পেট চালাতে মাত্র বারো বছর বয়সে জুতো পালিশ শুরু করেন। অবশ্য তার আগে দশ বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করলেও দারিদ্রের কারণে বেশি দূর এগোতে পারেননি। কৈশোর অবস্থাতেই যোগ দেন যন্ত্রাংশের কারখানায়। আর সেখানেই কাজ করার সময় বাঁ হাতের কড়ে আঙুল কাটা যায়। এই অসম্ভব সংগ্রামী জীবনের পটভূমিকে হাতিয়ার করে লড়াইয়ে ফেরার এক আশ্চর্য উদাহরণ হয়ে তৃতিয় বারের জন্য ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দা সিলভা।
শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হিসাবে রাজনীতিতে হাত পাকানো। এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে গোটা দেশে ইস্পাত ও ধাতুশিল্পের শ্রমিক নেতা হিসাবে তিনিই ছিলেন সব মহলে অত্যন্ত পরিচিত। ব্রাজিলে সামরিক শাসনের সময় শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত করতে থাকেন। দেশের ওই পরিস্থিতিতে যা ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। ১৯৮০ সালে বেশ কিছু বুদ্ধিজীবি আর শ্রমিক নেতা মিলে তৈরি করেন ওয়ার্কার্স পার্টি। শুরু থেকেই যার প্রথম সারিতে ছিলেন লুলা। ১৯৮৬ সালে ব্রাজিলের পার্লামেন্টের সদস্য হন গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে। অবশ্য ১৯৮৯ সালে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অবশ্য জিততে পারেননি দেশে বামপন্থী শিবিরের অগ্রগন্য ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
তেরো বছরের মধ্যে আসে সাফল্য। ২০০২ সালে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আবার ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০০৬ সালে ফের নির্বাচিত হন লুলা দা সিলভা। ততদিনে গোটা লাতিন আমেরিকায় বামপন্থী রাজনীতির অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন লুলা। ঠিক একারণেই দক্ষিণপন্থীদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন এই বামপন্থী রাজনীতিক। ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যে অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্ষন্ত ৫৮০ দিন জেলে থাকতে হয় দেশের দুবারের প্রেসিডেন্টকে। যদিও ২০২১ সালে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট সেই সব অভিযোগই খারিজ করে দেয়।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রাজিলে তৃতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন লুলা। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে তাঁকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা করোনা-পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতির গতি ফেরানো আর দেশের দরিদ্র অংশের মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা। যে স্লোগানকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন কারাজীবন কাটানোর পর প্রায় রূপকথার সাফল্যের উড়ানে ফের ব্রাজিলের মসনদে বামপন্থী লুলা।