কিছুদিন আগে দামোদ্র ভ্যালি কর্পোরেশনের ছাড়া কুইন্টাল কুইন্টাল জল দেখেছিলেন, তার আগে চিমনি দিয়ে চারিদিক ধোঁয়া দেখে বুঝেছিলেন শিল্পায়ন। স্ক্রিপ্ট পড়ে দিদি নম্বর ওয়ান রাজনীতিতে আসা ইস্তক মিমের মস্ত খোরাক। ইতিমধ্যেই শ’ পাঁচেক মিম হয়ে গেছে এঁকে নিয়ে। এঁরা হলেন রাজনীতির ময়দানে খানিক কমিক রিলিফ, সেই কবে ছিলেন রাজনারায়ণ, কিছুদিন পরেই তিনিই হারিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে, হয়ে উঠেছিলেন জায়ান্ট কিলার। ভারতের রাজনীতিতে এরকম কমিক রিলিফ অনেক আছে, ধরুন রামদাস আটাওয়ালে, ওনার দলের নাম ওনার মাথায় থাকে কি না জানা নেই, কিন্তু উনি সব আমলেই মন্ত্রী হন। অনায়াসে কেজরিওয়ালকে ঝাড়ুদার আর মমতা দিদিকে মহান নেত্রী বলে দিতে পারেন, তিনি মনমোহন সিংয়ের প্রশংসা করে শায়রি করেছেন, প্রায় একই প্রশংসা তিনি নরেন্দ্র মোদিরও করেন। তৃণমূল দলে এরকম কালারফুল নেতার অভাব নেই, মদন মিত্র থেকে হুমায়ুন কবির থেকে রচনা ব্যানার্জিরা আপাতত এই তালিকার শীর্ষে। তাঁদের মুখনিসৃত বাণী শুনেই চমকে যাওয়ার কিছু নেই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার ক্ল্যারিফিকেশন আসবে, সংশোধনী আসবে। আমি তো অমন বলতে চাইনি, আমি যা বলেছি তার মানে ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, এবং শেষমেশ আমি ভুল বলেছি। এসব আমরা জানি, সেই প্রেক্ষিতেই মদন মিত্রের ক্ষমা চাওয়ার পরেই এবারে ময়দানে রচনা ব্যানার্জি, সপাটে ছক্কা মারলেন তিনি, শাহি স্নান করলেন, বসন্ত পঞ্চমীর দিনে ছিল সেই মহাস্নানের যোগ। তো তিনি চান করেই জানিয়ে দিলেন অভূতপূর্ব ব্যবস্থা, সুন্দর ব্যবস্থা ও একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেসব তো হয়েই থাকে কিন্তু ব্যবস্থাপত্র আদি একদম ঝক্কাস। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, রচনার কুম্ভ মেলার রচনা।
একে তো কুম্ভ মেলা তায় পূর্ণকুম্ভ, তায় মহাকুম্ভ মেলা। পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন, তাতে যোগী-মোদির সহাস্য মুখ, কোটি কোটি লোকের স্নানের ইচ্ছে আর ইচ্ছেপূরণ। নাগা সন্ন্যাসী থেকে কত রকমফের সন্ন্যাসীদের আনাগোনা, ধর্ম, ফেরেব্বাজি, প্রার্থনা, কামনা, ঠান্ডা, সারি সারি তাঁবু আর মানুষের পূর্বজন্ম পূর্বপুরুষের তৃপ্তির কাহিনির মধ্যেই পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন কতজন? জানাই নেই। কত জায়গায় ঘটেছে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা, জানা নেই। কেন কমসম করে তিন তিনবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে গেল, জানা নেই। উড়ন্ত বেলুনে চেপে উপর থেকে দেখানো হচ্ছিল সেই কুম্ভ মেলার ব্যাপ্তিকে, সেই বেলুনে আগুন লেগে ছ’ জনের মৃত্যু মাত্র গতকাল। এসবের মধ্যে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন সংসদে। কেন? কারণ তিনি সাংসদ, কারণ তিনি এলাকার মানুষের, রাজ্যের মানুষের কথা পৌঁছে দেবেন সরকারের কানে, তিনি দিল্লি গিয়েই ঠিক করলেন রথ দেখা কলা বেচার কাজটা সেরে ফেলবেন।
আরও পড়ুন: Aajke | মদন কেন বলেন? কেন ক্ষমা চান?
তো চলে গেলেন পুণ্যস্নানে, মহাকুম্ভের শাহি স্নানে গেলেন জলপথে। না, স্থলপথে গিয়ে ভিড়ভাট্টা সহ্য করতে হয়নি, জলপথে গেছেন, চান করেছেন, ছবি তুলিয়েছেন, যেখানে পাঠালে ছাপাবে পাঠিয়েছেন এবং দরাজ গলায় প্রশংসা, আহা যোগীজি কী ভালই না বন্দোবস্ত করেছেন। ঠিক সেই সময়ে কিছু না হলেও শ’ খানেক মানুষ সেই অভিশপ্ত রাতের পর থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ পোস্ট থেকে সেই পুলিশ পোস্টে। তাঁদের প্রিয়জনেরা উধাও, দু’ একজনের লাশ মিলেছে, না, পোস্টমর্টেম না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই লাশ কী করে নিয়ে যাবেন জানা নেই। যাঁদের আত্মীয় পরিজনদের হদিশ মিলছে না তাঁরা উদভ্রান্তের মতো ঘুরছেন, ভিভিআইপিদের গাড়ি আবার আগের মতোই ঘুরছে, সংসদে বিরোধীরা সংসদের কাজ বন্ধ করে আলোচনা চাইছেন। অখিলেশ যাদব ছবি দেখিয়ে বলছেন পে লোডার দিয়ে লাশ তোলা হয়েছে, কত মানুষ মারা গেছেন বলুন? রাহুল গান্ধী প্রশ্ন করছেন কোথায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা? অভিষেক ব্যানার্জি বলছেন সবটাই বাণিজ্যের জন্য এক বিরাট প্রচার, মানুষের নিরাপত্তা, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর ছিল না উত্তরপ্রদেশ সরকারের। এদিকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় কুইন্টাল কুইন্টাল জলে চান করে জানিয়ে দিলেন ওরকম দুর্ঘটনা তো হয়েই থাকে, এমনিতে দারুণ ব্যবস্থা, সরকারকে সাধুবাদ দিয়ে তিনি বলেছেন, “এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ওখানকার ব্যবস্থাপনা তুলনাহীন। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। সেটা ঘটেছে। কিন্তু কুর্নিশ জানাব আয়োজকদের। কোটি কোটি মানুষের শৌচাগার থেকে শুরু থাকার ব্যবস্থা, জলে নেমে যাতে কেউ ডুবে না যান, সে জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা— এ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ।” নিন এবারে কার কথা শুনব সেটা বলুন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, যখন সরকারের গাফিলতির জন্য মানুষ মারা গেছে কুম্ভ মেলায়, এই অভিযোগ এনে সংসদে আলোচনা চাইছেন তৃণমূল সমেত বিরোধী দলের নেতারা, তখন তৃণমূল দলের সাংসদ রচনা ব্যানার্জি কুম্ভ মেলায় শাহি স্নানের পরে জানিয়েছেন দারুণ ব্যবস্থা, তিনি কুর্নিশ জানিয়েছেন আয়োজকদের। আপনারা কী বলবেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
অন্য কারও কথা ছেড়েই দিন, আজ মমতা ব্যানার্জি এই কুম্ভ মেলার দুর্ঘটনা নিয়ে কী বলেছেন? পূর্ণকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিলের ঘটনায় বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ বাণে বিঁধলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁর অভিযোগ— কোভিড পর্বের মতোই মানুষের লাশ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছে ওরা। সেই সময় আমাদের এখানে মালদহে মৃতদেহ ভেসে এসেছিল। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন উদ্বোধনের প্রাকপর্বে মঙ্গলবার নিউটাউনের ইকোপার্কে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে চা-চক্রে বসেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই দৃশ্যত বিরক্ত মমতা বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই সব বডি পাঠিয়েছে। গণতন্ত্রে কোনওদিন এটা হতে পারে না! এদিকে ধোঁয়া দেখে শিল্পায়ন বুঝে ফেলা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য রচনা লিখতে বসে গেছেন।