Sunday, June 22, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: গো হাগ ডে, নির্দেশ এবং নির্দেশ ফেরত 

Fourth Pillar: গো হাগ ডে, নির্দেশ এবং নির্দেশ ফেরত 

Follow Us :

গো হাগ ডে, কথাটা অশ্লীল শোনাচ্ছে? তা শোনাক। কথাটা নতুন কিছু নয়, প্রায় সমার্থক শব্দ আছে নেদারল্যান্ডসে, ডাচ ভাষায়। হাওয়ে কেনাফলেন, বহুদিন যাবত নেদারল্যান্ডসে এই রীতি আছে। আপনি গাড়ি চড়ে চলে যাবেন বিশাল প্রান্তরে গোশালায়। ঘাসে মোড়া সেই চারণভূমিতে বিশালাকায় গরু জাবর কাটছে, তাদের একটাকে বেছে নিন, আদর করুন, বসুন, ছবি তুলুন এবং ফেরার পথে আপনার জন্যে একটা মিল ফ্রি, খেয়ে বাড়ি যান। দক্ষিণা কমবেশি ৩৫–৭০ ইউরো, টাকায় ৩৫০০ থেকে ৭০০০ দিয়ে ওই হাওয়ে কেনাফলেন, মানে গরুকে আলিঙ্গন করে আপনার দেহে মনে ফূর্তি আসবে এটাই অনেকে বলেন, অনেকে বিশ্বাস করেন, যদিও বৈজ্ঞানিক কোনও গবেষণা তা সমর্থন করেনি। খানিকটা দিলুবাবুর গরুর দুধে সোনা থাকে বলে কিছু গরুর দুধের রং হলুদ হয়, সেই রকম। আসলে যে কোনও পোষ্য, সে কুকুর হোক, পাখি হোক, ছাগল, থেকে বাঘ বা শিম্পাঞ্জি, পোষ মানা সেই পশুর কাছে থাকলে আদর করলে আমাদের ভালো লাগে, সেও রেসিপ্রকেট করে, সেটাও ভালো লাগে, মন ভালো হয়ে যায়। তো গ্রাম বাংলা, গ্রাম ভারতের মানুষজন সকালে উঠে প্রতিদিনই ওই গো হাগ ডে করে, তাদের চান করিয়ে দেয়, খেতে দেয়, এ তো নতুন কিছু নয়। এ এক জাদু কি ঝপ্পি, মন ভালো হয়ে যাওয়ার ওষুধ। কেন এরকম হয়? 

সাইক্রিয়াটিস্টরা বলছেন পোষ্যদের আনুগত্য শর্তহীন, মানে আপনার পোষা কুকুরটা আপনাকে দেখলেই ল্যাজ নাড়াবে, কোলে উঠতে চাইবে, আপনার ঘোড়া আপনাকে দেখলেই ডাক ছাড়বে, আপনি পিঠে চড়লেই তার আনন্দ, গরুরও তাই, এ নতুন তো কিছু নয়, ইউরোপের নাগরিক ব্যস্ত জীবনে গরু কই? পোষ্যই বা ক’জনের? তাই নতুন হুজুগ হাওয়ে কেনাফলেন। কিন্তু সেসব হাগ টাগ ইত্যাদি হয়ে গেলে রেস্তোরাঁয় ঢুকে রিব আই স্টেক খেতে তাঁদের বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না, বিন্দুমাত্র না। নেদারল্যান্ডসে ৯৫ শতাংশ মানুষ আমিষভোজী, গোট ইউরোপজুড়ে এই ভেজ, ভেগান ইত্যাদি আলোচনার মধ্যেও এদেশের প্রতিটি মানুষ গড়ে ৩৬ কিলোগ্রাম পর্ক আর ১৫ কিলোগ্রাম বিফ খায়। তাহলে মোদ্দা কী দাঁড়াল? নাগরিক জীবনের বহু টানাপড়েন সামাল দিতে না পারা ইউরোপের মানুষজন এই হাওয়ে কেনাফলেন নামক এক হুজুগের জন্ম দিয়েছে। যার সঙ্গে এই গোমাতা, গোপূজন, গৌঃ গাবৌ গাবঃ ইত্যাদির কোনও সম্পর্কই নেই। কিন্তু এতদিন পরে হঠাৎ মোদি সরকারের এক মন্ত্রক থেকে এই সার্কুলার এল কেন? মানে এরকমটা মনে হতেই পারে যে এক বিচারবুদ্ধিহীন কোনও মন্ত্রী বা আমলা এই নির্দেশ জারি করেছিলেন, সরকারের চোখে তা পড়ায়, সেই সার্কুলার ফেরত নেওয়া হয়েছে। 
না, এমনটা হলে আলোচনার কিছুই থাকত না, কিন্তু এমনটা হয়নি। বহুদিন ধরেই এর প্রস্তুতি নেওয়া চলছিল, এখন সেটাই আবার আমরা দেখলাম। প্রথমত খেয়াল করে দেখুন অন্য কোনও দিন নয়, বেছে নেওয়া হল ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে, প্রেম দিবসকে। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রেম দিবস নিয়ে বিজেপি, বজরঙ্গ দল, এবিভিপি ইত্যাদি সংগঠনের ভূমিকা আমরা দেখেছি।  লাঠিসোটা নিয়ে একান্তে বসে থাকা প্রেমিক প্রেমিকাদের মারধর করা, তাদের বাবা মা-কে ডেকে আনা ইত্যাদির ছবি আমরা দেখেছি। আবার দেখুন, মোদিজির রাজ্যে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বজরঙ্গ দলের তাণ্ডব। (https://youtu.be/PsbnTEEZg2c) যে দলের নেতা বিবাহিত স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেয় না, সে দল প্রেম এক নিষিদ্ধ সম্পর্ক, এরকম ধারণা পোষণ করবে, এতে তো অবাক হবার কিছু নেই। এই ভ্যালেনটাইনস ডে-তেই বেশ ক’বছর ধরে সাতসকালে মেসেজ আসত, এসব বিদেশি প্রেম দিবসে সময় কাটাচ্ছেন, অথচ একবারও মনে পড়ল না যে আজ ভগৎ সিংয়ের শহীদ দিবস। দেশের জন্য এই স্বাধীনতা সংগ্রামী আজই ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিয়েছিলেন। তারপর অনেকেই যখন লিখতে শুরু করল ভগৎ সিংকে ২৩ মার্চ লাহোর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই, তখন ক’ বছর ধরে চলা এই প্রচারও স্তিমিত হয়ে গেল, থেমে গেল। তাহলে নতুন কিছু চাই, তাই ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে কাউ হাগ ডে। এক ঢিলে দুই পাখি, বিদেশি ভ্যালেন্টাইনস ডে-র বদলে একটা নতুন দিনের জন্ম হল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে গায় হমারা মাতা হ্যায়, তীব্র মুসলমান বিরোধী জিগিরের জন্মও দেওয়া গেল। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: রাজ্যপাল নিয়োগ, বিতর্ক এবং মোদিজির ঘোলাটে অবস্থান 

সব মিলিয়ে এক নতুন ন্যারেটিভ, তার সঙ্গে ইউরোপীয় হুজুগের মিশেল, দেখেছ, ইউরোপও জানে গরুকে জড়িয়ে ধরলে এনার্জি পাওয়া যায়, ওরা আমাদের বেদ থেকে এসব শিখে গেল, আমরা শিখলাম না, ইত্যাদি ইত্যাদি ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে। প্রাচীন মানুষেরা যখন যাযাবর জীবন শেষে এগ্রিকালচারাল এরা, চাষবাসের যুগে ঢুকছে, তখন বুঝেছিল গরু মোষ ইত্যাদি হল সম্পদ, এদের বাঁচাতে হবে। তখন তো কৃত্রিম প্রজননের বিজ্ঞান তারা শেখেনি, তাই এই গোমাতা, গো পূজন ইত্যাদি দিয়ে দুগ্ধবতী গরু, সন্তান হবে এমন গরু ইত্যাদিকে ভক্ষণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ এই বিশাল বৈজ্ঞানিক সভ্যতায়, কৃত্রিম প্রজনন গরুর সংখ্যা ধরে রাখতে সক্ষম, তাই ইউরোপে ওই হাওয়ে কেনাফলেনও আছে আবার ওই ইউরোপেই পার ক্যাপিটা বিফ কনজাম্পশন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ কিলোতে। মানে প্রতিটা মানুষ বছরে ৬৮ কিলোগ্রাম বিফ খায়। কিন্তু অসভ্য বর্বর ইতিহাসের পেছনের দিকে চলতে থাকা এই মানুষদের তো সেটা বোঝানো সম্ভব নয়। উল্টে তারা মানুষকে বোঝাতে চায়, গরুর কুঁজে সোনা আছে, গরু জড়িয়ে ধরলে অসুখ সেরে যায়, এবং সেই জন্যই এই কাউ হাগ ডে-র অবতারণা। 

গরু আমাদের মা, এই ধারণাটা কোন সময়ে আমাদের সমাজে তৈরি হল? বাবা মাসি বা জ্যাঠা না বলে মা কেন বলা হল? যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে সবে সবে মানুষ থিতু হয়েছে। রোজ বনে গিয়ে শিকার করে তবে হাঁড়িতে রান্না বসানোর চিন্তা থেকে মুক্ত। ছাগল ভেড়া গরু আছে। তাদের মাংস, দুধ, এছাড়া জমিতে চাষও সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু সম্পদ তখনও গোনা হয় গরু ভেড়া ছাগলের সংখ্যা দিয়ে। আর ক’দিন পর থেকে জমির আয়তন দিয়ে বোঝা যাবে কে কত সম্পদশালী। এরকম সময়ে গরুর মাংস জনপ্রিয় ছিল। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। রাম লক্ষণ ভরত শত্রুঘ্নর বিয়ের পরদিন মেয়ে চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি, রাজা জনকের মন খারাপ। এমন সময় খবর এল ঋষি পরশুরাম আসছেন। জনক রাজার টনক নড়ল। হাঁক দিলেন কে আছিস কোথায়, একটা নধর দেখে বাছুর হাজির কর, পরশুরাম সুপক্ক গোবৎস পছন্দ করেন। ব্রাহ্মণ তো বটেই তিনি ঋষি পরশুরাম, তিনি গরু খেতেন। কিন্তু ক্রমশ গৃহপালিত পশু হিসেবে ছাগ মেষের মাংস খাওয়া হতে লাগল, গরুর ব্যবহার দুধের জন্য, হাল টানার জন্য। ক্রমশ ব্রাহ্মণরা নিজেদের কৌলিন্য ও স্বাতন্ত্র বজায় রাখার জন্য নিরামিষাশী হতে শুরু করলেন, অন্তত উত্তর ভারতে। এর মধ্যে বৌদ্ধদের সমাজ নীতিতে খাবারের কোনও বিচার নেই, পরে আসছে ইসলাম। আরও কঠোর হল ব্রাহ্মণ সমাজ। গরুকে মা, মায়ের মতো পূজনীয় বানানো হল, তার মাংস খাওয়া তো দূরের কথা, মারাও পাপ বলে চিহ্নিত করা হল। কিন্তু সমাজ তো সবটা ধর্মীয় বিধানে চলে না, সমাজের নিজস্ব যুক্তিবোধ আছে যতক্ষণ না তাকে কেড়ে নেওয়া হয়। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: আদানি, মোদি, সংসদ এবং আরও কিছু দরকারি কথা 

বুড়ো গরু বা এঁড়ে গরু কিনতে আসত যারা, বেলা পড়লে তাদের বিক্রি করে দেওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। কারণ তাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবার বিলাসিতা কারওরই ছিল না। চলছিল এভাবেই। এরপর বিজেপি আসিল। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এল। কোনও না কোনও ছুতোয় স্লটার হাউস বন্ধ করে দেওয়া হল। গরুকে না খাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দিন শুরু করেন না। গরু খাওয়া মারা তো ছেড়েই দিন, গাড়িতে করে নিয়ে যেতে গেলেও মাঝরাস্তায় ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। অতএব বিক্রি বন্ধ। এ অবস্থা সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। যাদের ঘরে বৃদ্ধ দুধ না দেওয়া গরু আছে তারা রাতের বেলায় পিটিয়ে গ্রামছাড়া করছে মাকে। এবং এঁড়ে গরু বছর দেড়েক রাখার পরই ছেড়ে দেওয়া হছে। এই ছেড়ে দেওয়া গরুর দল আতঙ্ক তৈরি করেছে। তারা ফসল তছনছ করছে, সারারাত সারাদিন ফসল পাহারা দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিছু গরু ষাঁড়কে ভরে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় স্কুলে, সে আর এক কাণ্ড। মায়ের কাণ্ডকারখানায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠছে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে। ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই বছরে গোশালা তৈরি করার জন্য। ঠিক এই সময়ে খবর এল, উত্তরপ্রদেশে মৈনপুরির কাছে নাগলা রক্ষিয়া গ্রামে ১৫০টা গরু রাখার গোশালা থেকে গরুদের বের করে দেওয়া হয়েছে কারণ তাদের দেওয়ার মতো জল এবং খাবারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতেই হাজির গো হাগ ডে, কিন্তু আধুনিক ভারতের যুবক যুবতী, কিশোর কিশোরীরা তো আরএসএস-এর ঠিকে নেয়নি, তারাই আমাদের ভরসা। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে যে খিল্লি শুরু হল, তারপরে সার্কুলার ফেরত না নেওয়াটা সামলানো যেত না, তাই খানিক মুখ পুড়িয়ে ফেরত নেওয়া হল সার্কুলার। এদিকে গরু বসে আছে আলিঙ্গনের জন্য, ওদিকে দেবব্রত বিশ্বাসের ভরাট গলায় গান ভেসে আসছে—
কেন চেয়ে আছ, গো মা, মুখপানে।
এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।
এরা তোমায় কিছু দেবে না, দেবে না— 
মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভানে।।
  

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Trump | Khamenei | আমেরিকার হা/ম/লার পর ক্ষে/পে আ/গুন খামেনি, পাল্টা কী করবে ইরান? দেখুন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
Trump | হা/ম/লাতে ইরানের বড় ক্ষ/তি হয়নি, ট্রাম্পের দাবি নস্যাৎ খোদ মধ্যপ্রাচ্যের পর্যবেক্ষক
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের মি/সা/ইল হানায় ছা/ই হয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল, এই ভিডিও না দেখলে বিশ্বাস করবেন না
00:00
Video thumbnail
Iran | America | ইরানে কোন বো/মা ফেলেছে আমেরিকা? কী কী ক্ষতি হতে পারে ইরানের? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Iran | America | ইরানে হা/মলা, আমেরিকাকে জবাব দেবে ফ্রান্স?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | 'ট্রাম্প আমেরিকার লজ্জা', বি/স্ফো/রক স্কট রিটার, দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
07:58
Video thumbnail
Donald Trump | যু/দ্ধের বিরুদ্ধে ভ্যান্স, এবার কী করবেন ট্রাম্প? দেখুন বড় খবর
06:35
Video thumbnail
Iran | Trump | ট্রাম্পের কথা শোনেনি ইরান, মুখ বাঁচাতে ফাঁকা মাঠে বো/মা বর্ষণ আমেরিকার?
07:56
Video thumbnail
Trump | Khamenei | আমেরিকার হা/ম/লার পর ক্ষে/পে আ/গুন খামেনি, পাল্টা কী করবে ইরান? দেখুন বড় আপডেট
05:08
Video thumbnail
Trump | হা/ম/লাতে ইরানের বড় ক্ষ/তি হয়নি, ট্রাম্পের দাবি নস্যাৎ খোদ মধ্যপ্রাচ্যের পর্যবেক্ষক
00:52