Sunday, June 22, 2025
HomeScrollFourth Pillar | মোদি অমিত শাহের সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | মোদি অমিত শাহের সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?

জনগণনা নিয়ে, আম্বেদকর নিয়ে, সম্ভল, মথুরা, কাশী, আজমের শরিফ নিয়ে বিজেপি খুব স্বস্তিতে নেই

Follow Us :

সুস্থসবল মানুষজনকে হঠাৎ মারা যেতে দেখেছেন, অনেকেই দেখেছেন। আসলে রোগ অনেক সময়েই গোপনে বাসা বাঁধে, সংগোপনে, দেহের কোনও এক প্রান্তে, তারপর অতর্কিতে লাফ দেয় সেই যমদূত, কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই খই ওড়ে, বল হরি হরিবোল। রাজনৈতিক ক্ষমতাও সেরকম একটা ব্যাপার। সবথেকে চূড়োয় বসে থাকা ক্ষমতার ক্ষেত্রে এই একই বিষয় বলা যায়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, ক্ষমতার শীর্ষ থেকেই পতনের শুরুয়াত হয়েছে বার বার। মুঘল সাম্রাজ্যের শিখরে ছিলেন আওরঙ্গজেব আর সেখান থেকেই পতন। আমাদের দেশে কংগ্রেসের পতন সেই রাজীব গান্ধীর ৪০৪ আসনে জয়ের পর থেকেই। আমাদের এই বাংলায় ২৩৫, মনে আছে? ২০০৬-এর সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার, অষ্টম বামফ্রন্ট আজ এক মরীচিকা মাত্র। হ্যাঁ, এরকম হয়, গোপন রোগ জমাট বাঁধে ক্ষমতার অলিগলিতে, ক্ষয়রোগ ছড়াতে থাকে দেহ জুড়ে। তারপর জো আজ সাহিবে মসনদ হ্যায় ওহ কল নহি হোঙ্গে, কিরায়েদার হ্যায়, জাতি মকান থোড়ি হ্যায়? আমার মনে হয় বিজেপি তার জেনিথ, তার চূড়া দেখে ফেলেছে ২০১৯-এ, ওই ৩০৩, থ্রি নট থিই ছিল তার চূড়া, এবার নামার পালা।

অনেকেই বলবেন হঠাৎ এই কথা আসছে কেন? দিব্যি চলছে রাজপাট। ৫ মিলিয়ন ডলারের বাওয়াল, বার বার আমরা শুনছি এই বুঝি আদানি সাম্রাজ্য ডুবল, সঙ্গে ডুববে মোদি সরকার, ফিরে ফিরে আসছে আদানি আবার। ওদিকে ইন্ডিয়া জোট তো নয়, শীতের সার্কাস, আর জলসাঘরের জমিদার আমাদের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি কংগ্রেস। আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে এক সম্মানজনক জোট তৈরি করতেও তাদের অনীহা। ওদিকে দেখুন আপ, তারা আবার আরএসএস সরসংঘ চালককে চিঠি দিচ্ছে, একঘর রগড় বিরোধী অবস্থানে। কিন্তু তবুও এক গোপন ক্ষয় বাসা বেঁধেছে বিজেপিতে। আসুন সেগুলো একটু আলোচনা করা যাক। প্রথম সমস্যা হল বিজেপির এখনও এক আন ইভেন গ্রোথ, এক অসম বিকাশের। ধরুন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিজেপি তার চূড়ান্ত জায়গাতেই আছে। আবার পঞ্জাব, কেরালা, তামিলনাড়ুতে, তেলঙ্গানাতে নেই। বাংলা বা বিহার, কর্নাটক বা অন্ধ্রপ্রদেশে তারা আজ নয় কোনওদিনই একক ক্ষমতায় নির্বাচনে জিতে আসতে পারবে না। উত্তরপ্রদেশ মহারাষ্ট্রতে ক্ষমতায় আছে বিজেপি, কিন্তু সেটা বিজেপির জন্য নয়, মহারাষ্ট্রে শিন্ডে আর অজিত পওয়ার হাত তুলে নিলে বিজেপি আবার ১০০-তে চলে যাবে। উত্তরপ্রদেশে যোগী ফ্যাক্টর প্লাস প্রশাসনিক বুলডোজার কাজ না করলে, দলিত ভোট আরও কিছু কমে গেলেই উত্তরপ্রদেশ হাতছাড়া হতেই পারে।

নর্থ ইস্ট, আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চল দিল্লিমুখো রাজনীতিতেই অভ্যস্ত, দিল্লি পাল্টালে তারা পাল্টে যায়। তাহলে? হাতে পড়ে থাকে কী? গুজরাট, এমপি, আর কিছু ছোট উত্তর ভারতের রাজ্য। হ্যাঁ, এই অসম বিকাশ এখনও বিজেপির সবথেকে বড় সমস্যা। দুই) বিজেপির আদি নব্যের সমস্যা যত দিন যাচ্ছে তত সামনে এসে পড়ছে। বিজেপিকে বাড়ার জন্যই অন্য দলকে ভাঙতে হয়েছে, আর সেই ভাঙার সময়ে যাদেরকে পেয়েছেন তারা সবাই হিমন্ত বিশ্ব শর্মা হয়ে উঠবেন তার গ্যারান্টি তো ছিল না, উল্টে তাদের অনেকেই দলের বহু বিষয় বোঝেই না আরএসএস কী? আরএসএস কেন? দলের লক্ষ্য কী? আর এই অন্যদল থেকে আসা লোকজনদের যেহেতু জনসমর্থন আছে, যেহেতু তাদের জিতে আসার, জিতিয়ে আনার ক্ষমতা আছে, তাই তাদেরকে ঘাঁটাতেও পারছে না বিজেপি, খানিকটা সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা, ফেলে দিলেও বিপদ, গলায় রাখলেও বিপদ। তিন নম্বর সমস্যা হল মোদিজি নিজেই। হু আফটার মোদিজি? এটাই তো এক বিরাট সমস্যা, ওনার পরের নাম কী? যাঁরা আছেন তাঁরা কেউ এই মোদি নামক ভোট মেশিনের ধারে কাছেও আসতে পারবেন না। আদিত্যনাথ যোগী দলের মাথায় বসতেই পারেন, এক হিন্দুত্ববাদী দলের এমন নেতা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা করলে একজন শরিকও কি সঙ্গে থাকবে? ওদিকে অমিত শাহ, এর মধ্যেই অন্তত তিন তিন বার ওনাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি আর গোটা দেশের হাল হকিকত দেখলেই বোঝা যায় যে আর যাই হোক নরেন্দ্র মোদির যোগ্য উত্তরাধিকারী তিনি নন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মণিপুর এখনও জ্বলছে, মোদিজি, অমিত শাহের মুখে তালা কেন?

কাজেই এক বিরাট ভ্যাকুয়াম অপেক্ষা করছে, কারণ মাথায় থাকে না যদিও আমরা সব্বাই পড়েছি ম্যান ইজ মর্টাল, জন্মিলে মরিতে হবে। চার নম্বর সমস্যা হল বিজেপি আরএসএস-এর আদত মনুবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাভাবনা এবং সেই হিন্দুরাষ্ট্রের লক্ষ্য যা কি না বর্ণশ্রেষ্ঠদের হাতেই চালিত হবে। সমস্যা হল দেশের হিন্দুদের ৭৮ শতাংশ হল দলিত, আদিবাসী, পিছড়ে বা অতি পিছড়ে বর্গের মানুষজন। তারা ক্রমশ তাদের অধিকারের বিষয়টা বুঝে নিতে চাইছে, তারা চাইছে জাতিগত জণগণনা। সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল জনগণনা করলেই জাতিগত জণগণনা করাতে হবে আর সেটা করলেই ওই পিছিয়ে পড়া মানুষজন দেশের ৭৮ শতাংশ চাকরি, ৭৮ শতাংশ সংরক্ষণের দাবি তুলবেন আর সেটা করতে গেলে বিজেপির কোর ভোটার উচ্চবর্ণের মানুষজন পাঁড়েজি, দুবেজি, শর্মাজিরা আবার বিমুখ হবেন। এও এক শাঁখের করাত। আর এই সংরক্ষণের জন্য দাবি তো কেবল পিছড়ে বর্গের মানুষজনই করবেন না, নীতীশ কুমার করবেন, চন্দ্রবাবু নাইডু করবেন। মানে সব মিলিয়ে এইখানে হাতি কাদায় পড়বেই। এরপরে আছে বিজেপির নিজস্ব কর্মসূচি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড। ঠিক যে কারণে ওয়াকফ বিল এনেও পিছিয়েছে বিজেপি, বা এক দেশ এক ভোট এনে পিছিয়েছে, ঠিক সেইরকমই এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড আনার চেষ্টা করলেই কিন্তু সরকার পড়ে যাবে। মানে সোজা ব্যাপার, সরকার চলছে শরিকদের দৌলতে, কাজেই সেই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে গেলে নিজেদের এজেন্ডা আনা যাবে না। এবং কেবল তাই নয়, ওই জনগণনা নিয়ে, আম্বেদকর নিয়ে, সম্ভল, মথুরা, কাশী, আজমের শরিফ নিয়ে বিজেপি খুব স্বস্তিতে নেই।

তারা চেয়েছিল ৪০০ পার, হ্যাঁ, অন্তত ৩১৫-৩২০টা আসন পেলেও বিজেপি এই সবকিছুই নিজেদের ইচ্ছে মতোই করতে পারত। কিন্তু মানুষ সেই কথাটা বুঝেই তাদেরকে ২৪০-এ আটকে দিয়েছে, আর এই অন্যের কাঁধে ভর দেওয়া বিজেপি প্রায় প্রতিটা ব্যাপারেই ওই দুই ধুরন্ধর নেতা, নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে কেবল রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়ে নীতীশ কুমার ল্যাজে খেলাচ্ছেন, আর বিজেপি সেটা বুঝেই জেডিইউ-কে ভাঙার চেষ্টা করছে, যার ফলে যে কোনও মুহূর্তে হয় জেডিইউ ভাঙবে, না হলে নীতীশ বেরিয়ে আসবেন, টানাপোড়েন জারি আছে। শেষ বিষয় হল বিদেশনীতি, সেখানে মোদিজি চূড়ান্ত ব্যর্থ, পড়শি দেশের প্রত্যেকের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে, উল্টে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা আর এক বোঝা, তাকেও না পারছেন গিলতে না পারছেন হজম করতে। ওদিকে বেশি জঙ্গিপনা দেখাতে গিয়ে কানাডা থেকে আমেরিকা সবটাই ঘেঁটেছে। অবকি বার ট্রাম্প সরকার ইত্যাদি বলার পরেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিন্তু আমেরিকার স্বার্থই আগে দেখবে আর সেটাই স্বাভাবিক, কাজেই সেখানেও সমস্যা। ঘরে বাইরে মোদি ম্যাজিক ফিকে হচ্ছে, আর চাপ বাড়ছে। বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মানুষের মন জয় করতে, সবকা ঘর হোগা, ঘর মে নল হোগা, নল মে পানি হোগা, বিজলি হোগা, নোকরি হোগা। এখন সেই অজস্র হোগা, মানে সেই অজস্র প্রতিশ্রুতি ধেয়ে আসছে মাঠে নামলেই। প্রথম ক’ বছর মন্দির মসজিদ করে কেটেছে, এখন চাইলেও তা সম্ভব নয় কারণ ওই ২৭৩ মাইনাস ২৪০, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এবারে মানুষ হিসেব চাইবে, হিসেব মিলবে না। এরপরের নির্বাচন ২০২৯-এ, মোদিজি তখন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ, এখন দিনে ৩টে জনসভাও করছেন, তখন? এসব জানেন মোদিজি নিজে, জানে আরএসএস সংঘ পরিবার। ইতিহাস দেখেছে সাফল্যের চূড়োয়, আর সেই সাফল্যের চূড়ো থেকে নামাও দেখবে এই ইতিহাস, সেটা কত তাড়াতাড়ি, সেটাই দেখার। কাজেই যাঁরা ভাবছেন বিরোধীরা ছত্রভঙ্গ, কাজেই মোদি সাম্রাজ্য সুরক্ষিত, তাঁদের বলি, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের শেষভাগে ইংরেজরা এসেছে, পতনের জন্য বাইরের শক্তি শেষ ধাক্কাটা দেয় বটে, পতন তার বহু আগেই শুরু হয়ে যায়, পতন এক ক্ষয়রোগ, বাসা বাঁধে শরীরে, সুস্থ সবল সাজোয়ান পুরুষ হঠাৎ শুয়ে পড়ে, হৃৎস্পন্দন থামে, খই ওড়ে, শ্মশানের চুল্লির ধোঁয়া, বল হরি হরিবোল। আমাদের ঠাকুর সেই কবেই লিখে গেছেন,

অলস সময় ধারা বেয়ে বমন চলে শূন্যপানে চেয়ে।

সে মহাশূন্যের পথে ছায়া-আঁকা ছবি পড়ে চোখে।

কত কাল দলে দলে গেছে কত লোকে সুদীর্ঘ অতীতে

জয়োদ্ধত প্রবল গতিতে।

এসেছে সাম্রাজ্যলোভী পাঠানের দল, এসেছে মোগল,

বিজয়রথের চাকা উড়ায়েছে ধূলিজাল, উড়িয়াছে বিজয়পতাকা।

শূন্য পথে চাই আজ তার কোনো চিহ্ন নাই।

নির্মল সে নীলিমায় প্রভাতে ও সন্ধ্যায় রাঙালো,

যুগে যুগে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের আলো।

আরবার সেই শূন্যতলে আসিয়াছে দলে দলে

লৌহবাঁধা পথে অনলনিঃশ্বাসী রথে প্রবল ইংরেজ

বিকীর্ণ করেছে তার তেজ।

জানি তারো পথ দিয়ে বয়ে যাবে কাল

কোথায় ভাসায়ে দেবে সাম্রাজ্যের দেশবেড়া জাল।

জানি তার পণ্যবাহী সেনা

জ্যোতিষ্কলোকের পথে রেখামাত্র চিহ্ন রাখিবে না।

মাটির পৃথিবী পানে আঁখি মেলি যবে

দেখি সেথা কলকলরবে

বিপুল জনতা চলে

নানা পথে নানা দলে দলে

যুগযুগান্তর হতে মানুষের নিত্য প্রয়োজনে

জীবনে মরণে।

ওরা চিরকাল

টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল;

ওরা মাঠে মাঠে

বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে।

ওরা কাজ করে

নগরে প্রান্তরে।

রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে,

জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে,

রক্তমাখা অস্ত্র হাতে যত রক্তআঁখি

শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি।

হ্যাঁ রাজছত্র ভেঙে পড়ে, পড়বেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Pakistan-Iran-America | পাকিস্তানের রংবদল, ইরানের মার্কিন হা/ম/লার তীব্র নিন্দা পাকিস্তানের
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের ১০ দিন, কোন দিন ইজরায়েলকে কীভাবে মে/রেছে ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ইরানে হা/ম/লা আমেরিকার, কী বলল রাষ্ট্রপুঞ্জ?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | India | ইরান-ইজরায়েলের যু/দ্ধে আমেরিকার এন্ট্রি, কী করবে ভারত?
00:00
Video thumbnail
Iran | Trump | ট্রাম্পের কথা শোনেনি ইরান, মুখ বাঁচাতে ফাঁকা মাঠে বো/মা বর্ষণ আমেরিকার?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ইরানে অ্যা/টা/ক আমেরিকার, কী পদক্ষেপ, চিন-রাশিয়ার? দেখুন সবচেয়ে বড় খবর
00:00
Video thumbnail
Apollo Hospital Chennai | কিডনি প্রতিস্থাপন কী? কিডনি প্রতিস্থাপনের আইনি আলোচনা
05:11
Video thumbnail
Pakistan-Iran-America | পাকিস্তানের রংবদল, ইরানের মার্কিন হা/ম/লার তীব্র নিন্দা পাকিস্তানের
03:04
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের ১০ দিন, কোন দিন ইজরায়েলকে কীভাবে মে/রেছে ইরান?
04:51
Video thumbnail
Iran-America | ইরানে হা/ম/লা আমেরিকার, কী বলল রাষ্ট্রপুঞ্জ?
05:09