মৌনি অমাবস্যার স্নান করার আগেই কুম্ভমেলায় শ্মশানে শবদাহ শেষের মৌনতা। প্রাথমিক হাহাকার, কান্না আর চিৎকারের পরে অন্তত ৩০ জন পুণ্যার্থীর মৌন শব বলে দিচ্ছে এক চরম অব্যবস্থার কথা। ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের বিরাট অংশই জানিয়েছেন, জানাচ্ছিলেন এই চরম অব্যবস্থার কথা। আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অনেকগুলো ফুটব্রিজ তৈরি করা হয়েছে সকলের চলাচলের সুবিধার জন্য। তার উপর দিয়েই যেতে হবে, গাড়ি নিয়ে মেলার সর্বত্র যাওয়া সম্ভব নয়। গাড়ি চলছিল কেবল ভিআইপি বা ভিভিআইপিদের জন্য। মেলা প্রাঙ্গণের মধ্যে খুব কম জায়গায় টোটো বা বাইক পরিষেবা রয়েছ্ তা সরকার নিয়ন্ত্রিত নয়, সামান্য ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার অথবা ১ কিলোমিটার এগিয়ে দেওয়ার জন্য আকাশছোঁয়া দাম চাওয়া হচ্ছিল। সারা দেশ থেকে এমন বহু মানুষ এসেছেন, যাঁদের দেখে মনে হয়েছে, তাঁদের তত আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাঁরা থাকার জন্য হয়তো কোনও ব্যবস্থাও করতে পারেননি। সারাদিন হেঁটে স্নান করে আবার ফিরে যাবেন। এমন লোকজনও ছিলেন, যাঁরা রাতের দিকে রাস্তার ধারে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অজস্র ভাণ্ডারা রয়েছে, লঙ্গর রয়েছে, সেখানে খাবার দেওয়া হচ্ছে। ওই খাবারের গুণমান বা পরিচ্ছন্নতা যাচাই করার লোক নেই, যদিও তাই খেয়েই খিদে মেটাচ্ছিলেন বহু পুণ্যার্থী। যত অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে, সবই হিন্দিতে। ফলে হিন্দি না জানলে বেশ সমস্যায় পড়তে হবে। যখন এই দুর্ঘটনা ঘটছে তখন বেশ কিছুক্ষণ অ্যানাউন্সমেন্ট বন্ধ হয়, চালু হওয়ার পরেও সেটা ছিল কেবল হিন্দিতে, যা আরও সমস্যা তৈরি করে। সব মিলিয়ে এক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছিল কুম্ভমেলা, যার পরিণাম এই মৃত্যু। খবর আসার পরে সুকান্তবাবু বলেছেন, ওসবে কান দেবেন না, কয়েক জনের কিছু হয়েছে, বাকি সব ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি, আপনারাও চলুন, এখন তাঁর আর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই, এবং খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছেনা কাঁথির খোকাবাবুকে। তিনি ধাঁ। সেটাই আমাদের বিষয়, এবারে মোদিজির যোগীজির পদত্যাগ চাইবেন না শুভেন্দুবাবু?
আজ নয় সেই কবেই ১৯৫৪-তে ওই কুম্ভমেলায় বিরাট দুর্ঘটনা ঘটার পরে লোকসভায় বিরোধী নেতারা সরব হয়েছিলেন, দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। আর লোকসভা বসেছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। মজার কথা হল সেদিন হিন্দু মহাসভা আর সিপিআই একসঙ্গে মুলতুবি প্রস্তাব এনে ওই দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবি করেন। এবং প্রধানমন্ত্রী নেহরু সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনাতে সম্মতি জানান। সেদিনে বহু সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু আর এক সমালোচনা এসেছিল প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির জে বি কৃপালিনির তরফে। সেদিন জে বি কৃপালিনি নেহরুর সরকারকে বলেছিলেন আপনাদের দায় নিতে হবে, কারণ আপনারাই বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিভিন্ন ঘোষণা করে মানুষকে কুম্ভমেলায় আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বিশেষ ট্রেন, বিশেষ ব্যবস্থার ঘোষণা আসলে ছিল আপনাদের আয় বাড়ানোর পরিকল্পনার অঙ্গ। যার জন্য মারা গেলেন এতজন মানুষ।
আরও পড়ুন: Aajke | কল নয়, বিজেপি এই বাংলায় এখন মিসকলে চলছে
৭০ বছর পরে একইভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে যোগী-মোদি ডেকেছিলেন মানুষজনকে, পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিলেন এক নিরাপদ পুণ্য অর্জনের কথা, এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩০ পার করেছে, ৭০ জনের মতো হাসপাতালে, তাদের মধ্যে ১৩ জনের অবস্থা গুরুতর। যদি যে কোনও দুর্ঘটনা বা এক লম্পট মদ্যপের ধর্ষণ আর খুনের দায়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া যায়, যা বারবার চেয়েছেন কাঁথির খোকাবাবু, তাহলে এই দুর্ঘটনার জন্য কেন দায় নেবে না দিল্লির মোদি সরকার? কেন শুভেন্দু অধিকারী ওই নরেন্দ্রভাই দামোদরদাসের পদত্যাগ চাইছেন না? শাহি স্নান বন্ধ হয়েছে, মানুষ যাঁরা কুম্ভ মেলায় যাবেন বলে রওনা দিয়েছেন তাঁদের এক বিরাট অংশ ঘরে ফিরছেন। এখনও মেলা প্রাঙ্গণে দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন বহু মানুষ, যাঁদের নিকট আত্মীয়স্বজনের কোনও হদিশ নেই, এই অরাজক অবস্থার মধ্যিখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী কী জানালেন? জানালেন যে আবার পুণ্যস্নান শুরু হয়েছে। অথচ এই অবিবেচক সরকারের মাথায় বসে থাকা মোদিজির পদত্যাগ চাইতে ভুলে গেছেন আমাদের টাচ মি নট খোকাবাবু। সে সব তো ছেড়েই দিন আপাতত তিনি কোথায়? তা-ই জানা যাচ্ছে না। লজ্জায় কি মুখ লুকোলেন? সেও ভালো, সেটা সত্যি হলে এখনও এই মানবিক অনুভূতি তাঁর হারায়নি সেটা প্রমাণ হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কুম্ভমেলাতে এক চূড়ান্ত অরাজক ব্যবস্থার জন্য প্রাণ হারালেন ৩০ জন মানুষ, এর দায় নিয়ে কি মোদিজি, যোগীজির পদত্যাগ করা উচিত নয়? বিভিন্ন এরকম দুর্ঘটনার পরে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করা শুভেন্দু অধিকারী চুপ করে বসে আছেন কেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এদিকে চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা প্রবাদের কথা মনে রেখেই এই কুম্ভমেলার দুর্ঘটনায় মোদি-যোগীকে বাঁচাতে আসরে নামলেন বিপ্লবী ডাক্তার ডঃ আসফাকুল্লা নাইয়া। তাঁকে অবশ্য এখন অনেকেই ভুয়ো ডাক্তার বলছেন, সে আলোচনা আর একদিন হবে। তো তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন যে “ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হওয়া দরকার ছিল ঠিকই, কিন্তু এটা অঘটন, এটা মেনে নিয়ে সরকারকে সমালোচনা করতেই পারেন।” আসফাকুল্লাকে কোনও এক বৃদ্ধ লোলচর্ম আপাতত পরজীবী বাঘ, যিনি এখন গুহার সামনে খাবার এলে তবেই খান, তিনি বলেছেন বাঘের বাচ্চা। তো সেই বাঘের বাচ্চা এক অব্যবস্থা, চূড়ান্ত অরাজকতাকে আড়াল করে যোগী-মোদির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে চাইছেন, আমরা বুঝতে পারছি, উনি ভয় পেয়েছেন, ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা ধরা পড়ার পরে তিনি আপাতত আত্মরক্ষার জন্য শুভেন্দুবাবুর শরণাপন্ন হয়েছেন তা বুঝে আমাদের আমোদ হচ্ছে। ইয়ে ডর মুঝে অচ্ছা লগা।