নয়াদিল্লি: টাকার বিনিময়ে লোকসভায় আদানি নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে চাপ বাড়ছে মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) উপর। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগের তদন্তে আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে ১৫ সদস্যের লোকসভার এথিক্স কমিটি (Lok Sabha Ethics Committee)। মূল অভিযোগকারী, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে (Nishikant Dubey) ও আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাই (Jai Anant Dehadrai)-কে তলব করেছে কমিটি। তাঁদের সশরীরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনের বয়ান রেকর্ড করা হবে।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আদানি ইস্যু তোলার অভিযোগ নিয়ে লোকসভার এথিক্স কমিটি এদিন প্রথম বৈঠকে বসেছে। স্পিকার ওম বিড়লার কাছে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে নথি জমা দিয়েছিলেন দুবে ও দেহদ্রাই। স্পিকার সেই নথি যাচাই করার জন্য বিজেপি সাংসদ বিনোদকুমার সোনকারের নেতৃত্বাধীন এথিক্স কমিটির কাছে পাঠান।
আরও পড়ুন: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডি
এর আগে নিশিকান্ত দুবে বলেন, মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু আইনজীবী জয়অনন্ত দেহদ্রাই তাঁকে সমস্ত নথি দিয়েছেন। যে নথিতে স্পষ্ট আদানি এবং মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তোলার জন্য ব্যবসায়ী হিরানন্দানির থেকে ‘টাকা’ নিয়েছিলেন।
এথিক্স কমিটির প্যানেল জানিয়েছে, সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে প্রশ্নের জন্য নগদ অর্থ নেওয়ার অভিযোগ গত ১৫ অক্টোবর আনেন সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সেই অভিযোগ নিয়ে আইনজীবী দেহদ্রাইয়ের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। তাই নিজের আনা অভিযোগের উপর নিজের বক্তব্য রেকর্ড করবেন দুবে।
স্পিকারের কাছে তাঁর চিঠিতে, দুবে জানিয়েছেন, মহুয়ার করা লোকসভায় এখনও পর্যন্ত ৬১টি প্রশ্নের মধ্যে ৫০টি আদানি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে।
প্রসঙ্গত, একদিন আগেই বুধবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ফের কটাক্ষ করেন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, আদানি ইস্যু কিংবা ভুয়ো ডিগ্রি কোনও বিষয় নয়। আসলে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। উল্লেখ্য, তৃণমূলের লোকসভা সদস্য মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সংসদে আদানি নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অন্যদিকে, নিশিকান্ত দুবেকে ভুয়ো ডিগ্রিধারী বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন মহুয়া।
আরও পড়ুন: কোভিড বংশের নতুন ভাইরাসের সন্ধান চীনে, আতঙ্ক
বুধবার হিন্দিতে এক টুইটে দুবে বলেন, একদিকে সংসদের গরিমা, ভারতের সুরক্ষার প্রশ্ন। আর অন্যদিকে সাংসদের শোভন আচরণ, দুর্নীতি এবং অপরাধ প্রবণতার ইস্যু। ন্যাশনাল ইনফরমেটিকস সেন্টারের মেল দুবাই থেকে খোলা হয়েছিল কি না, এর জবাব তাঁকে দিতে হবে। টাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কি না এবং বিদেশ ভ্রমণের খরচ কে দিয়েছিল? বিদেশযাত্রার জন্য তিনি লোকসভা স্পিকার কিংবা বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, এর জবাবও তাঁকে দিতে হবে, বলেন দুবে।
নিশিকান্ত বলেন, আদানি, ডিগ্রি কিংবা চুরির প্রশ্ন নয়। আপনি যেভাবে আপনার দুর্নীতি ঢাকতে দেশকে বিভ্রান্ত করছেন, প্রশ্ন সেটাই। ‘ডিগ্রিওয়ালি দেশ বেচে’ এবং ‘চান্দ পয়সা কে লে মর্যাদা বিক্রি’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট করেছেন নিশিকান্ত দুবে। প্রসঙ্গত, অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা সম্পর্কিত অভিযোগে চাপের মুখে তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। যে ব্যবসায়ীর হয়ে তিনি আদানি (Adani) গোষ্ঠী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চাপে ফেলতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ, তা প্রায় মেনে নিয়েছেন সেই ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি (Darshan Hiranandani)। স্বাক্ষর করা হলফনামায় হীরানন্দানি মেনে নিয়েছেন যে তিনি মোদি সরকার এবং আদানি গোষ্ঠীকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়াকে ব্যবহার করেছেন।
এই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়তেই পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করেন মহুয়া। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হীরানন্দানির যে বয়ান প্রকাশ্যে এসেছে, তা কি আদৌ তাঁর লেখা? না কি সেই বয়ানের খসড়া তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতর থেকে? মহুয়ার বক্তব্য, হীরানন্দানির হলফনামা সাদা কাগজে লেখা হয়েছে। তাতে কোনও ‘অফিসিয়াল লেটারহেড’ বা ‘নোটারি’ করা নেই।
দেখুন অন্য় খবর
তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, মাথায় বন্দুক ঠেকানো না হলে কি হীরানন্দানির মতো একজন সম্মাননীয় এবং শিক্ষিত ব্যবসায়ী কখনও এ রকম সাদা কাগজে সই করবেন? হীরানন্দানির হলফনামায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং শশী থারুরের কথাও উঠে এসেছে। তার প্রেক্ষিতে প্রেস বিবৃতিতে মহুয়ার মন্তব্য, সব কা নাম ঘুসা দো, অ্যায়সা মওকা ফির নেহি আয়েগা!
দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন এমন অভিযোগ তুলে গত রবিবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি পাঠান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। স্পিকারের কাছে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করার আর্জিও জানিয়েছেন নিশিকান্ত। আবার আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এল দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির হলফনামা।