গাঁয়ে না মানে আপনি মোড়ল কথাটা বেশ খেটে যায় এই শত্রুঘ্ন সিনহার (Shatrughan Sinha) ক্ষেত্রে, বিজেপি থেকে বের হবার পরে দু’ দু’ বার গোহারা হেরেছেন পাটনায় ওই রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে, সিনেমা হাতে নেই, বয়স হয়েছে ওদিকে বাচ্চা বয়সের হিরোপনা অটুট, কাজেই অত্যন্ত নিম্ন মানের ভাঁড়ামি দিয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বহুকাল। এরই মধ্যে দিদিমণির কাছে, দেখুন না, যদি কিছু একটা হয়, আপনাদের আসানসোল তো হিন্দি ভাষাভাষী মানুষদের এলাকা। তো সুযোগ এসে গেল, বিজেপি দাঁড় করাল সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে (Surinder Singh Ahluwalia), তৃণমূল শত্রুঘন সিনহাকে, উনি জিতলেন। জেতার পরে একটা ভাষণ? লোকসভাতে শপথ নিতেই কেটে গেল দু’ মাস। তারপর শপথ নিয়ে বাংলার স্বার্থে, আসানসোলের মানুষের স্বার্থে একটাও কোনও কথা উচ্চারণও করেছেন লোকসভাতে (Lok Sabha)? ইন ফ্যাক্ট জানেনটা কী? যে কথা বলবেন। তো এরকম গয়না রাজনৈতিক দলের থাকে, প্রত্যেক দলের থাকে। বছরের পর বছর বামফ্রন্টের সাংসদ ছিলেন, সংসদে একটা কথাও বলেননি, এমন আছেন, ছিলেন অনেকে। বিজেপির বেশিরভাগ সাংসদও সেই গয়না, ওনারা এলাকাতে কাস্ট ফ্যাক্টর বা মাসল ফ্যাক্টরে জিতে এসেছেন, সেলিব্রিটিদের বেশিরভাগই তো গয়না। তো তৃণমূলেরও তেমন গয়না আছে বইকী। কিন্তু তাঁরা যখন নিজেদের জাহির করতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তাঁরা যখন তাঁদের প্রজ্ঞা, পাণ্ডিত্য দেখাতে মুখ খোলেন তখনই ওই কুইন্টাল কুইন্টাল জল বের হয়। যেমনটা এই বাংলার সাংসদ বিহারীবাবু বললেন। বলেই দিলেন, সারা দেশেই নিরামিষ চালু হওয়া উচিত। উত্তর পূর্বাঞ্চলে গরুর মাংস ইয়াম্মি আর দেশের মূল ভূখণ্ডে এসে মাম্মি, তা হলে চলবে না। সর্বত্র নিরামিষ হোক। সেটাই বিষয় আজকে। খামোশ শত্রুঘ্ন। বাঙালি কী খাবে, তা ঠিক করার আপনি কে?
সত্যি তো কে ভাই আপনি? কোন মহান প্রজ্ঞা থেকে দেশের মানুষ কী খাবে তা নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন? তিনিই সেই প্রথমদিককার বলিউড অভিনেতা যিনি অমিতাভ বচ্চনের রাজনীতিতে প্রবেশ অনুকরণ করে বিরোধী শিবিরের দিকে ঝুঁকেছিলেন। সেই শুরু থেকে বিজেপির হয়ে বিজেপির চেয়েও বেশি ব্যাটিং করেছেন। সংসদে জয় শ্রীরাম বলা মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। স্রেফ ব্যক্তিগত কারণে মোদিজির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায়, শোনা যায় রাজ্যসভায় গিয়ে আবার মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, সে সব না হওয়ায় অন্যদিকের খুঁটি ধরার চেষ্টা করছিলেন, প্রথম চয়েজ ছিল কংগ্রেস। অমিতাভ বচ্চন রাজনীতি ওনার চায়ের কাপ নয় বুঝে আবার ফিরে গেছেন রুপোলি দুনিয়ায়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেই উচ্চতায়, এনার সেই এলেম ছিল না কাজেই ওই এমপি হওয়া ছাড়া জীবনের আর কোনও রাস্তাও তাঁর কাছে ছিল না। এমনও নয় যে ৫ বছরের মন্ত্রী ছিলেন, হাফ প্যান্টুল মন্ত্রী তাও আবার খুব কম সময়ের জন্য। রাজনীতিতে এসে যে খুব রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন নীতি আইন কানুন নিয়ে খুব একটা আলোচনা করেছেন তেমন অপবাদ তাঁর শত্রুরাও দেবে না, তিনি এবারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কথা বলতে নামলেন। এখন এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি খায় না মাথায় দেয় তা তো তাঁর জানা নেই কাজেই জ্ঞান জাহির করার জন্য সবথেকে সোজা ব্যাপার নিয়েই মাঠে নামলেন, দেশের মানুষকে নিরামিষ খেতে হবে, খাওয়া উচিত, আমিষ নয় সারা দেশে নিরামিষ চালু হোক, যেমনটা বিজেপির উত্তর আর মধ্য ভারতের নেতারা বলে।
আরও পড়ুন: Aajke | রচনার কুম্ভ মেলার রচনা
গোয়ার কোনও বিজেপি নেতা বলেন না, জানেন বললে চামড়া নিয়ে টানাটানি হবে। মেঘালয়ে বিজেপি নেতা গরুর মাংসের ফিস্টি করেন। আমাদের এখানকার শান্তি লকুঞ্জের কে যেন এক বাটির বদলে দু’ বাটি গোমাংস খেয়ে টিফিন ক্যারিয়ার ভরে সেই মাংস নিয়ে ফেরেন, সেই দেশে বসে অনায়াসে নিরামিষের কথা বলেলন শত্রুঘ্ন সিনহা। অন্য রাজ্যের কথা ছেড়েই দিন, উনি যে রাজ্যের সাংসদ, অন্তত সেই রাজ্যের মানুষদের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও তাঁর কি কোনও ধারণাও নেই। একেবারে নেই ততটা অবোধও তিনি নন, কিন্তু ওই যে, আমি পণ্ডিত সেটা বোঝাবার জন্য কিছু একটা বলা, আর মূর্খের সমস্যা হল মুখ খোলা, বন্ধ রাখলে তবু সমস্যা সামলানো যায়, মুখ খুললেই আসল স্বরূপ বের হয়ে পড়ে। আমাদের রাজ্যের ৯৭ শতাংশ মানুষ আমিষ খান। সবচেয়ে গরিব মানুষটাও চুনো মাছ, সস্তার পোনা, পাঙ্গাস বা ব্রয়লার কেনার চেষ্টা করেন, সেই রাজ্যের এক সাংসদ বললেন দেশে নিরামিষ চালু হোক। একবারও ভাববেন না তিনি নিজে নিরামিষভোজী, তিনি জাহাজ মন্ত্রী থাকাকালীন পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে থাকতেন, সেখানে কোন কোন খাবার যেত তা আমরা জানি, খাবার পানীয়ের সঙ্গে আর কী কী যেত সেটাও আমাদের অজানা নয়, কিন্তু সেই তিনি বাজে বকছেন। আমাদের দর্শকদের আমরা আজ প্রশ্ন করিনি, শুধু বলেছি বাঙালি সাংসদ হিসেবে সারা দেশে নিরামিষ চালু করতে চান যিনি সেই শত্রুঘ্ন সিনহাকে সামনে পেলে আপনি কোন প্রশ্ন করতে চান সেটা জানান। শুনুন তাঁরা কোন প্রশ্ন করেছেন।
তৃণমূল দলের অজস্র ভালো বক্তা আছেন, তাঁদের অনেকে সংসদেও গেছেন। ইন ফ্যাক্ট সেই হীরেন মুখার্জি, জ্যোতির্ময় বসু, সোমনাথ চ্যাটার্জি, সৈফুদ্দিন চৌধুরি ইত্যাদিদের স্বর্ণযুগের পরে আবার বাংলা থেকে সংসদে মহুয়া মৈত্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, সৌগত রায়, কল্যাণ ব্যানার্জি, সাগরিকা ঘোষ ইত্যাদিদের নাম শোনা যাচ্ছে, ভাল লাগছে তাঁদের ভাষণ, পড়াশুনো করে গুছিয়ে বলছেন তাঁরা। কিন্তু কিছু এক্কেবারে অপোগণ্ডদের দেখে মনে হয়, এদেরকে না পাঠালেই কি নয়? এরা কি খুব জরুরি? যেমন এই শত্রুঘ্ন সিনহা। উনি দোষ স্বীকার করবেন, বা বলবেন উনি অমনটা বলেননি, কিন্তু ওনার বা ওনাদের এই বাচালতা দলের জন্য, বাংলার জন্য ভালো নয়।
অন্য খবর দেখুন