Thursday, June 19, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ভূস্বর্গ কাশ্মীরে নতুন করে হিংসা, টার্গেটেড কিলিংস

চতুর্থ স্তম্ভ: ভূস্বর্গ কাশ্মীরে নতুন করে হিংসা, টার্গেটেড কিলিংস

Follow Us :

কাশ্মীরে আবার আতঙ্ক, আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র৷ অবশ্যই আতঙ্কিত কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ, কাশ্মীরে কাজ করছেন, বসবাস করছেন যে সমস্ত হিন্দু মানুষজন এবং সেই সব কাশ্মীরি মুসলমানরাও, যাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, শান্তির কথা বলছেন, উগ্রপন্থার বিরোধিতা করছেন। কারণ কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ এক নতুন চেহারা নিচ্ছে৷ এক্কেবারে নতুন, যা ৮০ র দশক থেকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি৷ এই বিপদ কোথা থেকে এল? কিভাবে জন্মাল? কাদের অবিমৃষ্যকারীতার জন্য জন্মাল৷ আসুন তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

মূলত ৮০ র দশক থেকে কাশ্মীর অশান্ত, তার আগে কাশ্মীর সমস্যা ছিল দু দেশের মধ্যে, দু দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে৷ হঠাৎ হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হত, দু দেশের কিছু সেনা মারা যেতেন৷ সঙ্গে মারা যেতেন দু’ধারের গ্রামে বসবাস করতে আসা, ভেড়া চরাতে আসা কিছু গ্রামবাসী৷ এ ছিল ৪৭ থেকেই সাধারণ ব্যাপার৷ তারপর ৮০-র দশক থেকে জন্ম হল দেশের ভেতরে পাকিস্তানের সাহায্য নিয়ে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদের৷ সীমান্ত পেরিয়ে আসল কালাশনিকভ, গ্রেনেড, বারুদ। এই সন্ত্রাসবাদীরা হত্যা করল নির্বিচারে, বাজারে, জনবহুল এলাকায়, বিভিন্ন সরকারি দফতরের সামনে, এমন কি মসজিদেও। নির্বিচার হত্যায় কেবল হিন্দু নয়, কাশ্মীর ব্রাক্ষণ নয়, বহু মুসলমানও মারা গেল, সে কথা আগেই বলেছি৷ ওই ভুয়ো কাশ্মীর ফাইলসের গাল গল্প নয়, সন্ত্রাসবাদীরা যখন যাকে ভারতের তরফে মনে করেছে, তাকেই খুন করেছে৷ হিন্দু, মুসলমান, কাশ্মীরি, নন কাশ্মীরি নিয়ে কোনও বাধ বিচার তাদের ছিল না, থাকার কথাও নয়৷ কারণ তারা তো লড়ছে ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে, পক্ষ এবং বিপক্ষের লড়াই। কিছু হিন্দু যারা গোপনে তাদের সাহায্য করেছে, করছিল, তাদের ওই উগ্রপন্থীরা কিছু বলেনি, পুলিশ ফাইলস সেই কথা বলছে৷ আবার কাশ্মীর আন্দোলনের নেতা, কিন্তু পাকিস্তানের সাহায্য নিয়ে উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী নন, তাঁকেও মারা হয়েছে।

এরপর ভিপি সিং এর সরকার, একধারে বাম, অন্যধারে বিজেপির সমর্থন৷ ভারতকে সবক শিখানা হোগা, অতএব সহজ টার্গেট কাশ্মিরী ব্রাক্ষণদের মারো, তারা ভয়ে পালাবে, তারা পালালে দেশের সরকারের মুখ পুড়বে, তাদের মারা হলো, তাঁরা পালালেন, সরকারের মুখ পুড়লো? ভি পি সিং তখন নিজেদের গদি বাঁচাতে ব্যস্ত, বিজেপি রাম মন্দির নিয়ে। রাজীব গান্ধী পার্লামেন্ট ঘেরাও না করলে ঘটনার গুরুত্ব বোঝাই যেত না৷ ওই ঘেরাও এর পরে কাগজের হেডলাইন হল, কাশ্মীরি পন্ডিতরা ভূস্বর্গ ছেড়ে পালাচ্ছেন। ওদিকে বিজেপির বা তাদের গাইড, ফিলোজফার, মেন্টর আরএসএসের অশিক্ষিত বিশ্লেষণ শুরু থেকেই ছিল, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দাও, ব্যস, কাশ্মীরকে কড়া হাতে দমন কর, উগ্রপন্থা দূর হয়ে যাবে৷ এই বিরাট জিও পলিটিক্যাল, হিস্টোরিক্যাল সমস্যা বোঝার সাধ্য বা দায় কোনওটাই তাদের ছিল না৷ ধারা ৩৭০ তুলে দেওয়ার নিদান তারা আজ নয়, বহু আগে থেকে বলে আসছে৷ যেই নিজেদের জোরে সরকার তৈরি করল, আচমকা, জোর করে, কারফিউ জারি করে, ইন্টারনেট, প্রেস বন্ধ করে, বিরোধীদের জেলে পাঠিয়ে ওনারা ৩৭০ ধারা বাতিল করলেন৷

কেবল বাতিল করাই হল না, সেই ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারের আবেদনও পড়ে রইল৷ এখনও পড়ে আছে। সারা দেশে প্রচার, চুটকি বাজিয়ে মোদিজি ৩৭০ তুলে দিলেন, এত দিনের পাপ দূর হল। একই ধারা ৩৭১ উত্তর পূর্বাঞ্চলে কেন থেকে গেল? তারা মুসলমান নয় বলে? সে সব জবাব এল না৷ প্রচারের ঘোড়া দৌড়াতে থাকলো৷ কখনও বলা হল, এবার বিকাশ হবে, এবার শিল্প হবে, এবার ভারতবর্ষের যে কোনও মানুষ কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবেন, বিজেপি যুব নেতারা তো কাশ্মীরি মহিলা বিয়ে করতে পারবেন, এই কথায় পুলকিত বোধ করলেন, চোখের সামনে কাশ্মীর কি কলি। ৫ অগস্ট ২০১৯ , ৩৭০ ধারা তুলে, কাশ্মীরকে দু’ভাগ করে, রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নয়া ইতিহাস রচনা হছে বলে জানালেন বিজেপি নেতারা৷ কদিন আগে অমিত শাহ এক সেমিনারে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন, তিনি এখন সেমিনারেও ভাষণ দেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে হক তো আছে, সেখানে তার কথায় ঝরে পড়লো ব্যঙ্গ৷ বেশিদিন আগে নয়, ১৯ মে ২০২২ এ তিনি বলছেন,  চুটকি মে সমাধান হো গয়া?

তো এখন কী হচ্ছে? আগেই আলোচনা করছিলাম, কাশ্মীরে এই যে মৃত্যু মিছিল, সেই মৃত্যু হয় কি ভাবে? প্রথম হয় সীমান্ত সংঘর্ষের ফলে, সেনাও মারা যান, কিছু গ্রামবাসিও। দ্বিতীয় হল বিভিন্ন বিক্ষোভ না সামলাতে পেরে পুলিশ, মিলিটারিদের গুলি, লাঠি, টিয়ার গ্যাস ইত্যাদির ফলে মৃত্যু। তৃতীয় হল উগ্রপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, উগ্রপন্থী হিসেবে গ্রেপ্তার করার পরে থানায়, হাজতে মৃত্যু। চতুর্থ হল পাকিস্থান থেকে হাতিয়ার নিয়ে বেড়ে ওঠা উগ্রপন্থা, তাদের হাতে মারা যায় সাধারণ মানুষ, সেনা, পুলিশ, সরকারি কর্মচারী। এরা ট্রেন্ড উগ্রপন্থী, হাতে কালাশ নিকভ, সীমান্তের ওপার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে, এই চার ধরণের অ্যাকটিভিটির ফলে সাধারণ মানুষ, হিন্দু, মুসলমান, কাশ্মীরি, নন কাশ্মীরি, সেনা, উগ্রপন্থী, উগ্রপন্থী সন্দেহে কাশ্মীরি যুবক, সরকারি কর্মচারী ইত্যাদির মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০২১, থেকে এক নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে, কিছু কাশ্মীরি যুবক, যারা উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত নয়, তাদের যাবতীয় যোগাযোগ ইন্টারনেটে করা হচ্ছে, কী করতে হবে, কাকে মারতে হবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তারপর তাদেরকে ছোট রিভালবার পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা গিয়ে খুন করছেন, কেউ কেউ ধরা পড়ছে, পুলিশ, মিলিটারির গুলিতে মারাও যাচ্ছে৷ অনেকেই ধরা পড়ছে না কারণ তাদের কোনও পাস্ট রেকর্ড নেই৷ তাদের অস্ত্র খুব বড় কালাশনিকভ বা ওই গোত্রের কিছু নয়, ছোট্ট রিভালবার, কাজ শেষ করে , অস্ত্র ফেলে দিয়ে, ঘরে ফিরে যাচ্ছে। ধরা পড়লেও এদের কাছ থেকে বিশেষ কোনও তথ্য জানা যাচ্ছে না, কিন্তু এই টার্গেটেড কিলিংস, বিরাট চাপ তৈরি করছে।

গত ২০২১ ফেব্রুয়ারি তে খুন করা হল শ্রী নগরের বিখ্যাত কৃষ্ণা ধাবার মালিকের ছেলেকে, ধাবার ভেতরেই, ওই সাধারণ রিভালবার দিয়েই। ৫ অক্টোবর ২০২১, কাশ্মীর ছাড়বো না বলেছিলেন কেমিস্ট, পরিচিত কাশ্মীরি ব্রাক্ষণ মুখ এম এল বিন্দ্রু, তাঁর দোকানেই তাঁকে খুন করা হল৷ আবার সেই একই ভাবে। সুপিন্দর কাউর, দীপক চাঁদ, দুজনেই শিক্ষক, দুজনকেই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পরিচয় পত্র দেখতে চাইল এক যুবক, তারপর গুলি৷ আবার সেই ছোট অস্ত্র ব্যবহার হল, একে ৪৭ বা একে ৫৬ নয়, কাশ্মীরি পন্ডিত রাহুল ভাটকে সরকারি অফিসে ঢুকে মারা হল, রজনি বালা বা বিজয় কুমারের হত্যাও একই ভাবে, এবং এই মৃত্যু একদিকে যেমন প্যানিক তৈরি করছে, অন্যদিকে প্রশাসনেরও ঘুম ছুটেছে। কাশ্মীরি পন্ডিতরা, কাশ্মীরি হিন্দুরা পালাচ্ছেন, লক্ষ্য অন্তত জম্মু, বাকিরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেই ৯০ এর পর আবার কাশ্মীর ব্রাক্ষণদের পলায়ন শুরু, সেবার বিজেপির সমর্থনে সরকার ছিল, এবার বিজেপিরই সরকার, ওদিকে কাশ্মীর ফাইলস হয়ে গিয়েছে, প্রডিউসার, ডিরেক্টার যথেষ্ট রোজগার করেছেন, এবার আরও অন্য বিষ ছড়ানোর কাজে হাত দিয়েছেন, কিন্তু কাশ্মীরে আগুন লেগেছে আবার, আবার জ্জ্বলছে ভূস্বর্গ।

এমন কিন্তু নয় যে ২০১০ বা ১১ র তুলনায় হত্যার সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু যেটা সমস্যা সেটা হল এই হত্যার চেহারা টা বদলেছে, এবার হত্যাকারীরা পাশের ঘর থেকে উঠে আসছে, এক সামাজিক হিংসা জন্ম নিচ্ছে, এর সমাধান পুলিশি ব্যবস্থা, মিলিটারি ডিপ্লয়মেন্ট এর মধ্যে নেই, এর সমাধান কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের মধ্যে রয়েছে, অবশ্যই সেই সমাধান তো একদিনেই হবে না, হবে নাই তো। কিন্তু যতদিন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হয়, অন্তত ততদিন উসকানি দেওয়া বন্ধ করুন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে হাজার সিকিউরিটির মধ্যে বসে বলছেন, কেউ বলেছিল রক্তের নদী বইবে? কিচ্ছু হয়নি। উগ্রপন্থীরা কাশ্মীরে বসে সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী সমেত বিজেপির নকড়া ছকড়া নেতারাও, কাশ্মীর ফাইলস এর মত জঘন্য উসকানি দেওয়া সিনেমার প্রচার করছেন, কাশ্মীর ঘাঁটিতে উগ্রপন্থীরা সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন, তারা সরকারের মুখ পোড়াতে চায়, তারা বেছে বেছে কিছু কাশ্মীরি ব্রাক্ষণ, পন্ডিতদের খুন করে তাদের ভয় দেখাচ্ছে, যাতে তাঁরা ভ্যালি ছেড়ে পালায়, তাঁরা পালাচ্ছেনও, এবং এবার আর কালাশনিকভ বা বিরাট প্ল্যানিং লাগছে না, টার্গেটেড কিলিংস এক নতুন অধ্যায় শুরু করল কাশ্মীরে, যার জন্য দায়ী আমাদের সরকার, নরেন্দ্র মোদির সরকার।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
OBC | Supreme Court | ওবিসি রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার
03:31:05
Video thumbnail
RSS | ২৬- এ ভোটের RSS -এর নয়া স্ট্র্যাটেজি, ফল হবে বাংলায়?
01:14:21
Video thumbnail
UN Report | মধ‍্যপ্রাচ‍্যে যু/দ্ধের আবহে UN রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
01:46:40
Video thumbnail
Sealdah AC Local | রেলযাত্রীদের জন্য সুখবর, শীঘ্রই শিয়ালদহ শাখায় চালু হতে চলেছে AC লোকাল
38:25
Video thumbnail
TMC | BJP | ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে ১ সপ্তাহে ভে/ঙে পড়ল সেতু, গর্জে উঠল তৃণমূল, কী করবে বিজেপি?
45:26
Video thumbnail
Trump | Modi | ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি খারিজ মোদির, শুনুন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়ন্ত ঘোষালের ব্যাখ্যা
01:53:35
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের কল্পনার বাইরে গিয়ে ইরানের হা/ম/লা খামেনির পরিকল্পনায়
01:57:45
Video thumbnail
Pakistan Train | মধ‍্যপ্রাচ‍্যে যু/দ্ধের আবহে পাকিস্তানের ট্রেনে বি/স্ফো/রণ দেখুন কী অবস্থা
46:01
Video thumbnail
Modi-Trump | হঠাৎ ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ মোদির, কী জানালেন জয়রাম রমেশ?
43:06
Video thumbnail
Iran-Israel | মাত্র ৩৯০০ সেকেন্ড ইরানের অ‍্যা/টাকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না ইজরায়েল
02:34:51