বৃষ্টি-অসুরের (Rain) দাপাদাপিতে কাহিল মা দুগ্গা (Goddess Durga)। আর এক পক্ষকাল পরেই মহাষষ্ঠী (Maha Shashthi)। কিন্তু, ঘোর বর্ষাকাল (Monsoon) কেটে গেল খর-রোদের তেজে। এখন শরতের আকাশে বরুণদেবের অকাতর ‘আশীর্বাদ’ অভিশাপ রূপে নেমে এসেছে বাংলার বুকে। আসছে শনিবারের পরের শনিতে মহালয়া (Mahalaya)। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা। কিন্তু বিধি বাম। অকাল বোধনের প্রাকলগ্নে বিদায়ী বর্ষণের প্রলয় নাচনে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মৃৎশিল্পী (Clay Artists) থেকে পুজো উদ্যোক্তা (Puja Organisers) সহ বাজারেও (Puja Shopping)। উমার পিতৃগৃহে আগমনীর সুর বেজে ওঠার আগেই যেন বিজয়ার ভেলা দুলছে বাংলার ভাগ্যাকাশে।
কাঁচা মেটে মা দুগ্গার শরীর শুকোতে কালঘাম ছুটছে কুমোরটুলির (Kumortully) মৃৎশিল্পীদের। কলকাতার কুমোরটুলির অলিগলিতে এখন প্লাস্টিকের আড়ালে অসুরকে নিয়ে মুখ লুকিয়ে আছেন হিমালয়সুতা। অসুরও (Asura) নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। নিধন করবেন কী, মা দুগ্গাও বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ফায়ার গান ও আগুনে সেঁকছেন নিজেকে। একদিকে উদ্যোক্তাদের তাড়া, অন্যদিকে বৃষ্টির চোখরাঙানিতে শাঁখের করাতের দশা শিল্পীদের। কারও প্রতিমা শুকোচ্ছে না। কারও রঙের প্রলেপ পড়লেও তাতে দ্বিতীয়বার রংয়ের পোঁচ দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিমাগুলির মাথার ছাঁচ থেকে মুখ বের করা হলেও তাতে কাঠকয়লা জ্বেলে শুকোতে হচ্ছে। সবথেকে বিপত্তি নিরন্তর বৃষ্টিতে উপর থেকে পড়তে থাকা জল। সব মিলিয়ে সময়ের আগে প্রতিমার কাজ শেষ করাই চ্যালেঞ্জ কুমোরটুলির শিল্পীদের কাছে।
আরও পড়ুন: বাড়ি থেকে নজরদারি, জরুরি ভিত্তিতে ছুটি বাতিলের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
পুজো মানেই কলকাতা। কারণ এই শহরে দুর্গাপুজোর থিমের চমক দেখতে ভিনরাজ্য থেকেও এসে ঘাঁটি গাড়েন মানুষ। ফি-বছর নতুন থিম গড়তে ডার্বি ম্যাচ চলে বড় বড় উদ্যোক্তাদের মধ্যে। উত্তর থেকে দক্ষিণ এর বিরাম নেই। কিন্তু এই বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে উদ্যোক্তাদের দিনরাতের ঘুম। থিমের কারিগর শিল্পীরাও বুঝতে পারছেন না কীভাবে কাজ শেষ হবে। মণ্ডপের ভিতরে জল বাঁচিয়ে কাজ করা নিরস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার শামিল। প্লাই, টিন, ত্রিপলের বর্ম ভেদ করে জল নামছে। যেখানে জল জমে সেখানে তো চোখের জলে নাকের জলে হতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। রাস্তার উপর রেখে কোনও কাজই করা যাচ্ছে না।
নিউ আলিপুর, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট, ভিআইপি রোড, শিয়ালদহ, উত্তর কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেল ভয়ঙ্কর দশা। যেসব পুজো মাঠ কিংবা পার্কে হয়, সেখানে জলেকাদায় থইথই অবস্থা। থিম শিল্পীদের কথায়, এই অবস্থায় সাধারণভাবেই রাত জাগতে হয়। কিন্তু, এ যা অবস্থা তাতে কাজই তো করা যাচ্ছে না। জানি না, মা দুগ্গার কী ইচ্ছা!
পুজো মানেই নতুন জামাকাপড়, সাজগোজ। চুল থেকে জুতো সবেতেই নতুনের স্পর্শ। কিন্তু, বৃষ্টিতে জলে যাচ্ছে পুজোর বাজারের রমরমা। বিশেষত ফুটপাতের দোকানদারদের পরিত্রাহী অবস্থা। ক্রেতা নেই। তাই ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেরাও মুখ কালো করে বসে আছেন। কলকাতা জলমগ্ন, কিন্তু পার্ক স্ট্রিট থেকে গড়িয়াহাট, নাগেরবাজার থেকে শ্যামবাজার-হাতিবাগান মায় বড়বাজারেও পুজোর কেনাকেটায় চলছে ভাটা। শহরের বাইরে থেকে যাঁরা পুজোর বাজার করতে মহানগরীতে আসেন, তাঁরা তো নেই-ই। শহুরেরাও বাজারে আসছেন না। এই অবস্থায় কবে এই দুর্যোগের মেঘ কাটবে সেই আশাতেই রয়েছেন তাঁরা। মাস পয়লার সপ্তাহেই বৃষ্টিতে বেচাকেনা মাঠে মারা যাওয়ায় লোকসানে ডুবছেন অনেকেই।