Saturday, June 7, 2025
HomeCurrent News‘একটা গাছ কাটলেই আদিবাসীরা অপরাধী, উন্নয়ের নামে হাজার হাজার গাছ কাটলে প্রশংসা’

‘একটা গাছ কাটলেই আদিবাসীরা অপরাধী, উন্নয়ের নামে হাজার হাজার গাছ কাটলে প্রশংসা’

Follow Us :

নয়াদিল্লি: গত চার বছরে সরকার এক আইনি সংস্থার কাছে ৭০টি মামলা হেরেছে৷ প্রতিটি মামলা সরকারি প্রজেক্টের বিরুদ্ধে ছিল৷ ‘লাইফ’(লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রমেন্ট)নামের ওই আইনি সংস্থা কুড়ি বছর ধরে পরিবেশ রক্ষার্থে নির্ভীকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মানের পুরস্কার জিতেছে৷ যা নোবেলের বিকল্প বললেও ভুল হবে না৷

গত পাঁচ দশক ধরে, এই পুরস্কারটি ভারতের বেশ কয়েকজন পরিবেশ আন্দোলনকারীকে দেওয়া হয়েছে৷ যার মধ্যে রয়েছে, ১৯৭০-র চিপকো আন্দোলন৷ যা বর্তমানে উত্তরাখণ্ডে গাছ বাঁচিয়েছিল৷ ১৯৮০-র নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন৷ তামিলনাড়ু ভূমির অধিকারের জন্য কাজ করেছিল ল্যান্ড ফর টিলারস ফ্রিডম গ্রুপ৷ এইভাবে উপমহাদেশ জুড়ে পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে গভীর সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া।

‘লাইফ’ ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এই সংস্থার ২১ সদস্য বহুমুখী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন৷ আইনজীবী, পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং গবেষক৷ ভারতে পরিবেশগত মামলা-মোকদ্দমা এবং আইনগত সমস্যা নিয়ে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে ‘লাইফ’৷ভারতের পরিবেশগত হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করা, আদিবাসী উপজাতিদের সহায়তা এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পরিবেশগত গণতন্ত্রকে আরও গভীর করার জন্য ‘লাইফ’কে প্রশংসা করা হয়৷

আরও পড়ুন-সপ্তমীতে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নামবে মহমেডান স্পোর্টিং

‘লাইফে’র সহ প্রতিষ্ঠাতা হৃত্বিক দত্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, দু’দশক ধরে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা আমরা লড়ছি৷ আদিবাসী-উপজাতিদের বন-অরণ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলা কাজ করে বুঝেছি পরিবেশগত ন্যায়বিচারের পাওয়ায় অনেক বাধা আসে৷ সেই উপলব্ধি থেকে বলছি, আদিবাসী-উপজাতিরা একটা গাছ কাটলে তাঁরা অপরাধী বলে চিহ্নিত হয়৷ অথচ, উন্নয়নের নামে হাজার হাজার গাছ কাটা হলেও কেউ কিচ্ছুটি বলে না৷ বরং, প্রশংসা করা হয়৷

জঙ্গলের মধ্যে বসে আছেন আদিবাসী মহিলা৷ ছবি সংগৃহীত৷

উনিশ শতকে শিল্পবিপ্লব ও নগরায়ণকে কেন্দ্র করেই গাছ কেটে গড়ে উঠল বসতি।  তখন থেকেই প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে কোথাও যেন এক দুস্তর ব্যবধান রচিত হয়ে গেল। প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে থাকা সম্পদের ব্যবহার করতে গিয়ে একে একে বিপন্ন হতে থাকল আমাদের জঙ্গল, পশুপাখি, জঙ্গলের উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সভ্যতা— এক কথায় সব কিছুই। কিন্তু প্রাচীন ভারতের সেই তপোবনের ঐতিহ্যকে আজও মনে রেখেছেন কিছু মানুষ। তাঁদের চোখে তাই উন্নয়ন, পরিবেশের প্রতিস্পর্ধী নয় বরং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন এক ব্যবস্থা যা মানব সমাজের সঙ্গে গোটা প্রাণীকূলকে বিকাশের পথ দেখাবে। তাই আলোচনায় বারবার ফিরে আসে ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বা স্থিতিশীল ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কথা । প্রকৃতির উপরে যত বার মানুষের তৈরি করা আঘাত এসেছে তত বারই তার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। নিজেদের এগিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘‘আমাকে আঘাত কর কিন্তু প্রকৃতিকে নয়।’’ আজও সেই আন্দোলনের স্রোত অব্যাহত।  এই প্রতিবাদ-আন্দোলনের তালিকায় অন্যতম ছত্তীসগড়ের হাসদেও অরণ্য বাঁচাও আন্দোলন ৷

আরও পড়ুন-মমতা দিদির হাত ধরেই গোয়ায় পরিবর্তন আসবে, তৃণমূলকে সমর্থন নির্দল বিধায়কের

মধ্য ভারতের ১,৭০,০০০ হেক্টর জুড়ে থাকা হাসদেও আরান্ড অরণ্যাঞ্চলে জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রাখার জন্য সুপরিচিত।  উত্তর ছত্তীসগড়ের কোরবা, সারগুজা ও সুরজপুর জেলার মধ্যে এই অরণ্যাঞ্চল বিস্তৃত রয়েছে।  এই অরণ্যাঞ্চলেই নজর পড়েছিল শাসকের। কয়লা উত্তোলনের অজুহাতে জঙ্গলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কার্যত ‘বেচে’ দেয় সরকার।  চিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার নিরিখে আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন।  আর এই লক্ষ্যেই ৪০ টি নতুন কয়লা খনি তৈরিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আসলে, আত্মনির্ভর ভারত স্লোগানের মধ্যে দিয়ে আসলে আদিবাসী উচ্ছেদ করে, নির্বিচার সবুজ নিধনের মাধ্যমে ভূপ্রাকৃতিকভাবে ভারতের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অরণ্যভূমিকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে মোদি সরকার।

প্রতিবাদ আদিবাসীদের৷

মোদির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পড়েছে ছত্তিসগড়ের হাসদেও আরান্ড বনাঞ্চলের প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার একর জমিতে ৪ টি কোল ব্লক। প্রায় ৫ বিলিয়ন টন কয়লা ভাণ্ডারের উপর বসে থাকা হাসদেও আরান্ড জঙ্গলে খনি তৈরি করতে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রও পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী।  এই পদক্ষেপ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ।  ভারতের কয়লা খনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হলেও এই ৪০ টি কয়লা খনির নিলাম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে খনির বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যকরণের একটি ধাপ তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।  ২০১১ সালে ২ অক্টোবর ঘাটবারা গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামসভা করে কয়লার জন্য বন খননের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করেছিলেন। ১০ বছর বাদে ২ অক্টোবর কয়েকশো গ্রামবাসী আন্দোলনে নামলেন তাঁদের দাবি পূরণের জন্য। ওপেন কাস্ট কোল মাইনিং থেকে জঙ্গলকে বাঁচানোর দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। হাসদেও বাস্তুতন্ত্রটিতে প্রচুর পরিমাণ কয়লা সঞ্চিত রয়েছে। কয়লা মন্ত্রকের ম্যাপ অনুযায়ী, হাসদেও আরান্ড কোলফিল্ডে ১৮৭৮ বর্গ কিমি জুড়ে এক বিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে, যা বনভূমি নিয়ে গঠিত।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের উপর জোর দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই লক্ষ্যেই ২০২০-তে ৪০টি নতুন কয়লা খনি তৈরিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। এই কয়লাখনিগুলির সিংহভাগ হাসদেও আরান্ড অরণ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এই এলাকায় কৃষি-নির্ভর একাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস।  সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে পারার পর থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

হাসদেওয়ের ১৮টি কয়লা খনি বা ব্লক বিভিন্ন কোম্পানিগুলিকে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশনকে চারটি ব্লক বরাদ্দ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরা প্রত্যেকেই ভারতের অন্যতম শক্তিশালী কর্পোরেশন। আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (এইল)-কে এশিয়ার দ্বিতীয় ধনী ব্যবসায়ী গৌতম আদানির নেতৃত্বে ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে।

এইএল হাসদেওতে আনুমানিক ৯৬৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলনের চুক্তি করে। এটি পেতে কমপক্ষে ৭৫০০ হেক্টর জমি এবং বন প্রয়োজন। এই জমি ও বনের উপর স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। যা নিয়েই বিতর্ক দানা বেধেছে। এইএল কাজ শুরু করার পর থেকেই আদিবাসীরা জোটবদ্ধ হয়েছে। দশকব্যাপী চলা এই আন্দোলন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত।

লং মার্চ এগিয়ে চলেছে রায়পুরের দিকে

চলতি বছরের ২ অক্টোবর ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দারা সমবেত হয়ে ‘বন সত্যাগ্রহ’ শুরু করেন। ৪ তারিখ তাঁরা ছত্তীসগড়ের রাজধানী রায়পুরের উদ্দেশে ৩০০ কিলোমিটার ব্যাপি ‘লং মার্চ’ শুরু করে। ১৩ তারিখ সেই মিছিল রায়পুর পৌঁছয়। ২০১১ সাল থেকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পরিবেশকর্মী অলক শুক্লা।  রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করেন তাঁরা।

কংগ্রেসের তরফে অনেক আগেই গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে রাহুল গান্ধি হাসদেওতে আসেন।  গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দেন।  কিন্তু ২০১৯ সালে কংগ্রেস ছত্তীসগড়ে ক্ষমতায় আসলেও এই বিষয়টি নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি তারা। এমনটাই অভিযোগ অলক শুক্লার।

গ্রামসভায় সমবেত হয়েছেন গ্রামবাসীরা

বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা উত্তোলনের ছাড়পত্র দিচ্ছে মোদি সরকার, তার বেশির ভাগ জুড়ে রয়েছে আদিম অরণ্য।  যা দশকের পর দশক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ধরে রেখেছে ।  সেই আদিম অরণ্যগুলি আজ বুলডোজারের দানবীয় শব্দে কাঁপছে।  হাসদেও আরান্ড বনভূমি অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরফে এই কয়লাখনির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হয়েছে ।

এই কয়লাখনির কাজ হলে অন্তত পাঁচটি গ্রামের ৬ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্র‍য় হারাবেন।  তাছাড়া কয়েক হাজার হেক্টর জমিজুড়ে পুরনো গাছগাছালি ধ্বংস করে দিতে হবে খনির জন্য।  ইতিমধ্যেই কয়লাখনির জন্য কাটা পড়েছে প্রচুর প্রাচীন গাছ।  যদি কয়লাখনি আরও সম্প্রসারণ করা হয় তাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য সমূহ বিপদের মুখে পড়বে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Tejashwi Yadav | বিহার চালাচ্ছেন ক্লান্ত মুখ্যমন্ত্রী আর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা, বিস্ফোরক তেজস্বী যাদব
01:33:25
Video thumbnail
Narendra Modi | প্রধানমন্ত্রীর মুখে আদিল শাহর নাম, কী বললেন?
01:03:25
Video thumbnail
Narendra Modi | কাশ্মীরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিরাট মন্তব্য মোদির
55:06
Video thumbnail
Vijay Mallya | 'অরুণ জেটলিকে বলেছিলাম লন্ডন যাচ্ছি', পডকাস্টে বি/স্ফো/রক দাবি বিজয় মালিয়ার
01:31:21
Video thumbnail
M.Chinnaswamy | CID | চিন্নাস্বামী কাণ্ডে তদন্ত করবে CID
43:31
Video thumbnail
Narendra Modi | বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতুর উদ্বোধনে নরেন্দ্র মোদি, দেখুন Live
01:40:06
Video thumbnail
Repo Rate | মধ‍্যবিত্তের জন‍্য দারুন সুখবর, স্বস্তির খবর জানতে দেখুন এই ভিডিও
02:58:41
Video thumbnail
Vijay Mallya | ‘পলাতক’ কিন্তু ‘চোর’ নই, ভারতে ফেরার শর্ত দিলেন বিজয় মালিয়া
02:29:16
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
48:30
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি, কী সিদ্ধান্ত নেবেন মাস্ক? দেখুন বড় খবর
01:20:16