দেশের রাজনীতিতে বিজেপি আর বিজেপি বিরোধীদের রাজনৈতিক অবস্থানটা কীরকম? বিজেপি ২০২৯-এর নির্বাচনও মাথায় রেখেছে, সেই নির্বাচনে কোন ইস্যু তোলা হবে, কী কী করলে মানুষের সমর্থন খানিক বাড়তে পারে সেটা ভাবছে। দেখুন না দিল্লির ভোটের আগে বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি, আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু দিল্লির ফলাফল আসার পরে বোঝা গেল তিরটা কোথায় লেগেছে। হ্যাঁ, দেশের ৩ শতাংশ মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দেয়। কতজনের রোজগার ১২-১৬-২০-২৫ লক্ষ টাকা, এসব নিয়ে আমরা যখন ভাট বকছিলাম তখন বিজেপির নজর ছিল দিল্লিতে এক বিশাল উচ্চ মধ্যবিত্তের দিকে, তাদের পকেটে এক লপ্তে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা গুঁজে দিলেন নির্মলা সীতারামন। এর ফল ফলেছে। এক বিশাল মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্তের ভোট এবারে দিশা পাল্টেছে, ভোটের রেজাল্ট তাই বলছে। তো এই সিদ্ধান্ত কি ক’দিন আগের? এ নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে বহু আগে। হ্যাঁ এটাই বিজেপি, বিহারের নির্বাচন নিয়ে নয়, বাংলার নির্বাচনের প্রস্তুতিও তারা নিয়ে ফেলেছে, এটা আলাদা কথা যে তাদের সেই প্রস্তুতিকে কাজে লাগানোর জন্য একটা অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বর্মা বা রমেশ বিধুরি এই বাংলাতে নেই। তো যে কথা বলছিলাম, সারা দেশের ক্ষেত্রে বিজেপি যেমন ১০ পা এগিয়ে থেকেই ১০০ মিটার স্প্রিন্ট শুরু করে, এই বাংলাতে ঠিক সেরকমই তৃণমূল ভোট আসার আগেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার করে, ভোটের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপারে কতটা গেল তাই নিয়ে আলোচনা হয়। ২০১৯ বাদ দিলে ২০১১ থেকে এটাই কমবেশি তৃণমূলের নির্বাচনী ইতিহাস। দিল্লির নির্বাচন শেষ, কাজেই এবারে আলোচনা শুরু হয়েছে বিহার আর বাংলার নির্বাচন নিয়ে, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, হ্যাঁ এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তৃণমূল ২৩৫-২৪০টা আসন পাবে।
তাকিয়ে দেখুন এ রাজ্যের একদা শাসকদল সিপিএম বা তাদের সাধের লাউ বামফ্রন্টের দিকে। শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয় ফিরে আয় গানের আবহে যে দল চলছে তাদের জেলা কনফারেন্সে জেলা সম্পাদক হওয়ার জন্য কত গুঁতোগুতি। যাদের হাতে একটা পঞ্চায়েত সমিতি পর্যন্ত নেই তাঁদের দলে আগামী ২০২৬ এর নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছেন? জেলার দুই নেতার লড়াই এতটা খারাপ জায়গাতে যে একজন নেত্রীকে সেই জায়গায় বসিয়ে সামাল দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Aajke | ছাগলের তৃতীয় সন্তান না শুভেন্দু অধিকারী?
উত্তর ২৪ পরগনাতে তো এবারে ইনার পার্টি স্ট্রাগলের জায়গাতে ইনার পার্টি আর্মস স্ট্রাগলও দেখা যেতে পারে। একজন নেতা মহিলা সাংবাদিকের কোলে বসে বিতাড়িত হননি, কেবল সাসপেন্ড হয়েছেন, কিন্তু তাঁকে নিয়ে জেলা সম্মেলন সরগরম ইনি কোলে বসার পক্ষে তো উনি বিপক্ষে। কংগ্রেসের হাত ধরা যাবে? ধরা উচিত না উচিত নয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে জেলা সম্মেলনে, একজনও জিজ্ঞেসই করছে না যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই কংগ্রেস কি বামেদের হাত ধরবে? ওদিকে বগি একটা টানছে তিন ঘোড়া, তিন মুখো হয়ে, হায়ার সেকেন্ডারির ফিজিক্স-এর অঙ্ক, তিন দিকের বলপ্রয়োগের অঙ্ক। এখনও সরাসরি কেউ কথাও বলেন না, সুকান্ত অভয়া স্মরণে কুম্ভ মেলায় গিয়ে ডুব দিয়ে নাকি আমগাছ পুঁতেছেন, দিলীপ জানিয়েই দিয়েছেন এই আন্দোলন গিলে ফেলেছেন মমতা আর শুভেন্দু অধিকারী আপাতত ওই বাবা-মায়ের একজনকে যদি কালীঘাটে দাঁড় করানো যায় তার চেষ্টাতে লেগে আছেন। ৭৭ জন এমএলএ জিতেছিল ২০২১-এ, আপাতত সেই সংখ্যা সম্ভবত ৬৮তে নেমে এসেছে, কিন্তু সেটা তো অফিসিয়াল, আসলে ওই ৬৮-র কমসম করে ২০-২৫ জন রেগুলার ইন কনট্যাক্ট উইথ তৃণমূল সুপ্রিমো, কে জানে না এই খবর? সব্বাই জানেন, শুভেন্দুওও জানেন, কিন্তু কিছুই করার নেই কারণ এই অস্ত্র তো তাঁদের আবিস্কৃত বললেও কম বলা হয়। স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা গোছের ব্যাপার আর কী। ওদিকে নর্থ বেঙ্গল, সেখানেও খুব দ্রুত ভাঙাচোরা শুরু হয়ে গেছে, মাদারিহাটের নির্বাচনী ফলাফল তো তাই বলছে। শমীক ভট্টাচার্য মোক্ষলাভ করেছেন, রাজ্যসভায় গেছেন তার বেশি ওনার হজমও হবে না। এইরকম এক লবেজান বিরোধী শক্তির পক্ষে কি মমতার মেশিনারিকে মোকাবিলা করা সম্ভব? কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মোদি, বিজেপি যা যা করছেন, করেছেন বা করে চলছেন তা প্রতিপদে মোকাবিলা করার, কিছুক্ষেত্রে রিটার্ন উইথ দ্য সেম কয়েন, শঠে শাঠ্যং সমাচরেত নীতি নিয়ে চলছেন কাজেই বিজেপি এই বাংলাতে পড়েছে ফাঁপড়ে। আমরা মানুষজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তৃণমূল ২৯৪-এর কতগুলো আসন পাবে? তার মূল একটা কারণ কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুরনো ব্রহ্মাস্ত্রটা আবার বের করেছেন, সেই একই কথা, দল আমি দেখব, রাজ্যের ২৯৪ জন প্রার্থীই আসলে আমি। উনি বুঝেছেন রাজ্য বাঁচাতে পারলে দেশের রাজনীতিতে কলকে পাওয়া যাবে, খামোখা মিজোরাম গোয়াতে শক্তি বৃদ্ধি করার বিলাসিতা না দেখানোই ভালো। আই প্যাক কাজ বন্ধ করবে না, কিন্তু একজন ভালো ফটোগ্রাফার যেরকম শুধু ভালো ক্যামেরার ফিচার নিয়েই সন্তুষ্ট হন না, নিজেও মাথা খাটান তেমনিই কেবল আই প্যাক নয় ৪০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় তো ফেলনা নয়, মমতা তার ভিত্তিতেই তাঁর হিসেবেই রাজনীতি করেন, করে চলেছেন। হ্যাঁ, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৩৫-২৪০ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়েই আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন।