কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের হেভিওয়েট নেতা পার্থ চট্টপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন মাস হয়ে গেল। এখনও তদন্ত (Investigation) চলেই চলেছে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তে আর কত সময় লাগবে? বিচারপতি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, অনন্তকাল ধরে কোনও কেস চলতে পারেনা। তার উত্তরে সিবিআই জানায়, এই মামলায় তদন্ত চালাতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে তাদের। তদন্তে কতদূর অগ্রগতি হয়েছে, তা জানার জন্য বিচারপতি কেস ডায়েরিও দেখতে চান তদন্তকারী সংস্থার কাছে। জানতে চান, কেস ডায়েরি স্যাংশন হয়েছে কিনা। উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী (CBI Lawyer) বলেন, তাঁরা গত মাসের ৩০ তারিখ অবগত করেছেন, তবে এখনও সেই সংক্রান্ত কোনও প্রত্যুত্তর পাননি। সোমবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে আলিপুর জজ কোর্টে (Alipur Judge Court) তোলা হয়েছিল। সিবিআই মামলায় শুনাননির পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের জেলহেফাজতের মেয়াদ ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা ইডি’র মামলায় জেলহেফাজতের মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে আদালত।
আদালতে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার পর আদালতের সামনে সিবিআইয়ের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, ডায়েরিতে লাল মার্ক করা রয়েছে। তা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, পরিকল্পনা করে এই অপরাধ ঘটানো হয়েছে। বিচারক তখন জানতে চান, সিবিআই তো চার্জশিট (Chargesheet) দিয়ে দিয়েছে, তাতে এদের নাম আছে, এরপর আপনার আবার কি আবেদন? সিবিআইয়ের তরফে যুক্তি দেওয়া হয় প্রত্যেকে ক্ষমতাবান। জামিন দিলে প্রমাণ লোপাট হবে। প্রচুর প্রমাণ ছড়ানো আছে এখনও। আরও ছয় মাস সময় লাগবে সমস্ত প্রমাণ একত্রিত করতে। বেআইনি নিয়োগ নিয়ে প্রচুর তথ্য আছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করা বাকি। সিবিআইয়ের করা মামলাতে ৩৫০ জন রয়েছেন, অপর মামলাতে এক হাজার জনের মতো প্রার্থী রয়েছে। সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সময় লাগবে। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে। আদালতে সামনে সিবিআইয়ের দাবি ছিল, কাউকে যেন জামিন না দেওয়া হয় তদন্ত চলাকালীন।
আরও পড়ুন: TET Agitation: প্রাথমিকের টেটে বয়স পেরিয়ে যাওয়া প্রার্থীর ইন্টারভিউয়ের নির্দেশ আদালতের
আদালতের সামনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবীর যুক্তি ছিল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আগামী দিনে অন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে। তদন্ত কতদিন চলবে। প্রভাবশালী বলা হচ্ছে। তিনমাস ধরে তাঁর মক্কেল হেফাজতে রয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ, নানান অসুখে তিনি ভুগছেন। তাঁর টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে। এসএসকেএম-এর রিপোর্ট রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ইডি (ED)-র বক্তব্য ছিল, হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। এসএসকেএম-এর রিপোর্টে কিছু হবে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখ্যোপাধ্যায় মামলায় ইডি’র বক্তব্য, এই মামলায় অনেক চাকরিপ্রার্থীর কান্না রয়েছে। স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে প্রভাবশালীরা এসএসকেএম (SSKM)-এ গিয়ে আশ্রয় নেন। সেটা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ যাচাই করে দেখুন। তাই জন্যই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বর এইমস (AIMS)-এ পাঠানো হয়েছিল। হাজার হাজার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট রিকভার করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার মানুষ। সেসব পড়ে তদন্ত করতে তাঁর সময় লাগবে। তাছাড়া ডিলিট হওয়া চ্যাট রিকভার করতেও সময় লাগছে।
এদিকে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতের সামনে অভিযোগ করেন, তাঁর মক্কেলের জন্য তিনি জামিনের আবেদন করছেন না। রিমান্ড কপিতে কিছু নেই, কোর্ট মেকানিক্যাল অর্ডার দিচ্ছে। তার উত্তরে বিচারক বলেন, যদি তাই মনে হয়, তাহলে কোর্টের মেকানিক্যাল অর্ডারের বিরুদ্ধে আপনারা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন না কেন? এই মামলায় ইডি’র তদন্তকারী অফিসার উপস্থিত না থাকার বিষয়টি তুলে ধরারও চেষ্টা করেন অর্পিতার আইনজীবী। ইডি’র আইনজীবী তার উত্তরে জানান, তদন্তকারী অফিসার ডিউটিতে ব্যস্ত রয়েছেন।