মুম্বই : ছবি হোক,রাজনীতি বা নিজের ব্যক্তিগত জীবন।সবসময় সবকিছু নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতেই ভালবাসেন পরিচালক মহেশ ভাট(Mahesh Bhatt)।ছবি তৈরি করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি অনেক পরে, আটের দশকে।তবে সাতের দশকের বলিউডের অন্যতম চর্চার বিষয় ছিল মহেশের সঙ্গে পারভিন ববির(Parveen Babi) প্রেমের সম্পর্ক।তখন ছবি পরিচালনার জগতে এসেছিলেন মহেশ ভাট।তবে তাঁর পরিচয় ছিল বলিউড ডিভা পারভিন ববির প্রেমিক হিসেবেই।একের পর এক প্রেমের সম্পর্কে ধোকা খেয়ে তখন প্রায় পাগলের মতো অবস্থা পারভিনের।সিজ্রোফেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন নায়িকা। সেই কঠিন সময়ে মহেশের ভালবাসার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী পারভিন ববি।বাড়িতে স্ত্রী থাকা স্বত্বেও নায়িকার প্রেমে নিমজ্জিত হয়েছিলেন মহেশ ভাট।বেশ কিছুদিন একসঙ্গে ছিলেন তাঁরা।যদিও সেই সম্পর্ক ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন ‘আশিকি'(Aashiqui)-র পরিচালক।তবে কোনওদিনই পারভিনের কথা ভুলতে পারেননি মহেশ।
নিজের ছবিতে বারবার পারভিন ও তাঁর নিজের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন পরিচালক।বলা বাহুল্য পারভিনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের গল্পের ছায়াতেই ‘আর্থ'(Arth)-এর মতো ছবি তৈরি করেছিলেন মহেশ ভাট।ছবিতে স্মিতা পাটিলের(Smita Patil) চরিত্রটি যে পারভিনের আদলেই তৈরি করেছিলেন সেকথা কোনওদিনই লুকোননি তিনি।
কাকতালীয় ভাবে ‘আর্থ’-এর মাধ্যমেই কেরিয়ারে বড় ব্রেক থ্রু পেয়েছিলেন মহেশ ভাট।রাতারাতি প্রচারের আলোয় এসেছিল তাঁর ছবি।এর পরেও যখনই সুযোগ পেয়েছেন চেষ্টা করেছেন পারভিনকে নিয়ে তাঁর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।সেটা ছবি হোক,সিরিজ বা ইন্টারভিউতে।সম্প্রতি আরবাজ খানের সঙ্গে একটি ইন্টারভিউতে পারভিনের সঙ্গে প্রেম নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় মহেশ ভাট জানিয়েছেন,নিজের আহত জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই ‘আর্থ’ তৈরি করেছিলেন তিনি।ব্যর্থ বিয়ের পার্সোনাল ট্রমায় তাঁকে এমন একটি ভিন্নধর্মী ছবি তৈরি করতে ইন্ধন জুগিয়েছিল।
একসময় নানা পত্র পত্রিকায় চর্চা শুরু হয়েছিল ‘আর্থ’-এর কারণেই পারভিনের দ্বিতীয় প্রেমের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছিল।কিন্তু সেইকথা মুখ বুজে মেনে নিতে নারাজ মহেশ।তিনি জানাচ্ছেন,’আর্থ’ একটি আত্মজীবনী মূলক চলচ্চিত্র ছিল।তবে ছবির গল্পকে ফিকশনের আদলেই গড়ে তুলেছিলেন তিনি।মহেশ আরও জানিয়েছেন,পারভিন বাবির মানসিক অসুস্থতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে অভিনেত্রীকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তাররা।সেই সময় ‘শান'(Shaan) ছবির শ্যুটিং চলছিল।আর ছবির অন্যতম নায়িকার চরিত্রে ছিলেন পারভিন ববি।অসুস্থ প্রেমিকাকে প্রতিদিন শ্যুটিংয়ে নিয়ে যেতেন মহেশ ভাট।
পারভিনের অবস্থা দেখে পরিচালক তথা ছবির প্রযোজক রমেশ সিপ্পি(Ramesh Sippy) মহেশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ”কি হচ্ছে এটা?” পারভিনের মানসিক অসুস্থতা তখন একটা বড় রহস্যও ছিল সেই সময়।ডাক্তাররা বলেছিলেন পারভিনের সুস্থ হয়ে উঠতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগবে।কিন্তু ছবির শ্যুটিং চলছিল পুরোদমে।প্রযোজক বহু টাকা লগ্নি করেছিলেন, কোনওভাবেই পারভিনকে শ্যুটিং থেকে ছুটি দেওয়া সম্ভব ছিল না।তখন পারভিনকে কিডন্যাপ করে ব্যাঙ্গালোর পালিয়ে গিয়েছিলেন মহেশ ভাট।সাইনি আহুজা ও কঙ্গনা রানাওয়াত অভিনীত ‘উও লমহে'(Woh Lamhe) ছবিতে উঠে এসেছে মহেশ-পারভিনের জীবনের সেই পর্ব।এমনকি দুজনের প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক নিয়েও ছবিতে অকপট হয়েছেন চিত্রনাট্যকার মহেশ ভাট।
যদিও আটের দশকের শুরুতেই ভেঙে যায় পারভিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।মহেশ ভাট ও পারভিন বাবির প্রেমের অনেক গল্প উঠে এসেছে গতবছরের অন্যতম ওয়েব সিরিজ ‘রনজিশ হি সহি'(Ranjish Hi Sahi)-র চিত্রনাট্যেও।বলা বাহুল্য,সিরিজের চিত্রনাট্যটিও লিখেছিলেন মহেশ ভাটই।বিবাহিত হওয়া স্বত্বেও পারভিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন,সেই নিয়ে একটু হলেও মনের মধ্যে পাপবোধ ছিল।কারণ,যখন যশ চোপড়ার ‘সিলসিলা'(Silsila) ছবিটি দেখেন তখন মহেশের মনে হয়েছিল,টিউলিপের বাগানে কখনও পরকীয়া প্রেম হয় না।এটা এমনই একটা সম্পর্ক যা সকলকে বলা যায়না।সবসময় তাকে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখতে হয় নিজের ভালবাসাকে,অনুভূতিকে।পারভিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের এটি একটি মর্মান্তিক পর্যায় ছিল।কারণ,আলাদা হওয়ার পর আর একদা প্রেমিকার সঙ্গে কোনওদিন দেখা করেননি মহেশ ভাট।কারণ তার মনে হয়েছিল,সত্যিই যদি তিনি পারভিনকে ভালবাসেন তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
পারভিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর বোম্বাইয়ের ওরলির একটি হোটেলে সোনি রাজদানের(Soni Razdaan) সঙ্গে দেখা হয় মহেশ ভাটের।সেখানেই দুজনের দুজনকে ভাল লেগে যায়।তখন মহেশ সোনিকে যা বলেছিলেন তা পরবর্তীকালে ‘রাজ'(Raaz) ছবির চিত্রনাট্যেও লিখেছিলেন মহেশ ভাট।‘’আমার কাছে এসো না,কাছে এলে তুমি বরবাদ হয়ে যাবে’’ সেই সংলাপ যা ছবিতে শোনা গিয়েছিল ডিনো মোরিয়ের মুখে।
উত্তরে মালিনী শর্মা(ছবির চরিত্রটিরও নাম ছিল মালিনী) যা বলেছিলেন ওই একই কথা সোনির মুখে শুনেছিলেন মহেশ, ‘’আমি বরবাদই হতে চাই’’।সেই আলাপচারিতার পর ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে গিয়েছিলেন মহেশ ভাট ও সোনি রাজদান।রঙিন ব্যক্তিগত জীবনের এমনই সব পর্ব উঠে এসেছিল আরবাজ খান ও মহেশ ভাটের আড্ডায়।