কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: রাজস্থানের রাজনৈতিক পরম্পরায় ২ দলীয় শাসন ব্যবস্থাই এতদিন কায়েম ছিল। কখনও বিজেপি, কখনও কংগ্রেসের বাইরে রাজপুত-মারোয়াড়িদের পছন্দ ঘোরাফেরা করেনি। কিন্তু, এবার বোধহয় সোনারকেল্লার রাজ্যে লাল সূর্য মাথাচাড়া দিতে চলেছে। রাজস্থানের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির সাম্প্রতিক সংসদ নির্বাচনে এসএফআইয়ের (SFI) বিপুল জয়ে সেই পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। যাকে সর্বভারতীয় বদলেরও সংকেত বলে স্বপ্নের জাল বুনছে লালফৌজ। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের তামাম যুবসমাজের এই রায়ে চেয়ার নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস-বিজেপির।
মরুপ্রদেশের যুবমানসে বদলের এই ঝড়কে অনেকেই কংগ্রস-বিজেপির প্রতি সাধারণ মানুষের বীতশ্রদ্ধাকেই দায়ী করেছেন। যার প্রভাব পড়েছে গত ২৭ অগাস্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ফলাফলে। এই ভোটে কংগ্রেসের ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (NSUI) একটি সংসদেও সভাপতি পদে জিততে পারেনি। অপরদিকে, বিজপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP) মাত্র ৫টি সভাপতি পদে জয় পেয়েছে। সেখানে এসএফআই ৭টিতে সভাপতি পদে জয় ছিনিয়ে এনেছে।
রাজ্য সরকার অনুমোদিত কলেজ নির্বাচনেও কংগ্রেস ও বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। বিশেষত মফসসল এলাকার কলেজে উচ্চবর্ণের দুই পার্টি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভিল প্রদেশ বিদ্যার্থী মোর্চা (BPVM) উদয়পুর, বংশওয়ারা, দুঙ্গারপুর এবং প্রতাপগড়ের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ১৮টি কলেজে জিতেছে। ছাত্র ভোটের এই ফলাফলে কংগ্রেস ও বিজেপি দুই শিবিরেই জোর ধাক্কা লেগেছে।
আরও পড়ুন:Anubrata Mandal: অভিষেককে ইডি-তলবে ‘নাচব নাকি’, জবাব কেষ্টর
যোধপুরের জয়নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ে জোর ধাক্কা খেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের পুত্র বৈভব। এখানে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস ছাত্র নেতা এসএফআইয়ের টিকিটে দাঁড়িয়ে এনএসইউআই প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে এই যোধপুর থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন গেহলট-পুত্র। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি সরাসরি এনএসইউআই প্রার্থীকে মদত দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও এসএফআই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
জয়পুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি শোচনীয় ফল করেছে। ফলাফলে তারা চতুর্থ স্থানে চলে এসেছে। এখানে গেহলট ও শচীন পাইলট অনুগামীদের গোষ্ঠী লড়াইয়ে অফিসিয়াল কংগ্রেস প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। ক্যাবিনেট মন্ত্রী মুরারিলাল মিনার মেয়ে নিহারিকা জোরওয়াল হেরে গিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফল বলে দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা রাজ্যের বাস্তব জমি থেকে নিজেদের যোগসূত্র ছিন্ন করাতেই এমনটা ঘটেছে। রাজস্থান সেই রাজ্য, যেখানে ভবিষ্যতের নেতার জন্ম হয় ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়িতেই। বড় দলগুলি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচনে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢালে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতিদের অনেক ক্ষেত্রেই লোকসভা বা বিধানসভায় টিকিট দেওয়া হয়। বরাত ভালো থাকলে তাঁদের কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়ে যান।