মুশকিল হয়েছে কী জানেন? আমাদের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ থাকেন শহর বা মফস্সল শহরে, তাই গ্রামীণ আবহে, মানে আমাদের গ্রামবাংলার প্রাত্যহিক জীবনে যা সব্বাই জানেন, সেই কথাটা বলতে গেলে তাঁদেরকে আগে বোঝাতে হয় যে কথাটার মানে কী? তো আসুন নাগরিকবৃন্দ, ছাগলের তৃতীয় সন্তান কথাটার মানেটা একটু বুঝে নিই। ছাগলের দুটো, তিনটে চারটে সন্তান হতেই পারে কিন্তু তার দুধের বাঁট ওই দুটোই। ফলে যখন তার তিনটে ছোট বাচ্চার দুজন মহানন্দে দুধ খায়, তখন তৃতীয়টি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে একসার হয়, দেখে মনে হতেই পারে যে সে আদতে উল্লসিত। তাই আমরা সেরকম কোনও বিষয় এলেই এই অন্যের আনন্দে অকারণেই উচ্ছ্বাসকে ছাগলের তৃতীয় সন্তানের নাচানাচির সঙ্গে তুলনা করে থাকি। তো আমরা দেখলাম কেজরিওয়ালের আপ দিল্লিতে হেরেছে, ২৭ বছর পরে বিজেপি সেখানে জিতেছে। এমনও নয় যে তাদের বিরাট ভোট বেড়েছে, বরং গত লোকসভার হিসেব করলে ভোট কমেছে, কিন্তু মূলত ওই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজনীতিহীনতা, তাঁর এবং দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আর জোট না হওয়ার ফলে দিল্লিতে আপ হেরেছে, বিজেপি জিতেছে। তো দিল্লির এতদিন ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থাকা দিল্লির বিজেপি নেতাদের স্বাভাবিক আনন্দের মধ্যে দেখা গেল আমাদের রাজ্যের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তেনার মুখ চোখ নাক দেহ সর্বাঙ্গ উদ্ভাসিত এক অর্বাচীন আনন্দে, ঠিক সেই ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতোই, তিনি জানালেন এই জয় বলে দিচ্ছে ২০২৬-এ মমতার পতন আসন্ন। কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, ছাগলের তৃতীয় সন্তান না শুভেন্দু অধিকারী?
শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের সামনে বললেন, দেখলেন তো বিজেপি জিতে গেছে দিল্লিতে, এবারে বাংলার পালা।, ২০২৬-এ মমতা হারবেন। বহু আগে একটা আধুনিক কবিতা শুনেছিলাম, ওপার থেকে মারল তির লাগল কলাগাছে, চোখ গেল কানা হয়ে, অ্যান্টেনায় বসে আছে কাক, আমি তো অবাক। মানে বুঝলেন না তো? আমিও বুঝিনি। ঠিক যেরকম শুভেন্দুবাবুর এই আমোদিত বিবৃতির মানে বুঝতে পারলাম না, আমি নিশ্চিত কেউই বুঝতে পারেননি।
আরও পড়ুন: Aajke | তৃণমূলের তারকারা দলের সম্পদ নাকি বোঝা?
শান্তিকুঞ্জের এই খোকাবাবু এর বেশি খোলসা করে তো কিছুই বলেননি, বলেননি যে দিল্লিতে বিজেপি জিতলেই বাংলাতেও বিজেপি জিতবে এরকম এক সরল ইকুয়েশন কি ওনাকে কি মোদিজি শিখিয়েছেন? যিনি এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের মধ্যে একস্ট্রা টুএবি খুঁজে পান সেরকমই কোনও ফর্মুলা? দলের মাথারা বলেছিল ১ কোটি সদস্য করতে হবে, জাস্ট সদস্য, সক্রিয় কর্মী নয়, কেবল মেম্বার, তো জল তেল মিশিয়েও এখনও পর্যন্ত ৫০ লক্ষও হয়ে ওঠেনি। দলের নেতারা বেরিয়ে যাচ্ছেন দল ছেড়ে। দলের বৈঠকে চেয়ার টেবিল ভাঙা হচ্ছে, দলের এমএলএ-রা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বা যোগ দেবেন বলে বসে রয়েছেন, বাংলার রাস্তায় কোনও ইস্যুতেই কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিজেপি, এমনকী নিজের ঘরের উঠোনে সমবায় সমিতির নির্বাচনে গোহারান হেরেছেন শুভেন্দুবাবুর প্রার্থীরা। তিনি দিল্লির কাছ থেকে সমবায় নির্বাচনের জন্য আধা সামরিক বাহিনীর প্রহরা চেয়েছিলেন, তাও এসেছিল কিন্তু জেতা তো দূরস্থান, কনটেস্টও হয়নি, কিন্তু উনি সটান বলে দিলেন ২০২৬-এ বাংলাতে আমরাই আসছি। কোন ফর্মুলাতে আসছেন? রাজ্য বিজেপির সভাপতিই বেছে উঠতে পারছে না যে দল, সেই হেডলেস চিকেন, গলাকাটা মুরগির দল কীভাবে মসনদ দখল করবে? এবং খুব খোলা চোখেই বোঝা যাচ্ছে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইত্যাদি তো দূরস্থান, যেভাবে তিন ঘোড়া, মানে শুভেন্দু, সুকান্ত, দিলীপ যেভাবে তিনমুখো হয়ে চলছেন তাতে গতবারের ৭৭টা আসন দখল করার ধারেকাছেও তো থাকতে পারবে না বাংলার এই বিজেপি। রইল বাকি তাত্ত্বিক শমীক ভট্টাচার্য, শুনছি তাঁকে নাকি হাল ধরার দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাহলে তো ৪০ পার করা দায় হয়ে যাবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে দিল্লিতে বিজয়ের পরে কাঁথির খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন এরপরে বাংলা দখল করবে বিজেপি, তো এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বাংলাতে বিজেপি কতগুলো আসন পাবে বলে আপনাদের মনে হয়?
কিন্তু এই ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো উল্লম্ফন কি শুধু ওই শুভেন্দু অধিকারীর? না আরও একজন আছে, তিনি হলেন মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। কী আনন্দ তাঁর, দিদি বলেছিল না যে দিল্লিতে আপ জিতবে, দেখেছেন আপ হেরে গেছে, তাঁর চোখে মুখে মমতা ব্যানার্জির হারের পরে আনন্দ গড়াগড়ি দিচ্ছে, মুর্শিদাবাদের পরাজয় এখনও গলার ভাত নীচে নামতে দেয় না, সেই অধীর চৌধুরীর আনন্দ দেখে কে? সত্যিই ভারতের রাজনীতিতে কত শত জোকারের দল অনায়াসে করে খায়। এমন নয় যে বাংলার মাটিতে তৃণমূল অজর অমর অক্ষয়, এমনও নয় যে এই মাটিতে বিজেপি কোনও দিনও জিততেই পারবে না, কিন্তু এটা ঠিক যে যতদিন ওই শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু আছেন, এই বিজেপির গোপন সখা অধীর চৌধুরী আছেন, ততদিন এ বাংলা থেকে তৃণমূল কে সরাবে কে?