Friday, June 27, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | এবার শুরু অর্ধেক আকাশের দাবিতে লড়াই
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | এবার শুরু অর্ধেক আকাশের দাবিতে লড়াই

মজার ব্যাপার, এই স্লোগানগুলো বেশিরভাগ সময় পুরুষদের গল্পই বলে

Follow Us :

নমস্কার আমি অদিতি, শুরু করছি কলকাতা টিভির আর নতুন নয়, ইতিমধ্যেই ৬৫টা এপিসোড হয়ে গেছে,হাজির আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে, সাদা কালো। একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজকের বিষয়, এবার শুরু অর্ধেক আকাশের দাবিতে লড়াই।

ভারতে নির্বাচন তো একটা চলমান তামাশা, এক সার্কাস বললেও কম বলা হয়। গত ১০ বছরে আমরা দেখেছি কত রাজনৈতিক প্রচারের জাঁকজমক, আড়ম্বর আর হইচই, টাকার ছড়াছড়ি, আর দলের দফতরে মানুষের সেবা করার জন্য উথালি পাথালি হৃদয় নিয়ে প্রার্থীদের ভিড়। পাল্লা দিয়ে মেয়ে ভোটারদের সংখ্যাও বেড়েছে, মেয়েরা নিজেরা নিজেদের মতো স্বাধীন মতামত দিচ্ছে, আর সেটা বুঝতে পেরেই রাজনৈতিক কথাবার্তার ধরন বদলাচ্ছে, ক্যাম্পেনগুলো একটু মেয়েদের লক্ষ্য করে বানানো হচ্ছে আর পেশাদার লোকজনেরা সেটাকে আরও নিখুঁত করে তোলার দিকে মন দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও, নির্বাচনের মূল হাতিয়ার – স্লোগান – ন্যারেটিভ সবটাই এক চূড়ান্ত লিঙ্গভিত্তিক কথাবার্তায় আপাদমস্তক ডুবে আছে। এই স্লোগানগুলো হিংসাকে খানিকটা জায়জ করে তোলার চেষ্টা করছে যেন এসবই খুউউ স্বাভাবিক আর মেয়েদের একটা সলিড ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবেই তৈরি করা হচ্ছে। ভিখিরির জন্য যেমন বাড়িতে কিছু খুচরো পয়সা রাখা থাকে, খানিকটা সেই রকম। যেন তারা রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় নয়, তার সাইড লাইনে বসে থাকা কিছুর আশায় বসে থাকা এক সমষ্টি। ১৯৫০ আর ৬০-এর দশকের গ্রামের সেই শিঙে ফুঁকে প্রচার, পোস্টার, দেওয়াল লিখনের গল্প এখন ২০২০-এর ডিজিটাল সুনামিতে পৌঁছে গেছে। প্রথম দিকে সব ছিল মাটির কাছাকাছি, র‍্যালি, বাড়ি বাড়ি ঘোরা, আর খবরের কাগজ, দেওয়াল জোড়া প্রতিশ্রুতি। দলের কর্মীরাই সেখানে ছিল মূল হিরো। ৭০-এর দশকে স্লোগানের দাপট প্রথম শুরু হয়, ইন্দিরা গান্ধীর ‘গরিবি হটাও’। গগন নিনাদী স্লোগান। ৮০-এর দশকে টিভি আর রেডিও এসে হইচই ফেলে দিল, টিং টং, তারপরেই বিজ্ঞাপন। নির্বাচনের সময় ভোটের বিজ্ঞাপন। তারপর ৯০-এর দশকে নরসিমহা রাও আর মনমোহন সিংয়ের হাত ধরে উদারীকরণ আর ২০০০-এ চলে এল ইন্টারনেট, ব্যস, সব বদলে গেল। গোটা প্রচার আর নির্বাচন এখন স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়াতে। বাইরে র‍্যালি মানে বিরাট নেতারা, মোদিজি, রাহুলজি, মমতা ব্যানার্জি, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব, আদিত্যনাথ যোগী। পরের সারির নেতারা মাছি মারছে, তাঁদের সভায় মাইক বেশি, লোকজন কম। কিন্তু এর পরের ছবি? এক আকাশ পাতাল তফাৎ। সেটা এক অন্য দিক।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | সুখের কথা বোলো না আর, বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি

আসুন সেই অন্যদিকটাকে দেখা যাক, এই ২০২০-এ এসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, আর ডেটা দিয়ে ক্যাম্পেন চলে – রিয়েল টাইমে ভোটারদের সঙ্গে কথা, আর ওয়ার রুম থেকে লড়াই। বুথভিত্তিক হিসেব নিকেশ বলে দিচ্ছে কোথায় কী হতে পারে, কোন বুথে কত সংখ্যালঘু, কত হরিজন ভোটার আছে। কিন্তু এই হাইটেক যুগে হাই-ফাই ক্যাম্পেন-এর মধ্যে স্লোগানের জোর কমেনি, বরং বেড়েছে। ‘বিজলি, সড়ক, পানি’ থেকে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’, “না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা” থেকে “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ”- এই স্লোগানগুলো মতাদর্শ, প্রতিশ্রুতি, আর ভাবনাকে একটা কথায় বেঁধে দিয়ে একটা দ্যোতনা, একটা ন্যারেটিভ তৈরি করছে। এগুলো ভোটারদের জাগায়, ফলাফল ঘোরায়, আর জনমত গড়ে তোলে।

কিন্তু মজার ব্যাপার, এই স্লোগানগুলো বেশিরভাগ সময় পুরুষদের গল্পই বলে। মেয়েদের বিষয়গুলোকে আধখানা গল্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, পুরোপুরি না। কথায় কথায় এক প্রবল নারী-বিরোধী ছায়া “ঘর কি লক্ষ্মী” বলে মেয়েদের ঘরের দেবী বানিয়ে রাখা হয়, রাজনীতির মাঠে খেলতে না দেওয়ার এক ফিকির চলতেই থাকে। “মহিলাদের বিকাশের জন্য ভোট দাও” মুখে বলা হচ্ছে, আসলে রাজনৈতিক দলগুলো মেয়েদের শুধু এক ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবেই এক ভিক্ষের পাত্র নিয়ে বসে থাকা এক কৃপাপ্রার্থী করে তুলেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয় না। “শক্তির প্রতীক, মায়ের রূপ” বলে মেয়ে নেত্রীদের মায়ের ছাঁচে ঢালা হয়। “লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ” বলে মেয়েদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা লড়তে পারে – যেন এটা স্বাভাবিক নয়। “বেটি বাঁচাও, বেটি পঢ়াও” বলে মেয়েদের বাঁচাতে হবে বলা হয়, সমাজ বদলের কথা থাকে না। আর “মহিলাদের সরকার, সুরক্ষা আর সম্মান” বলে মেয়েদের শুধু ভিকটিম বানিয়ে রাখা হয়। এই প্রত্যেকটা স্লোগান আসলে সমাজে রাষ্ট্রে মেয়েদের আসল জায়গাটাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দেখিয়ে দেয় যে মেয়েরা মানুষ নয়, তারা দেবী, মেয়েরা দুর্বল, মেয়েরা ডিপেন্ডেন্ট, মেয়েদের সাহায্য জরুরি। আর এই সব কথা বলা হয় কখন যখন সারা দুনিয়ায় এক লিঙ্গসাম্যের লড়াই ক্রমশঃ জোরদার হচ্ছে। ২০১৪-এর একটা র‍্যালিতে এক নেতা বলেছিলেন, “লড়কে, লড়কে হ্যায়, গলতি হো জাতি হ্যায়” – ছেলেরা তো আফটার অল ছেলে, তাই ভুল হয়ে যায়। এটার আড়ালে যৌন হেনস্থাকে হালকা করার চেষ্টা হয় আর পুরুষদের হিংসাকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়, পাশে তো অ্যানিম্যাল-এর মতো সিনেমা আছেই। “বেটির ইজ্জতের থেকে ভোটের ইজ্জত বড়” এরকম উজবুকমার্কা কথাবার্তাও অনায়াসে বলে মেয়েদের মর্যাদাকে বিপন্ন করা হয়। এই তো এ বছরই এক নেতা বললেন, তাদের দল রাস্তা বানাবে এক মহিলা নেত্রীর গালের মতো মসৃণ, এর আগে লালুপ্রসাদ যাদবও এরকম কথা বলেছিলেন, সব্বাই খ্যাক খ্যাক করে কেবল হেসেছিল। মেয়েদের শরীরকে রাস্তার সঙ্গে তুলনা করা – এর থেকে বড় নারী-বিরোধী কথা কী হতে পারে? নোংরা ক্যাম্পেন, মেয়ে ভোটারদের শুধু ভিকটিম বানানোই নয়, মহিলা নেত্রীদের বিরুদ্ধে নোংরা ক্যাম্পেনও চলে। তাদের চরিত্রে কালি দেওয়া হয়, চেহারা, জীবনযাত্রা, আচরণ, পোশাক, আর বিয়ের স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলা হয়, আর তা সব দলের তরফেই করা হয়, সব দলেই এরকম লোকজন আছেন, কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং থেকে শুরু করে বিজেপির গিরিরাজ সিং, আলাদা কিছু তো নয়। তারা বারবার এটা মনে করিয়ে দেয় যে রাজনীতিতে মেয়েদের পুরনো সমাজের ছাঁচেই থাকতে হবে। তাদের মেধা, তাদের ক্ষমতা, তাদের জীবন দর্শন আর কাজের থেকে লিঙ্গটাই বড় হয়ে ওঠে, যেটা তাদের নেতৃত্ব আর ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায়। এবার একটা বড় বদল দরকার। স্লোগান শুধু সিস্টেম বদলের পেছনে দাঁড়ালে হবে না, মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে পুরনো চিন্তাভাবনাকেও ভাঙতে হবে। ভারতের নির্বাচনে স্লোগান একটা গুরুত্বপূরররণ বিষয়, তা দিয়ে বড় বদলও আনাই যায়। আমাদের এমন স্লোগান চাই, যেগুলো মেয়েদের ছোট করবে না, পুরুষতান্ত্রিক নিয়মগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দেবে না, লিঙ্গভিত্তিক হিংসাকে হালকা করবে না, আর মেয়েদের শুধু এক কৃপাপ্রার্থী নয়, দিন বদলের, সমাজ পরিবর্তনের নেতা হিসেবেই দেখাবে। শুরু হোক সেই অর্ধেক আকাশের নতুন লড়াই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | Benjamin Netanyahu | ফের নেতানিয়াহুর পাশে ট্রাম্প, কী করবে ইরান?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | কে এই মামদানি? যাকে ভ/য় পান ট্রাম্প, যু/দ্ধ আবহে এল বড় খবর
00:00
Video thumbnail
BJP | বিগ ব্রেকিং, বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার জন‍্য নোটিফিকেশন জারি
00:00
Video thumbnail
Israel | ইজরায়েলজুড়ে ধ্বং/সস্তূপ, নেতানিয়াহুর সামনে ক্ষো/ভে-কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ইজরায়েলের নাগরিকরা
00:00
Video thumbnail
Iran | Israel | America | এই ৭ কারণে ইরানকে কিছু করতে পারল না আমেরিকা-ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
Benjamin Netanyahu | এবার নিজের দেশেই জেলে যাবেন নেতানিয়াহু? কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:57
Video thumbnail
Maharashtra | মহারাষ্ট্রে হিন্দি চাপানোর জের জোর কোন্দল NDA-তে, পাশে নেই দুই উপ মুখ্যমন্ত্রী
03:37
Video thumbnail
Iran-Israel | আমরা খামেনিকে সরিয়ে দিতাম, বললেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কেন পারলেন না?
04:01
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের নয়া দুঃস্বপ্ন, এই মুসলিম যুবক মোদি-নেতানিয়াহু সম্পর্কে কী মত পোষণ?
04:20
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | পুরীর খাজা, দিঘার গজা, বাঙালি খুশি?
10:21

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39