Wednesday, August 27, 2025
HomeScrollAajke | তৃণমূলের তারকারা দলের সম্পদ নাকি বোঝা?

Aajke | তৃণমূলের তারকারা দলের সম্পদ নাকি বোঝা?

হাতির দু’ ধরনের দাঁত থাকে, দিখানে কা, খানে কা। দেখানোর জন্য, খাবার জন্য। রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে কিছু আছে কাজের জন্য আর কিছু আছে শো কেসে সাজানোর জন্য, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখনকার চেহারাটা কেমন ছিল? অ্যায় মেরে বতন কে লোগো, লতার গলায় এই গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন নেহরুজি, কিন্তু বলেছিলেন নাকি লতা মঙ্গেশকরকে আসুন আমাদের হয়ে ভোটে দাঁড়ান। আবার আসেননি কি কেউ কেউ? এসেছেন। বাম রাজনীতিতে তো কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, নাট্যকার, ঐতিহাসিক, শিল্পীর ছড়াছড়ি। পৃথ্বীরাজ কাপুর, বলরাজ সাহনি, ঋত্বিক ঘটক, খ্বাজা আহমদ আব্বাস, উৎপল দত্ত, সলিল চৌধুরি, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, ভূপেন হাজারিকা কে নয়? সেদিন বামেদের সঙ্গে গলা মিলিয়েই নীরজ, গোপাল দাস নীরজ লিখেছিলেন, জিতনা কম সামান রহেগা, উতনা সফর আসান রহেগা। যব তক মন্দির অউর মসজিদ হ্যায়, মুশকিল মে ইনসান রহেগা। মনে পড়ছে না তো নীরজকে? বেশ, মনে আছে এ ভাই জরা দেখকে চলো? মনে আছে ও মেরি, ও মেরি শর্মিলি আও না তর্সাও না? মনে আছে ফুলো কি রং সে? হ্যাঁ সেই নীরজের মতো কবি গীতিকার, শাবানা আজমির বাবা কৈফি আজমি এঁরা বামেদের সঙ্গে ছিলেন কিন্তু তাঁরা নির্বাচনে দাঁড়াননি, কিন্তু শেষমেশ বামেদের সঙ্গেও তাঁদের দূরত্ব বেড়েছে। সুনীল দত্তের মতো কয়েকজন শুরু থেকেই কংগ্রেসি ছিলেন, সাংসদও হয়েছেন। কিন্তু সেলিব্রিটি হিসেবে এনাদের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ ১৯৮৪ থেকে। অমিতাভ বচ্চন দাঁড়িয়ে পড়লেন এলাহাবাদে, হারালেন এইচ এন বহুগুণার মতো পোড়খাওয়া নেতাকে। হ্যাঁ, বলা যায় ওই সময় থেকে ওই হাতির দেখানো দাঁতের মতোই রাজনৈতিক দলে সেলিব্রিটিদের আগমন। তৃণমূলে তাপস পালকে দিয়ে শুরু হলেও তাপস পাল কিন্তু রাজনীতিটা সিরিয়াসলিই করতেন, অন্তত ২০১১ পর্যন্ত। কিন্তু তারপরে তৃণমূলে এই হাতির দাঁতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। আজ সেটা নিয়েই আলোচনা, বিষয় আজকে তৃণমূলের তারকারা দলের সম্পদ নাকি বোঝা?

পুলিশকর্তা থেকে অভিনেতা থেকে গায়ক থেকে মহানায়ক, অনায়াসে মমতা তাঁদের কাছে টেনে নিয়েছেন, কেবল কাছেই নেননি, পাঠিয়েছেন বিধানসভা, লোকসভাতে। একেবারে স্বার্থহীনভাবেও নয়, তাঁদের অনেকেরই জনমোহিনী ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন মমতা, তাঁদের জনমোহিনী ক্ষমতা দিয়ে ভোটারদেরকে টেনে এনেছেন তাঁরা। খুব সোজা আসনেই কি তাঁদের দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? না একেবারেই নয়, সাধারণ নেতাকর্মী হলে হেরে যেতেই পারত, মানে তৃণমূলের অনেকটা ভোট আর সেলিব্রিটি প্রার্থীদের খানিকটা ভোট, দুই মিলে জয় এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: Aajke | খামোশ শত্রুঘ্ন, বাঙালি কী খাবে, তা ঠিক করার আপনি কে?

ধরুন ২০২১-এ উত্তরপাড়াতে কাঞ্চন মল্লিক বা ব্যারাকপুরে রাজ চক্রবর্তীর আসন খুব সহজ ছিল না, ওনারা লড়েছেন, জিতেছেন। কেবল দলের দয়াতেই জিতেছেন তেমন নামও আছে, নুসরত জাহান বা মিমি চক্রবর্তী, কিন্তু সেই তালিকা বেশ ছোট। এমনকী এবারের লোকসভাতে জুন মালিয়ার আসনে লড়াই ছিল কঠিন, ইউসুফ পাঠানের লড়াই আরও কঠিন। শত্রুঘ্ন সিনহার আসনও কেকওয়াক ছিল না। আবার কিছু আসনে এই সেলিব্রিটিরা হলেন মুশকিল আসান, সেখানে দলের মধ্যের তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্বকে এড়াতেই তাঁদের আসন দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সেটা জিতে দেখিয়েছেন, তাঁদেরকে শিখণ্ডী করে বাণ চালিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের এই হাতির দাঁতের মধ্যে আবার কয়েকজন সিরিয়াস পলিটিশিয়ান হয়ে উঠেছেন, সায়নী ঘোষের নাম বলতেই হয়, তেমন বলিয়ে কইয়ে নয় কিন্তু সংগঠনকে ধরে রেখেছেন জুন মালিয়া। সাংবাদিকতা থেকে গেছেন সাগরিকা ঘোষ, কিন্তু গিয়েই নিজের স্বাক্ষর রাখছেন, বহু আগেই এই সেলিব্রিটি কোটা থেকেই ডেরেক ও ব্রায়েন গিয়েছিলেন সংসদে, এখন কেবল তৃণমূলেরই নয়, দেশের সাংসদদের মধ্যে অন্যতম। সব মিলিয়ে বেশ কিছু সেলিব্রিটি কেবল হাতির দাঁত নয়। কিন্তু আপাতত এই শ্ত্রুঘ্ন সিনহা, এই রচনা ব্যানার্জি এঁদের নিয়ে দল অপদস্থ হচ্ছে, তৃণমূল দলের মধ্যেই এঁদের হাস্যকর আপত্তিজনক কথাবার্তা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি বলতেই পারেন, হ্যাঁ সন্ধ্যা রায়, যোগেন চৌধুরী ইত্যাদির মতোই এঁরাও ওই হাতির দাঁত, কিন্তু দু’ একজন তো এরকম থাকবেই। তবে হ্যাঁ, এনারা যে ক্রমশ বোঝা হয়ে উঠছেন, তা এনাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য দেখলেই বোঝা যায়। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, তৃণমূল দলের এই রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ওই শত্রুঘ্ন সিনহারা কি দলের কাছে ক্রমশ বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না? অভিনেতা, গায়ক নায়ক, কবি লেখকদের মধ্য থেকে রাজনীতিবিহীন মানুষজনদের রাজনীতিতে আনাটা কি আপনারা সমর্থন করেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

রাজনীতি আর সব পেশা বা কাজের মতোই এক সিরিয়াস ব্যাপার, এর জন্য একটা প্রস্তুতি দরকার, এরজন্য পড়াশুনো দরকার, এরজন্য সময় দেওয়াটা জরুরি। যে সমস্ত সেলিব্রিটি গায়ক নায়কেরা সময় দিয়েছেন, পড়াশুনো করেছেন, তাঁরা হতে পেরেছেন রাজনীতির মানুষ, যাঁরা পারেননি তাঁরা ওই হাতির দাঁত হয়েই থেকে গেছেন, থেকে যাবেন। তৃণমূল দলের এই হাতির দাঁতেরা আলাদা কিছু নয়, সংখ্যায় যাই হোক এঁরা দলের কাছে একধারে সম্পদ, অন্যধারে বোঝাও বটে। তবে আশার কথা সামান্যতম বিপদ দেখলে এনাদের একজনও মাঠেই থাকবেন না, এটাও হলফ করেই বলা যায়।

Read More

Latest News