অন্ডাল : উখড়া গ্রামের অন্তিম ভাগে তেলিপাড়ার ব্যানার্জী বাড়ির দুর্গাপুজো (Banerjee Barir Durga Puja)। পুজোটি ঠিক কত বছর আগে সূচনা হয়েছিল এই বিষয়ে লিখিত কোন প্রমাণ নেই । তবে ব্যানার্জী পরিবারের দাবি, সম্ভবত পুজোটি সূচনা হয়েছিল ১২৩৫ বঙ্গাব্দে । সূচনা করেছিলেন পরিবারের আদিপুরুষ স্বর্গীয় রামধন বন্দোপাধ্যায়। পরিবারের দেবী দুর্গার নামটি অদ্ভুত রকমের। এখানে দেবী বীজ খেকো নামে পরিচিত এলাকায়।
স্বর্গীয় রামধন বন্দ্যোপাধ্যায় ১২৩৫ বঙ্গাব্দে মাটির ঘর ও তালপাতার আচ্ছদন সহকারে মন্দির নির্মাণ করে সেই মন্দিরে দুর্গাকে প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চমুন্ডি দিয়ে নির্মিত বেদীর উপর দুর্গা এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন । এক চালার সপরিবার দুর্গামূর্তিটি এখানে প্রথা বিরুদ্ধ। এখানে গণেশ থাকেন মায়ের ডানদিকে আর কার্তিক বামদিকে। দেবী পূজিত হন শাক্ত মতে। অতীতে বোধন হত ১৫ দিন আগে। আর বোধন থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত এখানে মোট পাঁচটি ছাগ বলি হত। এই প্রথা অবলুপ্ত হয়েছে বহু বছর আগে। বর্তমানে শুধুমাত্র অষ্টমী ও নবমীর দিন ছাগ বলি হয় । আর সপ্তমীর তিথিতে হয় চাল কুমড়ো বলি। কিছুটা হলেও কমেছে পুজোর জৌলুস। সবেকিয়ানা এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোয় রয়েছে নানান রীতি।
আরও পড়ুন: আজও পুজোয় ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানাকে ধরে রেখেছে সুরুল জমিদার বাড়ি
ব্যানার্জী বাড়ির দুর্গা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি জনশ্রুতি । অতীতে কোন এক বছর অনাবৃষ্টির ফলে মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে যায় । ব্যানার্জী বাড়ির পুজো আর্থিক অনটনের জন্য সেবার বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল । এবার মায়ের পুজো হবে না শুনে আগত মৃৎশিল্পী ব্যানার্জী বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেন । যাওয়ার সময় গ্রামের শেষ প্রান্তে রাস্তার পাশে পুকুরে নামেন হাত পা ধুতে। সেই সময় শিল্পীর সম্মুখে এসে দাঁড়ান অপরিচিত এক বৃদ্ধা মহিলা।
বাড়িতে এবার পুজো হবে না একথা শিল্পীর মুখে শুনে অপরিচিত মহিলা শিল্পীকে আদেশ দেন ব্যানার্জী বাড়িতে ফিরে গিয়ে মন্দিরের কুলঙ্গায় (খোপ) একটি কৌটো রাখা আছে ওই কৌটার ভিতর কিছু পয়সা রয়েছে তা দিয়ে মায়ের পুজোর আয়োজন কর একথা জানান। তৎক্ষণাৎ শিল্পী ফিরে আসেন ব্যানার্জী বাড়িতে । পরিবারের কর্তাকে সমস্ত কথা জানান । মন্দিরের দেওয়ালের কুলঙ্গাই অপরিচিত মহিলার কথামতো একটি কৌটা পাওয়া যায় । কৌটোর ভিতর আবিষ্কার হয় কিছু খুচরো পয়সা ও ধানের বীজ। কৌটার পাওয়া পয়সা দিয়ে সেবার ব্যানার্জী বাড়িতে ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন হয় । সে বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল না হওয়ায় অনেকেই বাধ্য হন ধানের বীজ সেদ্ধ করে খেতে । সেবার্ট দেবী দুর্গার ভোগেও ধানের বীজ দেওয়া হয় । সেই কারণেই ব্যানার্জি বাড়ির দুর্গা বীজ খেকো দুর্গা নামে পরবর্তীকালে পরিচিত হন এলাকায়।
আরও অন্য খবর দেখুন