উনি যাচ্ছেন কালীঘাট অঞ্চলে বিজেপির দফতর খুলে বসতে। হ্যাঁ আমি আমাদের কাঁথির খোকাবাবুর কথা বলছি, উনি নাকি আগামী ২০২৬ নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে ক্ষমতা দখল না করতে পারলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন। হ্যাঁ, এসব শোনা যাচ্ছে। ওনার অনুগামীরা এসব বলছেন। আমরা পিকে মানে ফুটবলার পিকেকে এই ভোকাল টনিক দিতে দেখেছি, সেসব বিশাল বাওয়াল শুনেছি। সেবারে খুউউব খারাপ টিম, কয়েকজনের কাছে একান্তে উনিও বলেছিলেন ফিরতি ম্যাচে ডজনখানেক খেয়ে গেলেও অবাক হব না, সেই তিনি ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিকদের এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোন ছকে খেলা শুরু হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই ৩ গোলে এগিয়ে যাবে মোহনবাগান, খেলা শেষে অবশ্য ওনার নাগাল সাংবাদিকেরা পায়নি। কিন্তু সে তো ধরুন খেলার মাঠ ছিল, খেলা তো আফটার অল খেলা। এ তো রাজনীতি। পাঁচ বছর ধরে বিরোধিতা, অনুগামীদের চাগিয়ে রাখা, বিরাট খরচ খরচা, তারপরে বিজেপির মতো দল, সেখানে তো কেবল বাতেলা মেরে হবে না কিছু করে দেখাতেও হবে। সেই হেন জায়গাতে আমাদের খোকাবাবু কালীঘাটে দফতর খুলে বসে নাকি মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। তারজন্য কত পরিকল্পনা দরকার একবার ভাবুন। যে দল তারা দলের সংগঠনের জোরে, রাজ্যের সামাজিক ধার্মিক ইকুয়েশনের ফলে ক্ষমতায় কেবল আছে নয়, যাদের শিকড় গভীরে, সেই দলকে উপড়ে ফেলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা তো কম কথা নয়। যে দল এই কাজ করবে, শান্তিকুঞ্জের সেই টাচ মি নট খোকাবাবুর দল আধ ঘণ্টা আগেও টের পাননি যে তারা খসে পড়বে, আবার যে সে তারা তো নয়, শুভেন্দুবাবুর খাস তালুকের তারা, যাঁকে তিনি হাতে ধরে দলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি বিধানসভাতে বসে একসঙ্গে টিফিন খেয়ে চলে গেলেন, তৃণমূল দফতরে জানিয়ে দিলেন, শুভেন্দু অধিকারীর জন্যই বিজেপি আর করা যাচ্ছে না সেই কারণেই নাকি তিনি তৃণমূলে গেলেন, কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, পরে গড়বি বাংলা, আগে দলটা সামলা।
অবকি বার ২০০ পার, সে কী উন্মাদনা, প্রধানমন্ত্রী চোলায় চোলায় বাজভে জোয়ের ভেড়ি বলে কবিতা আওড়াচ্ছেন, অমিত শাহ বাংলায় এসে রুটি দিয়ে আলুপোস্ত খাচ্ছেন, টালিগঞ্জের ঝিঙ্কু মামণিরা স্টেজে ওঠার জন্য আকুল, পৃথিবীতে যা হয়নি, সেদিন তাই দেখেছিলাম, এক রাজনৈতিক দল রোজ যোগদান শিবির খুলে বসছে, রোজ নাকি যোগদান চলছে।
আরও পড়ুন: Aajke | তৃণমূল নেত্রীর তিন লড়াই যা দেশ মনে রাখবে
ওদিকে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে সেই বেইমানেরা দিল্লি চলে গেলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকদের দলে যোগ দিতে, আর মন্ত্রিসভাতে তথ্য সম্প্রচার দফতর না পেলে মন্ত্রিসভাতে যোগই দেবেন না, এরকমই নাকি জানিয়েছিলেন আমাদের চোখে আঙুল দাদা রুদ্রনীল ঘোষ। এবং হুক্কা হুয়ার দল, মানে মাইনে পাওয়া সাংবাদিক চিল্লানেসরাসের দল রোজ হিসেব দিচ্ছিল বিজেপি ২৪৫ পাবে না ২৩৫। তারপরে ফলাফল বের হতেই পপাত চ, মমার চ, গৌরবজনক অপসারণ, গ্লোরিয়াস রিট্রিটেরও জায়গা নেই, মাত্র ৭৭টা আসনে জয়ী হল বিজেপি, যারা খোয়াব দেখছিল মুখ্যমন্ত্রিত্বের। কিন্তু সেই ৭৭ এখন কোথায়? সেটাও এসে দাঁড়িয়েছে ৬৫-তে। মানে দলকে, বিধায়কদের অটুট রাখতে সক্ষম নয় আমাদের শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু। মুখ বাঁচানোর জন্য বললেন বেশ তো ২০২৪ আসুক, পুরো ভোট হবে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনীর দেখরেখে। তো হলটা কী? ২০২৪-এ আবার হার, আগের ১৮ জন সাংসদের জায়গাতে ১২টা থাকল। এবং ২০২৬ আসার আগে দলের অবস্থা কেমন? আজ ছ’ মাসের বেশি হয়ে গেল রাজ্য সভাপতির পদ খালি, কেন ভরা যাচ্ছে না? কারণ তিন ঘোড়া, সুকান্ত, দিলীপ আর শুভেন্দু তিনমুখো হয়ে দৌড়চ্ছেন। দলের নির্বাচনী রণকৌশল কী হবে? বৈঠকই হচ্ছে না তো রণকৌশলের প্রশ্নই নেই। এদিকে একে একে হারাধনের ছেলের মতো এক এক জন উবে যাচ্ছে, একজন বিধায়ক বিধানসভাতে এলেন, বসলেন, আড্ডা দিলেন, খাবার খেলেন তারপরে সোজা বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবনে চলে গেলেন, বিরোধী দলনেতার জানাই নেই দলে কী হচ্ছে? দলের বিধায়করা কী ভাবছেন? কী করছেন? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, যিনি নাকি বিরোধী দলনেতার জেলার বিধায়ক, চলে গেলেন তৃণমূলে, বিরোধী দলনেতা টেরও পেলেন না, ওদিকে ৭৭ জন বিধায়কের ৯ জন চলে গেছে তৃণমূলে, আরও কিছু পা বাড়িয়েই আছে, সব মিলিয়ে বিজেপি ২০২৬ এর আগে কি লড়ার আগেই হেরে বসে আছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
দলের সভাপতি নেই, দলের মধ্যে অবিরাম কোন্দল, শুভেন্দুর নেতৃত্ব মানতে নারাজ পুরনো বিজেপির নেতা কর্মীরা, এবং সবথেকে বড় হল এ রাজ্যের বিজেপির কর্মী বাহিনী তো সেই অর্থে এক কড়া হিন্দুত্বের ডোজ নিয়ে বসে থাকা আরএসএস সমর্থক নয়, এদের বেশিরভাগটাই হলেন বাম কর্মী ভোটার। এক বিরাট চাপের মুখে তারা বিজেপিতে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিলেন। আজ তাঁরা যদি বোঝেন যে তাঁরা ওই দলে কথাও বলতে পারবেন না, তাহলে তাঁরা দল ছেড়ে অন্যপথ ধরবেন বইকী। আর একবার সেই লকগেট খুলে গেলে কিন্তু বন্ধ হওয়ার চান্স নেই। এই মুহূর্তে আরও প্রায় জনা পনেরো বিজেপি বিধায়ক কেবল মাত্র সেফ সিট, মানে নিজের আসনটা পেলেই দল বদলাতে রাজি আছেন। সেই খেলা কি ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে আমরা দেখতে পাব? হতেও পারে। এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল, তো আমি নয়, বিজেপির এক পুরনো নেতা কানে কানে বললেন, সিপিএম আগে কংগ্রেসকে বলত, এখন লোকে আমাদের বলছে, পরে গড়বি বাংলা, আগে দলকে সামলা। সত্যিই ২০২৬-এ জেতা তো দূরস্থান, দলটাকে ধরে রাখতেই নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি।