ভিজিঞ্জাম: সিঙ্গুরের (Singur) জমি আন্দোলনের ধাঁচে সমুদ্র ও মৎস্যজীবীদের রুটিরুজি রক্ষার আন্দোলন চলছে কেরলের (Kerala) তিরুবনন্তপুরমের কাছে গৌতম আদানিদের ( Gautam Adani) সমুদ্র বন্দর ভিজিঞ্জামে (Vizhinjam)। হাইকোর্ট (Kerala High Court) একাধিকবার আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তারা সেখানে ছাউনি গেড়ে বসে রয়েছে।
প্রতিবাদীদের আদালত এও বলেছে যে, পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দুর্বল ভাবার কারণ নেই। প্রতিবাদীরা যেন অবিলম্বে প্রকল্প এলাকার গাড়ি বন্দর এলাকায় ঢুকতে দেয়। তাতেও অনড় আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়ে দিয়েছে যে, কোনও অবস্থাতেই ওখান থেকে ছাউনি সরানো হবে না। তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: Delhi Incident: মাদকাসক্ত যুবক কুপিয়ে খুন করল বাবা-মা, বোন, ঠাকুমাকে
প্রতিবাদীরা সংখ্যায় বেশি না-হলেও আন্দোলনস্থলে প্রায় ৩০০ রাজ্য পুলিশ দিবারাত্র পাহারায় বসে রয়েছে। কারণ, শাসকদলের সরকার মনে করছে, জোর করে আন্দোলন তুলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, প্রতিবাদীরা মূলত খ্রিস্টান। অপরপক্ষে এই আন্দোলনস্থলের ঠিক বিপরীতে বন্দরের পক্ষে থাকা বিজেপি (BJP) এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিও পৃথক মঞ্চ গড়ে তুলেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। আদানি গ্রুপের দাক্ষিণাত্য বিজয়ের মতোই কেরলের এই সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে পরিবেশ রক্ষা ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় ৫৬ হাজার মানুষের জীবনধারণের সঙ্কটের কথা তুলে আন্দোলন শুরু হয়। প্রতিবাদীদের দাবি, বন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে উপকূলে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরপর আরও নির্মাণকাজ হলে স্থানীয় মানুষের জীবিকা বিপদে পড়বে।
তারপরই আন্দোলনে নামে এই এলাকার মানুষ। ভিজিঞ্জামে আদানিদের বিশালাকার বন্দর প্রকল্পে ঢোকার প্রধান রাস্তা আটকে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। ১২০০ বর্গফুটের একটি সাধারণ মঞ্চ বেঁধে সেখানে অনির্দিষ্টকালের দিবারাত্র প্রতিবাদ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে বসে পড়েন তাঁরা। এই রাস্তারই উল্টোদিকে আবার বিজেপি এবং হিন্দু সংগঠনগুলি বিরুদ্ধ মঞ্চ বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। এত কিছু সত্ত্বেও সিপিএম শাসিত (CPM) কেরলের পুলিশ প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ, এতে রাজ্যের আপামর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হতে পারে দল ও সরকারকে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকার অবিলম্বে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দিক। বন্দর নির্মাণের ফলে সামুদ্রিক জৈবচক্রের উপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে নিরপেক্ষ সমীক্ষা করা হোক।
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী খ্রিস্টান যাজক ইগুয়েন এইচ পেরেইরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ থাকলেও তাঁরা নড়বেন না এবং মঞ্চ খুলবেন না। তিনি বলেন, দরকার পড়লে আমরা সবাই গ্রেফতার হবো। সরকার আমাদের গ্রেফতার করুক।
আদানি গ্রুপ একটি বিবৃতিতে বলেছে, সম্পূর্ণ আইন মেনেই তারা কাজ করছে। এই প্রকল্পের আগেই অনেকগুলি সমীক্ষা, পরীক্ষানিরীক্ষা, আইআইটি-র রিপোর্ট নিয়েই কাজে নামা হয়েছে। বিবৃতিতে এই ধরনের আন্দোলনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজ্যের স্বার্থের পরিপন্থী বলে বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে পরিবেশ ও জীবিকা রক্ষার লড়াইয়েও ধর্মের রং লেগেছে। আন্দোলনস্থলে কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার বলেন, একদিকে সমুদ্র-নির্ভর মানুষ, যারা মূলত খ্রিস্টান, অপরপক্ষে মূল ভূখণ্ডের মানুষ, যারা হিন্দু, তাদের মধ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এই কারণেই আমরা শক্তি প্রয়োগ করছি না। কারণ, এর মধ্যে যদি কেউ আত্মহত্যা করেন বা হুমকি দেন, তাহলে যে কোনও মুহূর্তে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। তাই আমরা দুপক্ষের মাঝখানে বসে শান্তিরক্ষা করে চলেছি।