Wednesday, June 18, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ:  কে এই বাবা? ইনি কার বাবা?

চতুর্থ স্তম্ভ:  কে এই বাবা? ইনি কার বাবা?

Follow Us :

শঙ্কর নাথ রায়ের ১২ খন্ডে লেখা ভারতের সাধক অনেকেই পড়েছেন৷ অনেকে পড়েননি৷ এই ১২ টা খন্ডে ভারতবর্ষের বহু সাধকের কথা আছে৷ বিস্তৃতভাবেই তাদের জীবনী আছে৷ ত্রৈলঙ্গস্বামী, বামাখ্যাপা, কাঠিয়াবাবা, নিগমানন্দ, রামানুজ, ভোলানন্দ গিরি, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, পওহারি বাবা থেকে অসংখ্য সাধু সন্ন্যাসীদের জীবনী। তাদের অধিকাংশই থাকতেন পাহাড়ে, হিমালয়ে, লোকচক্ষুর আড়ালে৷ কখনও সখনও নেমে এসেছেন, গৃহী ভক্তদের দীক্ষা দিয়েছেন৷ আবার ফিরে গিয়েছেন৷ চলে গিয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। তাদের নিয়ে কত উপাখ্যান, কত মিথ, কত গল্প।

মুসলমান সন্ত ফকিরদেরও দেখা গিয়েছে এইসব দুর্গম অঞ্চলে৷ তাঁরাও সাধনায় মত্ত থেকেছেন৷ তাঁদেরও চমৎকার সব কাহিনী বহু লেখাতে পাওয়া যায়, ইবন বতুতার লেখাতে এমন বেশ কিছু মুসলমান সাধকের কথা আছে৷ স্বাধীনতার পরেও এই বাবাজি, মাতাজী, সন্ত, ফকিররা থেমে থাকেননি৷ রাজনীতির আঙিনায় তাদের দেখা গিয়েছে৷ আনন্দময়ী মা বা ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীর সঙ্গে নেহরু বা ইন্দিরা গান্ধীর সম্পর্ক ছিল৷ পরবর্তীকালে মাচান বাবা মাথায় পা ঠেকিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন রাজীব গান্ধীকে৷ এসব আমরা জানি।

বিজেপির নেতাদের তো এমনিতেই, হাজার বাবাজি মাতাজীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। নরেন্দ্র মোদির জামানায়, বাবা রামদেব, দক্ষিণের সদগুরুর ফুলে ফেঁপে ওঠা ব্যবসার কথাও আমরা সব্বাই জানি। তাঁরা যে রাজনীতিতে প্রভাবশালী, তাঁদের উপদেশ আর নির্দেশ যে আজকের নেতারা, বিশেষ করে বিজেপি নেতারা নিয়ে থাকেন, তার হাজার একটা উদাহরণ আছে। প্লেনে বসে আলাপ রামদেবের সঙ্গে গায়ক বাবুল সুপ্রিয়র৷ তারপর বাবুল সুপ্রিয়ের আবদারে রামদেব তাঁর নাম সুপারিশ করেন মোদিজীর কাছে, ওনাকে আসানসোলে টিকিট দেওয়া হয়৷ নির্বাচিত হবার পর তিনি মন্ত্রীও হন৷ এ গল্প বাবুল সুপ্রিয় নিজেই বলেছেন৷ এসব ছিল, খুব চট করে পালটে যাবে এমনও নয়৷ কিন্তু এ তাবত কোনও বাবাজীকে ৩০০ লক্ষ কোটি টাকার কোনও কোম্পানিকে চালাতে দেখা যায়নি৷ ৩০০ লক্ষ কোটি টাকা৷ কার টাকা? সেখানে টাকা ঢেলেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশন, আই এফ সি এল, আই ডি এফ সি ইত্যাদিরা, এরাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী৷ মানে আদতে এখানে আমার আপনার টাকাই খাটছে৷ খুব সোজা ভাষায় এটা একটা স্টক এক্সচেঞ্জ, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানিকে নথিভুক্ত করা হয়, তাদের শেয়ার ইত্যাদি কেনা বেচা হয়, অপারেটিং প্রফিট ৭০%, মানে বিরাট লাভজনক প্রতিষ্ঠান, সেই এন এস ই বা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ কে চালাচ্ছে একজন বাবাজী

কে জানাচ্ছে এই তথ্য? সেবি, দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া, এটা আবার কী? এরা হল অর্থ দফতরের অধীনে এক প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ হল এই অর্থ বাজার, শেয়ার বাজার বা পণ্য বাজারের নজরদার, পাহারাদার, চৌকিদার। তো বাবাটি কে? সেবি জানাচ্ছেন, তাঁরাও জানেন না ওই বাবার আসল পরিচয়। বেশ, তো বাবাজী থাকেন কোথায়? সেবি জানাচ্ছে, ঠিক জানা নেই৷ কিন্তু মনে হয় হিমালয়ে গঙ্গার ধারে কোথাও একটা৷ হ্যাঁ সেবি এটা বলছে। তো কিভাবে জানা গেল এমন একজন বাবাজী আছেন, যাঁর নির্দেশে আমার আপনার পয়সায় তৈরি ৩০০ লক্ষ কোটি টাকার কোম্পানি চলছে? আজ সেটাই জানাবো

বাবাজীর কথা বলব৷ তার আগে এক মহিলার কথা একটু বলে নিই, যাঁর কথা অনেক মোটিভেশনাল টকে অনেকে উদাহরণ দেন৷ একজন মহিলা কত ওপরে উঠতে পারেন, এই পুরুষ শাসিত সমাজে কতটা ক্ষমতা নিয়ে এক ৩০০ লক্ষ কোটি টাকার কোম্পানি চালাতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৯৬৩তে জন্ম নেওয়া, ৫৯ বছরের চিত্রা রামকৃষ্ণন ২০১৩-তে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিজনেস লিডারশিপ পুরস্কার পেয়েছেন৷ অন্য কথা বলার আগে বলে রাখি উনি, ২০১৬ তে অবসর নেবার আগের তিন বছরে মাইনে পেয়েছেন ৪৪ কোটি টাকা৷ শেষ ৮ মাসে তিনি পেয়েছেন ১৮ কোটি টাকা৷ এক বছরের প্যাকেজ ছিল ৯ কোটি টাকার৷ মানে এক বছরের মাইনে ৯ কোটি টাকা.. ৯০০ লক্ষ টাকা… মাসে ৭৫ লক্ষ টাকা, তুমি তো প্রহর গোনো, তারা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি৷ মনে পড়ে গেল। তো এই চিত্রা রামকৃষ্ণন এক অজ্ঞাত বাবাজি, যিনি নাকি হিমালয়ে থাকেন, তেনার নির্দেশেই চলতেন, বেশকিছু ই মেল পাওয়া গিয়েছে, কোথায়? ওই সেবির কাছেই আছে৷ তাতে জানা যাচ্ছে, ওই বাবাজী, চিত্রা রামকৃষ্ণনকে নিয়ে সেশলস দ্বীপে গিয়েছেন, স্বর্ণ বালুকাবেলায় ঘেরা এক বিলাসবহুল দ্বীপ, জানিয়েছেন সমুদ্র স্নানের কথা, জানিয়েছেন চুলের বাহারের কথা।

আপনি বলতেই পারেন একজন অ্যাডাল্ট, অন্য আরেকজন অ্যাডাল্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে আমি বলার কে? সত্যিই তো, কিন্তু বলছি কারণ বিষয়টা কেবল সেশলস ভ্রমণ নিয়ে নয়, সেই বাবাজি এনএসই-র প্রতিদিনের কাজকর্মের নির্দেশও দিতেন, কাকে কোন পোস্টে নিয়োগ করতে হবে তার নির্দেশও তেনার কাছ থেকেই আসত৷ আনন্দ সুব্রমনিয়মকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হল৷ তেনার নির্দেশে৷ কেবল তাই নয়, এই আনন্দ সুব্রমনিয়ম, যিনি এর আগে বামার লরিতে বছরে ১৫ লক্ষ টাকা মাইনে পেতেন, তিনি এখানে পাচ্ছেন ৪.২১ কোটি টাকা, ২৮ গুণ বেশি, কেন? ইনি ওই বাবার লোক।

কে এই বাবা? এনএসই জানে না৷ সেবি জানে না৷ নির্মলা সীতারমণ জানেন না৷ দেশের প্রধানমন্ত্রীও জানেন না৷ কিন্তু এনার নির্দেশে এনএসই-র সিইও, দিল্লির বসন্ত বিহারে তেনার সঙ্গে বৈঠক করতে যান। কী চলছে? আমাদের টাকা, বহু মানুষের কষ্টার্জিত সামান্য টাকা খাটে এই শেয়ার মার্কেটে৷ শেয়ার কেনেন না? এসআইপি করেন? মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখেন? ঘুরিয়ে সেই টাকা এই খানেই বিনিয়োগ করা হয়। যারা সেটা করে তাঁরা চলছেন এক অদৃশ্য বাবাজির নির্দেশে৷ তাঁর পরিচয় কেউ জানে না, বা জানে কেবল মাথারা, কোন বিনিময়ে তাঁদের বিবেক বিক্রি হয়েছে, তা আমরা জানি না।

আচ্ছা এই ঘটনা কি খুব নতুন? না। এসব ই মেল সেবির কাছে রয়েছে, আজ থেকে নয়, অন্তত ৪/৫ বছর আগে থেকেই রয়েছে, আই পি অ্যাড্রেস দেখে ওই বাবার ঠিকানা বার করা হচ্ছে না কেন? সেখানেও কি আরও কোনও বাবা, বা বাবার ছেলেরা জড়িত আছে? এক অদৃশ্য বাবাজি দেশের ৩০০ লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, সেবি চুপ, অর্থমন্ত্রী চুপ, সিবিআই চুপ, ইডি চুপ, দেশের চৌকিদার নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী চুপ৷ কারোর মুখে কথা নেই৷ তাঁরা মৌনিবাবা হয়ে বসে রয়েছেন৷ না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা বলেছিলেন৷ এখন কেবল খাওয়া নয়, লুঠমার চলছে, সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি নেহরুর ভুল বার করছেন, করতে গিয়ে হাজারটা অশিক্ষিত, মিথ্যে বলছেন।

যদি সত্যিই সরকার চায়, তাহলে এক মিনিটে বের হয়ে যাবে এই বাবাজির পরিচয়৷ বেরিয়ে যাবে অজস্র ঘোটালা, চিহ্নিত করা যাবে তাদের যারা আপনার আমার, দেশের কোটি কোটি টাকা নয় ছয় করছে৷ কিন্তু সরকার চায় না৷ বরং সরকার এদের আড়াল করতেই ব্যস্ত, এটা আজ পরিষ্কার। এর আগে ইয়েস ব্যাঙ্কের কথা বলেছিলাম৷ কিভাবে রাণা কাপুরকে ইয়েস ব্যাঙ্কের মাথায় বসানো হল, কিভাবে তিনি লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দিলেন তাঁর বন্ধু বান্ধবদের, যাঁরা সেই ঋণ পরিশোধ না করে ইয়েস ব্যাঙ্ককে ডকে তুলে দিল, সেদিন হৈ-চৈ এর পরে সেই রাণা কাপুরকে জেলে পাঠানো হয়েছিল৷ গতকাল তিনি বেল পেয়ে এখন জেলের বাইরে, আবার অন্য কোথাও পাবলিকের টাকা মেরে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হবে৷ দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা নয় ছয় করছে, সেদিকে সরকারের নজর নেই, নজর কোথায়?

বিরোধী রাজনীতিবিদদের ওপর, বিরোধী দলের এম পি, এম এল এদের সিবিআই ডাকছে, ইডি রেড করছে, প্রত্যেকটা নির্বাচনের আগে একই ঘটনা৷ উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের আগে অখিলেশ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের, সমাজবাদী দলের হয়ে কটা কথা লেখা, সংবাদ পত্রের দফতরে পৌছে যাচ্ছে ইডি, আয়কর দফতর৷ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়কে গ্রেফতার করা হচ্ছে৷ ইডি রেড হচ্ছে, ঠিক যেমনটা হয়েছিল বাংলায় নির্বাচনের আগে।

দেশের পয়সা, দেশের সম্পদ লুঠমার হচ্ছে, দেশের পয়সায় চলা ইডি, আয়কর বিভাগ, সিবিআইকে কাজে লাগানো হচ্ছে বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য, এক বিপদজনক প্রবণতা তৈরি হচ্ছে, সাংবিধানিক সংস্থা, ভিজিলেন্স সংস্থাকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার, এই সরকার ঘোটালার সরকার, এই সরকার অদৃশ্য সেই বাবাজি মাতাজীদের সরকার, যারা দেশকে এক বিরাট বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এদের রুখতে হবে, রুখতেই হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Weather Forcast | বর্ষা এসে গেছে, আজকে ভাসবে কোন কোন জেলা? জেনে নিন আপনার এলাকার আপডেট
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | মাত্র ৩৯০০ সেকেন্ড ইরানের অ‍্যা/টাকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, কে এগিয়ে? কোন দেশের কত ক্ষতি? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Modi | Trump | ট্রাম্পের মধ‍্যস্থতায় ভারত-পাক সংঘ/র্ষ বিরতি হয়নি, স্পষ্ট জানালেন বিক্রম মিস্রি
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | খামেনির দাবার চালে ছারখার ইজরায়েল, পালানোর পথ নেই নেতানিয়াহুর
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | পাল্টা মা/র খামেনির তেল আভিভে, ব‍্যাক টু ব‍্যাক মি/সা/ইল ছাই হচ্ছে ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
Weather Forcast | বর্ষা এসে গেছে, আজকে ভাসবে কোন কোন জেলা? জেনে নিন আপনার এলাকার আপডেট
05:37
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | বিলুপ্ত প্রায় শান্তিপুরের তাঁত?
02:15
Video thumbnail
Iran-Israel | মাত্র ৩৯০০ সেকেন্ড ইরানের অ‍্যা/টাকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না ইজরায়েল
03:42
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, কে এগিয়ে? কোন দেশের কত ক্ষতি? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
06:27