চন্দ্রশেখরকে মিলিটারি পোশাক পরে? নরেন্দ্র মোদিকে দেখা যায়, কেন? আমাদের আইনসভাকে তো প্রশাসন পুলিশ, মিলিটারি থেকে আলাদা করা হয়েছে, তারা তো এক নয়, সিভিলিয়ানদের আর্মি পোশাক পরার তো নিয়মই নেই, তিনি পরেন, কেবল পরেন, তাও না, পরে ছবি তোলাতে ভালোবাসেন। হিটলার একজন অত্যন্ত অসফল সৈন্য ছিলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যবাহিনীতে নাম লিখিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আহত হন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসা ইস্তক ওই সৈন্যের কড়া পোশাক তাঁর খুব প্রিয় ছিল, মানসিক গঠনে সাধারণ নাগরিক নয়, নিজেকে সৈন্য ভাবা মানুষজন ইউনিফর্ম পরতে ভালোবাসেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও, একইভাবে সৈন্যের পোশাকে বেঢপ বেমানান হলেও স্বচ্ছন্দ!

অর্থাৎ, আমেরিকার হলোকাস্ট মিউজিয়ামে রাখা ফলকে ফাসিবাদের যতগুলো প্রবণতার কথা বলা হয়েছে, যতগুলো বিষয়কে ফাসিবাদের পদধ্বনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সবক’টাই আজকের ভারতবর্ষের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে মিলে যায়, জরুরি অবস্থাকে বড়জোর এক আধা ফাসিবাদী পদক্ষেপ বলা যায়, কিন্তু আজ আমাদের দেশে যে ব্যবস্থা ক্রমশ কার্যকরী হয়ে উঠছে, তাকে ফাসিবাদ বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়, এই সরকার, আরএসএস বিজেপি দল, সম্ভবত আর কয়েকটা বিষয়ের জন্য আপাতত থমকে দাঁড়িয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে এখনও সম্পূর্ণ পদানত করা যায়নি, কিছু সংবাদমাধ্যম, ইন্টারনেট নির্ভর নিউজ পোর্টাল এখনও স্বাধীন, এখনও দেশের বেশিরভাগ মানুষকে তারা, তাদের মতো করে বুঝিয়ে উঠতে পারেনি। এখনও কৃষকরা লড়ছেন, আরও লম্বা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ছাত্র যুবকদের চুপ করানো যায়নি। বড় নামী দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এখনও ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করছেন, গ্রেফতার করতে হচ্ছে ছাত্রনেতা, গবেষক উমর খালিদকে, ছাত্রী ২১ বছর বয়সি পরিবেশ কর্মী দিশা রবিকে, কেননা, তাঁরা হলেন দেশদ্রোহী। আসলে দেশের ছাত্র যুবক, তাদের বাবা-মাদের ভয় দেখানো হচ্ছে, তাদের বাবা-মাদের, বলে দেওয়া হচ্ছে প্রকারান্তরে যে, ছেলেমেয়েদের বলুন মন দিয়ে পড়াশুনো করতে, অন্য ব্যাপারে নাক না গলাতে, যদি নাক গলাতে আসে, তাহলে দেশদ্রোহী বলে জেলে পুরে দেব, তার জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে। মানে কিছু লোককে কেনা যাচ্ছে, ওই নীল, শীল, লাল গেরুয়াদের কেনা যাচ্ছে, পয়সা দিয়ে, কাজ করার লোভ দেখিয়ে, পুরস্কার দিয়ে। বাকিদের ভয় দেখাও। কিন্তু মজা হল সব্বাই তো ভয় পায় না, সব্বাই মাথা নিচু করে না। হিটলারের সেই প্রবল প্রতাপের দিনে, সারা দেশ যখন তাকে সেলাম ঠুকত, হেইল হিটলার বলে চিৎকার করত, সেই জমানায় অগাস্ট লান্ডমেজার নামে এক ভদ্রলোক, প্রকাশ্য জনসভায় হিটলারকে সেলাম করেননি, অস্বীকার করেছিলেন বশ্যতাকে, অস্বীকার করেছিলেন ক্ষমতার দম্ভকে, তিনি তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই, সব্বাই মারা গেছে, না হলে নিখোঁজ। কিন্তু তিনি মাথা নিচু করেননি, রয়ে গেছে সেই ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে অগাস্ট ল্যান্ডমেজারকে, তিনি হাত তোলেননি। দুনিয়ার সব দেশেই এমন মানুষ আছে যারা বশ্যতা স্বীকার করবে না, আমাদের দেশের বহু মানুষ আজও বশ্যতা স্বীকার করেননি, দিশা রবি তাঁদেরই একজন, যিনি সদ্য জামিন পেলেন, বিচারপতি সাফ জানিয়ে দিলেন, বিরোধিতার মানেই দেশদ্রোহিতা নয়, দিশা রবির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা টেকে না, টিকবেও না, তিনি বের হলেন জামিনে, ২১ বছরের এক পরিবেশ কর্মী, জেল থেকে বেরিয়েই জানালেন, তাঁর কণ্ঠ অত সহজে রোধ করা যাবে না। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, বিচার ব্যবস্থার সবটাই কিনে ফেলা যায়নি, বিচারক এই মামলায় রায় দেওয়ার সময় কী কী বললেন দেখা যাক,

১) সরকারের যে আঘাত লেগেছে, তাতে মলম লাগানোর জন্য কারও ওপর দেশদ্রোহিতার তকমা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
২) সরকারের সঙ্গে অসহমত হওয়ার জন্য সরকারের উপর সচেতন নজরদারি করা কোনও নাগরিককে জেলে ঢোকানো অনুচিত।
৩) সরকারি কার্যকলাপকে অসাম্যহীন বানানোর জন্য অসহমত হওয়া বা বিরোধিতা করাটা ন্যায়সঙ্গত।
৪) আমাদের পাঁচ হাজার বছর পুরানো সভ্যতা বহুত্ববাদী চিন্তাধারার বিরোধী নয়।
৫) সংবিধানের ১৯ নং ধারাতেও বিরোধিতা করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
৬) ঋগ্বেদেও ভিন্ন মতকে সম্মান করার আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের উল্লেখ আছে।
৭) ঋগ্বেদের একটা শ্লোক আছে-“আ নো ভদ্রাঃ ক্রতবো যন্তু বিশ্বতোদব্ধাসো অপরিতাসউদ্ধিদঃ”। অর্থাৎ আমাদের চারদিক থেকেই আরও অনেক এমন কল্যাণকারী চিন্তাভাবনা আসতে থাকে, যাকে কেউ যেন দমিয়ে না দেয়, কোথাও থেকে তাকে যেন আটকে না দেওয়া হয় এবং যা অজ্ঞাত বিষয়গুলিকে সামনে আনে।

হ্যাঁ, এখনও দেশে অনেক অগাস্ট ল্যান্ডমেজার বেঁচে আছে, সব্বাই হাত তুলে দিয়েছে এমনটা নয়। আসুন আমরা প্রত্যেকেই অগাস্ট ল্যান্ডমেজার হয়ে উঠি, প্রতিবাদ করি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, রুখে দাঁড়াই ফাসিবাদের বিরুদ্ধে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sheikh Hasina | ফের সরাসরি বক্তব্য রাখছেন হাসিনা, কী বলছেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Aishwarya Rai Bachchan | ঐশ্বর্যর গাড়িতে বাসের ধাক্কা, কী অবস্থা? কেমন আছেন ঐশ্বর্য?
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক ক্রিকেটার মহঃ সামির বোন!
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | বাংলাদেশে জরুরী ব‍্যবস্থা প্রসঙ্গে বিরাট মন্তব্য সেনাপ্রধানের, ইউনুস কি গ্রেফতার হবেন?
00:00
Video thumbnail
Dilip Ghosh | ফের বিতর্কিত মন্তব্য দিলীপের, এবার পুতনা দাওয়াই
00:00
Video thumbnail
ED | ইডির মামলায় যিনি অভিযুক্ত তিনিই সাক্ষী, বেনজির ঘটনা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে
00:00
Video thumbnail
Israel | পুরো ইজরায়েলে ফের হুথির হা*ম*লা, ধ্বং*সস্তূপে পরিণত হবে ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
Israel | তছনছ ইজরায়েল ১৮০ রকেট হা*ম*লা, বিশ্বে কী অবস্থা দেখুন
00:00
Video thumbnail
Muhammad Yunus | ইউনুসের মুখে মুক্তিযুদ্ধ আর হাসিনার কথা, কী বললেন শুনুন
11:39:08