অলিম্পিকের খেলা শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এমনসময় ইঙ্গিত মিলছে, করোনা সংক্রমন বাড়তে থাকলে মাঝপথে থমকে যেতে পারে বিশ্বের এই গ্রেটেস্ট শো।
এমন ইঙ্গিত মিলছে এমন মানুষের চারপাশ থেকে , তাতে আশঙ্কা সত্যি না হয়ে যায়!
টোকিও ২০২০ আয়োজক কমিটির প্রধান স্বয়ং নিজেই প্রতিযোগিতা বাতিলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এই কমিটির প্রধান তোশিরো মুতো বলেছেন তিনি সংক্রমণের সংখ্যার ওপর কড়া নজর রাখছেন।
কি বলেছেন তিনি?
তোশিরো মুতো বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া অ্যাথলেটদের সংখ্যার দিকে নজর রাখছেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথাও বলছেন। প্রয়োজনে তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে “আলোচনা” করবেন।
ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতার সঙ্গে নানানভাবে যুক্ত ৭০ জনের বেশি এই মুহূর্তে কোভিড পজিটিভ আক্রান্ত হয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উদ্বোধন হতে চলেছে গেমসের!
স্থানীয় কর্তা মুতো যেদিন এই আশঙ্কার কথা জানালেন, সেই একই দিনে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ বলে দিয়েছেন প্রতিযোগিতা “বাতিল করার কথা কখনই ভাবা হয়নি”।
এ মাসের গোড়ার দিকে, জাপান ঘোষণা করেছিল যে, খালি স্টেডিয়ামেই গেমস অনুষ্ঠিত হবে। দেশটিতে কোভিড পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই জাপান জরুরী অবস্থা জারি করে গেমস চালু করেছে।
এই শেষ সময়ে এসে অলিম্পিকস বাতিল করার সম্ভাবনা আছে কিনা এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন করা হলে টোকিওতে আয়োজক কমিটির প্রধান মুতো বলে বসেন, “আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা খুব বাড়লে আমাদের বিষয়টা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।”
অবশ্য এটাও তিনি বলেছেন,”এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে।” এই কথা থেকে বোঝা যায় আয়োজক কমিটির প্রধান কতোটা অসহায় বোধ করছেন।
প্রতিযোগিতার শুরু :
আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও অলিম্পিকস শুক্রবারের আগে শুরু হচ্ছে না, কিন্তু মেয়েদের সফটবল এবং ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে বুধবারই।
জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে মেয়েদের সফটবল খেলা ছিল বুধবার।
আরও পড়ুন: টোকিও অলিম্পিকের শর্তাবলী
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে,অ্যাথলেটদের থাকার জন্য নির্ধারিত অলিম্পিকস ভিলেজে দক্ষিণ আফ্রিকার দুজন ফুটবলার কোভিড পজিটিভ হন। চেক একজন বিচ ভলিবল প্রতিযোগীর শরীরেও ভাইরাস মেলে।
টোকিও অলিম্পিকসের সাথে জড়িত ৭১ জন কোভিড আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারিভাবে। এদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সাথে সরাসরি যুক্ত এমন মানুষজনও আছেন।অলিম্পিকসের ১২৪ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম প্রতিযোগিতা – যা নির্দিষ্ট সময় না হয়ে পিছিয়ে গেছে।
টোকিও অলিম্পিকস চলার কথা ৮ই অগাস্ট পর্যন্ত। প্যারালিম্পিকস শুরু হবার কথা ২৪শে অগাস্ট যা শেষ হবে ৫ই সেপ্টেম্বর।
গেমস চালু রাখা নিয়ে জনরোষ:
করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের মধ্যে এই অলিম্পিক গেমস চালিয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ দিন কে দিন বাড়ছে।
এই গেমস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ জাপানে পৌঁছে গেছে। তা নিয়ে জাপানিরা প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করেই চলেছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা নিয়ে তারা বেজায় উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন:অলিম্পিক পোডিয়ামেও মাস্ক বাধ্যতামূলক
টোকিওতে সংক্রমণ বর্তমান গ্রাফ কিন্তু উর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবার টোকিওতে ১৩৮৭ জন নুতন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে ।
জাপানে কোভিডের কারণে এখন জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে যা চলবে ২২শে অগাস্ট পর্যন্ত। এমনটাও মেনে নিতে পারছে না টোকিওর জনসাধারণ। নানান স্থানে প্রতিবাদ দেখানো হচ্ছে।
স্থানীয় আয়োজক কমিটির প্রধান মুতো এই মন্তব্য করার পর টোকিও অলিম্পিকের এক মুখপাত্র বলেছেন, উদ্যোক্তারা এখন “শতভাগ সফল একটা অলিম্পিকস অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপর সব মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন।” কিন্তু কোথাও টোকিও প্রশাসনের কর্তারা আশঙ্কার মেঘ দেখতে শুরু করেছেন।
ছবি: সৌ-টুইটার