Tuesday, May 20, 2025
HomeScrollFourth Pillar | পার্থ চ্যাটার্জির মামলাও কি ইডি বন্ধ করে দেবে?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | পার্থ চ্যাটার্জির মামলাও কি ইডি বন্ধ করে দেবে?

অনেক তদন্ত করে দেখা গেল যে সুরেশ কালমাদির মামলাতে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই

Follow Us :

হ্যাঁ, আমরা সব্বাই দেখেছিলাম, কাঁড়ি কাঁড়ি নোট গোনা হয়েছিল, দেখেছিলাম, সেসব টাকা নিয়ে যেতে পাঞ্জাব বডি লরিতে করে ট্রাঙ্ক নিয়ে আসা হয়েছিল। শুনেছিলাম পার্থ চ্যাটার্জির ঘরেও নাকি অজস্র জমির দলিল মিলেছে, শুনেছি উনিই নাকি প্রায় ৭০০/৮০০ কোটি টাকার চাকরি বিক্রি স্ক্যামের মাথা। জানা গিয়েছিল শান্তিনিকেতনে, দক্ষিণে বারুইপুরে ওনার বাগানবাড়ির কাহিনি। আমরা সাংবাদিকরা এসব জেনেছি ইডি সূত্রে, সিবিআই সূত্রে, জানিয়েছি আপনাদের, আর তারপরে সেই দুর্নীতির গল্পে পরতের পর পরত রং চাপানো হয়েছে, গল্পের গরু গাছে উঠছে তো উঠছেই, আমাদের চোখ কপালে উঠেছে, দর্শকদেরও তাই। তো গতকাল হঠাৎই এরকম আর এক রোমহর্ষক বিরাট স্ক্যামের কথা মনে পড়ে গেল, সে ঘাপলাবাজিতে সেই ২০১০ সালে টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার কোটি টাকা। মানে আজকের হিসেবে এনে দাঁড় করালে পার্থবাবু, যিনি নাকি হেভিওয়েট, তাঁকে এই বিশাল দুর্নীতির সামনে নেংটি ইদুর মনে হত। আসুন সেটা মনে করিয়ে দিই, কমনওয়েলথ গেমস শুরু হব হব করছে, দিল্লিতে এক রাজসূয় যজ্ঞ চলছে, সুরেশ কালমাদি সেই ব্যবস্থার মাথায় বসে আছেন। তেমন সময়ে জানা গেল বিরাট ঘাপলা হয়েছে, জানা গেল কমসম করেও নাকি ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাপলা, কিছুদিনের মধ্যেই যে হিসেব ৭০ হাজার ছুঁয়ে গেল।

এদিকে সেই সময়েই সারা দেশে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন চলছে, মাথায় আন্না হাজারে, আর পাশে কমান্ডোর মতো ঘুরছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বললেন, সরকারের সাহস থাকলে গোটা বিষয়টা ইডি, সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। সেদিন তাঁর জানাই ছিল না এই ইডি আর সিবিআই তাঁর ভবিষ্যৎ ঝরঝরে করে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর আসনে তো নরেন্দ্র মোদি ছিলেন না, ছিলেন মনমোহন সিংহ, তিনি মেনে নিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই সুরেশ কালমাদি চাক্কি পিসিং চাক্কি পিসিং চাক্কি পিসিং। ক’মাস পরেই জামানত, আবার জেল আবার জামানত আবার জেল, সিবিআই-এর মামলা শেষ তো ইডির মামলা শুরু। আজ ১৫ বছর পরে ইডি জানাল মাননীয় ধর্মাবতার, আমরা তদন্ত করে এই দুর্নীতির কোনও প্রমাণই পাইনি, অতএব এই মামলা বন্ধ করা হোক। একটু খোলসা করে বলা যাক, ২০১০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসের আশেপাশে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, আর ঠিক তখন ভারতে একটি বড় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সলতে পাকানো হচ্ছিল। ইস্যু ছিল টুজি স্ক্যাম, অতিরিক্ত দামে চুক্তি, অসৎ লেনদেন, আর্থিক তদারকিতে বড় বড় ঘাপলা। প্রাথমিক অনুমানে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০,০০০ কোটি টাকার মতো। এই বিশাল অনিয়ম ও ক্ষতির ইস্যুগুলো মানুষকে বলছিলেন কেজরিওয়াল অ্যান্ড কোম্পানি, মাথার উপরে আন্না হাজারে। সেদিন কেজরিওয়াল সিবিআই আর ইডির তদন্ত চেয়েছিলেন। সিডব্লিউজি দুর্নীতি নিয়ে জনগণের প্রথম ক্ষোভ বড় দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের পথ তৈরি করেছিল। ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর যন্তর মন্তরে একটা সমাবেশ হয়েছিল, যেখানে কমনওয়েলথ গেমসের দুর্নীতি নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে সিডব্লিউজি দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেন এবং লোকপাল বিল পাশের দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন’ শুরু করেন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | পাকিস্তান কী চায়? উগ্রপন্থীরা কী চায়?

এরপর একের পর এক কেলেঙ্কারি সামনে আসতে থাকল, সিডব্লিউজি কেলেঙ্কারি, আদর্শ হাউজিং সোসাইটি কেলেঙ্কারি, ২০১০ সালের হাউজিং লোন কেলেঙ্কারি, রাডিয়া টেপ বিতর্ক এবং ২জি স্পেকট্রাম মামলার মতো অন্যান্য দুর্নীতির ঘটনাগুলো সামনে আসার পরে দুর্নীতিই হয়ে উঠল এক প্রধান ইস্যু, ভারতের রাজনীতিতে সেই বোফর্স মামলার পরে আবার একবার দুর্নীতির ইস্যু সামনে এল। আন্না আন্দোলন বা ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন আন্দোলন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিল এবং জন লোকপাল বিলের মতো শক্তিশালী আইনের দাবি করেছিল। মাথায় রাখুন সেদিন সামনে আন্না হাজারে, কেজরিওয়াল, যোগেন্দ্র যাদব, বাবা রামদেব, কিরণ বেদী, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ কিন্তু পিছনে বিজেপির ঝানু নেতারা। অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, তাঁরা জানতেন তাঁদের সংগঠন তৈরি আছে, কাজেই এই সব ইস্যুতে ভোট হলে তাঁরাই তুলবেন গোলায় পাকা ধান। আর এই সময়েই বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙেছে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে। তারাও দেশজুড়েই এক দুর্নীতিপরায়ণ কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আর তারমধ্যেই একের পর এক তথ্য সেদিন বেরিয়ে আসছিল ইডি দফতর থেকে। যার মধ্যে ছিল সঠিক পদ্ধতি ছাড়াই অতিরিক্ত দামে লাভজনক চুক্তি দেওয়া। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল একটি সুইস কোম্পানিকে টাইমিং, স্কোরিং এবং ফলাফল সিস্টেমের চুক্তি দেওয়া। সেসব চুক্তির কপি বাইরে এসে গেল, অবশ্যই সেই কাগজ এল সাংবাদিকদের কাছ থেকেই, কিন্তু তা এসেছিল ওই সিবিআই বা ইডি সূত্রে। সেগুলো নিয়ে সংসদ অচল করার কাজ করল বিজেপি এবং বামপন্থীরাও।

সিবিআই ফৌজদারি ষড়যন্ত্র এবং চুক্তি দেওয়ার অনিয়ম তদন্ত করছিল, আর ইডি অর্থ পাচার এবং বৈদেশিক মুদ্রা লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করছিল। প্রতিদিন নিত্যনতুন তথ্য আসছিল আমাদের হাতে, সাংবাদিকদের হাতে, সাংবাদিকরা তা ছাপছিল, পরের দিন তা নিয়ে সারা দেশ উত্তাল হচ্ছিল, তুমুল সমর্থন পাচ্ছিল দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন, ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন। সুরেশ কালমাদিকে গ্রেফতার করা হল, একইভাবে মামলা শুরু হল ডিএমকে-র ডি রাজা আর কানিমোঝির বিরুদ্ধে। জেল হল, জামিন হল। এবং এসবের মধ্যেই এসেছিল ২০১৪। হ্যাঁ, নির্বাচন এসেছিল। একধারে কংগ্রেস মিন মিন করে ডিফেন্সিভ খেলার চেষ্টা করছিল, অন্যধারে বিজেপি সমেত এক বিরাট শক্তি কংগ্রেসের দুর্নীতি, কংগ্রেস শরিকদের দুর্নীতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল নির্বাচনী প্রচারে। এক্কেবারে এক ও অভিন্ন ইস্যুগুলো নিয়ে সেদিন মাঠে ছিল বামেরা, তারা কংগ্রেস, তাদের শরিক ডিএমকে, আরজেডি, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারে নামলো। হাতে অস্ত্র জোগাচ্ছে ইডি, সিবিআই সূত্রে ফাঁস হওয়া নানান তথ্য। মোদিজি নির্বাচনী বক্তৃতায় বলছেন কালা ধন ওয়াপস আনার কথা, বলছেন আচ্ছে দিনের কথা, বলছেন কংগ্রেস জমানাতে রামপ্যান্ট দুর্নীতির কথা, বলছেন টুজি স্ক্যাম, কোল ব্লক ঘোটালার কথা। বলছেন কি যে আমরা ক্ষমতায় এলে রামমন্দির করবো? বলছেন আমরা ক্ষমতায় এলে ৩৭০ ধারা তুলে দেব? বলছেন কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা? একবারের জন্যও নয়। হ্যাঁ সেটাই মজা। তাঁদের হাতে সেদিনের অস্ত্র দুর্নীতি আর হ্যাঁ বলতে ভুলেছি, ঘটে গেছে নির্ভয়া ধর্ষণ আর হত্যা, সেটাও ইস্যু। মানুষের কাছে মনে হয়েছিল বিজেপি লড়ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বিজেপি লড়ছে নারীদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে, কাজেই তারা মানুষের সমর্থন পেল। কংগ্রেস তলানিতে গিয়ে ঠেকল।

আমরা দেখলাম এক নির্বাচনে সিবিআই আর ইডি সূত্রে পাওয়া দুর্নীতির খবর ভাসিয়ে দিল কংগ্রেসকে, কংগ্রেস আর বিজেপির দেশজোড়া বাইনারির মধ্যেই জমি হারাল বামেরা। নারীদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি আর দ্যর্নীতি নিয়ে নো টলারেন্স, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা কথা বলে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদি চ্যাম্পিয়ন। এরপরে বিজেপি ক্ষমতায়, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায়। দেশের প্রত্যেক প্রান্তে নারী ধর্ষণ নারীদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যেই সবথেকে বেশি বেড়েছে, না, কালাধন ওয়াপস আসেনি আর শেষমেশ আসেনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের চুরি করে নিয়ে যাওয়া টাকা। এবং মাত্র গতকাল ইডি আদালতে গিয়ে জানিয়েছে, মহামান্য ধর্মাবতার অনেক তদন্ত করে দেখা গেল যে সুরেশ কালমাদির মামলাতে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই, তাই আমরা আর এই মামলা চালিয়ে নিয়ে যেতে অপারগ। এটাকে ক্লোজ করে দেওয়া হোক। ব্যস, ফাইলে কাগজ ঢুকিয়ে ফিতে বেঁধে সেসব চালান করে দেওয়া হল রেকর্ড দফতরে। কেবল আমরা জানতেই পারলাম না যে সেদিনের ৭০ হাজার কোটি টাকা তাহলে কে খেল? নাকি সেটাও মিথ্যে কথা ছিল? আর যদি ওই ৭০ হাজার কোটি টাকার মামলা এইভাবে ১৫ বছর পরে ফর ওয়ান্স অ্যান্ড অল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চাকরি চুরির মামলা নিয়ে খুব বেশি আশা করার কি কিছু আছে? ৮০ বছরের সুরেশ কালমাদি বলেছেন, সেদিনও বলেছিলাম আমি কোনও অপরাধের সঙ্গে লিপ্ত নই, আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। আজ থেকে ক’ বছর পরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবেন তাঁর বান্ধবী, পার্থ চ্যাটার্জি বলবেন, আমি তো প্রথম দিন থেকেই বলে আসছিলাম আমি কোনও দোষ করিনি, শুধু শুধু আমাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল। হ্যাঁ বলবেন এই কথা, কারণ ইডি বা সিবিআই মামলা শুরু করে রাজনৈতিক ইশারায় আর একটা সময়ের পরে সেই মামলা বন্ধ করে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা আলাদা হতে যাবে কেন? ১৫ বছর পর সুরেশ কালমাদির গলায় গাঁদা ফুলের মালা, চোখে আনন্দের অশ্রু, কমনওয়েলথ গেমসেরর ঘাপলার অপরাধীদের তালিকাতে তাঁর নাম নেই, তিনি নির্দোষ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Abhishek Banerjee | ‘অপেক্ষা করুন কলকাতাতেও হবে’ কীসের ইঙ্গিত দিলেন অভিষেক?
02:29:20
Video thumbnail
Mamata Banerjee | মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর, কী বললেন দেখুন সরাসরি
01:49:41
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | বিজেপি কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তৃণমূল কোন প্রতিনিধি পাঠাবে? মন্তব্য‍ অভিষেকের
02:19:30
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ‘আন্দোলনের লক্ষ্মণ রেখা থাকা উচিত’
52:26
Video thumbnail
YouTuber Jyoti | Pakistan | পাকিস্তানে তথ‍্য পাচার, জ‍্যোতির সঙ্গে আর কারা? দেখুন বিরাট আপডেট
02:13:34
Video thumbnail
Mamata Banerjee | আজ উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী, কী কী কর্মসূচি? দেখুন একনজরে
03:19:15
Video thumbnail
জ্যোতির পর শেহজাদ, পাকিস্তানে তথ‍্য পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার, কী কী ভাবে পাকিস্তানকে সাহায‍্য করত?
02:24:51
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | টিম ওয়ার্কের বার্তা অভিষেকের, কী বললেন শুনুন
01:41:50
Video thumbnail
Weather Update | ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী, কমলা সতর্কতায় তছনছ হবে কোন কোন এলাকা?
02:20:05
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | কলকাতা বিমানবন্দরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কী বললেন? দেখুন সরাসরি
01:04:13