নয়াদিল্লি: বিগত কয়েক মাসে কাশ্মীরি পণ্ডিত (Kashmiri Pandits) -সহ একাধিক নিরীহ মানুষ উপত্যকায় জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। কৌশল বদলে নিরীহ মানুষকে সফট টার্গেট করেছে জঙ্গিরা (Militants)। তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে মঙ্গলবার লোকসভায় দাবি করেন, ২০১৯ সালের অগস্টের পর থেকে উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জঙ্গি উপদ্রবও তুলনায় কমেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই দাবির অর্থ, কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে গিয়ে একই দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
নিত্যানন্দ রাইয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় ২০৬টি জঙ্গি সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে জঙ্গি তত্পরতার ঘটনা ঘটেছিল ২৪৪টি। লোকসভায় লিখিত বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও দাবি করেন, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার কারণে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।
কাশ্মীরে বিগত কিছু দিন ধরে যে ভাবে সাধারণ নিরীহদের খুন করা হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে দিন কয়েক আগে একটি আরটিআই হয়েছিল। তথ্য জানার অধিকার আইনে তা জানতে চেয়েছিলেন হরিয়ানার জনৈক সমাজকর্মী। তার প্রেক্ষিতে শ্রীনগরে পুলিশের সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, গত তিন দশকে কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন ১,৭২৪ জন। এর মধ্যে কাশ্মীরি পণ্ডিতের সংখ্যা ৮৯। বাকিরা অন্য ধর্মের।
সরকারি তথ্য থেকেই জানা যায়, ১৯৯০-এর দশক থেকে কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে পালিয়েছেন ১ লক্ষ ৫৪ হাজার জন। তাঁদের ৮৮ শতাংশ কাশ্মীরি পণ্ডিত, বাকিরা মুসলিম। কিন্তু, নিরীহ নাগরিকদের হত্যার কারণে কাশ্মীরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, এমনটা মানতে চায়নি কেন্দ্র। যদিও কেন্দ্রের তথ্য বলছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ১১৫টি পরিবার এখন জম্মুতে আশ্রয় নিয়েছে। কেন্দ্রের আরটিআইয়ের জবাব নিয়ে হরিয়ানার সমাজকর্মী পিপিকাপুর বলেন, ‘ঠিক কত জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে, আরটিআইতে সে উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন-ওমিক্রনে আক্রান্ত মুর্শিদাবাদের ৭ বছরের শিশু, রাজ্যে প্রথম
আর এক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি সংসদে জানিয়েছেন, ১৯৯০-এর দশক থেকে কাশ্মীরে ফিরে গিয়েছেন ৩,৮০০ উদ্বাস্তু। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের চাকরিও দিয়েছে। নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় জানান, সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে ফিরে গিয়েছেন ১,৬৭৮ জন উদ্বাস্তু। তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
আরটিআইয়ের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আরও জানিয়েছে, কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ৮৪ হাজার মানুষ সরকারি ত্রাণ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে।এর মধ্যে ৫৪ হাজার হিন্দু এবং ১১ হাজার মুসলিম। বাকিরা শিখ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। সরকার তাঁদের নগদ অর্থও দিয়েছে। সেইসঙ্গে প্রতি মাসে সরকারের তরফে চাল-গমও দেওয়া হয়।
লোকসভায় কেন্দ্রের বিবৃতির প্রেক্ষিতে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা দাবি করেন, ‘যাঁরা কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তাঁদের খুব অল্প অংশই ফিরতে পেরেছেন।’ তাঁর অভিযোগ, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের অনেকে ভোটব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করতে চান। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয় না।
