নির্লজ্জদের এক সুবিধে হল তাদের গলার জোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব বেশিই হয়, বলে না, চোরের মায়ের বড় গলা। আমাদের রাজ্যপাল হলেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, এক সাংবিধানিক পদে বসে থাকা মানুষ, যাঁর নামে দু’ দুটো শ্লীলতাহানি, মহিলাদের সঙ্গে বদসুলুকি করার অভিযোগ আছে তাঁর লজ্জা নেই? এখন আপনি বলতেই পারেন যে অভিযোগ মানেই কি সত্যি? ঠক কথা, হক কথা। এই অভিযোগ সত্যি নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে তো সবচেয়ে সহজ হত যদি উনি ওনার পদ থেকে পদত্যাগ করে বলতেন জরুরি ভিত্তিতে বিচার হোক, দুধ কা দুধ পানি কা পানি হো জায়েগা। তারপর আবার আসিব ফিরে। কিন্তু উনি সেই বান্দাই নন। উনি উল্টে চেষ্টা করেই যাচ্ছেন যাতে ওনার এই সাংবিধানিক রক্ষাকবচ বরকরার থাকে। সেটা কী? একজন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একটা এফআইআর তো করাই যায় কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সাধারণ আইন অনুযায়ী তো ওনাকে কবেই গ্রেফতার হতে হত। কিন্তু করা হয়নি কারণ ওইখানেই ওনার এক সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকে। আর আপাতত উনি সেটা বাঁচানোর কাজেই মন দিয়েছেন। দিল্লি যাচ্ছেন, মন্ত্রীসান্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করছেন, আর বিভিন্ন কড়া কড়া বিবৃতি দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে দিল্লির প্রভুদের খুশি রেখে নিজের গদি বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ উনি জানেন এই পদ চলে গেলে ওনার জায়গা হেস্টিংস থানার হাজতে হতেই পারে। তাই সেটাই বিষয় আজকে, এ এক আজব রাজ্যপাল, নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের এক মহিলা কর্মী অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন, অন্যদিকে এক নৃত্যশিল্পী দিল্লির এক হোটেলে তাঁর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন। অন্য কেউ হলে হাজতের ভাত খেত, কিন্তু ওনার উচ্চঘর, কংসরাজের বংশধর তাই উনি সাংবিধানিক কবচ পরে আছেন, এবং আপাতত ওনার লক্ষ্য ওই সাংবিধানিক কবচ মানে এই রাজ্যপাল পদটিকে আঁকড়ে ধরা। যাঁদের দৌলতে তিনি রাজ্যপাল হয়েছেন তাঁদের খুশি করার জন্যই তিনি অনর্গল কথা বলেই চলেছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | পিটিয়ে মারা থেকে চোপড়া, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই
রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ, এটা তিনি বুঝেছেন এবং বলে যাচ্ছেন। এত ধার যে আর কিছুদিনের মধ্যেই নাকি ঘটি উল্টাবে, কোলাপস করবে অর্থনীতি। কে বলছেন? রাজ্যপাল। সপক্ষে কোন তথ্য এনে হাজির করছেন? কিচ্ছু নেই। ওনার সক্কালে উঠে মনে হয়েছে তাই সম্ভবত উনি এই কথা বলছেন। দুটো কথা বলা যাক, ধার কথাটার এমনিতে তো কোনও মানে নেই, এক দিন আনি দিন খাই মানুষের হাজার টাকার ধারও তো বিরাট ধার, আবার আম্বানির কাছে হাজার টাকার ধারটা কি কোনও ধার নাকি? তার মানে ধার কোনও আনবসিলিউট টার্মস নয়, তাহলে ধার কীভাবে বোঝা যায়? তা বোঝা যায় ডেট টু জিডিপি রেশিও দিয়ে, মানে কত আয় আর তার কত অংশ ধার। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তা ৪১ শতাংশের বেশি হওয়া কাম্য নয়, পশ্চিমবঙ্গের কত? ৩৭ শতাংশ। তথ্য কার, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের, মোদি সরকারের, তাহলে কিসের ভিত্তিতে উনি এ কথাগুলো বলছেন। ভিত্তিহীন কথা বলছেন, উনি আসলে দিল্লির প্রভুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথাই বলছেন। একমাত্র লক্ষ্য হল গদি এবং ইজ্জত বাঁচানো। উনি চোপড়া নিয়ে কথা বলছেন, হ্যাঁ চোপড়াতে যা ঘটেছে তা চরম অন্যায়, কিন্তু ঘটনার পরেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জামিন অযোগ্য ধারাতে মামলা শুরু করা হয়েছে। আইসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর কী করা হবে? উনি চোপড়াতে যাচ্ছেন? কোন অভিযোগের খবর নিতে যাচ্ছেন, প্রকাশ্যে এক মহিলার শ্লীলতাহানির খবর, উনি? কেন? হাস্যকর নয়? উনি বিধানসভাতে এসে বিধায়কদের শপথ গ্রহণ করানোর সময় পাচ্ছেন না উনি চোপড়ায় যাচ্ছেন পীড়িতা নারীর পাশে দাঁড়াতে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দু’ দুজন মহিলা অশালীন আচরণের অভিযোগ এনেছেন, তাঁর কি নিজের থেকেই পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তদন্ত করার সুযোগ দেওয়াটাই উচিত ছিল না? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
এক মনোনীত রাজ্যপাল যখন নিজেকে রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বড় বা সমকক্ষ বলে মনে করেন, তখনই শুরু হয় সমস্যা। তিনি মনোনীত, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক বিরোধী দলের নেতারাই তাঁকে মনোনীত করে পাঠান, কাজেই তিনিও যদি রাজ্যে এসেই এক নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কাছা খুলে নেমে পড়েন তাহলে সংঘাত বাঁধবেই। এ সংঘাত নতুনও কিছু নয়, এর আগে আমাদের দেশে এ ঘটনা বহুবার ঘটেছে, কিন্তু খুব কম ঘটনাই এত নিম্নমানের হয়। এক রাজ্যপাল, সাংবিধানিক প্রধান তাঁর বিরুদ্ধে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ দু’ একবার শোনা গেছে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সরে গেছেন বা তাঁকে সরানো হয়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে নতুনত্ব হল তিনি নড়বেন না, চেয়ার ধরে বসে আছেন, পাছে রক্ষাকবচটি পড়ে যায়।