আই এস এল-এর বারো নম্বর ম্যাচে প্রথম জয় পাওয়ার পর উজ্জীবিত এস সি ইস্ট বেঙ্গল সোমবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে মুখোমুখি হচ্ছে হায়দরাবাদ এফ সি-র। প্রথম লিগে এই দুই দলের ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে। কিন্তু তার পর থেকে জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। হায়দরাবাদ, যারা এক সময় পর পর আটটা ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা গত তিন ম্যাচে জয়হীন। আর নতুন কোচ মারিও রিভেরার কোচিংয়ে ইস্ট বেঙ্গল প্রথম জয়ের মুখ দেখেছে এফ সি গোয়াকে হারিয়ে। তার উপর হায়দরাবাদ ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল ফিরে পাচ্ছে তাদের ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার আন্তোনিও পেরোসেভিচকে। রেফারিকে ধাক্কা মারার অপরাধে পাঁচ ম্যাচ সাসপেন্ড ছিলেন আন্তোনিও। এবার তিনি মাঠে নামবেন। ইস্ট বেঙ্গলের নতুন রিক্রূট ব্রাজিলের মার্সেলো রিবেইরা সম্পর্কে ইস্ট বেঙ্গল কোচ মারিও রবিবার বলেছেন, “মার্সেলো সোমবার খেলবেই। তবে কখন ওকে নামনো হবে তা এখনও ঠিক করিনি। ও শুরু থেকেই খেলতে পারে। আবার পরেও নামতে পারে। তবে মার্সেলো খেলবেই।”
শেষ পর্যন্ত মার্সেলো যদি খেলেন তাহলে আন্তোনিও-মার্সেলো কম্বিনেশনের থেকে গোল আশা করা যেতেই পারে। ইস্ট বেঙ্গলের এ মরসুমে ফরোয়ার্ড লাইন একেবারেই কানা। আন্তোনিও বেশ ভালই খেলছিলেন। দুটো গোলও করেছেন। অন্যদের দিয়ে গোলও করিয়েছেন। কিন্তু গত পাঁচ ম্যাচে তিনি না খেলায় ফরোয়ার্ড লাইনের শক্তি কমে গেছে। যদিও গোয়ার বিরুদ্ধে নাওরেম মহেশ সিং দুটো গোল করে টিমকে জিতিয়েছেন। তবে তাঁর বদলে যদি মার্সেলো আসেন তবে ফরোয়ার্ড লাইনের শক্তি নিশ্চিত ভাবে বাড়বে।
শুধু গোল করার লোকের অভাবই নয়, ইস্ট বেঙ্গলকে ডোবাচ্ছিল তাদের ডিফেন্স লাইনও। তবে এখন আদিল শেখ বেশ ভাল রকম মানিয়ে নেওয়ায় সমস্যা অনেকটাই কমেছে। আগে যেমন ডিফেন্সে বল গেলেই গোল খাব খাব অবস্থা হচ্ছিল, সেই জায়গা থেকে অনেকটা বেরিয়ে আসা গেছে। গোয়া ম্যাচে আদিলের পাশে বিদেশি ফ্রানিয়ো পার্সে বেশ ভাল খেলেছেন। অনুমান করা যায়, সোমবার ডিপ ডিফেন্সে তিনিই সঙ্গী হবেন আদিলের। দুই সাইড ব্যাক হিসেবে অমরজিৎ সিং এবং অঙ্কিত মুখার্জি ভালই কাজ চালিয়েছিলেন গোয়া ম্যাচে। এখন হীরা মণ্ডল যদি কোভিড থেকে ফিরে এসে ম্যাচ খেলার মতো জায়গায় আসেন তবে তিনিই খেলবেন লেফট ব্যাকে। ওই পজিশনে হীরা এবারের লিগে বেশ ভাল খেলছেন। তবে হীরা খেলুন বা না খেলুন, ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সের অবস্থা এখন বেশ ভাল।
মাঝ মাঠে ভারতীয়রাই শক্তি লাল হলুদের। সেম্বই হাওকিপ, মহম্মদ রফিক, নাওরেম মহেশ, সৌরভ দাসরা কিন্তু মাঝ মাঠটা ভালই আগলে রাখছেন। রেনেডির কোচিংয়ে ইস্ট বেঙ্গল দুটো ম্যাচ ড্র করেছে, হেরেছে একটি ম্যাচ। সেই হার ছিল জামশেদপুরের কাছে অষ্টাশি মিনিটে গোল খেয়ে। সেই সময় চোট পেয়ে আদিল শেখ মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তার পর তো গোয়া ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল জিতেই গেছে। এই চারটে ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গলের ভাল খেলার পিছনে আছে মাঝ মাঠের ভাল খেলা। মারিও কীভাবে টিম সাজাবেন সে সম্পর্কে কোনও ধারনা না দিলেও আশা করা যায় ইস্ট বেঙ্গল জেতার জন্যই মাঠে নামবে।
তবে কাজটা সহজ নয়। হায়দরাবাদ গত তিন ম্যাচে জয়হীন হলেও তাদের টিমে আছেন এবারের লিগের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বার্থোমিউ ওগবেচে। মোট নটা গোল করে ফেলেছেন তিনি। তাঁকে আটকাতে না পারলে পস্তাতে হবে ইস্ট বেঙ্গলকে। আর তিন ম্যাচে না জিততে পারার পর গোল করার জন্য ওগবেচে নিজেকে আরও উজার করে দেবেন। এই সময় শুধু ডিফেন্স ভাল খেললেই হবে না, গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকেও বেশ ভাল খেলতে হবে। অরিন্দম তাঁর ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড খুলে ফেলেছেন। এখন অনেক খোলা মনে খেলতে পারবেন তিনি। এখন দেখার সোমবার ইস্ট বেঙ্গলকে জেতাবার ব্যাপারে তিনি কতটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলার পর আগামি শনিবার ইস্ট বেঙ্গল মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগানের। তাই সোমবার হায়দরাবাদকে হারাতে পারলে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বেশ উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামতে পারবে ইস্ট বেঙ্গল।