মঙ্গলবার গোয়ার বাম্বোলিম আ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে এস সি ইস্ট বেঙ্গল মুখোমুখি হবে জামশেদপুর এফ সি-র। দুই দলের মধ্যে প্রথম লিগের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে। সেদিন আন্তোনিও পেরোসেভিচের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। সেই গোল বিরতির আগেই শোধ করে দেন পিটার হার্টলে। তার পর থেকে গোয়ার মান্ডবী নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। ইস্ট বেঙ্গলেরও খেলা হয়ে গেছে প্রথম লিগের দশটি ম্যাচ। কিন্তু এখনও তারা জয়ের মুখ দেখেনি। দশ ম্যাচে ছয়টি ম্যাচ ড্র করার সুত্রে ইস্ট বেঙ্গলের পয়েন্ট এখন ছয়। আর দশ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে জামশেদপুর আছে চারে।
কোনও সন্দেহ নেই মঙ্গলবারের ম্যাচে জামশেদপুরই ফেভারিট। তারা অনেক এগিয়ে থেকে শুরু করবে। তাদের ডিফেন্সে বিশালদেহী পিটার হার্টলে একাই একশো। শুধু গোল আটকানোই নয়, গোল করাতেও দক্ষ তিনি। সামনের দিকে স্কটল্যান্ডের গ্রেগ স্টূয়ার্ট এবং অস্ট্রেলিয়ার জর্ডন মারে গোলের মধ্যে আছেন। ম্যাচটা তাই জামশেদপুরের অ্যাটাকের সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্সের। লাল হলুদের কোচ বদল হয়েছে। এখন সহকারি কোচ রেনেডি সিং দলের দায়িত্বে। গত দুটো ম্যাচ তাঁর কোচিয়ংয়ে খেলে ইস্ট বেঙ্গল অপরাজিত। বিশেষ করে গত ম্যাচে মুম্বই সিটি এফ সি-র সঙ্গে গোল শূণ্য ড্র করে রেনেডির ছেলেরা প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। দশ জন ভারতীয়ের সঙ্গে শুধু নাইজিরিয়ান ড্যানিয়েল চিমাকে সামনে রেখে টিম গড়েছিলেন রেনেডি। এ ছাড়া তাঁর কিছু করারও ছিল না। দুই বিদেশি ডিফেন্ডার টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ফ্রানি্ও পার্সের চোট। ফরোয়ার্ড আন্তোনিই পেরোসেভিচ পাঁচ ম্যাচ সাসপেন্ড। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ অতিবাহিত। এখনও বাকি দুই ম্যাচ। মঙ্গলবারও তাঁর খেলার কোনও উপায় নেই। বাকি দুই বিদেশি স্লোভেনিয়ার আমীর দেরভিসেভিচ এবং নেদারল্যান্ডসের ড্যারেন সিডোয়েলের এমন ফর্ম যে তাদের মাঠে নামানোর কথা ভাবেননি রেনেডি। মুম্বই ম্যাচে একেবারে শেষ দিকে সিডোয়েলকে নামানো হয়েছিল। কিন্তু সেভাবে চোখে পড়েননি তিনি।
মঙ্গলবার জামশেদপুর ম্যাচেও তাই ভারতীয়রাই ভরসা রেনেডির। ডিফেন্সে দু্ই সেন্টার ব্যাক আদিল খান এবং অঙ্কিত মুখার্জির উপরে বেশ নির্ভর করা যায়। তাঁদের দু পাশে লেফট ব্যাক হীরা মন্ডল এবং রাইট ব্যাক অমরজিৎ সিং যা ফুটবল খেলছেন তাতে ভরসা করাই যায়। বিশেষ করে আদিল খান এবং হীরা মণ্ডল প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছেন। ইতিমধ্যে ম্যাচের সেরার পুরস্কারও জুটেছে তাঁদের। তাই স্বদেশী ডিফেন্ডার নিয়েই প্রথমে বেঙ্গালুরু (১-১) এবং পরে মুম্বই (০-০) ম্যাচ না হেরে মাঠ ছেড়েছেন লাল হলুদ ব্রিগেড। মাঝ মাঠে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে সৌরভ দাস ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মুম্বই ম্যাচে। বোঝাই যাচ্ছে নিজের কাজটা খুবই ভালভাবে সামলেছেন তিনি। তাঁর সামনে চার মিডিফিল্ডার লুয়াং, নামতে, হাওকিপ এবং নাওরেম সিংদের তেমন নাম না থাকলেও বিপক্ষকে রুখে দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু পর পর দুটো ম্যাচে তাঁরা বেশ ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পেরেছেন। বিশেষ করে সেম্বোই হাওকিপ। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে চমৎকার গোল করছেন তিনি। মুম্বই ম্যাচে গোল না পেলেও তাদের বিখ্যাত মাঝ মাঠ কিংবা ফরোয়ার্ডদের ভয়ঙ্কর না হতে দেওয়ার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা আছে।
এত কিছুর পরেই ইস্ট বেঙ্গল দশ ম্যাচে জয়হীন। কারণ ম্যাচ জিততে হলে গোল করতে হবে। আর ইস্ট বেঙ্গলে তো গোল করার লোকই নেই। আন্তোনিও সাসপেন্ড না থাকলে হয়তো গোল করার লোক পেত ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু ড্যানিয়েল চিমা তো না হোমে, না যজ্ঞে। তিনি না পারেন গোলের বল তৈরি করতে, না পারেন গোল করতে। এরকম একটা নখদন্তহীন আ্যাটাক নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল যে পর পর তিনটি ম্যাচ থেকে একটা করে পয়েন্ট পেয়েছে তাই অনেক। মঙ্গলবার আবার সেই অগ্নিপরীক্ষা ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্সের। জামশেদপুর বেশ ভাল দল। তাদের কোচ আওয়েন কয়েল বেশ ভাল ট্যাকটিশিয়ান। তারা জেতবার জন্য মরিয়া হবেই। রেনেডির ছেলেরা কীভাবে সে সব ধাক্কা সামলান তাই এখন দেখার।