আলিপুরদুয়ার: পরিযায়ী পাখিরা শুধু শীতকালেই আসে। এমন প্রচলিত ধারণাই চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। অথচ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও প্রচুর পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায় প্রকৃতির আনাচে-কানাচেতে। অথচ গ্রীষ্মকালীন ওই পরিযায়ী অথবা ‘সামার ভিজিটরদের’ নিয়ে তেমন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ হয় না। ফলে তারা অনেকটা অপরিচিতই থেকে যায় সাধারণ মানুষের কাছে। পাখি বিশেষজ্ঞদের দাবি, শীতকালীন পরিযায়ীদের মতো গ্রীষ্মের আগন্তুকদের নিয়েও সমান গবেষণার ব্যবস্থা করুক বনদপ্তর। পাখি দেখার উৎসবকে শুধুই শীতের চাদরে না মুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হোক বছর ভর।
সাধারণত শীতকালেই অভিবাসী পাখিদের নিয়ে প্রকৃতি প্রেমিকদের একাংশ মেতে থাকেন। তবে যাঁরা বছরের ১২ মাস উত্তরবঙ্গের পাখিদের উপর নজর রাখেন, তাঁদের হিসেবে দার্জিলিং থেকে আলিপুরদুয়ার কমবেশি ৪০ টির বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি চলে আসে উত্তরে। তালিকায় রয়েছে প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার, ব্ল্যাক ন্যাপেড মোনার্ক,অরেঞ্জ হেডেড থ্রাস ছাড়াও উত্তরের গ্রাম বাংলার পরিচিত পাখিদের মধ্যে অন্যতম বৌকথা কও, চাতক,দুই ধরনের বাঁশপাতিও রয়েছে।
ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানিয়েছেন “আমাদের এখানে গ্রীষ্ম ও বর্ষার মরসুম প্রায় একসাথেই চলে।শীতকালে যেমন বিভিন্ন মহাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পাখি চলে আসে তেমনি এপ্রিল থেকে জুলাই আগষ্ট অবধি প্রচুর পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা চলে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা পুরোপুরি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ কুলিক পক্ষিনিবাসে শামুকখোল পাখিদের চলে আসা। এছাড়াও দক্ষিণ ভারত থেকে,হিমালয়ের উঁচু অংশ থেকেও সমতলে নেমে আসে কিছু পাখি।”
আলিপুরদুয়ার বার্ডার্স ক্লাবের অন্যতম সদস্য শিবুন ভৌমিক জানান “ব্লু টেইল্ড বী-ইটার আমাদের এখানে একটি পরিযায়ী পাখি।চার পাঁচ মাসের জন্য তারা অতিথি হয়ে চলে আসে। মূলত খাদ্য সংগ্রহ, বাসা তৈরি, ডিম পেরে বাচ্চা দিয়ে ফের তারা ফিরে যায়।”
অনিমেষ বসুর আরও বলেন “গ্রীষ্মের মরসুমে যে পাখিরা চলে আসে তাদের জন্য প্রকৃতি নির্দিষ্ট করে রেখেছে কিছু গাছের ফল,ফুল,পোকামাকড়। তারা যেখান থেকে উড়ে আসে সেখানে নিশ্চয় ফল,ফুল,পোকামাকড়ের অভা রয়েছে। গোটা বিষয়গুলি নিয়েই গবেষণার প্রয়োজন।”
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের পাখি প্রেমীদের একটি অংশ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এবছরও এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাই ক্যাচার,গোল্ডেন ওরিওল, পিঙ্ক স্টারলিং, লাল মাথাওয়ালা ক্রেষ্টেড বন্টিং, নীল লেজযুক্ত বাঁশপাতি ভাল ভাবেই দেখা গিয়েছে। আর এই বিদেশী পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনায় খুশি পাখি প্রেমীরাও।