Sunday, June 29, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : ভবানীপুর

চতুর্থ স্তম্ভ : ভবানীপুর

Follow Us :

নির্বাচন শেষ, গতকাল সারাদিন দেখে মনে হল বিজেপি নির্বাচন শেষ হলে বাঁচে, প্রার্থী একলাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, লোকজন নেই। তবু দেখা গেছে সিপিএমকে, তাদের ক্যাম্প ছিল, কিছু লোকজনও ছিল। বিজেপির হালছাড়া মনোভাব সবার চোখে পড়েছে, শেষবেলায় কল্যাণ চৌবের গাড়ি ভাঙচুর, তাঁর বিজেপি নয় হাম, ব্রাকেটে সেকুলার পার্টির আই ডি কার্ডই ছিল গতকালের সামান্য মশলা, এছাড়া মেয়র ববি হাকিম সিপিএম ক্যাম্পে চা খেয়েছেন, এর বেশি সারাদিনে কিছুই ছিলনা, সাংবাদিকরা প্রায় হতাশ, ঠিক তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলেন নিজের ভোট দিতে, সেটাই একমাত্র ভিস্যুয়াল। দিনের শেষে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি বলেছেন, মমতা জিতবেন। বিজেপির জয় ব্যানার্জি বলেছেন, অবাঙালি ভোটাররা বিজেপির উপরেই অসন্তুষ্ট, তাই মমতা জিতবেন। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ওসব জয় বিজয়ের কথা বাদ দিন, প্রিয়াঙ্কা ছিল বলেই লড়াই হচ্ছে, অন্য কারোর হিম্মত ছিলনা ঐ আসনে লড়বে, উনি কথাটা কি রুদ্রনীল ঘোষের জন্য বললেন? জানা হয়নি। সব্বাই জানে মমতা জিতবেন, তবুও আজ চতুর্থস্তম্ভ ঐ ভবানীপুর নির্বাচনকে নিয়েই, আসুন শুরু করা যাক।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : মোদিজীর জমিদারি

এমনিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন? গুরুত্বপূর্ণ এইজন্য যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এখানে প্রার্থী, ব্যস। তাছাড়া আর কি? জেতা নিয়ে কোনও সংশয় না থাকলেও, তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক মমতা হেরে গেলেন, কী হবে? সরকার পড়বে না, সরকারের রাশ মমতার হাতেই থাকবে, সরকার তৃণমূলেরই থাকবে, সারা রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে না, ক’দিন আলোচনার পরে রাজ্য রাজনীতি ঐ কালীঘাটের বাড়িকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকবে, অন্য কিছু হবার সুযোগই নেই। বিজেপি জিতলে? জেতার এক শতাংশও চান্স নেই তবুও, ঐ যে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, বিজেপি জিতবে, তাহলে কী হবে? ঐ প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালই যে পরশু তৃণমূলে যোগ দেবে না, তাই কি হলফ করে বলা যাবে? বাবুল সুপ্রিয় আসতে পারলে, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালও আসতেই পারেন। যদি নাও আসেন, তাহলেও আবার কদিন হৈচৈ হয়ে রাজনীতি নিজের মত চলতে থাকবে, সরকারও। তাহলে গুরুত্বটা কোথায়? আসলে এই ভোট বিজেপিকে আবার তার কোর ভোটার কত, তা বুঝিয়ে দেবে। বিজেপির হঠাৎ উথ্বানের পেছনে এক হুজুগ কাজ করছিল কি না, সিপিএমের বা বামপন্থীদের ব্যর্থতা কাজ করছিল কি না, সেটা তুলে ধরবে। এই তিনটে কেন্দ্রের ভোট, রাজ্যের রাজনৈতিক চেহারাটা তুলে ধরবে, কার আদতে কত সমর্থন আছে, তা তুলে ধরবে। এবং তারপরে সেই অনুযায়ী, বাংলার রাজনীতি চলতে থাকবে। গতবার একদা সিপিএম, পরে তৃণমূল এবং শেষে বিজেপি বনে যাওয়া রুদ্রনীল ঘোষ প্রার্থী হয়েছিলেন, ২৮% ভোট পেয়েছিলেন। ধরে নেওয়া হচ্ছে সেটাই ছিল বিজেপির সর্বোচ্চ ভোট, কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে মিডিয়ার প্রচার, বিজেপি আইটি সেলের প্রচার অন্তত এটা বলতে পেরেছিল যে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে, বিজেপির শ্যাডো মন্ত্রীসভা তৈরি হচ্ছিল, অমিত শাহ যেভাবে হাসছিলেন, মোদিজী যেভাবে সরকারে এসে কী করিব, কী কী করিবর ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন, তাতে করে অনেকেরই মনে হয়েছিল, বিজেপি জিতবে। সেই বাজারে সাতে পাঁচে দাদা ২৮% এর কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন, এর থেকে এটা ধরেই নেওয়া যায় যে এই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে, এটাই ছিল বিজেপির সর্বোচ্চ সমর্থন সংখ্যা। অলিতে গলিতে অমিত শাহ ঘুরেছেন, রাস্তায় থাপ্পড় খাবার অভিনয় করেছেন অভিনেতা রুদ্র, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এসেছিলেন, তবুও ২৮%। তাহলে এবার? সম্ভাবনাগুলো দেখা যাক।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ: আসা যাওয়ার মাঝখানে

প্রিয়াঙ্কা ২৮% ভোট পেলেন, হ্যাঁ সম্ভাবনা থেকে ২৮% এর বেশি ভোট পাওয়া বাদ দিচ্ছি, যদি ঐ ২৮% ভোটও পান, তাহলেও বোঝা যাবে বিজেপির জনভিত্তি ছিল, কেবল হুজুগেই ভোট পড়েনি, কেবল মিডিয়া, প্রচার আর টাকা বিলিয়ে ভোট আসেনি, কিন্তু যদি তা কমে ১৬/১৭% এ চলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে, হুজুগের ভোট সরে গেছে, বিজেপির ভোট আবার তার নিজের জায়গায় ফিরে যেতে চলেছে, আবার সেই একটা কি দুটো সাংসদ আর ১০/১৫টা এম এল এ নিয়েই খুশি থাকতে হবে বিজেপি, হ্যাঁ ২০২৪ এ যে সাংসদ সংখ্যা উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, এম পিতে কমবে, অসম বা বাংলা থেকে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার কথা মোদি অমিত শাহ ভেবেছিলেন, অসমে হবে বটে, কিন্তু বাংলাতে হবে না। পরের সম্ভাবনা হল ৭/৮% ভোটের, মানে জামানত চলে যাওয়া , তাহলে উপনির্বাচনের পরে দলবদলের ঢল নামবে, ইতিমধ্যেই যা শুরু হয়েছে, তা এক চুড়ান্ত রুপ নেবে। এবার আসুন সি পি এম এর কথায়, প্রার্থী না দিলেই ভাল করতেন, বলাই যেত যে বিজেপিকে সুবিধে করে দিতে চাই না, বলাই যেত যে দেশের বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া হল না, এইসব বলে এড়িয়ে যাওয়াই যেত। কিন্তু এত বিবেচনাবোধ সিপিএমের আছে বলে তো মনে হয় না, কংগ্রেস প্রার্থী না দিলেও, ওনারা দিয়েছেন, গত বিধানসভায় কংগ্রেস পেয়েছিল ৩.২৬% ভোট, তাঁরা বিড়ম্বনা এড়াতে সরে গেছেন, এবার সিপিএম জামানত বাঁচাতে না পারলেও, যদি ৭/৮% ভোট পায়, তাহলে সিপিএম এর র‌্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল খুশি হবে, একলা লড়ে ভোট বাড়ানো, সামনে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কম কথা? যদি সেই তিন সাড়ে তিন শতাংশই পান, তাহলে বোঝা যাবে অবিজেপি, অতৃণমূলের ওটাই নেট ভোট। কিছুটা হলেও মুখ বাঁচবে। ১ কি ১.৫ শতাংশ ভোট পেলে আবার টিভিতে দেখা যেতেই পারে তন্ময় ভট্টাচার্যকে, তিনি বলবেন, এই মুখ পোড়ানোর কী দরকার ছিল, আমি তো বলেইছিলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজ্য কমিটিতে আলোচনা চলতেই থাকবে, দলে নতুন রক্ত আনার কথা চলতেই থাকবে, দলের সমর্থক বা সদস্যরা আর একবার হতাশ হবে, কেউ কেউ নিশ্চই বলবেন, মানুষ এখনও ঠিক ভুল বুঝতে শেখে নি, কি আর করা যাবে।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ: ঢাক পেটানো সরকার

আসুন তৃণমূলের কথায়, যদি ঐ ৬৫% ভোটই পান মমতা, তাহলে একটা জিনিস তো পরিস্কার হবে যে ওটাই তাঁদের জনভিত্তি, যদি ৭৫% ভোট পান তাহলে সেটা জনভিত্তি প্লাস মুখ্যমন্ত্রীর ক্যারিস্মা, এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সামনের কর্পোরেশন নির্বাচনে নিশ্চিত আসনের গ্যারান্টি, তারও ওপরে হলে, মানে ৮০% বা তার কাছাকাছি ভোট পেলে, বিজেপি বিরোধিতায় নতুন জোয়ার আসবে, আরও উজ্জীবিত তৃণমূলকে দেখা যাবে বিধানসভায়, সংসদে। দিলীপ ঘোষের সকালবেলায় স্বাস্থ্যচর্চার সময়ে, মাইক কমেছে অনেকটা, আরও কমবে বা থাকবেই না। আরও অনেক বেসুরো গলা শোনা যাবে, বিজেপির বাংলার নেতৃত্ব তা সামাল দিতে পারবেন না, কাঁথির খোকাবাবু ক্রমশ কাঁথির মধ্যেই ব্যস্ত থাকবেন, তাঁর বাঁ হাত, ডান হাত ইত্যাদিরা কিছুদিন চুপ করে বসে থাকবেন, তারপর কালিঘাটে যোগাযোগ করা শুরু করবেন, এসব হলফ করেই বলা যায়। এবং রুদ্রনীল ঘোষ, রাজনীতি ছেড়ে অভিনয়ে মন দিয়েছেন, এই নির্বাচনে ফল বেরোনর পর আরও বেশি মন দেবেন। এগুলো ছিল সম্ভাবনা কথা, এবার বলে নেওয়া দরকার আমরা কী মনে করছি, গতকাল শুধু নয়, এ ক’দিন ধরে নির্বাচনী প্রচার, প্রার্থীদের বক্তব্য, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ দেখে আমাদের কী মনে হয়েছে তা বলে নিই, আমাদের মনে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমবেশি ৭৭/৭৮% ভোট পাবেন, খুব কষ্ট করে বিজেপি প্রার্থী তাঁর জামানতটা বাঁচাবেন, বাম প্রার্থীর ভোট আরও আরও কমবে। এবং রাজ্য জুড়ে তিনটে ভোটে বিজেপি পূনর্মুষিক ভব, আবার সেই আগের ১৪/১৫ % ভোটে চলে যাবে, বাম আর কংগ্রেস এই নির্বাচনে খারাপ করলেও, সারা রাজ্যে বিজেপির ভোট কমার সুবাদেই আগামিদিনে আবার প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাবে, হ্যাঁ প্রাসঙ্গিকতা মাত্র, তার বেশি কিছু আপাতত নয়। আগামী লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপি আবার এক কি বড়জোর দুটো আসন, সিপিএম এ রাজ্যে শূন্যই থাকবে, কংগ্রেস এক আধটা আসনে লড়াই দেবে, একটা জিতেও যেতে পারে। অবশ্যই এই ছবি ঠিক এই মুহূর্তের রাজনীতি এক চলমান নদীর মতো, কখন কোন পাড় ভাঙবে, কোন পাড় গড়বে কেউই বলতে পারে না, আমরাও বলছি না, তবে উজ্জীবিত মমতা আর তৃণমূল যে দেশজুড়েই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই-এ অন্যতম মুখ হয়ে দাঁড়াবে, তা নিশ্চিত।  এই নির্বাচনের গুরুত্ব সেখানেই, সেটা দিলীপ ঘোষ বা মোদিজী বা অমিত শাহ জানেন, কিন্তু তাঁদের কিচ্ছু করার নেই, বংগাল হাত সে ফিসল গয়া, তার খেসারত তাঁদের দিতেই হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | কে এই মামদানি? যাকে ভ/য় পান ট্রাম্প, যু/দ্ধ আবহে এল বড় খবর
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | America | ইরানকে কী কী কারণে ভ/য় পাচ্ছে আমেরিকা-ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
India-Pakistan | ফের ভারতের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Kunal Ghosh | TMC | তৃণমূল ভবনে CCTV ফুটেজ দেখালেন কুণাল, তোলপাড় বাংলার রাজনীতি
00:00
Video thumbnail
America | China | India | আমেরিকা, চিন, সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধ করবে ভারত?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | কে এই মামদানি? যাকে ভ/য় পান ট্রাম্প, যু/দ্ধ আবহে এল বড় খবর
11:09:57
Video thumbnail
India-Pakistan | ফের ভারতের ভ/য়ে কাঁ/পছে পাকিস্তান, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
11:05:55
Video thumbnail
India | European Union | আমেরিকা, চিন সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধ করবে ভারত?
10:54:31
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | বদলে যাওয়া বিদেশ নীতি, নেহেরু থেকে মোদি
08:58:16

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39