কলকাতা: বদলি করা হয়েছে বহু চর্চিত আইপিএস দময়ন্তী সেনকে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পদে ছিলেন দময়ন্তী সেন। সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ ধর্ষণ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যাঁদের ওপর তদন্তভার ন্যস্ত করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম দময়ন্তী সেন। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। তবে ২০১২ সালে কলকাতা পুলিশ থেকে বদলি করে দেওয়া হয় তাঁকে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছিল দময়ন্তীকে।
কলকাতা থেকে সরিয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ডিআইজি পদে বদলি করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সাতবছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফের কলকাতা পুলিশে ফেরানো হয়। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) পদে আনা হয় তাঁকে। সেই বদলির আগে তিনি ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পদে। তবে ফের একবার কলকাতার বাইরে পাঠানো হল দময়ন্তীকে।
আরও পড়ুন: Coromandel Express | Runs | ভয়াবহ স্মৃতিকে সঙ্গী করেই বুধবার থেকে ফের লাইনে ছুটবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস
এবার কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে ‘এডিজি ট্রেনিং’ পদ। মঙ্গলবার সেই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও তাঁকে কলকাতা পুলিশের পদ থেকে বদলি করা হয়েছিল। সেই বদলি নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। পরে ২০১৯ সালে ফের কলকাতা পুলিশে ফেরেন তিনি। এবার আবারও বদলি।
মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, কলকাতার পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (২) পদ থেকে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে দময়ন্তী সেনকে। জানা যায়, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর বদলি হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এডিজি (প্রশিক্ষণ) পদে নিয়োগ করা হচ্ছে তাঁকে। প্রসঙ্গত, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তের ভার পড়েছিল দময়ন্তী সেনের উপর। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন এই আইপিএস অফিসার। এর আগেও একাধিক মামলায় হাইকোর্টের সিট-এ স্থান পেয়েছিলেন দময়ন্তী।
প্রসঙ্গত, লালবাজারের প্রথম মহিলা গোয়েন্দা প্রধান হয়েছিলেন দময়ন্তী সেন। তবে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে সাফল্য আসার পরও তাঁর বদলি হয়েছিল ব্যারাকপুরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। পরে সেখান থেকে দার্জিলিংয়ে ডিআইজি রেঞ্জে বদলি করা হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে সিআইডি-র ডিআইজি পদে নিযুক্ত হন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ফের কলকাতা পুলিশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকে। তবে এই দফায় কলকাতা পুলিশে চার বছর কাটতে না টাকতেই ফের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হল তাঁকে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্তের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এটা ধর্ষণের ঘটনা নয়। পরে কলকাতা পুলিশের তৎকালীন নগরপাল আরকে পছনন্দা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন এটি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা নয়। তবে দময়ন্তী সেন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। সেই ঘটনায় যেভাবে কম সময়ের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাতে চর্চায় উঠে আসে এই আইপিএস অফিসারের নাম।এরপরই তড়িঘড়ি দময়ন্তী সেনকে কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবারও একাধিক ধর্ষণ ও রাজনৈতিক খুনের হাইপ্রোফাইল মামলায় যেভাবে দময়ন্তীকে হাইকোর্ট বাড়তি দায়িত্ব দিচ্ছে, তা শাসকদলের জন্য ‘অস্বস্তিকর’ বলে মনে করছেন বিরোধীরা। আর তাই ফের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে দময়ন্তীর বদলি হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।