Sunday, June 29, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: এতটুকু বাসা নিয়ে কী ঠাট্টা, কী তামাশা

চতুর্থ স্তম্ভ: এতটুকু বাসা নিয়ে কী ঠাট্টা, কী তামাশা

Follow Us :

আজ ঘরের কথা বলব, এতটুকু বাসার কথা। বৃষ্টির জল পড়ে না এমন ছাদ, এক কোণে একটা আধুনিক শৌচালয়, রান্নার জায়গা আর ১০ ফুট বাই দশ ফুট। এ স্বপ্নে যোগ হয় একটা বেড়া, বেড়ার গা ঘেঁসে লকলকিয়ে ওঠা পুঁই ডাঁটা, কিংবা লাউ এর গাছ, দুটো গাঁদা ফুলের চারা। কদিন পরেই আশ্চর্য নরম হলুদ ফুল হবে, কটা লঙ্কা গাছ, ঝাল লঙ্কা হলে তো কেবল ভাত হলেই হয়। স্বপ্ন বাড়ে, স্বপ্ন ভাঙে। আচ্ছা, আজ হঠাৎ ঘরের কথা কেন? আর কদিন পরেই ৩ অক্টোবর বিশ্ব বাসস্থান দিবস, ওয়ার্ল্ড হ্যাবিট্যাট ডে। তখন আমরা মশগুল দুগগা ঠাকুর নিয়ে, মন্ডপ সাজানো নিয়ে, তাই মনে হলো এই ফাঁকে দুটো কথা বলাই যাক না বাসস্থান নিয়ে। আপনি যখন আপনার এতটুক বাসার স্বপ্নে মগ্ন, মাথার ওপর ছাদ তো হয়েই গিয়েছে, এবার জানলার পাশে মানিপ্ল্যান্ট গাছটার কথা ভাবছেন, ঠিক তখনই সারা বিশ্বে ১৬০ কোটি মানুষের মাথায় ছাদ নেই, তাদের বাড়ি নেই, দিনান্তে তার সন্তান, বৌকে নিয়ে মাথা গোঁজার বাসস্থান নেই। বৃষ্টি পড়লে দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে কোনও বাড়ির কার্নিসের তলায় মাথা গুঁজে রাত কাটানো, শীত পড়লে কাঠ কুটো জ্বলে গা গরম করা বা ঠান্ডায় জমে মরে পড়ে থাকা। গরমের দুপুরে গাছের তলা না হলে কোথাও কোনও একটা খাঁজে, যেখানে একটু ছাওয়া আছে, সেখানেই তারা থাকেন, ১৬০ কোটি মানুষ।

আমাদের দেশে? ১৮ লক্ষ এমন মানুষ আছে যাদের ঘর বলতে কিছুই নেই, আর ১৭ কোটি মানুষ ঘর বলতে যা বোঝান তা হল প্লাস্টিক, ছেঁড়া ত্রিপল, কাঠকুটো, জোগাড় করা ভাঙা অ্যাসবেসটাস দিয়ে তৈরি জুগগি ঝোপড়ি। এখানেই হিসেব শেষ? এই জুগগি ঝোপড়ি বা তার চেয়ে কিছু ভাল বস্তিতে থাকা মানুষজনের মাথায় ঝুলতে থাকে ডেমোক্লিসের খড়গ, কেবল ২০১৮ র হিসেব বলছে সারা বছরে ২৯ লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, কখনও রাস্তা হবে বলে, কখনও এয়ারপোর্ট হবে, কখনও মাটির নিচ থেকে তোলা হবে দামী ধাতু। মানে বিকাশ এবং উন্নয়ন যজ্ঞের বলি হয়েছেন ২০১৮ তে ২৯ লক্ষ মানুষ। ২০১৭ তে সকারি হিসেবে ৫৩৭০০ টা বাড়ি, জুগগি ঝোপড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ ভাত দেবার মুরোদ নেই কিল মারার দোসর রা হাজির। দেশের নির্বাচিত সরকার, তাদের পাশাপাশি বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো, বিচার ব্যবস্থা মানুষের মাথায় ছাদের জোগান দিতে না পারলে কি হবে মাটিতে গুঁড়িয়ে দেয় মানুষের মাথার ওপর সামান্য ভাঙা ছাদ। অথচ সেই ৪৭ সাল থেকে কত প্রকল্প, কত লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা, সব রাজত্বে, সব জমানায় গৃহহীনদের আবাসন এক পপুলার স্লোগান। সেই সাতচল্লিশের তামাশা, রোটি কাপড়া আউর মকান, মাঙ্গ রহা হ্যায় হিন্দুস্তান, সে তামাশা আজও বরকরার, বিচারপতি নয় তো যেন সাক্ষাৎ যুধিষ্টির, মুখে বুলির কমতি নেই, তেনার চোখে পড়ে না ফুটপাথে শুয়ে থাকা শিশু? নাকি ওসব কথা বলে বাজার গরম করা যাবে না? আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজও ক্লান্তিহীন ভাবেই বলে চলেছেন, মিত্রোঁ সবকা মকান এরা সপনা হ্যায়, আরে বাওয়া সে তো ওই গৃহহীনদেরও স্বপ্ন, বাস্তব করার কথা বলুন? না সে জায়গায় রামলালা কা ভব্য মন্দির বনেগা, ওদিকে কবি বলছেন “ভুখে পেট ভজন নহিঁ হোয় গোপালা, লে তেরি কন্ঠি, লে তেরি মালা” সেসব কথা কে শোনে? উলটে বাড়ি ভাঙাই হয়ে গেল এক জাতীয় ইভেন্ট, হুড়মুড় করে বাড়ি ভেঙে পড়ল, মানুষ হাততালি দিল, কতবড় মস্করা সেই মানুষটার কাছে যার মাথায় ছাদ নেই। প্রধানমন্ত্রী ক বছর আগে বলেছিলেন ২০২১ এ সবার মাথার ওপর ছাদ হবে, সেই বাড়িতে জল থাকবে, বিদ্যুৎ থাকবে, শৌচালয় থাকবে।বলেছিলেন আজাদি কা অমৃত উৎসব মানে ২০২১ এই এসব হবে। এখন বলছেন ২০৪৫ এ হবে, ৪৫ এলে তো উনি বলবেন না, অন্য কেউ বলবে ৫৫ তে হবে, এমনিভাবেই এগিয়ে যাবে খুড়োর কল, মাথার ওপরে ছাদ, এতটুকু বাসার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। 

এবার চলুন একটু উল্টোদিকের ছবিটাও দেখে নেওয়া যাক। ওই একই দেশে যেখানে ১৮/১৯ কোটি মানুষের বাড়ি হল বিশুদ্ধ ঠাট্টা, সেই দেশেই এক পরিবার থাকেন মুম্বাই এর এক বাড়িতে, যার নাম অ্যান্টিলা, মুম্বাই এর পেডার রোডের এই বাড়ি তৈরির খরচ ১৫ হাজার কোটি টাকা, বাড়ীর মধ্যেই হেলিপ্যাড, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল আছে, ১৬৮ টা গাড়ির গ্যারাজ আছে, ৫০ জন বসে দেখার মত একটা সিনেমা হল আছে, অসংখ্য ঘর আছে, একটা ঘরে সারা বছর বরফ পড়ে, গোটা ১০ এক কুকুর আছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা পটিখানা আছে। ১৫ হাজার কোটি টাকার বাড়ি।

এরপর এই তালিকায় আছেন সাইরাস পুনাওয়ালা, ওই যে আপনি ভ্যাক্সিন নেন, সে সরকারি হোক আর বেসরকারি, এনার পকেটে কিছু টাকা যাবেই, ভ্যাক্সিন সাম্রাজ্যের অধীশ্বর এনার বাড়ির নাম ওয়াঙ্কানের হাউস। বাড়ির দাম? ৭৫০ কোটি টাকা। মুম্বাই এর ব্রিচ ক্যান্ডি এলাকার এই বাড়ি আগে আমেরিকার দূতাবাস ছিল, সাইরাস পুনাওয়ালা তাদের কাছ থেকেই এই বাড়ি কিনে নিজের মত করে তৈরি করেছেন।

বান্ড্রা ওরলি সি লিঙ্ক এর পাশের ইশা আমানি, আনন্দ পিরামলের বাড়ি, ২০১২ তে ৪৫২ কোটি টাকায় কেনা, বাড়ি বেডরুমের বিছানা থেকে আরব সাগর দেখা যায়। ২০১৫ তে কুমার মঙ্গলম বিড়লা ৪২৫ কোটি টাকা দিয়ে জাটিয়া ভাই দের থেকে জাটিয়া হাউস কিনে নেন, বাড়ির মধ্যেই জলাশয়, তার ওপরে সিনেমার দৃশ্যের মত সেতু, আপাতত এই বাড়ির দাম ৮০০ কোটির কাছাকাছি।

সমুদ্রের ধারেই আছে মন্নত, শাহরুখ খানের বাড়ি, ভ্যালুয়েশন বছর তিনেক আগে ছিল ২০০ কোটি টাকা। লোকজন ভিড় জমায়, শাহরুখ খান বেরিয়ে এসে হাত নাড়ান, জনগণের কেউ নিশ্চই ডায়ালগ বলেন হারকর জিতনেওয়ালে কো বাজিগর কহতেঁ হ্যাঁয়। 

আরও এমন অনেক আছে, ২০০/২৫০/৩০০/৪০০ কোটি টাকার বাড়ি, এরা হল দেশের ১ % মানুষ, এনাদের কুকুরদেরও আলাদা ঘর আছে, দেশের ১৯ কোটি মানুষের ঘরের সঙ্গে সেই কুকুরের ঘরেরও তুলনা করা যাবে না, আবার সেই ঝুপড়ির মানুষেরাও ভয়ে ভয়ে থাকেন কোনদিন এসে হাজির হবে বুলডোজার, বুলডোজার এখন তো রাজনৈতিক পৌরুষ দেখানোর অস্ত্র। যে কয়েকটা ছেঁড়া ফাটা জামা কাপড় আছে, কড়া, খুন্তি আর মাদুর কাঁধে নিয়ে আবার অনির্দিষ্টের পথে যাত্রা, অন্য কোথা অন্য কোনওখানে। সেখানে জনসভায় ভাষণ দেবেন কোনও এক নেতা, আবার মন ভোলানো বাড়ির স্বপ্ন, সেই ভবঘুরেও একটা ঠাঁই চায়, সে আবার চায় বিশ্বাস করতে, অন্তত আরেকবারের জন্য, খাবার না থাক, চাকরি না থাক, উপার্জন না থাক, মাথার ওপর ছাদ নাই বা থাক, একটা ভোট তো আছে, গণতন্ত্রের সেই অস্ত্র নিয়ে জগন্নাথ মুচকি হাসে, সেই জগন্নাথ যে বলেছিল, পারবে, পারবে নন্দ? অন্য লোকের ছেলের বাপ হতে? এবার তার মনে হয় এবার তারও একটা ঘর হবে। 

এই আবহেই প্রায় এসে গেল প্রেম দিবস, ভালোবাসা দিবস, গোলাপ দিবস, চুমু দিবসের সঙ্গেই বিশ্ব বাসস্থান দিবস, এল যখন চলেও যাবে নিশ্চই, প্রেম, চুমু আর গোলাপ নিয়ে যেটুকু হইচই হয়, সেটুকু হইচই ও এই বাসস্থান দিবস নিয়ে হবে না, গৃহহীন সেই ১৮/১৯ কোটি মানুষ টিআরপি বাড়ায় না, তাদের জন্য কোনও প্রডাক্ট বিজ্ঞাপণও বানায় না, অতএব তারা ফালতু। তারচেয়ে আসুন আমরা চিতা দেখি, চিতা আর লোপার্ডের মুখ কতটা আলাদা সেটা বোঝার চেষ্টা করি, রাহুল গান্ধীর টি শার্টের দাম, নরেন্দ্র মোদীর গগলস কিম্বা মঁ ব্লা পেনের দাম নিয়ে চুটকি পোস্ট করি ফেসবুকে, শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা গান বাজুক, রিমঝিম বৃষ্টিতে খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজার ব্যবস্থা হোক, ঠিক ওই সময়ে ওই বিশ্ব বাসস্থান দিবসে ভিজছে করিমুল, তার বৌ এর কোলে আয়েসা, তিন বছরের কন্যা, ওদিকে আরেকটু গেলেই পরান আর তার বৌ ললিতা একটা বড় প্ল্যাস্টিক ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে, কাল বাবুদের ঘরে সেঁকা মুরগির টেস্ট কেমন ছিল আই নিয়েই কথা হচ্ছে, প্লাস্টিকের তলায় তাদের দুই সন্তান অকাতরে ঘুমোচ্ছে, সে সন্তানেরা জানেই না তাদের মা আর বাবা কাকভেজা হয়ে বৃষ্টিকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে, যেমন জানে না তাদের মাতৃভূমী স্বাধীনতার অমৃত কালে প্রবেশ করেছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Madan Mitra | TMC | বিগ ব্রেকিং, কসবা কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্য, মদন মিত্রকে শোকজ তৃণমূলের
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা ল কলেজে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জাতীয় মহিলা কমিশন, দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Madan Mitra | TMC | বিগ ব্রেকিং, কসবা কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্য, মদন মিত্রকে শোকজ তৃণমূলের
09:41
Video thumbnail
Iran-Israel | America | ইরানকে কী কী কারণে ভ/য় পাচ্ছে আমেরিকা-ইজরায়েল?
06:02:55
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | মোদির বিদেশ সফরের নির্যাস কী? কী ফল পেল দেশবাসী?
03:20:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা ল কলেজে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জাতীয় মহিলা কমিশন, দেখুন ভিডিও
06:44
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | Anik Chatterjee | ভারতের বিদেশনীতিতে নেহেরুর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন
02:05
Video thumbnail
Narendra Modi | Shubhanshu Shukla | মহাকাশ থেকে শুভাংশুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কী কথা হল? দেখুন LIVE
02:15:21
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | Jayanta Ghosal | ভারতের দালাইলামার আসা বিদেশ নীতিতে কী পরিবর্তন করেছে?
01:40
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | Rajagopal Dhar Chakraborty | বিদেশনীতির ক্ষেত্রে রোমান্টিসিজম কতটা এফেক্টিভ?
01:37

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39