Thursday, June 5, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: প্রতিপক্ষ

চতুর্থ স্তম্ভ: প্রতিপক্ষ

Follow Us :

রাম রাবণের লড়াইয়ের মধ্যে সেরকম রাজনীতি নেই। যেটুকু আছে তা ওই বালী বধ আর বিভীষণের শিবির বদল, আর দুটোই বড্ড মোটা দাগের। বালী বধ তো রীতিমত অন্যায় যুদ্ধ, ন্যায়পরায়ণ রামের যাবতীয় সুকীর্তি ঢেকে দেবার জন্য যথেষ্ট। আর বিভীষণ তো, বাংলা শব্দমালায় বিশ্বাসঘাতকের সমার্থক।

মহাভারত এক্কেবারে আধুনিক। রাজনীতির প্যাঁচ পয়জার নিয়ে জমজমাট। যুদ্ধের প্রস্তুতির বহু আগে, কিশোর বয়সে ভীমকে মেরে ফেলার চক্রান্ত থেকে জতুগৃহ, তার আগে পাশাখেলা, তারপর অজ্ঞাতবাস তো রোমাঞ্চকর। ভীম আর হিড়িম্বার প্রেম কহানী তো লায়লা মজনুকে বলে বলে ছ গোল দেবে। তারপর হল যুদ্ধের প্রস্তুতি। অস্ত্র যোগাড়, নিজেদের দল ভারি করা, ছলে বলে কৌশলে যুদ্ধের আগেই এক যুদ্ধ। সেই খানে কৃষ্ণ আর কর্ণের দেখা। কৃষ্ণ বলছেন, কর্ণ তুমি চলে এসো, পান্ডবরা এ যুদ্ধে জিতবেই। তুমিই হবে রাজাধিরাজ। তুমিই তো বড় ভাই। কর্ণ তখন বলেছিলেন অনেক কথা, ন্যায় নীতির কথা, বন্ধুত্ব, প্রতিজ্ঞার কথা। কিন্তু আমার বেশ লাগে যখন কর্ণ বলেন আমরা এক পক্ষ, আমাদের প্রতিপক্ষ পান্ডব, প্রতিপক্ষ ছাড়া যুদ্ধ হয় নাকি? কুরুক্ষেত্র অনিবার্য, অনিবার্য কৌরব পক্ষ, পান্ডবরা থাকুক প্রতিপক্ষ হয়ে, আমি তো তাই চাই।

হ্যাঁ যুদ্ধে, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের দরকার আছে। সে প্রতিপক্ষের ক্ষমতা যত বেশী হবে, তত লড়াই হবে জমজমাট। আজ ভারতে আবার সেই কুরুক্ষেত্র, কিন্তু প্রতিপক্ষটা কোথায়? সেই প্রতিপক্ষে কারা? প্রতিপক্ষের চেহারা আগামী দিনে কেমন হতে চলেছে? আসুন সেটা নিয়েই, আলোচনা করা যাক। আরএসএস – বিজেপির দিকটা কিন্তু পরিস্কার। সঙ্গে কারা কারা আছে তাও কমবেশী পরিস্কার। হাতের অস্ত্র এরই মধ্যে আমাদের জানা, কোন স্লোগান নিয়ে তারা ২০২৪ এ মাঠে নামতে চলেছেন, তাও মোটামুটি জানা। কিন্তু প্রতিপক্ষ? কারা প্রতিপক্ষ? একটা সরকার ভুলের পর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েই চলেছে, দেশের অর্থনীতির অবস্থা কতটা খারাপ, তা বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হতে হবে না। এক পুলিশি রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে, সামান্যতম বিরোধিতার জন্য মানুষ জেলে। তাঁদের ওপর চলছে ২৪ ঘন্টার নজরদারি, এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। মানুষকে ক্রমশ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। অবিবেচকের মত জঙ্গি জাতীয়তাবাদের স্লোগান উঠছে, কিন্তু সেই আবহে প্রতিপক্ষ কারা? ধরুন আপ বা কেজরিওয়ালের কথা, গতবার গুজরাটের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৪৯.১% ভোট, কংগ্রেস পেয়েছিল ৪১.৪ % ভোট, আসন বিজেপি ৯৯, কংগ্রেস ৭৭। কংগ্রেসের ভোটও বেড়েছিল, আসনও। লড়াই জবরদস্ত ছিল, এবারে করোনা। অর্থনীতি, রাজ্যে বিজেপির গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব ইত্যাদির ফলে আসন বা ভোট আরও কমার আশঙ্কা, আমার নয়, সাংবাদিকদের নয়, খোদ বিজেপির অন্দরমহলের। কিন্তু সেই মাঠে এবার আপ নেমেছে, দিল্লির আপ গুজরাটে, বেশ কিছু প্যাটেল নেতা আপ জয়েন করেছে, আম আদমী পার্টির নাম এখন থেকেই শোনা যাচ্ছে, তো কী হবে? গতবার যে আম আদমী পার্টি ০.১% ভোট পেয়েছিল, সম্ভবত তারা ৫-৭% ভোট পাবে, সম্ভবত ২/৩ টে আসন ও। আসবে কোথা থেকে? সোজা অঙ্ক, তারা বিজেপি বিরোধী ভোট কাটবে, কার সুবিধে? বিজেপির। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির প্রতিপক্ষে আপও আছে কংগ্রেস তো আছেই, অথচ গুজরাটে আপ বিজেপিরও প্রতিপক্ষ, কংগ্রেসেরও প্রতিপক্ষ। চলুন পঞ্জাব, এক কৃষক আন্দোলনই বিজেপির মাজা ভেঙে দিয়েছে পঞ্জাবে, অকালি দলের সঙ্গে জোট খতম। গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৮.৫%, অকালি ২৫.২%, আপ ২৩.৭%, বিজেপি ৫.৪%। এবার? কংগ্রেসের নিজেদের গোষ্ঠি কোন্দল চলছে, অকালি বিজেপির সঙ্গে নেই, শিখ ভোট পাবে, শিখ ভোটে ভাগ বসাবে আপ, বিজেপি তার নিজের শক্তি নিয়েই মাঠে। তার মানে আবার জাতীয় রাজনীতির প্রতিপক্ষের হিসেব গুলিয়ে গেলো, তাই না?
অকালি দল, আপ সাংসদরা লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, কংগ্রেসও। রাজ্যে লড়াই তাদের মধ্যে, পঞ্জাবে হিন্দু ভোট এবার বিজেপির ধারে জড় হতেই পারে। চলুন উত্তরপ্রদেশে, সেখানে চারজন প্লেয়ার, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, কংগ্রেস। কিরকম চেহারা ছিল গতবার? বিজেপি ৩৯.৬৭% ভোট পেয়ে ৩১২ টা আসন, বিএসপি ২২.২৩% ভোট পেয়ে ১৯ টা আসন, এসপি ২১.৮২ % ভোট পেয়ে ৪৭ টা আসন, কংগ্রেস ৬.২৫ % ভোট পেয়ে ৭ টা আসন পেয়েছিল। এবারের অবস্থা কী? বিএসপি বলেছে একলা লড়বে, এসপিও তাই, কংগ্রেসকেও তাহলে একলাই নামতে হবে, তাহলে কাকা লাভ কার? সেই বিজেপি। প্রতিপক্ষ? নিজেরাই লড়ে মরছে। অথচ মানুষ ক্ষুব্ধ, করোনার আঁচ লেগেছে সর্বত্র, চোখের সামনে গঙ্গায় লাশ বয়ে যেতে দেখেছেন মানুষ, ঠাকুর রাজের অত্যাচারে দলিত ওবিসিরা মুখ খুলেছে রাজ্যের সর্বত্র, কিন্তু প্রতিপক্ষের ৫০% এর বেশি ভোট ভাগাভাগি হয়ে পড়ে আছে। তার মধ্যে শোনা যাচ্ছে আপও নাকি এবার মাঠে নামবে বড় করে, মানে পক্ষ আছে, প্রতিপক্ষ নেই। এ বাংলায় কমতে কমতে বামেদের ভোট এখনও ৬% এর কাছাকাছি, কিন্তু তারা এ রাজ্যে মমতাকেই প্রতিপক্ষ বলেই মনে করে, সে সূর্যকান্ত মিশ্র যাই বলুক না কেন। আব্দুল মান্নান বা অধীর চক্রবর্তীরও একই স্ট্যান্ড। বিজেপিকে এক লাইন, তৃণমূলের জন্য ১২ লাইন বরাদ্দ, এমনকি গণশক্তিরও। ওড়িশায় বিজেডি যে পক্ষে আছে তাকে সুবিধাপক্ষ বলে। ওদিকে তেলেঙ্গানায় তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির সঙ্গে কংগ্রেসের আদায় কাঁচকলায়, সেখানেও প্রতিপক্ষ আলাদা। চলুন অন্ধ্রপ্রদেশ, কংগ্রেস থেকে ভেঙে বের হওয়া ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জগন রেড্ডি এখনও, কংগ্রসের সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর অবস্থাতেও নেই। ওদিকে আরেক বিজেপি বিরোধী দল তেলেগু দেশমের সঙ্গেও চূড়ান্ত শত্রুতা, তেলেগু দেশম আবার কংগ্রেসকেও সহ্য করতে পারে না। প্রতিপক্ষ? কোথায় প্রতিপক্ষ? কংগ্রেস আর দেবেগৌড়ার জনতা দলের সঙ্গে সদ্ভাব কতখানি, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, সে আকচা আকচিও জারি আছে। কেরলের ছবিই আলাদা, সেখানে সিপিএম কংগ্রেস লড়ে যাচ্ছে, রাজ্যে সিপিএমের দর্শন এক মৃত দর্শন, বলার পর জাতীয় রাজনীতিতে রাহুল ইয়েচুরি হাত ধরছেন। ফ্লাইটে করে ত্রিবান্দম থেকে দিল্লি গেলে দর্শন প্রাণ ফিরে পায়, রাজ্যের প্রতিপক্ষ তখন শরিক। মোদ্দা কথা হল কোথায় প্রতিপক্ষ, মহাভারতের কর্ণ যে বলেছিল, পক্ষ তো আমরা, পান্ডব প্রতিপক্ষ, সেই প্রতিপক্ষ নেই বলেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদি।

প্রতিপক্ষের এই অবস্থার মূল কারণ হল কংগ্রেসের রাজনীতি, কংগ্রেসের ওই দিল্লি থেকে, রিমোট কন্ট্রোল রাজনীতির কারণেই দেশে অন্তত দুটো দল ক্ষমতায়, যারা কংগ্রেস থেকে ভেঙে বেড়িয়ে এসে নতুন দল করেছে, এ বাংলায় তৃণমূল, অন্ধ্রতে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, কংগ্রেসেরই অপদার্থতার জন্য একসময় উত্তরপ্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কেবল নয়, রায়বেরিলি, এলাহাবাদ, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, বেনারস, আলিগড়ে কংগ্রেসের চিহ্নমাত্র নেই। তাদের ভোট শতাংশ ৬ এর একটু ওপরে, কংগ্রেস এখনও মনে করে তারা হল বড় দাদা, তারা অপরিহার্য, কিন্তু অকংগ্রেসী দলগুলোকে সম্মান দিয়ে এক মঞ্চে আনার দায় তো কংগ্রেসেরও থাকা উচিত, সেই লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। অকংগ্রেসী বিজেপি বিরোধী দল আর কংগ্রেসের মধ্যে যদি কোনও বোঝাপড়া না তৈরি হয়, তাহলে আর যাইহোক আরএসএস – বিজেপির প্রতিপক্ষ হওয়াটা সম্ভব নয়, এটা প্রতিপক্ষের দুই শিবিরকেই বুঝতে হবে। এই প্রতিপক্ষ তৈরি হলেই অজস্র বাম, গণতান্ত্রিক মানুষ এগিয়ে আসবেন, অজস্র সংগঠন এগিয়ে আসবে, ঠিক যেমন করে বাংলার নির্বাচনের আগে ,“নো ভোট টু বিজেপি” র ডাক দেওয়া হয়েছিল। যে পদ্ধতিতে নির্বাচনের আওতার বাইরে থাকা মানুষজন রাজ্য জুড়ে নেমেছিলেন। ফ্যাসিস্ট আরএসএস – বিজেপির বিরুদ্ধে, ঠিক সেরকম সারা দেশ জুড়ে বুদ্ধিজীবী, বাম, গণতান্ত্রিক মানুষজন নামবেন, এক প্রবল প্রতিপক্ষ তৈরি হবে। কৃষ্ণ পাঞ্চজন্যে তুলবেন সেই শঙ্খনাদ, গান্ডীবে টঙ্কার দেবেন অর্জুন, শুরু হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ আসন্ন, প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা শুনতে পাচ্ছেন? শুনতে পেলে বুঝতে পারছেন কি?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mahua Moitra | ডেস্টিনেশন ওয়েডিং মহুয়ার, কোথায় করলেন বিয়ে? কী কী ছিল অ্যারেঞ্জমেন্ট?
00:00
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | আবাসের দলে রেশনের গোডাউন, মহিষাদলে শুরু তৃণমূল-বিজেপি তরজা
25:27
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | পরিবেশ দিবসেও রাজনীতি!
53:34
Video thumbnail
Santanu Sen | এবার চার্জশিট পেশ শান্তুনু সেনের বিরুদ্ধে, কেন? দেখুন বিগ ব্রেকিং
02:28
Video thumbnail
Shashi Tharoor | Rahul Gandhi | বিজেপির বয়ান শশী থারুরের মুখে, কী করবেন রাহুল?
01:25:05
Video thumbnail
Anubrata Mondal | কলকাতা টিভির খবরের সিলমোহর, SDPO অফিসে হাজির দিলেন অনুব্রত
01:36:35
Video thumbnail
World Environment Day | পরিবেশ রক্ষার সংকল্প রাজ্যবাসীর, শহর থেকে গ্রাম, সচেতনতার ছবি
02:15
Video thumbnail
World Environment Day | জনসমাগমে উধাও পাখি অ/বৈধ বহুতল নির্মানেই বিপত্তি, অভিযোগ স্থানীয়দের
04:17
Video thumbnail
World Environment Day | ইছামতির পারে কংক্রিটের জঙ্গল, নদী পাড়ে দূষনের দৃশ্য
03:56
Video thumbnail
World Environment Day | ডুয়ার্সের সবুজে নগরায়নের থাবা, প্রকৃতিকে সাজানোর প্রচেষ্টাতেই বিপত্তি
04:06