রাজ্য জুড়ে গান বাজছে–
লেগেছে লেগেছে লেগেছে, লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন…
তুম তানা নানা নানা, আয় তোরা দেখে যা না
জ্বলছে জ্বলছে দ্যাখ, সব পরীদের ডানা
প্রচণ্ড তাপ, কী কাণ্ড বাপ, কী কাণ্ড বাপ
জ্বলে পুড়ে যা…যা……জ্বলে পুড়ে যা… জ্বলে যা, পুড়ে যা।
হ্যাঁ, বসন্ত বিলাপের গান বাজছে বসন্তের আগমনে নয়, কাঁথির শান্তিকুঞ্জ থেকে কলকাতার মুরলীধর লেন, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, খবরের কাগজ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র লেগেছে লেগেছে আগুন। রাজ্য বিজেপির তিন, চার, পাঁচ নেতা, তাঁদের অনুগামীরা সব্বাই মিলে এক জগঝম্প শুরু করেছেন এবং স্বভাবতই শাসকদলের নেতাদের মুখে চওড়া হাসি। কংগ্রেস দলের সভাপতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এক দীর্ঘ সময় ধরে, ঠিক সেরকম ভাবেই এ রাজ্যে বিজেপির সভাপতি কে হবেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। একজনের নাম আসলেই অন্য গোষ্ঠীর নেতা দিল্লিতে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন। বহু কষ্টে পাওয়া গেছে কেষ্ট, এরকম এক ভাবনা চিন্তায় ফের দিলু ঘোষকেই পদে বসানো যখন প্রায় পাকা, সেও আজ থেকে সাত আট মাস আগের কথা বলছি, তখন এক নেতা সেই সিদ্ধান্তে ভেটো দিলেন, জানিয়ে দিলেন দিলু ঘোষকে মাথায় নিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। কাজেই সে পাকা সিদ্ধান্ত কেঁচে গেছে। শোনা যায় তারপর সেই দাদার অনুগামীরা বুক ফুলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছিলেন, হায় হায় এ কী হল, পাকা ঘুঁটি কেঁচে গেল। এবং তারপর থেকে এ রকেট ছোড়ে তো ও মিসাইল, এ কামান ছোড়ে তো সে বের করে একে ফর্টি সেভেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধ চলছিলই বিজেপিতে। সেই আবহে কাঁথায় আগুন দিলেন একদা সাংবাদিক জগাদা, জগন্নাথ চ্যাটার্জি। তারপরেই সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, দমকল ডাকুন, আগুন লেগেছে রাজ্য বিজেপিতে।
সিবিআই তো সিবিআই, এনাদের কাজকর্ম বড্ড রহস্যময়, বা এমনও বলা যায় যে এনাদের আদত কাজ হল মনিবের নির্দেশমতো কিছু তথ্য বাজারে ছেড়ে দেওয়া। অপরাধ খুঁজে বের করা বা অপরাধীদের ধরে শাস্তি দেওয়াটা যে এনাদের কাজ নয়, তা ইতিমধ্যেই সব্বাই জেনে গেছেন। এই তো আরজি কর মামলা, সূত্র মারফত হাজারটা তথ্য বাজারে ছেড়ে দিয়ে বাজার গরম করার পরেও কলকাতা পুলিশ যে যে তথ্য দিয়েছিল তার বাইরে একটা ছেড়ে দিন, সিকিখানা নতুন তথ্য এনারা বার করতে পারেননি। তো যে কথা বলছিলাম, এনাদের আদত কাজ হল মনিবের নির্দেশে কিছু তথ্য বাজারে ছেড়ে দিয়ে বাজার গরম করা, হ্যাঁ মনিবের নির্দেশ ছাড়া একটা তথ্যও ওনারা বার করেন না, এটাও জেনে রাখুন।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেমূল না তৃণমূল? সিপিএমকে ভাবতেই হবে
তো সেই সিবিআই সূত্রে জানা গেল, চাকরি দেওয়ার জন্য অনেকেই ঘুষ খেয়েছেন, সেসব নাম তো আমরা জানি, পার্থ চ্যাটার্জি থেকে শুরু করে বিস্তর নাম সেই তালিকাতে আজ নয় দীর্ঘ দিন ধরেই আছে, এবারে সেই তালিকাতে নাকি নতুন সংযোজন বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী এবং ভারতী ঘোষ। তো খবরটা পড়ে যখন এ বাংলার জনগণ বোঝার চেষ্টা করছে তাহলে কি নতুন কোনও সাঁড়াশি অপারেশন শুরু হচ্ছে, মনিবের নির্দেশ না থাকলে এসব নাম তো থাকলেও সামনে আসার কথা নয়, সেই হেন সময়ে আমাদের জগাদা, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, ইনি আগে সাংবাদিক ছিলেন, গত বিধানসভায় নির্বাচনে নেমে হেরেছেন, তো সেই তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে লিখলেন, “এসএসসি নিয়োগ। যোগ্যরা রাস্তায়, অযোগ্যরা সুপারিশে। সেটিং সেটিং বলে যাঁরা চিৎকার করেন, তাঁরাই বলুন। ২০১৬ সাল। সকলেই তৃণমূলি সম্পদ। কেউ ছাড় পাবেন না। সময় লাগতে পারে।” এই লেখার সঙ্গেই পুরো তালিকা, যাতে আমাদের টাচ মি নট খোকাবাবুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী আর ভারতী ঘোষের নাম ছিল। এমন সেমসাইড গোল কেন সেটা জানার আগেই তিনি মানে জগাদা পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছেন, কিন্তু ততক্ষণে সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গেছে। ওদিকে রাজ্য সম্পাদক আরও ঘুরিয়ে লিখেছেন, “মানুষ জলের মতো। তাকে যে পাত্রে রাখবেন, সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। নেতাও তো মানুষ। তৃণমূলে থাকলে তৃণমূলের পলিসি অনুযায়ী কাজ করতে হবে!” মানে খুব পরিষ্কার যে এনারা ঘাপলা করেছিলেন, ওদিকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি আসতেই জগাদা পোস্ট ডিলিট করেছেন কিন্তু প্রায় প্রত্যেক গোষ্ঠীর অনুগামীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের ষষ্ঠীপুজো করছেন। দাদার এক অনুগামী লিখেছেন, রাজা যতই এগিয়ে চলে, জগগাদের চক্ষু টাটায়, পাড়তে গিয়ে ঘোড়ার ডিম, নিজের ঢিলই লাগল মাথায়। দু’ তরফে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলছে। একদল থেকে এরকম অভিযোগও এসেছে যে ওই জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় নাকি বিজেপি দলে তৃণমূলের এজেন্ট। প্রত্যুত্তরে এটাও বলা হয়েছে যে শান্তিকুঞ্জের দাদা নাকি আবার স্বস্থানে ফেরত যেতে ইচ্ছুক। সব মিলিয়ে লেগেছে লেগেছে আগুন। তো আমরা আমাদের দর্শকদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম যে বিজেপির নেতাদের অনুগামীরা একে অন্যকে তৃণমূলের দালাল বলে চেঁচাচ্ছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে তা লিখছেন, একে অন্যকে চোর বলতেও ছাড়ছেন না, এই বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে? নাকি এই বিরোধিতার জায়গাটা নেবে বাম-কংগ্রেস? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বহুবার বলেছি, এই বাংলাতে বিজেপির তিন ঘোড়া তিনমুখো হাঁটা দিয়েছে, বাংলায় বিজেপির নয় নয় করে খান ৪-৫ জন নেতাদের অনুগামীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করেই বেড়াচ্ছেন। এরকম এক অবস্থায় মোহন ভাগবত ১১ দিন কেন ১১ মাস এখানে ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থাকলেও ফলাফল একই থাকবে। এবং অবস্থা যে দিকে যাচ্ছে তাতে এই সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি মেটা তো দূরস্থান, এই সমস্যা কিছুদিনের মধ্যেই এক বড় আকার ধারণ করবে, আজ বলছি আর ক’দিন পরে মিলিয়ে নেবেন।