মুম্বই সিটি এফ সি–১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(বিপিন সিং)
ভাঙা দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল এস সি ইস্ট বেঙ্গল। নেইয়ের তালিকাটা দীর্ঘ। নানারকম কারণ। কারুর কার্ড সমস্যা, কারুর চোট, কারুর উপর আবার কোচের আস্থা নেই। তাই হীরা মণ্ডল, অরিন্দম ভট্টাচার্য, নওচা সিং, আদিল খান, আন্তোনিও পেরোসেভিচ কিংবা মার্সেলো থাকলেন মাঠের বাইরে। তবু ভাঙা দল নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল কিন্তু ধুলো উড়িয়ে দিয়েছিল। নব্বই মিনিটের ম্যাচে যত কঠিন বল ধরতে হয়েছে মুম্বই সিটির গোলকিপার নওয়াজকে, তার সিকি ভাগও ধরতে হয়নি ইস্ট বেঙ্গলের শঙ্কর রায়কে। একটা হাফ চান্স থেকে একান্ন মিনিটে গোল করে গেলেন বিপিন সিং। ব্যস ওই গোলেই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে গেল। এই ম্যাচ জিতে সতেরো ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ঢুকে পড়ল প্রথম চারের মধ্যে। পাঁচে নেমে গেল কেরালা ব্লাস্টার্স। আর ইস্ট বেঙ্গল পড়ে রইল সেই তিমিরেই। আঠারো ম্যাচে জয় মাত্র একটা। পয়েন্ট দশ। এগারো টিমের লিগের শেষ স্থানটা মারিও রিভেরার টিমের। কিংবদন্তী ফুটবলার অকালপ্রয়াত সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লাল হলুদ ফুটবলাররা কালো আর্ম ব্যান্ড পরে খেললেন। কিন্তু ম্যাচ জিতে আসল শ্রদ্ধাটাই জানানো গেল না।
অথচ ভাঙা দল নিয়ে কী লড়াইটাই না করল রিভেরার ছেলেরা। গোলে শঙ্কর রায় গোলটা খাওয়া ছাড়া বেশ ভাল খেললেন। যদিও ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সের জন্য সে রকম বল যায়নি তাঁর কাছে। তবে যা গেছে শঙ্কর করতলগত করেছেন। চার ডিফেন্ডার রাজু গায়কোয়াড়, জয়নার, ফ্রানিও পার্সে এবং বিকাশ জাইরু। এই বিকাশ আদতে মাঝ মাঠের প্লেয়ার। তাঁকে খেলতে হল লেফট ব্যাকে। কারণ গত কয়েকটা ম্যাচে যে নওচা সিং খেলছিলেন লেফট ব্যাকে তাঁকে পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি মুম্বই এফ সি থেকে লোনে এসেছেন ইস্ট বেঙ্গলে। তাই নিয়ম মতো তাঁকে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে না। বিকাশ খুব খারাপ খেলেননি। গোলটা তাঁর পাশ দিয়েই হল অবশ্য। লেফট আউট বিপিন সিং ডান প্রান্ত দিয়ে বল ধরে উঠে বক্সের মধ্যে ঢুকে বাঁ পায়ে যে মাটি ঘেঁষা শটটা করলেন, তাতে এত জোর ছিল যে পুরো শরীর ছুড়ে দিয়েও শঙ্কর তা রুখতে পারেননি। এবারের লিগে ছটা গোল হয়ে গেল বিপিনের। বিপিন যখন বল ধরে এগোচ্ছেন তখন লাল হলুদের চার ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ ট্যাকলে এলেন না।
ওই পলকের ভুলটা ছাড়া ইস্ট বেঙ্গলের ব্যাক ফোর অবশ্য বেশ দুর্ভেদ্য ছিল। মনে রাখতে হবে মুম্বইয়ের অ্যাটাকিং লাইন কিন্তু বেশ ভাল। তাদের দলে ছিলেন ইগর অ্যাঙ্গুলো, যিনি এবারের লিগে দশ গোল করে বসে আছেন। সেই ইগরকে কিন্তু ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দিল না জয়নাররা। শুধু একবার ছয় গজের মধ্যে একটা বল পেয়ে গিয়েছিলেন ইগর। কিন্তু তাড়াহুড়োতে বলটা বারের উপর উড়িয়ে দিলেন। ইগরের সঙ্গে ছিলেন ব্রাড ইনম্যান, মরিসিও এবং পরে নামা দিয়েগো মরিসিও। এরা সবাই আই এস এল-এর প্রতিষ্ঠিত প্লেয়ার। প্রচুর গোল করেন, গোল করান। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলের মাঝ মাঠ এবং ডিফেন্স তাদের তেমন সুযোগ দেয়নি। মাঝ মাঠে অন্য দিনের মতো খুবই ভাল খেললেন মহেশ সিং। তাঁর পাশে সৌরভ দাস অন্য ম্যাচের মতোই বিশ্বস্ত ছিলেন। বিদেশি ফ্রান সোতা কোচ রিভেরার স্বদেশীয়। কিন্তু স্পেনের এই ফুটবলারের মধ্যে তেমন কোনও বিচ্ছুরণ নেই। নেহাতই শ্রমিক শ্রেণীর। মাঝ মাঠে ট্যাকল করা মন্দ নয়। কিন্তু ভাল বল বাড়ানোর কোনও কোয়ালিটি নেই। এদের পাশে নামতে বেশ ভাল। এই চারজন তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী মুম্বই মাঝ মাঠকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে অনেক বল কেড়ে নিয়েছেন। প্রচুর আ্যাটাক করেছেন। কিন্তু সামনের দিকে মহম্মদ রফিক এবং সেম্বোই হাওকিপের মধ্যে সেই ভেদশক্তি ছিল না যা থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে এক বার মহেশের থ্রু পাস ধরে সেম্বোই বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। তাঁর গায়ে লেগেছিলেন মোর্তাদা ফল। কিন্তু ফলের গায়ে লেগে পড়ে গেলেন সেম্বোই। ইস্ট বেঙ্গল ফুটবলাররা পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি সাড়া দেননি।
এর পরেও বক্সের মধ্যে ভাসানো সেন্টার থেকে ইস্ট বেঙ্গল বেশ কয়েকটা হাফ চান্স তৈরি করেছিল। কখনও হেড, কখনও শট সব মিলিয়ে সেগুলোতে গোলের গন্ধ ছিল। কিন্তু মুম্বই গোলকিপার নওয়াজ সেগুলোকে গোল হতে দেননি। জয়সূচক গোলটি করে ম্যাচের সেরার পুরস্কার বিপিন সিং পেলেন বটে, কিন্তু এদিন তিনি তাঁর নিয়মিত খেলার পঞ্চাশ শতাংশও খেলতে পারেননি। বা তাঁকে খেলতে দেয়নি লাল হলুদ ডিফেন্স। এই পুরস্কারটা নওয়াজ পেলে মনে হয় ঠিক হত।
অতএব ইস্ট বেঙ্গলের আঠেরোটা ম্যাচ হয়ে গেল। রইল আর মাত্র দুটো ম্যাচ। গত বার তারা শেষ করেছিল নয়ে। এবার কি তাহলে এগারোতেই শেষ করতে হবে? শ্রী সিমেন্টের দলের খেলায় কোনও শ্রীও নেই, টিমটা সিমেন্টের মতো শক্তপোক্ত নয়। শোনা যাচ্ছে সামনের বছর তারা থাকবে না। তবে দু বছর ইস্ট বেঙ্গল যা খেলল আই এস এল-এ তাতে শ্রী সিমেন্ট চলে গেলে কেউ কাঁদতে বসবে না।