skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeআজকেAajke | কুণাল বনাম অভিষেক
Aajke

Aajke | কুণাল বনাম অভিষেক

দুজনেই কেউ কাউকে আঘাত করছিলেন না, কিন্তু নিজের কথাতে অনড় ছিলেন

Follow Us :

এমনিতেই দুজন ঝগড়া করলে আমাদের কান খাড়া হয়ে যায়, ঝগড়া শুনতে শুনতেই মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে, শরীরে ডোপামিন ইনজেক্ট করার মতো এক অনাবিল খুশিতে ভরে যায় মন। সেই ঝগড়া রাজনৈতিক কাজিয়া হলে তো যাকে বলে চার চাঁদ লগ গয়া এবং সেই রাজনৈতিক ঝগড়া যদি একই দলের দুই নেতার মধ্যেই হয় আমাদের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হতে থাকে। এবারে ভাবুন তাহলে শাসক তৃণমূল দলের দুই নেতার কাজিয়া আমাদের কতটা উত্তেজিত করবে, এবং ক্লাইম্যাক্স হল এই কাজিয়া আপাতত দলের দু’ নম্বর নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর দলের এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রায় সব বিষয়েই দলের হয়ে সরকারি মতামত দেওয়ার অধিকারী কুণাল ঘোষের। কাজেই কোনও কাগজই একে এড়িয়ে যেতে পারবে না। কেউ কেউ তো শুনেছি চাপা গলায় নারদ নারদ বলেই চলেছেন, যাতে এই কাজিয়া আরও অনেক তথ্য বার করে আনে, আরও অনেক কথার পিঠে কথা আসলে বঙ্গ জীবনের রঙ্গমঞ্চে তা তা থৈ থৈ, তা তা থৈ থৈ। কুণাল বলেছিলেন সেই শিল্পীদের বয়কট করা হোক, যাঁরা নেত্রীর নামে কটু কথা বলেছেন, নেত্রীকে অপমান করেছেন। পরে এর ক্লারিফিকেশনও উনিই বলেছেন, বলেছেন দলের আয়োজিত মঞ্চে তাঁদের ডাকা নিয়েই তাঁর এই মন্তব্য। ওদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মেরেছ কলসির কানা তা বলে কি প্রেম দেব না? এক উদার মনের কথা বলেছেন, মনে করিয়েছেন বদলা নয় বদল চাইয়ের কথা, যা নাকি স্বয়ং নেত্রীর স্লোগান। সবমিলিয়ে বিষয়টা জমে উঠেছিল কিন্তু খুব বেশিদিন চলল না দেখে অনেকেই মুষড়ে পড়েছিল, কাজিয়া থেমে গেলে যা হয় আর কী। কিন্তু না, আবার তা শুরু হয়েছে, কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। কুণাল বনাম অভিষেক।

মাঝে মধ্যে দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘমাসান লড়াই চলছে, খানিকটা ডব্লু ডব্লু এফ-এর মতন। একজন একজনকে মেরে পাট করে দিচ্ছে কিন্তু আসলে তা নয়। খানিকটা সেইরকমই ছিল ওই প্রাথমিক লড়াইটা, দুজনেই কেউ কাউকে আঘাত করছিলেন না, কিন্তু নিজের কথাতে অনড় ছিলেন, কুণাল ঘোষ বার পাঁচেকের ক্লারিফিকেশনে যা জানিয়েছিলেন তা হল, যাঁরা যা পারেন বলুক, তাঁরা যেখানে ইচ্ছে গান কিন্তু তাঁদের দলীয় নেতারা কেন ডাকবেন? এটা ছিল মোদ্দা পয়েন্ট। আর অভিষেক যে মূল পয়েন্টে স্টিক করেই ছিলেন তা হল যাঁরা যা বলেছেন, বলেছেন, সেসব আমরা মনে রাখতে চাই না, খানিকটা গান্ধীগিরি আর কী। এবং এইসবের শেষে কুণাল বল ঠেলে দিলেন আসল কোর্টে, দিদিমণির কাছে, ক্লজ নম্বর ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান, যা বলেছি তা তো বলেইছি কিন্তু তা নিয়ে কালীঘাট থেকে যে বক্তব্য আসবে, তা ১০০ শতাংশ শিরোধার্য। বল এত তাড়াতাড়ি মাঠের বাইরে চলে যাবে এটা তো অভিষেক আগে বুঝতে পারেননি, কাজেই ঝগড়া বন্ধ, সাদা পতাকা না উড়লেও গোলাগুলি বন্ধ হল। কিন্তু তা ছিল সাময়িক, বোঝা গেল গতকাল, অভিষেক দুসরা দিলেন, অফ ব্রেক যাকে বলে, অফ স্পিনারের ডিফল্ট ডেলিভারি। কালীঘাটকে সাক্ষী রেখেই তিনি বললেন যে কত লোকে নেত্রী সম্পর্কে কত কিছুই তো বলেছে, তা কি নেত্রী মনে রেখেছেন, রাখলে তাঁরা কি দলে জায়গা পেতেন। এক্কেবারে বিলো দ্য বেল্ট। কুণাল ঘোষ সেদিন নেত্রী সম্পর্কে যা বলেছিলেন, সেদিন মানে, সেই কুণাল ঘোষের জেল পর্বে, ডেলো বৈঠক ইত্যাদি নিয়ে তাঁর বক্তব্য মনে করিয়ে দিলেন অভিষেক। মোদ্দা কথা হল, সেদিন ওই কথাগুলো বলার পরেও যদি আপনি দলে থাকতে পারেন, তাহলে ওই শিল্পী ইত্যাদিরা আর কীই বা দোষ করেছে। সাংঘাতিক, আমরা ভেবেছিলাম ক্লিন বোল্ড হয়ে কুণাল ঘোষ বাড়ি যাবেন। ও হরি, হরির নাম খাবলা খাবলা, কুণাল লিখলেন, “২০০ পাতার উপন্যাস ১৫১ পাতা থেকে পড়া শুরু করলে পুরোটা জানা বোঝার ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়।“ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার মেসেজ, দলের ১৫১ নম্বর মাইলস্টোন থেকে যাত্রা শুরু করেছেন অভিষেক, তিনি এত কথা বলছেন কী করে? দলের রসায়ন, দলের ইতিহাস না জেনে এক নাদান কেনই বা দল নিয়ে কথা বলবেন, হ্যাঁ সেরকম ব্যাটসম্যান হলে দুসরাকেও বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দিতেই পারেন, কুণাল ঘোষও তাই করলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমন মানুষজন হাজার হাজার পাওয়া যাবে যারা দলের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও সময়ে বহু কথাই বলেছেন, কংগ্রেস নেতারা সিপিএম সম্পর্কে কী বলতেন? তাতে কি হাত ধরা আটকেছে? শুভেন্দু থেকে মাধবরাও সিন্ধিয়া হয়ে আপাতত বিজেপির ব্লু আইড বয় একদা বিজেপিকে কী না বলেছেন? তাতে কি তাঁদের বিজেপিতে যাওয়া আটকেছে? আবার অন্যধারে বছর পাঁচেক আগেও যে মানুষটা এরোপ্লেন আর ইতালিয়ান বউ ছাড়া কিছুই জানতেন না তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কেবল নয়, দলও সামলেছেন। এসব রাজনীতিতে হয় কিন্তু তাহলে কুণাল ঘোষ আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজিয়ার নতুনত্বটা কোথায়? দুজনেই জানেন যে আদত রেফারি কে? আদত পোস্টটাতে কে বসে আছেন? কুণাল ঘোষ তো আগে থেকেই বলেও রেখেছেন, শেষ কথা দিদিমণির, যা বলবেন তাই শিরোধার্য। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে কুণাল অভিষেক কাজিয়া, এটা কি বানানো)? এটা কি সত্যি? যদি সত্যিই হয়, তাহলে আপনাদের মতটা কী? যাঁরা তৃণমূল দলের নেত্রীকে জুতো মারো গালে গালে বলেছিলেন, তাঁদেরকে কি তৃণমূল নেতারা তাঁদের মঞ্চে ডেকে নেবেন? নেওয়া সম্ভব? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

আরও পড়ুন: Aajke | রোগা পুলিশ, মোটা পুলিশ

পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী। হ্যাঁ, কালীঘাটের দিদিমণি জানেন এ ঝগড়ায় তেমন বিষ নেই, এসব ঝগড়াতে দলের উদার মুখ, দলের অনুগত মুখেদের চেনা যায়, এসব নিয়ে পাবলিকের উৎসাহ থাকলেও এতে নির্বাচনের গ্রাফ প্রভাবিত হয় না। উনি জানেন একটা বাক্য নয়, শব্দ খরচ করলেই থেমে যাবে এ কাজিয়া, এ কাজিয়া মালদা, হুগলি বা কাঁথির কাজিয়া নয়, কাজেই শীতের দুপুরে কমলালেবু, কুণাল–অভিষেক চলুক না। আফটার অল ভালো খারাপ যাই সামনে আসুক, কেউই দলকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গাতে নেই, আর কাগজ জুড়ে সরকারের সমালোচনার বদলে যদি সিনিয়র জুনিয়র, কুণাল-অভিষেক, বয়কট, কোলে করে নাচা ইত্যাকার বিষয় নিয়ে পাতা ভরে গেলে ক্ষতি কী? ঠিক সময়ে দেখবেন আমে দুধে মিশে আমক্ষীর হয়ে গেছে, যারা খেয়েছেন, তাঁরা জানেন সে বড় উপাদেয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular