Wednesday, June 18, 2025
Homeফিচারখেলা হবে' : বাংলা খেলবে গোয়ায়, তবে ফুটবল নয়...

খেলা হবে’ : বাংলা খেলবে গোয়ায়, তবে ফুটবল নয়…

Follow Us :

বাংলা বনাম গোয়া। মাডগাঁও কিংবা যুবভারতীর দর্শক ভরাট স্টেডিয়ামের কথা ফুটে ওঠে মনের কোণে।  আরব সাগরপাড়ের ছোট্ট ভূখণ্ড গোয়া। আর বঙ্গপোসাগর থেকে হিমালয় সংলগ্ন বিস্তৃত পশ্চিমবঙ্গ। ঐতিহাসিক বিচারে অমিল অনেক। থাকারই কথা। আড়াইশো বছরের ইংরেজ আধিপত্য ও তার মুক্তি জড়ানো ইতিহাসের উত্তরাধিকার বাংলার। গোয়া ছিল প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পর্তুগিজ উপনিবেশ।

বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। ১৯৬১ সালে সামরিক হস্তক্ষেপে ভারতভুক্ত হয় গোয়া। গোয়ার মানুষ১৯ ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস পালন করে। স্বাধীনতা দিবস থেকে ঔপেনিবেশিকতার চরিত্রগত ফারাক আছে। অমিল আছে সাংস্কৃতিক, সামাজিক জীবন যাপনের নানা ক্ষেত্রে। কিন্তু প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটারের ব্যবধানের দুই ভূখন্ড পশ্চিমবঙ্গ ও গোয়ার অভিন্ন অনুরাগের নাম ‘ফুটবল’। সমুদ্র প্রেমীদের পর্যটনের অন্যতম ঠিকানা আর ফুটবল-এই দিয়েই আম বাঙালির কাছে জনপ্রিয় গোয়া। এবার ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই অঙ্গরাজ্য মিলতে চলেছে পরিষদীয় রাজনীতির পরিসরে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় তাঁর দলের সরকার গড়ার ডাক দিয়েছেন। সে রাজ্যে ‘নতুন ভোর’ আনার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

আগামী ২৮ অক্টোবর মমতা দুদিনের সফরে গোয়া যাচ্ছেন । সেকথা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা যেমুহূর্তে এই ঘোষণা করেছেন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে ঘটনাচক্রে সেই একই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল মাধ্যমে গোয়াবাসীর সামনে হাজির হয়েছিলেন। উপলক্ষ্য, ‘আত্মনির্ভর ভারত স্বয়ংপূর্ণ গোয়া ‘ প্রকল্প।  কেন্দ্র ও রাজ্যের উন্নয়নের সব রকমের সুযোগ সুবিধা নিতে পারলেই গোয়া ‘স্বয়ংপূর্ণ’ হতে পারবে। মোদি যখন এই বার্তা দিচ্ছেন, প্রায় একই সময় মমতার সাফ কথা গত দশ বছরে (বিজেপি শাসনে) ‘গোয়ার মানুষ অনেক ভুগেছেন’। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। সেকথা মাথায় রেখে মমতা প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘আমরা মানুষের সরকার গড়ব। গোয়ার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে সেই সরকার’।

আরও পড়ুন – ১০০ কোটি ভ্যাকসিন নিয়ে মাতামাতি, জাতির উদ্দেশে ভাষণে অনেক কিছুই এড়ালেন মোদি

বাংলার বাইরে সরকার গড়া নিয়ে আগে ত্রিপুরার প্রসঙ্গ শোনা গেলেও এমন স্পষ্ট ভাষায় দূরবর্তী কোনো রাজ্যে সরাসরি ক্ষমতা দখলের ডাক এই প্রথম দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপির অশ্বমেধের রথ বাংলায় রুখে দিয়ে তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর থেকেই গোটা দেশের নজর তাঁর উপর। সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির বিকল্প মুখ হিসেবে মমতার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা সেই শুরু। তাঁকে ঘিরে কৌতূহল বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই গোয়া সম্পর্কে মোদির ভিডিও কনফারেন্সের পিঠোপিঠি মমতার পরিবর্তনের ডাক জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

মোদির ওই কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত। তবুও তাঁর এই কর্মসূচীর রাজনৈতিক অভিমুখ নিজেই স্থির করে দিয়েছেন তাঁর ভাষণে। সরকারি অনুষ্ঠানে উল্লেখ না করলেও গোয়ার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই যে প্রধানমন্ত্রীর ওই ভিডিও কনফারেন্স,তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মমতা এক অর্থে বিরোধী নেত্রী। তাই তিনি কোনো রাখঢাক না রেখেই গোয়ায় ক্ষমতা দখলের আবেদন করেছেন। মোদি বুঝিয়েছেন, কেন্দ্রে ও রাজ্যে এক দলের সরকার থাকা কেন জরুরি। যেন দুই প্রতিপক্ষের সওয়াল-জবাব।

তার অবশ্য একটা ভিত্তি গত কয়েক মাসে তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বিধানসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়েও কংগ্রেস ভাঙিয়ে কার্যত পিছনের দরজা দিয়ে শাসকের আসনে বসেছিল বিজেপি। তা সত্বেও প্রায় বছর পাঁচেক ধরে দলীয় কোন্দলে ধস্ত গেরুয়া শিবির। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও ছন্নছাড়া। বিরোধী নেতৃত্বের শূন্যতা ভরাট করতে তৃণমূলের তৎপরতায় আশাতীত সাড়া পড়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো (সাত বারের বিধায়ক) যোগ দিয়েছেন মমতার দলে। বাংলার বাইরে কোনো রাজ্যের এত বড় মাপের অভিজ্ঞ নেতা তৃণমূলে নাম লেখাননি। তারপর থেকেই কংগ্রেস তো বটেই বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক দল বদলের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গোয়ার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সামাজিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর জেরে রাতারাতি রাজধানী শহর পানজিমে মমতাকে ঘিরে চর্চার পারদ চড়তে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন – ঘৃণার রাজনীতি: মোকাবিলার শিক্ষা দিল ওপার বাংলা

মমতার আশু লক্ষ্য গোয়া বিজয়ে সচেষ্ট হওয়া। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকেই নিশানা করে এগোতে চাইছেন তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিজেপির অস্বস্তির মাত্রাও বেড়ে চলেছে। অবস্থা বেগতিক, তাই ঝুঁকি নেননি মোদি। গোয়াকে ‘ডবল ইঞ্জিন’এর সুযোগ নেওয়ার হাতছানি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও ভাষণে। মমতা গোয়াবাসীকে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখিয়ে পালা বদলের ডাক দিয়েছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘আম আদমি পার্টি ‘ (আপ)আগেই নেমে পড়েছিল। যদিও তৃণমূল একাই লড়বে বিধানসভা ভোটে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে গোয়ায় সংগঠন বিস্তার শুরু করলেও সুবিধা করে উঠতে পারেনি আপ। মমতা চাইছেন বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মেরুকরণ। সে কাজ এগিয়ে নিতে আগামী শুক্রবার নিজেই গোয়া যাত্রা করছেন তৃণমূল নেত্রী। মোদির ব্যক্তিগত ক্যারিশমা কে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি। গত মে মাসে বাংলা বিজয় তাঁকে বাড়তি বল জুগিয়েছে নিশ্চিত।

তাই ফুটবল আঙিনার উত্তেজনা এবার গোয়ার পরিষদীয় রাজনীতির ময়দানে। আপাতত গোয়া বনাম বাংলা নয়। মান্ডবি নদীর দুই তীরে,মোট চল্লিশ বিধানসভা আসনের লড়াই। বাঙালি তাকিয়ে থাকবে গোয়ার দিকে। ফুটবল বা সমুদ্র উপকূলবর্তী পর্যটন নয়। গোয়াকে ঘিরে বাঙালির নবতম কৌতূহল উস্কে দিয়েছেন কালীঘাট কন্যা। ক্ষেত্র প্রস্তুত। এবার গোয়ায় ‘খেলা হবে’-মোদি বনাম মমতায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | পয়লা অগাস্ট থেকে বাংলায় ফের চালু ১০০ দিনের কাজ
00:00
Video thumbnail
Vladimir Putin | Donald Trump | এবার ইরানকে খোলাখুলি সমর্থন পুতিনের, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
00:00
Video thumbnail
Benjamin Netanyahu | এবার টুকরো হবে, ইজরায়েলকে আকাশেই চরম জবাব ইরানের, কোথায় পালাবেন নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
Vladimir Putin | Donald Trump | এবার ইরানকে খোলাখুলি সমর্থন পুতিনের, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
07:21:35
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | পয়লা অগাস্ট থেকে বাংলায় ফের চালু ১০০ দিনের কাজ
41:03
Video thumbnail
Narendra Modi | পাক ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষ নয়, হোয়াইট হাউসকে বার্তা মোদির
10:52
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বাংলা কী করবে? সব ঠিক করে দেবে বিজেপি?
01:20
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ভারতে কি গণতন্ত্র রয়েছে? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
02:05
Video thumbnail
Mamata Banerjee | দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদি না শাহ? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
00:55
Video thumbnail
Mamata Banerjee | আসামে কী হচ্ছে? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
02:39