এ এফ সি কাপের গ্রুপ লিগের তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে এটিকে মোহনবাগানকে। তাদের সঙ্গে ডি গ্রুপে আছে সদ্য আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম কেরালা, বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস এবং মালদ্বীপের মেজিয়া স্পোর্টস অ্যান্দ রিক্রিয়েশন ক্লাব। বুধবার প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগান খেলবে গোকুলমের বিরুদ্ধে। সল্ট লেক স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচ শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বসুন্ধরা মুখোমুখি হবে মেজিয়ার। সেই ম্যাচ রাত সাড়ে আটটায়।
আই লিগ জয়ী গোকুলম মাত্র চার দিন আগে তাদের অভিযান শেষ করেছে। এখন তাদের বিশ্রাম নেওয়ার সময়। সেলিব্রেশনে মাতার সময়। কিন্তু এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের টুর্নামেন্টে খেলবার জন্য তাদের থেকে যেতে হয়েছে কলকাতায়। তবে এরই মধ্যে রবিবার রাতে তারা একটা ছোট পার্টি করেছে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আবার সোমবার থেকে শুরু করে দিয়েছে এ এফ সি কাপের প্রস্তুতি। গত শনিবার মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে তারা খেলাতে পারেনি তাদের আফগান মিডফিল্ডার শরিফ মুখাম্মদকে। শ্রীনিধির বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখায় শরিফকে মাঠের বাইরে বসে ম্যাচ দেখতে হয়। শরিফ কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলবেন। এতে গোকুলমের শক্তি নিঃসন্দেহে বাড়বে। গোকুলমের কোচ ভিনসেন্তো অ্যালবার্তো ইতালির মানুষ। ইতালিয়ান ফুটবলের মতোই তিনি কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলতে ভালবাসেন। এই ভাবে খেলেই তিনি টিমকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন। আই লিগে গোকুলম আঠারোটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে। গোল খেয়েছে মাত্র ১৫টি। গোল করেছে ৪৪টি। তবে আই লিগের টিমগুলোর চেয়ে এটিকে মোহনবাগান অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই গোকুলমের লড়াইটা এবার অনেক বেশি।
কিন্তু তাতে চিন্তিত নন গোকুলম কোচ। অ্যালবার্তো বলেছেন, ” আমরা জানি মোহনবাগান অনেক ভাল দল। তবে আমরা ওদের ভয় পাচ্ছি না। জেতা-হারা নিয়ে আমি ভাবছি না। আমরা লড়াই করব।” শরিফ মাঠে ফেরায় গোকুলমের শক্তি যে বাড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাঝ মাঠে পুরো খেলটাই নিয়ন্ত্রিত হয় তাঁর পায়ে। মৌহনবাগান ডিফেন্সকে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে শরিফকে আটকাবার জন্য। মোহনবাগানের সব প্লেয়ার ফিট। এমন কি সন্দেশ ঝিঙ্গনও এখন ম্যাচ খেলার জায়গায় চলে এসেছেন। তবে কোচ জুয়ান ফেরান্দোর বড় কাজ হল সঠিকভাবে চার বিদেশি নির্বাচন করা। নিয়ম অনুযায়ী একজন এশিয়ানকে মাঠে রাখতেই হবে। তাই ডেভিড উইলিয়ামসের প্রথম একাদশে জায়গা বাঁধা। প্রশ্ন হল, বাকি তিন বিদেশি কে হবেন? ডিফেন্সে তিরিকে বাদি দিয়ে টিম করা যাবে না। বাকি দুটি বিদেশির জন্য লড়াই তিন জনের। রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমো এবং জনি কাউকোর। ফিজির স্ট্রাইকার কৃষ্ণ অতীতে মোহনবাগানের এক নম্বর বিদেশি ছিলেন। কিন্তু গত আই এস এল-এ চোট আঘাতের জন্য তিনি খুব একটা ভাল খেলতে পারেননি। সম্প্রতি কৃষ্ণ হারিয়েছেন তাঁর বাবাকে। তবে এখন তিনি ফিট। দলের সঙ্গে নিয়মিত প্র্যাক্টিসও করছেন। কিন্তু হুগো বুমো এবং জনি কাউকোকে বাদ দিয়ে টিম মনে হয় করবেন না ফেরান্দো। দুজনেই এখন মোহনবাগান টিমের আবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রায় কৃষ্ণ হয়তো পরিবর্ত হিসেবেই নামবেন। মোহনবাগানের ষষ্ঠ বিদেশি কার্ল ম্যাকহিউকেই তাই শুরুতে অপেক্ষা করতে হবে পরে মাঠে নামার জন্য।
জুয়ান ফেরান্দো সল্ট লেক স্টেডিয়ামের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে টিম নিয়ে প্র্যাক্টিস করছেন ক্লোজ ডোরে। গোটা মাঠটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। মাছি গলবার উপায় নেই। তাই কী স্ট্রাটেজিতে তিনি টিমকে খেলাবেন তা নিয়ে কোনও ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এ এফ সি কাপের আঞ্চলিক সেমিফাইনালে উঠতে গেলে গোকুলমের বিরুদ্ধে জিততে না পারুক মোহনবাগানকে কিন্তু হারলে চলবে না। তবে মোহনবাগানের যা টিম তাতে তাদের হারানো সহজ হবে না গোকুলমের। বিদেশিদের পাশাপাশি বাগানের স্বদেশি ব্রিগেডও যথেষ্ট শক্তিশালী। গোলে অমরিন্দর, তিন ব্যাক প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন এবং শুভাশিস বসু, মিডফিল্ডার দীপক টেংরি এবং দুই উইঙ্গার মনবীর সিং এবং লিস্টন কোলাসোকে নিয়ে গড়া মোহনবাগান বেশ শক্তিশালী দল। লিস্টন কোলাসো আই এস এল-এ যা খেলেছেন তাতে তাঁকে রুখতেই বেশ বেগ পেতে হবে গোকুলমকে। শোনা যাচ্ছে সামনের মরসুমে তিনি মোহনবাগান ছেড়ে মুম্বই সিটি এফ সি-তে যেতে পারেন। তার আগে বর্তমান দলকে যদি এ এফ সি কাপের সেমিফাইনালে তুলতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। তাই সব মিলিয়ে বুধবারের ম্যাচ গোকুলমের বিরুদ্ধে মোহনবাগানই ফেভারিট।