নির্বাচনের ফলাফল এসেছে, এমনকী গণশক্তিও লিখেছে দেশে ইন্ডিয়া জোটের আসন এখন কমবেশি ২৩৬, বিরোধীদের শক্তি বেড়েছে। কীভাবে? তৃণমূলকে বাদ দিয়ে? না, সব্বাই জানে ওই ২৩৬-এর মধ্যে তৃণমূলের ২৯-ও আছে। কংগ্রেসের আসন বেড়েছে, বেড়েছে সমাজবাদী দলের আসন, বেড়েছে তৃণমূল দলের আসন, সিপিএম-এর একটা আসন বেড়েছে, এসব এখন সব্বার জানা। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট এগজিট পোল স্ক্যামের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, নিট নেট বা চাকরির পরীক্ষার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে বাইরে লড়াই করবে, সংসদ শুরু হলেই এগজিট পোল নিয়ে জেপিসির দাবি জানিয়েছে ইন্ডিয়া ব্লক। ওয়েনাড় আসন ছেড়ে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী, সেখানে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, উল্টোদিকে অবশ্যই সিপিএম-সিপিআই-এর নেতৃত্বে এলডিএফ-এর কেউ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা খবর সেখানে প্রচারে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখবরও ইতিমধ্যেই সব্বাই জানেন। তো সেই ইন্ডিয়া ব্লক থেকে গতকাল হঠাৎই জানানো হয় যে প্রথামতো ডেপুটি স্পিকার পদ বিরোধীদের না দেওয়ায় ইন্ডিয়া ব্লক থেকে কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশ স্পিকার পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল, কার ১০০ আছে কার ৩০ আছে কার ৫ জন সাংসদ আছে সেটা বড় কথা নয়, ইন্ডিয়া জোটের হয়ে কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগে জোটের মধ্যে আলোচনা করা উচিত। এটা জানাজানি হওয়ার পরেই রাহুল গান্ধী সংসদের মধ্যেই অভিষেকের সঙ্গে বসে মিনিট দশেক কথা বলেন, তারপর মমতা ব্যানার্জিকে ফোন করেন। এবং রাতে স্পিকার পদের জন্য কনটেস্ট হবে, তার প্রস্তুতি বৈঠকে ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ ব্যানার্জি হাজির ছিলেন। কংগ্রেস দল থেকে যেমন হুইপ জারি করা হয়েছে তেমনিই তৃণমূলের থেকেও হুইপ জারি করে প্রত্যেক সাংসদকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে সে তো সংসদ ভবনে উলুধ্বনি দেওয়ার জন্য নয়, এই স্পিকার পদের ভোটাভুটির জন্যই ডাকা হয়েছে। কিন্তু এই গোটা এপিসোডটাতে কয়েকজন, কিছু মানুষের আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই, তাঁদের চওড়া হাসিই বলে দিচ্ছে যাক, বাঁচা গেল। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, কংগ্রেস তৃণমূল জোট ভাঙলে কাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ?
কাল বিকেলেই খবর এসে পৌঁছেছিল যে ইন্ডিয়া জোটের স্পিকার পদের জন্য কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশ লড়বেন এই একতরফা ঘোষণায় খুশি নয় তৃণমূল, তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি আইটি সেলের মাথা অমিত মালব্যের আনন্দ দেখে কে? টুইট করে দিলেন, কী লিখলেন? Both Sharad Pawar and Mamata Banerjee have struck a discordant note, disapproving of Congress’s decision to contest the Speaker’s post. It may be a good idea for the Third Time Fail Rahul Gandhi to build consensus within the I.N.D.I Alliance before pontificating to the world.
আরও পড়ুন: Aajke | ভারত সরকার কি পশ্চিমবঙ্গকে জল না দিয়ে শুকিয়ে মারতে চায়?
তৃণমূল কংগ্রেস আর এনসিপি কংগ্রেসের প্রস্তাবে রাজি নয়, তারা বিরোধিতা করেছে, রাহুল আবার ফেল করল। তো শেয়াল ডেকেছে, অন্য শেয়ালেরা চুপ করে থাকবে কেন? আরামবাগ চিকেন থেকে ব্যারাকপুরের একদা খবরের কাগজ বিক্রেতারা তাদের ইউটিউবে, ভেঙে গেছে, ভেঙে গেছে ইন্ডি জোট, দাদায় কইছে পুঙ্গির ভাই আনন্দের আর সীমা নাই, নাচতে বাকি রেখেছে। এবং আজ সকালে গণশক্তি খুলুন, প্রথম পাতাতেই বড় করে খবর, অধ্যক্ষ নির্বাচন প্রসঙ্গে সেলিম, বিপদে পড়লেই বিজেপির হয়ে ব্যাট করতে নামবে তৃণমূল। এটা শীর্ষক। এক তক্তা লেখা, কত বুদ্ধিমান এই কমরেড সেলিম, বলেছেন “লোকসভায় অধ্যক্ষ নির্বাচনে ভোটের সময়ে যদি দেখা যায় তৃণমূলের ভূমিকায় বিজেপি বিপদে পড়তে চলেছে, সেক্ষেত্রে অধ্যক্ষ নির্বাচনে তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকতে পারে অথবা ইন্ডিয়া নেতৃত্বকে বা কংগ্রেস নেতৃত্বকে দোষ দিয়ে ওয়াক আউটও করতে পারে, আর যদি নিশ্চিত হয় যে তৃণমূল ভোট দিলেও বিজেপির কোনও অসুবিধে হবে না, তাহলে তারা লোক দেখানো বিরোধিতা চালিয়েই যাবে।” আসলে এই সেলিম অ্যান্ড কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল, নেহাত লোকলজ্জার খাতিরেই বিজেপিকে সরাসরি সমর্থন করতে পারছেন না। প্রথম কথা হল এই ভোটাভুটি যে নেহাতই প্রতীকী সেটা সব্বাই জানে, খাতায় কলমে এনডিএর কাছে ৩০০ আসন আছে, দু’ চারটে কমলেও তারা এখনই হেরে যাবে না, যতদিন না ওই নীতীশ কুমার বা চন্দ্রবাবু নাইডু হাত তুলে নিচ্ছে, বা বিজেপিতেই বড় ভাঙন হচ্ছে। ততদিন বিভিন্ন ইস্যুতে সংসদের মধ্যে সরকারকে বেকায়দাতে ফেলা যাবে, অপদস্থ করা যাবে কিন্তু ফেলে দেওয়া যাবে না। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেসের সামান্য মতবিরোধেও ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতোই কমরেড সেলিম আনন্দ পাবেন, এটা ওই দাদ বা হাজার ঘায়ের মতো এক ব্যাপার, সারাজীবন ওই চুলকানি থেকে যাবে সারবে না আমৃত্যু। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেসের সামান্যতম বিরোধে বিজেপির আইটি সেল, বিজেপি, তাদের মাইনে করা টিভি চ্যানেল, ভৃত্য ইউটিউবার আর সিপিএম, গণশক্তির এত আনন্দ হয় কেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
কংগ্রেস, তৃণমূলের মধ্যে বিবাদ লাগলে বিজেপির তো খুশিই হওয়ার কথা, কিন্তু সিপিএম বা কমরেড সেলিমের এত আনন্দ হয় কেন? আসলে ৩৪ বছরের মৌরসিপাট্টা, ইট বালি সিমেন্টের ব্যবসা, পাড়ায় একচ্ছত্র রাজের সেই সোনালি দিনগুলো কেড়েছেন ওই মমতা ব্যানার্জি, আর সেসবের হা-হুতাশ প্রতি মুহূর্তে থাকে সিপিএম-এর অন্দর মহলে, সেখানে বিজেপি কেন, হিটলারের সঙ্গেও সমঝোতা করতে রাজি এই সিপিএম-এর কমরেড সেলিম অ্যান্ড কোম্পানি। কিন্তু মানুষ এসব বোঝে, বোঝে বলেই অর্ধচন্দ্র তো দিয়েছে কবে, শূন্যে পৌঁছে দিয়েছে এই আম জনতা। তবুও যদি শিক্ষা না নেয়, তাহলে সূর্য সেন স্ট্রিটের কোথাও একটা প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির সাইন বোর্ড আছে, সেটার ছবি দেখে আসুন কমরেড সেলিম, ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না।