বসিরহাট: অবক্ষয় ঘটে যাওয়া সমাজে আজও এমন ঘটনা ঘটে যা আশার আলো দেখায়। এখনও উত্তরণের পথ আছে, এই বিশ্বাস জন্মিয়ে দেয়। উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) বসিরহাটের (Basirhat) হাড়োয়া ব্লকের ঘটনা সেরকমই।
এক বছর আগে হাওড়ার (Howrah) চেঙ্গাইল থেকে মল্লিকপুর খেজের আলি স্মৃতি অবৈতনিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে এসেছিলেন কাকলি মণ্ডল (Kakali Mondal)। এই এক বছরের মধ্যে স্কুলের ২৫০ ছাত্রছাত্রী সহ অভিভাবকদের মন জয় করে নিয়েছেন। একদিকে তাদের পুঁথিগত শিক্ষা এবং সেইসঙ্গে সামাজিক শিক্ষা অন্যদিকে দিয়ে আসছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই এসে গিয়েছিল বদলির আদেশ। সেকথা জানতেই স্কুলের ২৫০ পড়ুয়া, ৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকা সহ অভিভাবকদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া।
আরও পড়ুন: Justice Rajasekhar Mantha: এজলাস বয়কট নিয়ে উদ্বেগ বিচারপতির, আইনজীবীদের মামলায় অংশ নিতে অনুরোধ এজির
স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ছাত্রছাত্রীরা সোজা গিয়ে পড়ল কাকলির পায়ে। চোখের জল ধরে রাখতে পারছিল না তারা, প্রিয় ম্যাডামকে যেতে দিতে নারাজ তারা। পড়ুয়ারা জানিয়েছে, মায়ের মতো স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে তাদের সুবিধা অসুবিধা সবটুকু দেখতেন কাকলি। গত এক বছরের স্কুলের শিক্ষার মান অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ দুপুরবেলা কাকলির চলে যাওয়ার খবর পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের কাছে পৌঁছলে তারা শিক্ষিকার (Teacher) যাওয়ার পথ আটকে দাঁড়ায়। রীতিমতো হাতেপায়ে পড়ে যায়।
আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরাও (Gurdians)। তাঁরাও চাইছেন সন্তানদের দাবি মেনে যাতে এই শিক্ষিকা স্কুলে থেকে যান। কিন্তু সরকারি নির্দেশ, যেতেই হবে কাকলিকে। প্রধান শিক্ষিকা সাবিরা ইয়াসমিন পুরো বিষয়টা জানার পর শিক্ষিকাকে যাতে বদলি না হয় তার জন্য অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক আধিকারিকের কাছে লিখিত জানিয়েছেন। দেখা যাক, ছাত্রছাত্রীদের কাতরে অনুরোধ মেনে শিক্ষিকার বদলি আটকে যায় কি না।
শিক্ষিকা কাকলি মণ্ডলেরও চোখ ছলছল। তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করা যায় না। সংশ্লিষ্ট দফতর যা চাইবে তাকেই আমাকে মান্যতা দিতে হবে। এমন ঘটনা রোজ রোজ ঘটে না। হয়তো এই শিক্ষিকার বদলি আটকানো যাবে না, এই এক বছরের জন্যই তাঁকে আজীবন মনে রাখবে তার ছাত্রছাত্রীরা।