Saturday, June 21, 2025
HomeScrollFourth Pillar | আমার আ মরি বাংলা ভাষা উবে যাওয়ার আগে ক’টা...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | আমার আ মরি বাংলা ভাষা উবে যাওয়ার আগে ক’টা কথা

চিন্তা তো আমাদের করতে হবে, আজই এখনই, না হলে সামনে ডোডো পাখির ছবি তো আছেই

Follow Us :

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। আজ ভাষা নিয়ে কিছু কথা। মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম হল ভাষা। হ্যাঁ, ভাষাকে এমনভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়। এবার আসুন দেখা যাক সেটা সত্যি কি না। তাহলে একটা প্রশ্ন আগে করতে হবে, মনের ভাব প্রকাশ করার দরকারটা কোথায়? আরে? খিদে পেয়েছে জানাব কী করে? রাগ হয়েছে, দুঃখ পেলাম, আমার কষ্ট হল, আকাশ জুড়ে মেঘেরা ভেঙেছে সার দিয়ে তার উপর সূর্যের শেষ আলো, দিকচক্রবালে রক্ত ঝরছে ঝরে পড়ছে, কী অদ্ভুত, দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ওই ছায়া— এসব জানাতে ভাষার দরকার। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার মনের কথা বলতেই ভাষা, হ্যাঁ, এমনটাই বলা হয়েছে, বলা হয়ে থাকে। তাহলে ভাষা কি সব্বার জন্য, মানে সব্বার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য? ধুস, তা আবার হয় নাকি? গুহামানবের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন জল আবহাওয়ায় বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈচিত্র্যে বিভিন্ন স্বর বের করেছে গলা থেকে। তারপর সেই গোষ্ঠী যত বড় হয়েছে তার ভাষাও তত বড় হয়েছে, তার অর্থনৈতিক আধিপত্য যত বেড়েছে তার ভাষা তত শক্তিশালী হয়েছে। দুনিয়ায় ৫ থেকে ৭ হাজার ভাষার হদিশ আছে, ধরা আছে তাদের ভাষা, ডায়ালেক্ট, রূপান্তরিত ভাষা সব মিলিয়ে। যার বেশিরভাগ মৃত। তারা হারিয়ে গেছে। যারা সে ভাষা বলত তাদের সন্তান সন্ততিরা অন্য ভাষায় কথা বলে, তাদের মাতৃভাষা এখন মৃত। কোনও বাড়িতে গিয়ে যখন শুনি আমার ছেলেটা তো বাংলাটা শিখলই না, তখন বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে, তার মানে কি একদিন? গবেষণা বলছে ২১০০ সালে জানা ভাষার ৫০ শতাংশ মরে যাবে। হ্যাঁ, ভাষা অনাদরে মরে যায়।

ফেরা যাক আমাদের মূল প্রশ্নে। তাহলে দেখা গেল বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মানুষেরা তাদের চারপাশে ঘটতে থাকা যা কিছু তা বোঝানোর জন্য ভাষার উদ্ভব হয়। হিসেব বলছে পৃথিবীতে ৮৭ লক্ষ স্পিসিস, মানে ৮৭ লক্ষ ধরনের প্রাণী আছে। মানুষ তার মধ্যে একটা। পৃথিবীতে মানুষ আছে ৮০০ কোটির মতো, যা জীবিত প্রাণীর মাত্র ০.০১ শতাংশ। আমি উদ্ভিদজগৎ কিন্তু বাদই দিয়েছি, তাদেরও প্রাণ আছে, তারা দিব্যি কমিউনিকেট করে, মানে তাদের ইচ্ছে ভাব প্রকাশ করে, তাদেরকে বাদ দিলেও যাদের আমরা প্রাণী বলছি মানুষ তাদের মাত্র ০.০১ শতাংশ। সেখানে আবার কমবেশি হাজার খানেকেরও বেশি active language. আমরা বলছি যে মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষা প্রয়োজন, বলছি, কিন্তু ঠিক বলছি তো? কারণ মানুষ বাদ দিলে এই ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রাণীদের কি মনের ভাব প্রকাশ করতে হয় না? তাদের কি দরকার পড়ে না? নাকি তাদেরও ভাষা আছে, যা আমরা জানি না। আসুন ক’টা ঘটনা দিয়ে আমার বক্তব্যটা পরিষ্কার করি। অলিভ রিডলে বলে এক জাতের কচ্ছপ আছে, তাদের এক অংশ ভারত মহাসাগরে চরে বেড়ায়। মেয়ে কচ্ছপদের যখন ডিম পাড়ার সময় হয়, তারা একটা সমুদ্রতট বেছে নেয়। ডিম পেড়ে চলে যায়। বাচ্চারা কিছু দিন পর ডিম ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে নেমে যায়। খুব সাধারণ শোনাল তো। এবার খুলে বলি, যে গোষ্ঠীর অলিভ রিডলেরা ওড়িশা উপকূলে গহীনমাথাতে ডিম পাড়ে তারা গহীনমাথাতেই আসে। কীভাবে চিনে আসে? সব্বাই ডিম পাড়ার জন্যই আসে, তাও তো সব্বার জানা থাকে। তারপর ডিম পাড়া সমুদ্রের জল বাড়বে কমবে জোয়ার ভাটা খেলা চলবে। সব্বাই কিন্তু ডিমটা যতদূর জল ওঠে তার উপরে পাড়বে, তার মানে সব্বার এটা জানা থাকে। তারপর মা কচ্ছপরা চলে যায়। রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি, ওরকম নয়। ডিম পেড়ে, বালি দিয়ে চাপা দিয়ে মায়েরা চলে গেল। জল আবার উঠল এবং জলের সঙ্গে সঙ্গে সদ্যোজাত বাচ্চারা নেমে পড়ল সমুদ্রে, তাদের মধ্যে মহিলারা আবার ফিরে আসবে ওই নির্দিষ্ট তটে। নিয়ম মেনে প্রতি বছর এই ঘটনা ঘটানোর জন্য কোন ভাষার ব্যবহার হয়? মানে ধরুন স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশন করা হচ্ছে, কোনও আলোচনা ছাড়াই, অথচ সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে এটা আশা করা যায় না। তাহলে?

আচ্ছা আবার আর একটা উদাহরণ দিই। গুজরাটের কচ্ছে পেলিক্যানরা আসে। নোনা জলের চিংড়ি তাদের খুব প্রিয়। ওখানে সমুদ্র ঢুকে জায়গায় জায়গায় জমে থাকে, যা শুকিয়ে নুন তৈরি করা হয়, সেই জলাশয়ে প্রচুর চিংড়ি, চুনো মাছ। পেলিক্যানরা সেখানে মাটির ঢিপি করে তার উপর খড়কুটো দিয়ে বাসা তৈরি করে। বৃষ্টি আসার অনেক আগে তাদের বাসা তৈরি শেষ। বৃষ্টি পড়ে মাটিতে জল জমে কিন্তু তা ওই বাসার কাছাকাছি আসে, বাসাকে ছোঁয় না। অথচ প্রত্যেকবার আলাদা বৃষ্টি, কখনও বেশি, কখনও খুব বেশি, কখনও খুব কম। সেই অনুযায়ী পেলিক্যানরা তাদের বাসা কখনও এক ফিট কখনও দেড় ফিট, কখনও দু ফিট উঁচুতে তৈরি করে। কিন্তু করে বৃষ্টি আসার অনেক অনেক আগে। তার মানে ওদেরও ওয়েদার অফিস আছে, সেখানে আগে মাপা হয়, তারপর তা প্রত্যেককে জানানো হয় এবং পুরুষ পাখিরা সেই অনুযায়ী বাসা বাঁধে। কোন ভাষায়? আমরা জানি না।

মৌমাছিদের দেখলে তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হবে। কোথায় মধু থাকবে, মধু রাখলে অন্যদিকে কতটা বাসা বাড়িয়ে নিলে কেক ভারসাম্য থাকবে, আবার তা রানি মৌমাছিকে কেন্দ্রে রেখেই করতে হবে। কতটা খাবার সদ্য ডিম ফোটাদের জন্য বার করতে হবে, রানি মৌমাছি বেরিয়ে পড়লে তার পাহারায় কতজন থাকবে, বাচ্চাদের পাহারায় কতজন, একই ধরনের ফুলের মধু আসছে কি না তা চেক করা, অন্য কোনও ফুল থেকে আনলে তাকে ফেরত দেওয়া। সে এক যজ্ঞ। কিন্তু চলছে তো? কী ভাবছেন? বিনা ভাষায়? ধুত, তা হয় নাকি।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মুসলমান সংখ্যালঘু মানুষদের দেশ নয় এই ভারত?

এবং পিঁপড়ে। সারাটা দিন ওদের সঙ্গে কাটানো যায়, ওদের কেরামতি দেখার জন্য। একটা মিষ্টির টুকরো ফেলে দিন। তারপর দেখবেন একজন কীভাবে আর একজনকে ডেকে আনে, মিনিটখানেকের মধ্যে ১০০ খানেক জড়ো হবে, তাদের ওজনের চেয়ে ৩০/৪০/১০০ গুণ ভারী মিষ্টির টুকরোটাকে তুলে রওনা দেবে নির্দিষ্ট গর্তের দিকে। গর্তের মুখে এনে পিস পিস করে কেটে তাকে ঢোকানো হবে। এই গোটা প্রসেসটা মন দিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন যে কেউ মিষ্টিটা খাচ্ছে না। এসব সম্ভব যদি না তারা একে অন্যের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারে? ফেরোমন দিয়ে রাস্তা চেনা সম্ভব কিন্তু ঘরের সামনে নিয়ে গিয়ে পিস পিস করে কাটা, তারপর আবার রাখার ব্যবস্থা আরও চমৎকার, পিঁপড়ে আপনার তো দেখতে একই লাগছে, না স্যর, ওদের মধ্যে শ্রমিক আছে, শ্রমিকেরও আবার ভাগাভাগি আছে, মহিলা আছে, শিশু আছে, তাদের থাকার জায়গা আলাদা।

মানে ভাবুন, গোটা পৃথিবীতে প্রাণীদের মাত্র ০.০১ শতাংশ মানুষ যে ভাষা নিয়ে অহঙ্কার করে, গর্ব করে, তার বাইরে মনের ভাব প্রকাশ করার আরও কত শত পদ্ধতি আছে, উপায় আছে, হয়তো ভাষাও আছে, আমরা জানি না। সেই মনুষ্যকুলেরও আবার কত ভাষা কত ডায়ালেক্ট। হাজারখানেক ACTIVE LANGUAGE. তার মধ্যে আমার ভাষা বাংলা। আমার গর্ব করার আর এক উপাদান আছে, আমার ভাষার জন্য আমরা রক্ত ঝরিয়েছি, আমার ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। এমনটা আর কোনও ভাষার জন্য হয়নি। কেবলমাত্র ভাষার লড়াই একটা গোটা দেশের জন্ম দিয়েছে এমনটা আর হয়নি। তাই একুশে এলেই ভাষা নিয়ে দুটো কথা বলার হক আছে আমাদের, বাঙালিদের।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…

তাহলে কী দাঁড়াল? আমার ভাষা বাংলা যা দিয়ে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু তাতেও আপাতত বিরাট সমস্যা, বিশ্বজুড়ে পণ্ডিতরা গবেষণা করে বলছেন যে ভাষা আছে, মানুষ আছে কিন্তু একজন অন্যজনকে বলে বোঝাতে পারছে না। আর একটু খোলসা করে বলি, ডাকুন আপনার পাড়ার পরিচিত রিকশাওলাকে, যে সবজি বিক্রি করে তাকে, রান্নার মাসিকে, পুল কারের ড্রাইভারকে, যে লোকটা ইলেক্ট্রিক সুইচ সারিয়ে দেয় তাকে। তারপর রবি ঠাকুরের সবথেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে যে কবিতা তার এক প্যারাগ্রাফ শোনান।

হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।
বিধাতার রুদ্ররোষে
দুর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

দেখবেন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে, তারা সবাই নিরক্ষর নয়, কেউ কেউ মাধ্যমিক পাশ। ঠিক এইসময় দেশটা কীভাবে ফ্যাসিবাদের দিকে ঢলে পড়ছে, কীভাবে ধর্ম গ্রাস করছে সমাজকে বোঝান, দেখবেন সে বুঝতে পারছে না। আপনি যা পড়েন, আপনারা যা আলোচনা করেন, আপনারা যা ভাবেন দেশের জন্য, সমাজের জন্য তা গরিষ্ঠাংশ জনগণ বোঝে না। সত্যি বলছি, আপনারা নিজে নিজেই ভাবেন, কী সাংঘাতিক কবিতা লিখছেন, পোস্ট মডার্ন পোস্ট ট্রুথ, আপনি আর আপনার বৃত্তের কিছু লোকজন ছাড়া কেউ বুঝছে না, তারা মনে করছে বিলকুল বকওয়াস। নিজেরাই এই পুরস্কার, সেই পুরস্কারের ব্যবস্থা করছেন, রাতে শুয়ে ভাবুন কত তেল আর কাজিয়ার পরে যা পেলেন তাতে আপনার সমাজের ৭০ শতাংশ মানুষের কিসসু এসে যায় না। অথচ আলতামিরার বাইসন সবার চোখ টেনেছে, লালনের গান, সত্যপীরের পাঁচালি। লক্ষ্মীর পাঁচালি, বেহুলা লখিন্দর সবাই বোঝে, চাঁদ সদাগরের গল্প সবাই জানে। কোন বাহ্মমুহূর্তে আপনি আপনার ভাষাকে দুর্বোধ্য পাঁচিল দিয়ে ঘিরেছেন। আপনার ভাষা এখন কেবল আপনার কালোয়াতি কেরামতি দেখানোর ভাষা, আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে আজ সে অক্ষম। আমি এও জানি এতক্ষণ আমি যা বলছি তাও সেই একই অভিজাত উচ্চকুলের চিন্তা, কিন্তু এ চিন্তা তো আমাদের করতে হবে, আজই এখনই, না হলে সামনে ডোডো পাখির ছবি তো আছেই, বিলুপ্ত হওয়ার আগে তাই দেখুন প্রাণ ভরে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ আবহে জেনেভায় বৈঠক করবেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী
01:28:30
Video thumbnail
SSC Update | বিগ ব্রেকিং, SSC-র ভাতাতে স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের, এবার কী হবে?
01:45:45
Video thumbnail
Ahmedabad Incident | আহমেদাবাদ দু/র্ঘটনার পর বোয়িংয়ে আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব? বহু চুক্তি বাতিল
01:51:11
Video thumbnail
Stadium Bulletin | জোড়া শতরান! হেডিংলেতে দাপট ভারতের
22:37
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
04:01
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের যে ক্ষে/পনা/স্ত্রে কুপোকাত ইজরায়েল, জেনে নিন তার গোপন কথা,দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:14:41
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের অনবরত অ‍্যা/টাক, ছা/ই হওয়ার মুখে ইজরায়েল, দেখুন ঠিক কী অবস্থা
01:40:21
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধে ২ সপ্তাহের মধ‍্যে এন্ট্রি নেবে আমেরিকা
02:35:25
Video thumbnail
Apple-Google Password | অ্যাপল-গুগল-ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড ফাঁস
01:06:20