এমন একটা দেশ যেখানে অপরাধ আর হচ্ছেই না, হবে না এমনটা কি কল্পনা করা সম্ভব? অনেকে বলবেন সে তো কল্পনার স্বর্গ। অতটা না হলেও কাছাকাছি একটা উদাহরণ আছে। নেদারল্যান্ডসে জেলে তেমন কয়েদি না থাকায় সেগুলোকে মোটেল করে ফেলা হচ্ছে, ট্যুরিস্টরা গিয়ে থাকতে পারবেন, বেশ মজার একটা ব্যাপার। তো সেখানে অপরাধ কমছে এটাই হচ্ছে আসল কথা আর একটা বিষয়ও উল্লেখযোগ্য, গুগল আন্টি বলছে সে দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ ভগবানে বিশ্বাসই করে না। দুটোর মধ্যে কি সম্পর্ক আছে? থাকতেই পারে, ধর্ম এক রকমের ফ্যাসাদের জন্ম দেয় যে, ধর্মবিযুক্ত সমাজে অন্তত সেই ফ্যাসাদগুলো তো থাকবে না। যাক গে মূল কথায় আসা যাক। রাষ্ট্র থাকবে, তাতে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে, সামাজিক আরও অনেক বৈষম্যও থাকবে কিন্তু অপরাধ থাকবে না এমনটা সম্ভব নয়। কাজেই অপরাধ হবেই। কিন্তু একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল অপরাধ হলেই তার শিকড়টা ধরে টান দেওয়া, যে অপরাধ করছে সে কার সাহায্যে কার উসকানিতে করছে, নাকি নিজের পেটের জন্য করছে? নাকি প্রতিহিংসা মেটানোর জন্য, ইত্যাদি সব তথ্য বার করে আনবে, এবং অপরাধীকে গ্রেফতার করবে, এটাই জরুরি। অপরাধ আটকানোর জন্য কিছু প্রিভেন্টিভ মেজার্স নেওয়াই যায়, তার মধ্যেও এটা একটা যে অপরাধীকে ধরা হবে এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হবে যাতে অন্য আরেকজন অপরাধ করার কথা না ভাবে। সেই জায়গা থেকে বাংলার অপরাধের মানচিত্রকে দেখতে হবে, ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো অপরাধ হচ্ছে অপরাধ হচ্ছে বলে লাফালেই হবে না। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে কি না সেটাই দেখতে হবে।
ধরুন কুলতলির সাদ্দাম, সে একজন ঠগবাজ, এলাকাতে তার এসব কীর্তিকলাপ অনেকেই জানে। কুলতলির জালাবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েতের পয়তারহাটের বাসিন্দাদের সাদ্দামের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই এসব প্রতারণার অভিযোগ ছিল, আছে। এর আগেও এ রকম অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে একবার গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। গত সোমবার সাদ্দামের পয়তারহাটের বাড়িতে অভিযানে যায় সাদ্দামকে ধরেও ফেলে কিন্তু এর পরেই বাড়ি এবং আশপাশের মহিলারা পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সাদ্দামের ভাই সাইরুল পুলিশকে নিশানা করে গুলিও চালায় আর সেই সুযোগে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায় সাদ্দাম এবং সাইরুল।
আরও পড়ুন: Aajke | বাংলার, এই দেশের মুসলমানরা দেশপ্রেমিক নন?
সাদ্দামের স্ত্রী রাবেয়া সর্দার এবং মাসুদা সর্দার নামে আর একজন মহিলা বাধা দিচ্ছিল, তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। এরপরেই সাদ্দামের খোঁজ শুরু হয়, আর শোওয়ার ঘরের নীচে সেই সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করে পুলিশ। সেটি বাইরে একটি খালের সঙ্গে যুক্ত। কিছু দূর এগিয়েই এই খাল গিয়ে মিশেছে মাতলা নদীতে। ওই রাস্তা দিয়ে এবারেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিল সাদ্দাম। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বুধবার রাতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল কুলতলি প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? অপরাধ হয়েছে, অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এরপর তাকে শাস্তি দেবে তো আদালত। অন্য ঘটনাটা কী? সালিশি সভার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিকলে বেঁধে মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে সোনারপুরের কোট আনকোট ‘তৃণমূল কর্মী’ জামালের বিরুদ্ধে। ‘পলাতক’ জামালের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীরা একের পর এক অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু যে মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে সেই মহিলা জানালেন স্থানীয় বিধায়ক লাভলি মৈত্রের কথাতেই তিনি এই মামলা দায়ের করেছেন। তার মানে সম্পর্ক আগে থাকলেও অভিযোগ আসার পরে তৃণমূল তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে। শিকলে বেঁধে মারধরের ঘটনায় মুজিদ খাঁ এবং অরবিন্দ সর্দার নামে দু’জনকে মঙ্গলবার পাকড়াও করেছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। নতুন বলতে তার মধ্যেই সামনে এসেছে জামালের সুবিশাল বাড়ির ছবি। সেই বাড়ির পাশে আরও একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির ভিতরে রয়েছে সুইমিং পুল। তো এসব বেআইনি হলে পুলিশ বা অন্যান্য এজেন্সি আছে দেখবে। নাকি সেই বাড়িতে কচ্ছপ আছে, সেটাও দেখবে বনদফতর, আটকাচ্ছে কে? জামাল পালিয়ে বেড়াচ্ছে আজ না হয় কাল ধরা পড়বে। এটাই তো হওয়া উচিত। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, শেখ শাহজাহান থেকে জেসিবি থেকে দেবাশিস প্রামাণিক থেকে সাদ্দাম কিংবা জামাল, প্রত্যেকটা ঘটনাতেই পুলিশ হয় অপরাধীদের ধরেছে, মামলা দায়ের হয়েছে। মাত্র একটা ঘটনাতে পুলিশ অপরাধীকে খুজে বেড়াচ্ছে, তাহলে তৃণমূল সরকার অপরাধ আর অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে, এটা বলার ভিত্তিটা কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন?
অপরাধ হবে, অপরাধ যে করছে তার শাস্তি যদি না হয়, তাকে যদি শাসকদল প্রশ্রয় দেয়, সরকার যদি তাকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে তা মারাত্মক। ইউরোপ বা আমেরিকা, তথাকথিত সভ্য দেশ, কিন্তু সেখানে কি অপরাধ হয় না, হয় বইকী। তফাত হল অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হয় না, দু’ একটা ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, কিন্তু সাধারণভাবে অপরাধীদের জেলে যেতে হয়। আমাদের দেশে আমরা সেটাই চাই, এখানে পুলিশ সক্রিয় হয় তখন যখন সেই অপরাধের খবর সংবাদমাধ্যমে এসে হাজির হয়, তার আগে পর্যন্ত পুলিশ চুপ করে বসে থাকে এবং অপরাধীরা প্রায়সই রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয় পায়। এ বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু গত চার-পাঁচটা ঘটনায় ঘটনা সামনে আসার পরে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত ভালো। সেটা বজায় থাকুক, এটাই মানুষ চায়।