Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে?

Aajke | পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে?

Follow Us :

আমরা রুখে দিয়েছিলাম কার্জনের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা। প্রায় বাধ্য হয়েই এই পরিকল্পনা থেকে ব্রিটিশরা যখন সরে এল কিন্তু সেই বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্ত রদ করার সঙ্গে সঙ্গেই এক বিরাট ক্ষতি করে দিয়ে গেল। দেশের রাজধানী সরিয়ে নিয়ে গেল কলকাতা থেকে দিল্লিতে। তাদেরই পরিকল্পনায়, হিন্দু মহাসভার সাহায্যেই আমাদের রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্ত। এরপর দেশভাগ বা আবার বাংলা ভাগ সেই সাম্প্রদায়িকতাকে আরও সরব করেছে, ক্ষত আরও গভীর হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষতও আমরা নিজেরাই সারিয়ে তুলেছিলাম পারস্পরিক সৌহার্দ্য দিয়ে, সম্প্রীতি দিয়ে। এবং আমাদের বাংলার বিরাট বামপন্থী ইতিহাসও সেই সাম্প্রদায়িকতাকে রুখেছিল, প্রতিবার দাঙ্গার ফুলকি আগুন হয়ে ওঠার আগেই তা নেভানো হয়েছিল। তারপর এক শিথিল সময়ে আমাদের রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলমান ভাইবোনেরা আমাদের চোখের সামনেই এক ভোট ব্যাঙ্ক হয়ে গেল। তারা দেশের বাকি অংশের মতোই এক মনোলিথিক ব্লক, এক সমূহ হয়ে দাঁড়াল যাদের ভোট একদিকেই পড়ে। সেই সংখ্যালঘুদের সংখ্যা যেখানে বেশি সেখানে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়া শুরু হল, সব মিলিয়ে ব্রিটিশদের পোঁতা বিষবৃক্ষ এক মহীরুহের আকার ধারণ করল। এখন যে কোনও নির্বাচনের আগে আলাদা করে আলোচনা করতেই হয়, সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে যাবে? সংখ্যালঘু ভোট কীভাবে ভাগ হচ্ছে? কেবল আমরা মানে সাংবাদিকরাই নই, প্রতিটি রাজনৈতিক দলও এই সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে চিন্তিত। ধরুন মধ্যপ্রদেশ, সেখানে কংগ্রেস, বিজেপি, সমাজবাদী দল কিংবা বিএসপি কেউই সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে চিন্তিত নয়। নয় কারণ সেখানে মুসলমান ভোটার ৭ শতাংশেরও কম। কিন্তু এ রাজ্যে মুসলমান ভোটার ২৭-২৮ শতাংশ। কমবেশি ৭০টা বিধানসভা আসনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কাজেই এখানে তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচনী আলোচনা সম্ভব নয়। সেটাই আজ আমাদের বিষয় আজকে, পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে?

গরু তুমি কার, যে দোহায় তাহার, কমলাকান্তের সেই অবলীলায় মালিকানার মতো সহজ নয় সংখ্যালঘু ভোটের চরিত্র। কিংবা লাঙল যার জমি তার গোছের কথা দিয়েও সংখ্যালঘু ভোটারের মতিগতি বোঝা যাবে না। ধরুন এমনিতে কমিউনিস্ট পার্টি নাস্তিক, অন্যদিকে মুসলমান মানুষজন ভীষণভাবেই ধর্মভীরু। কিন্তু এদেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোড়াপত্তনে যাঁরা ছিলেন তাঁদের এক বিরাট অংশই ছিল সংখ্যালঘু মুসলমান। আবার স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতার বহুকাল পর পর্যন্ত মুসলমান ভোট ছিল কংগ্রেসের দিকে, তারা দল বেঁধে ভোট দিয়েছে কংগ্রেসকে। সেই তারাই জরুরি অবস্থার পরে একজোটে ভোট দিল বামফ্রন্টকে, তাদের এক বিরাট সমর্থন নিয়েই বামফ্রন্ট সরকার চলেছে ৩৪ বছর।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আরএসএস-এর ১০০ বছর, লক্ষ্য, বৃদ্ধি আর সমস্যা

কিন্তু নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরের আন্দোলনের সময়ে এই সংখ্যালঘু ভোটাররাই, এই মুসলমান মানুষজন, যাঁরা মূলত গরিব চাষি, সামান্য জমির মালিক বা বর্গাদার, তারাই ভয় পেল, জমি থেকে উৎখাত হবার ভয়। সে ভয়ের ভিত্তি তো ছিলই, গরিব সেই মুসলমান মানুষজন দেখলেন তাঁদের জমির লড়াই লড়ছেন মমতা। ভোট হু হু করে সরে গেল, অষ্টম বামফ্রন্টের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল, পরিবর্তন এল। দেশজুড়ে সেই সংখ্যালঘু ভোট, কখনও কংগ্রেস, কখনও রিজিওনাল দল, কখনও লালু, কখনও মুলায়মের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল বহুকাল। কিন্তু বাবরি মসজিদ ভাঙা, গুজরাতের দাঙ্গা তাদেরকেও অন্যরকম ভাবে ভাবাল। মুসলমান মানুষজন বুঝলেন রোটি, কপড়া, মকান, জমি সবই কাজে দেবে যদি প্রাণ থাকে, এবং একেবারেই অস্তিত্বের লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁদের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠল আরএসএস–বিজেপির বিরুদ্ধে যে জিতবে তাকেই সমর্থন করা। সে কোন দল? সে সংখ্যালঘুদের জন্য, রাজ্যের জন্য, মানুষের জন্য কী করছে, এসব বিবেচনার বাইরে চলে গেল। ওয়ান অ্যান্ড অনলি ক্রাইটেরিয়া সেই দল বিজেপিকে হারাতে পারবে কি না। সেইজন্যই মুসলমান ভোট বিহারে আরজেডির দিকে, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী দলের দিকে, মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্র আগাড়ির দিকে, যদিও সেখানে শিবসেনা আছে তাও। কর্নাটকে কংগ্রেসের দিকে, দিল্লিতে আপের দিকে, অসমে কংগ্রেসের দিকে আর বাংলায় তৃণমূলের দিকে। তাঁরা বুঝে গেছেন বিজেপিকে রুখতে হবে এবং এটাকেই স্ট্র্যাটেজিক ভোট বলা হচ্ছে। যখন এই বাংলার সংখ্যালঘু মানুষজনের ভোটের আলোচনা করতে বসেছি তখন প্রথম যে প্রশ্ন মাথায় আসবে তা হল এ রাজ্যে কে বিজেপিকে হারাতে পারে? তৃণমূল। যতদিন এই ধারণা থাকবে, ততদিন তৃণমূলের বাক্সেই যাবে সংখ্যালঘু মানুষের ভোট। বিজেপি সেটা বুঝেছে, বুঝেছে বলেই তাদের কুনকি হাতির দরকার, তাদের ওই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই একজন ভোটকাটুয়া দরকার। সেইজন্যই আবির্ভাব হয়েছে এক সংখ্যালঘু মসিহা নৌশাদ সিদ্দিকির। হ্যাঁ, তাঁর মিছিলে, লরিতে গাড়িতে মাথায় ফেজ পরা মুসলমান যুবকদের ভোট দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ভোটের সময়ে? একটা আসন, তাও আবার যেখানে বিজেপি কোনও শক্তিই নয়, সেখানে নৌশাদ জিতেছেন। পাম্প দিয়ে সেই বেলুনকে বড় করা হচ্ছে কিন্তু নির্বাচন এলে আবার সংখ্যালঘু মানুষজন সেই দলকেই ভোট উজাড় করে দেবেন যাঁরা বিজেপিকে হারাতে পারবে, সেই দল নৌশাদ সিদ্দিকির দল নয়। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, এ রাজ্যে কোন দল বিজেপিকে হারাতে পারে? এ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট কোনদিকে যাবে? শুনুন তাঁরা কী বলেছেন।

সংখ্যালঘু মানুষজন আতঙ্কে আছেন, তাঁদের কাছে খবর আছে পিটিয়ে খুন করার, খবর আছে দাঙ্গার। খবর আছে যা কিছু মুসলমান, যা কিছু সংখ্যালঘুর চিহ্ন বহন করছে তাকে ধ্বংস করার। স্টেশন থেকে রাস্তার নাম বদলে দেওয়ার খবর আছে, তাদের ধর্মের ডাক্তার থেকে রাজনীতিবিদ, প্রত্যেকে আজ বিশ্রী কুৎসিত আক্রমণের মুখে। তারা এই সাম্প্রদায়িক সরকারের বিরুদ্ধে যে জয়ী হতে পারে তার সঙ্গেই থাকবে। এটা তাদের বাঁচার লড়াই, কেবল আমরা আছি, আমিও আছি বলে এক সংখ্যালঘু নেতা এগিয়ে যাবেন আর তাঁরা তাঁকে মসিহা বলে মেনে নেবে, সে দিন চলে গেছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments