ইম্ফল: অশান্ত মণিপুরে (Manipur) সেনা নামল। বৃহস্পতিবার হিংসাদীর্ণ এলাকাগুলিতে সেনাবাহিনী (Indian Army) জওয়ানরা টহল দেয়। রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে মহিলা বক্সিংয়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন (World Boxing Champion) মেরি কম (Mary Kom) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi) উদ্দেশ করে টুইটে (Tweet) লিখেছেন, আমার রাজ্য জ্বলছে, কিছু করুন। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ। কেউ নিরাপদে নেই। আমরা শান্তি ও সম্প্রীতি চাই। বুধবার রাত ২টো ৪৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করেন মেরি কম।
তফসিলি উপজাতিদের নিয়ে আদালতের একটি রায়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষুদ্র এই পাহাড়ি রাজ্যে নতুন করে হিংসাত্মক উত্তেজনা তৈরি হয়। গতকাল রাতেই ৮টি জেলায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনা নামাতে হয়। এদিনও রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের কয়েকটি এলাকায় হিংসা ছড়ায়। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষকে সেনা শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেনা ও আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Amartya Sen | এখনই কোনও পদক্ষেপ নয়, অমর্ত্য-বিশ্বভারতী জমি বিতর্কে নির্দেশ হাইকোর্টের
ভারতীয় সেনা এবং অসম রাইফেলসের জওয়ানরা সব সম্প্রদায়ের লোক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সেনার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, পাঁচ দিন মণিপুর (Manipur) জুড়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা (Internet and Mobile Internet এervices) বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য (North-Eastern State) মণিপুরের বিষ্ণুপুর (Bishnupur) এবং চূড়াচাঁদপুরে (Churachandpur) নতুন করে হিংসার ঘটনা (Violence Incident) ঘটেছে একাধিক স্থানে। তার জেরে কর্তৃপক্ষ (Authorities) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, রাজ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানে কার্ফু (Curfew) জারি করা হয়েছে বলে খবর। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর জেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি কোড অর্থাৎ সিআরপিসি’র (Code of Criminal Procedure – CrPC) ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি (Imposed Prohibitory Orders) করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিধি ও নিয়ম অনুসারে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি দল বেঁধে রাস্তায় বেরতে পারবেন না। এছাড়া, বৈধ লাইসেন্স ছাড়া লাঠি, পাথর, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি যদি কারও কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে আইন অনুযায়ী।
গত ২৮ এপ্রিল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের (Manipur Chief Minister N Biren Singh) একটি অনুষ্ঠানমঞ্চ ও উদ্বোধনস্থল আগুনে ছাই করে দেয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত ফোরাম (Tribal Leaders Forum)। বিজেপি (BJP) নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে চেয়ার, মঞ্চ, সাজসজ্জা সব কিছু ভেঙে তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে প্রায় সমস্ত আয়োজন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুপুরে রাজ্যের চূড়াচন্দপুর জেলায় একটি জিম ও ক্রীড়া কেন্দ্রের (Gym-cum-Sports Facility) উদ্বোধন করার ছিল বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর।
আদিবাসী ফোরামের অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল (Reserved and Protected Forest) এবং জলাভূমি (Wetlands) সমীক্ষা করছে। যা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে। এমনকী ফোরামের এও অভিযোগ যে, সম্প্রতি রাজ্য সরকার গির্জা ভেঙে দিচ্ছে। সম্প্রতি এরকম কয়েকটি গির্জা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে আদিবাসী ফোরামের মধ্যে।
আদিবাসী ফোরামের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অসহযোগ আন্দোলন চলবে। সরকারের সমস্ত অনুষ্ঠান বানচাল করে দেবে তারা। উল্লেখ্য, ফোরামের এই আন্দোলনকে কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (Kuki Students Organisation) সমর্থন করেছে। তাদের অভিযোগ, আদিবাসীদের প্রতি বিজেপি সরকার বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। এই মাসের গোড়ার দিকে সরকার অবৈধভাবে নির্মাণের দায়ে তিনটি গির্জা ভেঙে দেওয়ায় ভিতরে ভিতরে ফুসছিল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ।