Sunday, June 1, 2025
HomeScrollFourth Pillar | পাকিস্তান কী চায়? উগ্রপন্থীরা কী চায়?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | পাকিস্তান কী চায়? উগ্রপন্থীরা কী চায়?

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কয়েক দশক ধরে অসাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে সবখানে

Follow Us :

পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে বা পহেলগাম আক্রমণের প্রেক্ষিতে আলোচনার প্রতিটা পদক্ষেপে আপনাকে মনে রাখতেই হবে যে চাইলেই আমরা পাকিস্তানকে ‘কন্ট্রোল+অল্ট+ডিলিট’ মেরে মুছে ফেলতে পারব না। ওই যে মিট্টি মে মিলা দেগা ইত্যাদির বাওয়াল সম্ভব নয়। আবার পাকিস্তান যেভাবে ক্রমাগত দেশের ভিতরে এসে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তার ভাড়াটে সৈন্যবাহিনীকে সামনে রেখে, তার একটা তো প্রতিকার দরকার, কিছু তো একটা ডিসাইসিভ করতেই হবে। একটা শেষ বোঝাপড়া? শেষ নাহি যার, শেষ কথা কে বলবে? শেষ না হলেও একটা আপাতত সিদ্ধান্তে তো আসতেই হবে। উরি হওয়ার পরে প্রায় তেমন কিছু না বলেই সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছিল, বেশ কিছু উগ্রপন্থী মারা হয়েছিল। পুলওয়ামার পরেও বিশাল ঘোষণা করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। ধরে নিচ্ছি সরকারের দাবি মতো সেখানেও বেশ কিছু জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা হয়েছে, বেশ কিছু জঙ্গি মারা গেছে। কিন্তু এতে পাকিস্তানের কী হয়েছে? হাজার পাঁচেক মাদ্রাসার থেকে তিন জন করেও হঙ্গি রিক্রুট করালেই ১৫ হাজার নতুন জঙ্গি পাওয়া যায়। তাহলে? তাহলে কেবল জঙ্গি শিবির ভেঙে, কিছু টেররিস্টকে অ্যানাইহিলেট করেই কি কিছু হবে? হচ্ছে না, সেটা তো সাফ বোঝা যাচ্ছে, একটা সময়ের পরে আবার তারা একটা কিছু ঘটাচ্ছে, সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

আবার একটা ব্যাপার খেয়াল করুন সেই ২০১১ থেকে, মানে সেই ২৬/১১-র পর থেকে বড় ঘটনা কিন্তু উরি বা পুলওয়ামা, মানে মধ্যের এক বিরাট সময়ে বড় কিছু ঘটেনি। কেন? কারণ ওই ২৬/১১-র পরে সারা দুনিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে, সমস্ত তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়ে আমাদের দেশের তরফে এক লাগাতার প্রচার চালানো হয়ে ছিল, ওই ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে গোছের রেটোরিক দিয়ে নয়। আসলে ন্যাংটার নেই বাটপারের ভয়, পাকিস্তানের হারানোর মতো আছেটা কী? কাজেই যত ওই ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে ইত্যাদি বলা হবে ততই ওদের দেশের মানুষকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে সুবিধে হবে আর জঙ্গিদের রিক্রুটমেন্ট বাড়বে। আমাদের মাথায় রাখতেই হবে যে প্রতিবেশীর সাথে শান্তিস্থাপন দুর্বলতা নয়, তাকিয়ে দেখুন না চলতি যুদ্ধগুলোর দিকে, ইউক্রেন এমনকী গাজাও, যুদ্ধ চলছে, চলবে, কাজেই শান্তি স্থাপন করতে না পারার খেসারত কিন্তু আছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কয়েক দশক ধরে অসাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে সবখানে, আর তারাই দেশের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে। ঐতিহাসিকভাবে, এই সেনাবাহিনীই সরকার, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ এবং এমনকী তাদের নিজেদের সমস্ত উঁচু পদে নিজেদের পছন্দের মানুষজনকে বসানোর জন্য রাজনীতি ও নির্বাচনে যত রকমের সম্ভব সব ধরনের কারসাজি করেছে আর এসবের মাঝখানেই তারা নিজেদেরকে দশকের পর দশক ধরে দেশের ‘চিরন্তন ত্রাণকর্তা’ মসিহা হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছে। তারাই বুঝিয়েছে তাদের ‘চিরন্তন শত্রু’ ভারত আর আপাতত নতুন শত্রু আফগানিস্তান।

এই সেনাবাহিনীই এক্কেবারে প্ল্যান করে ভারতের মধ্যে এই উন্মাদ জঙ্গিদের ঢোকাবে, তারা চায় যে ভারত কিছু ব্যবস্থা নিক, সে জল দেব না থেকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, তারা দেশের মানুষকে বোঝানোর সুযোগ পেয়ে যায়, দ্যাখো ভারত কত খারাপ, এরপর তারা জনসাধারণের কাছে প্রতিশোধ নেওয়ার বা তার হুমকি এনে হাজির করে। মানুষ তাদের এই Narrative-কে সমর্থন করে, বিশ্বাস করে যে কেবল সেনাবাহিনীই পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি নয় । এটাই চলছে দশকের পর দশক ধরে। যদিও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগে এই সেনাবাহিনীর যাবতীয় কারসাজির সুবিধেগুলো আরামসে ভোগ করেছিলেন, কিন্তু একটা সময়ের পর তিনি তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা মাত্র সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে জেনারেল আসিম মুনিরের ভাবমূর্তিতে আঁচ লাগা মাত্র তাঁকে জেলে পোরা হয়েছিল। এই সেনাবাহিনীর সামনে সমস্যা কি একটা? দেশের ভিতরে এক ঝরঝরে অর্থনীতি, বিশাল বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি তো আছেই তার উপরে গত মার্চ মাসে, দুজন মার্কিন সেনেটর পাকিস্তানে গণতন্ত্র আইন ইত্যাদির কথা তুলেছিলেন, ইমরান খান সমেত রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর অন্যায় বিচার, জেলে আটক করে রাখা ইত্যাদির জন্য মুনিরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবও করেন। স্বাভাবিকভাবে মার্কিন চাপ আর্মি চিফের উপরে বাড়ছে, তাই তিনিও পাকিস্তানের বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুটা পালটে দিতে চান, লাগুক একটা ছোটখাট যুদ্ধ, এসব প্রসঙ্গই আর উঠবে না।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কাশ্মীরে ২৭ জন খুন, তাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন, অনেক রহস্য

ওদিকে দেশের ভিতরে, সেনাবাহিনী বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না কেবল নয়, চূড়ান্ত ব্যর্থ, ১১ মার্চ বালোচ জঙ্গিরা যেভাবে শয়ে শয়ে যাত্রী সমেত জাফর এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী ট্রেন ছিনতাই করল তা সেনাবাহিনীর জন্য চরম বিব্রতকর ছিল। আবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে প্রতি বছর পাক নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মারা যাচ্ছেন, আহত হচ্ছেন, সেনাবাহিনী ঘাঁটি, সেনানিবাস এবং সুরক্ষিত সদর দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বালোচ জঙ্গিরাই হামলা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কয়েকদিন আগে মুনিরের দেওয়া ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য মাথায় রাখুন, কাশ্মীর পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, “কাশ্মীরিদের ভুলে যাওয়া হয়নি” প্রায় হুমকির মতো এসব কথা বলার পরেই ২২ এপ্রিলের পহেলগামের ঘটনা সামনে এল। আর এসবের মধ্যেই পাকিস্তান যে নতুন সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছে তা হল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক। সেটা মাথায় রেখেই তারা বাংলাদেশে সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলতে চায়, ঢাকায় তুলনামূলকভাবে দুর্বল সরকার পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করবে, এটা পাকিস্তানের আশা। ঠিক এইখানেই দরকার এক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচার আর পরিকল্পনা, এবং এরকমই এক পরিকল্পনাই ২০১১-র পরে কিন্তু পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিল ঘরে বসে থাকতে। সেবারে ট্রাম্প ১.০-এর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের জুন মাসে পাকিস্তানকে গ্রে এরিয়া তালিকাতে রেখেছিল। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক বাধানিষেধ লাগু হয়েছিল, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ৬ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ বাদ পড়েছিল।

এই একই কূটনৈতিক চাপের ফলে দোহাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মার্কিন-তালিবান আলোচনা শুরু হয়, পাকিস্তান তালিবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বারাদারকে মুক্তি দেয়। পাকিস্তান হাফিজ সইদ আর মুম্বই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সাজিদ মিরের মতো লস্কর-ই-তইবার শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও দোষী সাব্যস্ত করতে বাধ্য হয়েছিল । কিন্তু তারপরে এই কূটনৈতিক খেলাতে ঢিল দেওয়া হয়, পাকিস্তানকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের -এর ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং তারপর থেকে আবার মনে হচ্ছে তারা তাদের ছায়াযুদ্ধের খেলায় ফিরে গেছে। আসলে পৃথিবী তার রাজনীতি বদলেছে, মধ্যযুগীয় মারের বদলা মার, ইত্যাদি আজ আর কোনও পথ হতেই পারে না, তারচেয়ে অনেক জরুরি সারা বিশ্বের এক জনমত তৈরি করা, কিন্তু তার মানে কি হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকা, না তাও নয়। নিজেদের সীমান্ত এলাকাতে নজরদারি বাড়ানো, দেশের মধ্যে সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়ানো আর সবথেকে বড় কথা হল এক সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ গড়ে তোলাটা বড্ড জরুরি। আসলে পাকিস্তানের মানুষ চায় রোটি কাপড়া মকান, অসম্ভব এক অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে সে দেশ চলে গেছে যার ৯০ শতাংশ সম্পদের ভাগাভাগি ওই সেনাবাহিনীর মধ্যেই চলছে আর বাকি ৮/৯ শতাংশ দেশের কিছু বিশাল জমি জায়গার মালিক, কিছু বড়লোক, আমির ওমরাহদের মধ্যে, ১/২ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য আছে। কাজেই সাধারণ মানুষের অবস্থা খুব খারাপ।

ওদিকে আগেই বলেছি সেনাবাহিনী চায় এক কাশ্মীর ভারতের ঝাঁঝালো ককটেলটাকে জিইয়ে রাখতে, সেটা করার জন্য তারা জঙ্গিদের সাহায্য করে, ক্যাম্প বানিয়ে দেয়, অস্ত্রশস্ত্র ট্রেনিং দেয় আর বুদ্ধি দেয় কোনখানে আঘাত করলে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে। হ্যাঁ, এটাই তাদের বহু দিনের ইতিহাস, কত মানুষ মারা গেল, সেটাই ছিল বিবেচ্য। এখন মনে হচ্ছে তারা স্ট্র্যাটেজিতে বদল এনেছে। দেশের মধ্যে এই বিরাট মুসলিম বিদ্বেষ, ভয়ঙ্কর মুসলমান বিরোধিতা আর বিজেপির তীব্র হিন্দুত্বকে মাথায় রেখেই তারাও তাদের কায়দা বদলে বেছে বেছে হিন্দু মারার প্ল্যানে নেমেছে। হ্যাঁ, আজ পর্যন্ত পাক হানাদারদের, উগ্রপন্থীদের যাবতীয় আক্রমণের বটমলাইন ছিল সংখ্যা, কত বেশি মানুষ মারা যায়, কত বেশি রক্তপাত ঘটানো যায়। এখন কিন্তু তা বদলে গেছে, ওরা জেনে ফেলেছে যে ৫০ জন হিন্দু-মুসলমানকে মারার বদলে ২৬ জন হিন্দুকে মারাটা অনেক কাজের, তাতে সারা দেশে এক ঘৃণার আবহ তৈরি হবে, দেশের ১৮/২০ শতাংশ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে, তাদের কাউকে কাউকে কাজে লাগানো যাবে। হ্যাঁ উগ্রপন্থীরা এটাই চাইছে, পাক সেনাবাহিনী চাইছে আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত পড়ুক, কী আশ্চর্য, চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করনেওয়ালা আহাম্মক কিংবা বিজেপি আইটি সেলও তাই চায়, দুজনের অভিন্ন লক্ষ্য হল দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে চুলোর দোরে পাঠানো, সেই কাজেই হাত দিয়েছে গোদি মিডিয়া আর বিজেপির আইটি সেল, সেটাকে রুখে দেওয়াই আমাদের প্রথম আর প্রধান কাজ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Taiwan | China | তাইওয়ানে যে কোনও সময় হা/মলা করতে পারে চীন, সতর্ক করল আমেরিকা
52:00
Video thumbnail
NIA | দেশজুড়ে তল্লাশি NIA-র, কী খুঁজছেন গোয়েন্দারা?
01:08:31
Video thumbnail
Donald Trump | Iran | ইরানে ফের যু/দ্ধের আভাস, ট্রাম্পের মন্তব্যে আলোড়ন
56:51
Video thumbnail
SSC Recruitment | শিক্ষক নিয়োগে বাড়তি সতর্কতা SSC-র, কেন এই উদ্য়োগ? দেখে নিন বড় খবর
01:12:46
Video thumbnail
Indian Air Force | ঢাল-তরো/য়াল নেই বায়ুসেনার! প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনেই বিরাট অভিযোগ
01:00:11
Video thumbnail
Kolkata Metro | মেট্রো স্টেশনে সাবধান, সতর্ক না হলেই বড় জরিমানা
33:25
Video thumbnail
Dilip Ghosh | মোদির সভার পর শাহর সভা, ডাক পেলেন না দিলীপ, দূরত্ব বাড়ছে?
03:09:40
Video thumbnail
Indian Defence | 'অপারেশন শিল্ড', ফের শুরু মক ড্রিল কোন কোন রাজ্যে, দেখুন ভিডিও
02:13:01
Video thumbnail
Abhishekh Banerjee | ভারতে এলে ৩ দিনের জন‍্য প্ল‍্যানিংয়ে কাশ্মীর রাখুন, অনুরোধ অভিষেকের, কেন বললেন?
02:45:56
Video thumbnail
Dilip Ghosh | অমিত শাহর সভাতেও ডাক পেলেন না দিলীপ ঘোষ, অভিমান নিয়ে কী বললেন শুনুন
01:49:30