Thursday, July 3, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: উদ্যোগ পর্ব

চতুর্থ স্তম্ভ: উদ্যোগ পর্ব

Follow Us :

বিরাট পর্ব শেষ, পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসও শেষ, এবার তারা ফিরে পেতে চায় তাদের দেশ, দেশের মানুষ দুর্যোধন শকুনির সন্ত্রাসের অবসান চায়। কিন্তু রাজা দুর্যোধন সর্বসমক্ষেই জানিয়েছেন, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচগ্র মেদিনী। ভীম গদা নিয়ে রওনা হলেন, কৃষ্ণ আটকাচ্ছেন? ভীমের প্রশ্ন, তার মানে? আমরা দেশে ফিরবো না? দুর্যোধনই রাজত্ব চালাবে? কৃষ্ণ হেসেছিলেন, বলেছিলেন, হবে, বিরাট যুদ্ধ হবে, পৃথিবী এমন যুদ্ধ দেখেনি, পৃথিবীর যত মানুষ, যত রাজা প্রত্যেকে এতে সামিল হবে, প্রত্যেকে। যে প্রান্তে যত সৎ মানুষ আছেন, রাজা আছেন তাদেরকে সঙ্গে নিতে হবে, এ তো কেবল যুদ্ধ নয়, এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ধর্ম স্থাপনার জন্য যুদ্ধ। তার প্রস্তুতি দরকার, সেই প্রস্তুতির উদ্যোগ নিতে হবে। মহাভারতের এই পর্বের নাম, উদ্যোগ পর্ব। যেখান থেকে কৃষ্ণের কূটনীতি শুরু হচ্ছে, অস্ত্রশস্ত্র থেকে সৈন্য, যুদ্ধের উপকরণ, সব যোগাড় করা, আর মধ্যে মধ্যে কৌরবদের নীতি কথা শোনানো, পৃথিবীর মানুষকে বোঝানো, যে ভাইসকল দেখো, আমরা তো শান্তিই চাইছিলাম, এমন কি পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচটা গ্রাম চেয়েই এই যুদ্ধ শেষ করতে চাইছিলাম, কিন্তু দুর্যোধন তাতেও রাজি নয়, সে যুদ্ধ চায়। অতএব যুদ্ধ। তার আগে লম্বা উদ্যোগ পর্ব।

আমাদের দেশেও সেই উদ্যোগ পর্ব চলছে, আমি কেবল তার ধারা বিবরণী দিয়ে যাচ্ছি, আর আমাদের দেশের ইতিহাসে এরকম উদ্যোগ, যা আগে নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে মিল বা অমিলগুলো বলার চেষ্টা করছি, আচ্ছা এরকমই নয় যে উদ্যোগ পর্বে কেবল পান্ডবেরাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, না তা নয়। কৌরবেরাও তাদের মত করে ঘুঁটি সাজাচ্ছিল। ২০২৪ এ সার্বিক অর্থেই, এক মহাভারতের যুদ্ধ হতে চলেছে, যুযুধমান দু পক্ষই তাদের ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত। নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি ক’দিন আগেই মন্ত্রিসভা যেভাবে সাজালেন, তা সেই দাবা খেলারই অঙ্গ, যেখানে যেটুকু জোর দেওয়া দরকার, সেখানে তাই দিলেন, বুঝে ফেলেছেন ভাল করেই, গতবারে ১৮ এসেছিলে বাংলা থেকে, তা আর আসবে না। দক্ষিণবঙ্গে দাঁত ফোটানোও কঠিন, এক বাঁকুড়া আর মতুয়া ভোট ছাড়া। তাহলে নজর ওই উত্তরবঙ্গে আর বাঁকুড়ায়, বাবুল বাদ, দেবশ্রী বাদ, লকেট নেই। কে আছেন? মতুয়া ভোটের দাবিদার শান্তনু ঠাকুর, বাঁকুড়ার সুভাষ সরকার, উত্তরবঙ্গের জন বার্লা আর নিশীথ প্রামানিক। লক্ষ্য বড় করে আর ঠকতে নারাজ অমিত শাহ, এবার নজর ৬/৭ টা আসনের দিকে, ওগুলো পেতেই হবে, একই ভাবে অন্যান্য রাজ্যের হিসেবও আছে, উত্তরপ্রদেশের দিকে একটু বেশি নজর, স্বাভাবিক। উত্তরপ্রদেশে হারলে, সেদিনেই ভলেন্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট হয়ে যাবে এই সরকারের। এবং এই উদ্যোগপর্বের সেনাপতিরা জানেন, প্রত্যেকেই জানেন প্রচুর অর্থ দরকার, জানেন বলেই সেই অর্থ যোগাড়ও শুরু হয়ে গেছে, আগামী দু আড়াই বছর ইনকাম ট্যাক্স, ইডি’র রেড মানে আচমকা হানাদারি বাড়বে, জানবেন ওগুলো আসলে চাঁদা চাইতে আসা বকাটে ছোকরাদের আনাগোনা। আপাতত হিসেব বলছে, মোদি – শাহ ১০ গোল দিয়ে দিয়েছে বিরোধীদের, জুন মাসে হিসেব বলছে, বিজেপি পেয়েছে ৭৮৫ কোটি টাকা। কারা দিল? ITC, Kalyan Jewellers, Rare Enterprises, Ambuja Cement, Lodha Developers and Motilal Oswal,New Democratic Electoral Trust, Prudent Electoral Trust, Jankalyan Electoral Trust এবং Triumph Electoral Trust। আম্বানি আদানিদের নাম না দেখে অবাক হবেন না, ওঁরা ঠিক সময়েই দিয়ে দেবেন। এবার দেশের বিরোধী দলের দিকে তাকান, কংগ্রেস পেয়েছে, ১৩৯ কোটি টাকা। দেশের সরকারি দল তার বিরোধী দলের চেয়ে সাড়ে পাঁচগুণ বেশী টাকা পেয়েছে, তৃণমূল নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবে, তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ৮ কোটি টাকা কর্পোরেট ডোনেশন। লিখে রাখুন, আগামী বছরে এই ডোনেশন ৭/৮ গুণ বাড়বে, বাড়বে কারণ শিল্প মহলও জানে তৃণমূলের গুরুত্ব বাড়ছে। যে দল বাংলায় শূন্য পেল? তারা পেয়েছে ১৯.৭ কোটি টাকা কর্পোরেট ডোনেশন, কর্পোরেট ফিনান্সের বিরুদ্ধে লড়াই, কর্পোরেট ডোনেশন ছাড়া কি করা যায়? সিপিআই অবশ্য বড্ড কম, ১.৩ কোটি টাকা পেয়েছে, লোকসভায় ২ জন আর রাজ্যসভায় ১ জন সাংসদ আছে। মোদ্দা কথা, অর্থ সংগ্রহে বিজেপি ১ নম্বরে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়, কিছু শরিক, যেমন শিবসেনা, অকালি দল ইত্যাদি বেরিয়ে যাওয়ায়, বিজেপির মোট ভোট ৪০%, বিরোধীদের ৬০%। এটা নরেন্দ্র মোদি – অমিত শাহ জানেন, এটা জানে রাহুল, অখিলেশ, শারদ পাওয়ার, পিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এই উদ্যোগপর্বে ওই ৬০% এর কতটাকে এক জায়গায় নিয়ে আসা যায়, সেই অঙ্ক করতে ব্যস্ত বিরোধীরা।

গত দু দিনে দিল্লিতে যা যা ঘটলো, তা হল, ১) অসুস্থ সোনিয়া গান্ধীর সংসদে আসা, তৃণমূলের সৌগত রায় সমেত কিছু নেতাদের সঙ্গে দেখা করে, সংসদে ফ্লোর কো অর্ডিনেশন কেমন চলছে তার খোঁজ নেওয়া। ২) লালু প্রসাদ যাদব মুলায়মের সঙ্গে দেখা করলেন, পাশে অখিলেশকে রেখে কথা হল। ৩) কপিল সিব্বল, কংগ্রেসের একটু বেসুরো নেতাদের অন্যতম, তাঁর জন্মদিনে কে নেই? শরদ পাওয়ার, লালু যাদব, সিপিএম, সিপিআই, তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েন, ডিএমকে, এসপি, আপ, শিবসেনা এমন কি অকালি দলের নেতাও হাজির, কেবল খাওয়া দাওয়াই নয়, রীতিমত আলোচনাও হয়েছে। ৪) অসমে অখিল গগৈ তৃণমূলের প্রসংসায় পঞ্চমুখ, মমতার নেতৃত্বে লড়বেন, জানালেন। ৫) ত্রিপুরাতে তৃণমূল যুব ছাত্রনেতাদের  আক্রমণের ঘটনায়, তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন সিপিআইএম নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, এবং ওই দিনেই সীতারাম ইয়েচুরি জানালেন, তৃণমূল সহ ১৪ টা দলকে নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে, রাজ্যে কী হবে, তা ঠিক করবেন রাজ্য নেতারা, আগামী দিনে বাম তৃণমূল সম্পর্কের রসায়নাগার সম্ভবত ত্রিপুরা, সূর্যকান্ত, সুজনের ভুল রিপিট করবেন না মানিক সরকার। রাজনীতির ছাত্রদের এর থেকে ইন্টারেস্টিং সময়, আর কিই বা হতে পারে? বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন নতুন ইনিশিয়েটিভ তৈরি হচ্ছে দেখা যাচ্ছে, এটাই সেই অর্থে কুরুক্ষেত্রের আগে প্রস্তুতি পর্ব। যে হিসেব বিরোধী কেন, এমনকি বিজেপিরও মাথায় আছে, ওনারাও জানেন, কোন অঙ্ক জোড়ার চেষ্টা করছেন প্রশান্ত কিশোর, শারদ পাওয়ার। কোন যাদুবলে প্রায় বিমর্ষ বিরোধীদল সংসদ আর সংসদের বাইরে চাঙ্গা, মারমুখী। একটা বল ও ছাড়া তো নেই, উলটে সুযোগ পেলেই ছক্কা হাঁকাচ্ছেন বিরোধী নেতারা। সবথেকে মজার হল প্রধানমন্ত্রী, যিনি এতদিন খেলার নিয়ম, মাঠ আর গোলপোস্ট নিজেই ঠিক করতেন, তিনি বিরোধীদের মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছেন। সেসব নিয়ে পরেও আলোচনা হবে, তার আগে আসুন অঙ্কটা কী দেখে নেওয়া যাক।

সংসদে মোট আসন ৫৪৩, কেরালার ২০ টা বাদ দিলাম, ওখানে হয় কংগ্রেস, না হলে বামেরা জিতবে, যেই জিতুক, দিল্লির সংসদে একই অঙ্ক থাকবে। এবার মধ্য প্রদেশের ২৯, কর্ণাটকের ২৮, গুজরাটের ২৬, রাজস্থানের ২৫, পঞ্জাবের ১৩, ছত্তিশগড়ের ১১, হরিয়ানার ১০, উত্তরাখন্ডের ৫, হিমাচল প্রদেশের ৪, গোয়ার ২, দাদরা, নগর হাভেলি, দমন, দিউ মিলিয়ে ২ টো, আন্দামান নিকোবর ১, চন্ডিগড় ১, লাদাখ ১, পন্ডিচেরি ১। এই ১৫৯টা আসনে লড়াই কিন্তু বিজেপি আর কংগ্রেসের, এবং অসম সমেত উত্তর পূর্বাঞ্চলের ২৫টা আসনেও লড়াই কিন্তু, বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যেই।  তার মানে ১৯ টা রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৮৪ টে আসনে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে, ২০টাতে হয় কংগ্রেস, না হলে সিপিএমের সঙ্গে, বাকি ৩৩৯ টা আসনে মূল লড়াই কিন্তু রিজিওনাল বা আঞ্চলিক দলের সঙ্গে, সেখানে কংগ্রেস খুব বড় ফ্যাক্টর নয়, বা ফ্যাক্টরই নয়। এই ৩৩৮টা আসনে বিজেডি আছে, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি আছে, ওয়াইএসআর কংগ্রেস আছে, যারা ক্ষমতা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন, এরমধ্যে টিআরএস বা জগন রেড্ডি কিন্তু বিজেপি চলে যাক, এটা চায়। এদের বাদ দিলে মহারাষ্ট্র বিজেপি একলা, বাংলা আগের থেকে অনেক খারাপ ফল হবে, ত্রিপুরাতেও তাই, বিহারে টাগ অফ ওয়ার চলছে, কাশ্মীরে লাদাখের আসন বাদ দিলে বাকি আসন বিরোধীদের, দিল্লিতে আপ, তামিলনড়ুতে ডিএমকে। এই ৩৩৮টা আসনের, ওড়িশাকে বাদ দিয়ে, বাকি বিরোধীদের একজোট করার কাজটাই সম্ভবত হাতে নিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর,  তারই কাজ চলছে, সেই দিকে নজর রেখেই এত বৈঠক, ব্রেকফাস্ট আর জন্মদিনের নৈশভোজ, আলোচনা। ২০১৭ থেকে বিরোধীরা এক হবার বহু চেষ্টা করেছে, মহাগঠবন্ধন, ফেডারেল ফ্রন্ট, থার্ড ফ্রন্টের নানা প্রচেষ্টা জারি ছিল, এ ছিল তো ও ছিল না, ও ছিল তো সে ছিল না, এইভাবেই সেই প্রচেষ্টাগুলোর পরিসমাপ্তি ঘটেছে, এবারে কিন্তু সেরকম নয়, সংসদে বোঝাপড়া, ব্রেকফাস্ট মিটিং, জন্মদিনের হাজিরা, সবখানেই বিরোধী ঐক্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু লাখটাকার এক প্রশ্ন, মোদির বিরদ্ধে মুখটা কোথায়? সেই মুখ না খুঁজে পেলে, কেবল এই ঐক্য কাজ করবে? আমার তো মনে হয় না, আপনাদের কী মনে হয় লিখে জানান, আজ এই পর্যন্তই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ধৃত মনোজিতের বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্যের চিঠি লালবাজারে
00:00
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | মহাকুম্ভের মৃ/ত্যুর সরকারি হিসেব ভুয়ো? বিবিসির অন্তর্তদন্তে ফাঁ/স চাঞ্চল্যকর তথ্য
00:00
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীক রাজ‍্য সভাপতি, ডুগডুগি হাতে নিয়ে কী বললেন দিলীপ?
00:00
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
00:00
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
03:29
Video thumbnail
Ali Khamenei | খামেনিকে মা/রা অসম্ভব কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
04:22:14
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:45:12
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীক রাজ‍্য সভাপতি, ডুগডুগি হাতে নিয়ে কী বললেন দিলীপ?
01:23
Video thumbnail
Alifa Ahmed | বিধানসভায় শপথ গ্রহণ আলিফার, দেখুন এই ভিডিও
04:28:10
Video thumbnail
Stadium Bulletin | চূড়ান্ত একাদশ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক! ব্যাট হাতে শাসন শুভমানের
19:03

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39