কলকাতা: ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি…।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই জনপ্রিয় গানের কলির চিত্রনাট্য এবার আদালতের এজলাসে (Court)। দীর্ঘ বিরহানল যেন ফের দপ করে জ্বলে উঠল পার্থ-অর্পিতার ‘দূর-দর্শনে’। ভার্চুয়াল হাজিরার (Virtual Appearance) আগে ও পরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Former Education Minister Partha Chatterjee) এবং তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) শরীরী ভাষায় ফুটে উঠল অব্যক্ত কত কথা! পদাবলি কাব্যের কবি বেঁচে থাকলে হয়তো আবার লিখে ফেলতেন ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর’এর মতো অবিস্মৃত আর একটি পদ। মঙ্গলবার এজলাসে টাঙানো মনিটরে সেই সব মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
সময় তখন দুপুর ২টো ৫০ মিনিট। পর্দায় ফুটে উঠলেন পার্থ-অর্পিতা। একে অপরকে দেখেই মুচকি হাসি। ‘ভালো আছ তো, বলো ভালো আছ তো…’ নেপথ্যে যেন গেয়ে উঠলেন মান্না দে। দুজনেই জানতে চাইলেন ইশারা করে। ইশারাতেই মিলল আকাঙ্ক্ষিত জবাব, ভালো আছি। তার মিনিট চারেক পর ২টো ৫৪ মিনিটে পার্থর ফের ইশারা। অর্পিতার কাছে জানতে চাইলেন, তাঁর খাওয়া হয়েছে? অর্পিতাও পাল্টা জিজ্ঞেস করেন পার্থ খেয়েছেন কিনা! অর্পিতা ইশারা করে জিজ্ঞেস করেন শুনতে পাচ্ছ? পার্থ জানান, না। একইভাবে ইশারায় পার্থ পাল্টা প্রশ্ন করেন অর্পিতাকে। অর্পিতাও জানান, শুনতে পাচ্ছেন না। তাতেও বিজ্ঞানের ঊর্ধ্বে এক শব্দতরঙ্গে যেন চলতে থাকে বার্তালাপ।
আরও পড়ুন: Bratya Shashi PC | দল কারও দুর্নীতির দায় নেবে না, জানালেন ব্রাত্য-শশী
এরপর অর্পিতার দিকে জিভ বের করে দেখাতে দেখা গেল পার্থকে। তা দেখে হেসে ফেলেন অর্পিতা। আবার অর্পিতার প্রশ্ন, উনি খেয়েছেন কিনা? এরপর অর্পিতার দিকে কল্পিত হৃদয়ের ছবি এঁকে দেখান পার্থ। তা দেখে আবার হাসতে থাকেন অর্পিতা। ৩টো ৮ মিনিট নাগাদ নিজের নীল রংয়ের ফতুয়া হাত দিয়ে দেখালেন পার্থ। তা দেখে অর্পিতা মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলেন, ভালো দেখাচ্ছে, মানিয়েছে বেশ।
৩টে ১০ মিনিটে আবার অর্পিতা পার্থকে ইশারায় জিজ্ঞেস করেন যে, চা খেয়েছেন কিনা। ঠিক ওই সময় পার্থ বুকের বাঁদিকে আঙুল দিয়ে কিছু লেখার ইশারা করেন। ৩টে ১১ মিনিটে আবার একে অপরকে দেখে হাসতে থাকেন। ৩টে ১২ মিনিটে হঠাৎ পার্থর স্ক্রিন ৩০ সেকেন্ডের জন্য সংযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অর্পিতাকে তখন ব্যস্তসমস্ত হয়ে স্ক্রিণের সামনে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। পার্থর ছবি ফুটে উঠতেই অর্পিতার মুখ দেখে মনে হল, হাতে চাঁদ পেলেন।
৩টে ১৭ মিনিটে অর্পিতা হঠাৎ নিজের চুলের গোছা সামনে নিয়ে এলেন। তা দেখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল পার্থর মুখে। সলজ্জ হয়ে উঠলেন অর্পিতা। পার্থর গোঁফ দেখে ভালো লাগছে বলে ইশারা করে জানালেন অর্পিতা। ৩টে ২২ মিনিট নাগাদ আবার ডিসকানেক্ট হয়ে যান পার্থ। সেই একই উৎকণ্ঠায় স্ক্রিনের দিকে এগিয়ে আসেন অর্পিতা। পার্থর স্ক্রিন ফিরতেই ইশারায় অর্পিতা জানতে চান, কেন ডিসকানেক্ট হল? পার্থ ইশারা করে জানান, চা খাচ্ছিলাম।
সাড়ে ৩টে নাগাদ অর্পিতা ঠোঁট দিয়ে কিছু ইশারা করেন। যা দেখে পার্থ ইশারায় বলেন, তাঁর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? এরপরই আদালতের কাজ শুরু হলে তাঁরা কোর্টের দিকে নজর দেন। বিচারকের সামনে নিজেদের বক্তব্য শেষ করার পর কোর্ট যখন শেষ হচ্ছে, তখন পার্থ অর্পিতাকে লক্ষ্য করে বুড়ো আঙুল তুলে সবকিছু ঠিক আছে জানান। নেপথ্যে আবার যেন মান্না দে গেয়ে উঠলেন, আবার হবে তো দেখা…। জবাবে অর্পিতা কিছু লেখার ইশারা করেন…।