Thursday, July 3, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: আবার স্বপ্নে দেখা ডকুমেন্টারি এবং তার বর্ণনা, পর্ব ২

Fourth Pillar: আবার স্বপ্নে দেখা ডকুমেন্টারি এবং তার বর্ণনা, পর্ব ২

Follow Us :

হলফ করে বলছি হুজুর, জানুয়ারির ১৫ তারিখের পরে আমি ফুলকপি খাই না। খাই না কারণ সেই সময় ধাপার কপি বাজারে আসে আর তাতে নাকি জিঙ্ক মার্কারি কী সব থাকে, কিন্তু সেসব না খেয়েও আমি আবার স্বপ্ন দেখেছি। কী আর বলব চৌকিদার সাব, এদেশের মানুষ ভরা পেটে, আধপেটা বা খালিপেটেও স্বপ্ন দেখে, এই আকালেও স্বপ্ন দেখার সাহস তাদের আছে। আমি তেমন সাহসী নই, আপনাকেই জীবনের ধ্রুবতারা বলেই চলিয়াছি, সাহসের আর দরকার কীসের, তবুও স্বপ্ন দেখে ফেললাম, মানে ফট করে স্বপ্নটা এসে গেল। প্রায় যেরকম স্যাট করে ওই বিবিসি ডকুমেন্টারির লিঙ্কটা পাওয়া যাচ্ছে, সেরকম স্পিডেই কোনও বাফারিং ছাড়া ওই রকমই একটা ডকুমেন্টারি দেখে ফেললাম, লেখা ছিল দ্বিতীয় পর্ব। অত্যন্ত বাজে খাস্তা, নতুন কিচ্ছু নেই, কিচ্ছুটি নেই, সেই আপনার মুসলিম ঘৃণা, দেশের মুসলিমদের একঘরে করার জন্য সিটিজেনশিপ বিল আনা, তার বিরুদ্ধে দেশজোড়া বিক্ষোভ, উফফফ সে কী বিক্ষোভের ছবি স্যর, দেখলেই আপনার চা খেতে ইচ্ছে করবে। চেন্নাই থেকে এমনকী আমেদাবাদ, কলকাতা, দিল্লি এসব তো আছেই আর ক্ষণেই ক্ষণেই স্বপন দাশগুপ্ত, ঠিক একলা নয়, সঙ্গে আরও কয়েকজন বিজেপি, বিদ্যার্থী পরিষদ এসব আছে, কিন্তু স্বপন দাশগুপ্ত, সাত জার্মান জগাই একা তবুও জগাই লড়ে, নুনের দাম চোকানো যাকে বলে। যদিও আপনার কাছ থেকে কিচ্ছুটি শেখেনি, কারও প্রশ্নের জবাব দিতে নেই, বেশি প্রশ্ন করলে ক্যামেরা থামিয়ে জল খেয়ে উঠে যেতে হয়, খামোকা ওই সব দুষ্টু সাংবাদিকদের সামনে পড়ে সে কী হ্যাপা।  

কিন্তু আবার বলছি নতুন কিচ্ছুটি নেই। এরপরেই সেই দিল্লি রায়ট আর সেই দেশদ্রোহী মহিলা যিনি সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, সফুরা জারগর, জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রী। আপনি থুড়ি আপনার পুলিশ যাকে ওই দিল্লি দাঙ্গা লাগানোর মূল চক্রী বলেছিল, মানে ভাবা যায়, পেটে বাচ্চা, প্রথম সন্তান হবে অথচ রাস্তায় নেমে আপনার বিরোধিতা, আর কে না জানে, আপনার বিরোধিতা মানেই তো দেশের বিরোধিতা, দেশদ্রোহ। সেই তাকে নিয়ে এসে সে কী সব সাঙ্ঘাতিক অভিযোগ, তারপর দিল্লির সেই শাহিনবাগের ছবি, শাহিনবাগের দাদি লড়ে যাচ্ছেন। মাইরি বলছি স্যর, সেই সময়ে না, আমিও চমকে বোমকে গিয়েছিলাম। মানে দেশজোড়া আন্দোলন চলছে, কাগজ নহি দিখায়েঙ্গে, রাস্তায় সংবিধান হাতে মানুষ, তার ওপর আপনার ছোটা মোটা ভাই রোজ ধ্যাড়াচ্ছেন, একবার বলছেন এনআরসি হবে, একবার বলছে নহি হোগা, কী কাণ্ড। ভাগ্যিস সময়মতো করোনা হাজির হল, না হলে পাক্কা কেলো ছিল স্যর। এরপরে আমার স্বপ্নের ডকুমেন্টারিতে যেটা নাকি ঠিক ওই বিবিসি ডকুমেন্টারির মতোই দেশবিরোধী, তাতে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তোলা আর তার পরে কাশ্মীরী মানুষজনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে হাজির হল, সে এক্কেবারে কাপড় খুলে দেওয়া সব যুক্তি।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: একটি স্বপ্নে দেখা ডকুমেন্ট্রারি এবং তার বর্ণনা, পর্ব ১ 

যাই হোক আমি তো কাশ্মীরে জমি কিনব মানে কিনতে পারব জেনেই খুশি, হবা, গবারাও খুশি। কিন্তু স্যর আমাদের জমি কেনা হয়ে ওঠেনি, আমি এই একটা দুষ্টু চ্যানেলে চাকরি করে জমি কেনার পয়াসা জমা করতে পারছি না আর হবা গবাদের তো চাকরিই নেই। কাশ্মীর গেল তারপর এল কৃষি বিল আর কৃষক আন্দোলন, সেই লাঠি, টিয়ার গ্যাস, রস্তায় গজাল পুঁতে আন্দোলন আটকানো। উফফ ভাবুন একবার খুঁড়ে খুঁড়ে ব্যথাগুলো বার করছে, বিল পাস করে বিল ফেরত নেওয়ার মতো ব্যথা, মানে এ ব্যথা কী যে ব্যথা বোঝে কি আন জনে? বেশ করেছেন এইসব দেশবিরোধী ডকুমেন্টারি ব্যান করেছেন, আরে বাবা অতীতের দিকে তাকাতে হবে কেন? অতীতের দিকে তাকায় দুষ্টু লোকজন, ২০০২-এ গুজরাতে যা হয়েছে তা তো হয়ে গিয়েছে, তাহলে অতীত ঘেঁটে হবেটা কী? ডকুমেন্টারি তে সব্বাই বলছে জাস্টিস চাই? কীসের জাস্টিস? বিলকিস বেগমকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, খুন করা হয়েছিল তাঁর আত্মীয়স্বজনদের, খুনের প্রমাণ মেলেনি, তার ওপর বিজেপি নেতা তো খোলসা করে বলে দিয়েছেন যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা সব সংস্কারী ব্রাহ্মণ, এসব পাপে তাদের জেলে পচে মরতে হবে নাকি? তারা কি স্ট্যান স্বামী? খ্রিস্টান ফাদার? তাকিয়ে দেখুন গুরু রাম রহিম, ধর্ষণ, খুনের দায়ে অভিযুক্ত নয়, শাস্তি পেয়েছে, অথচ মাঝে মধ্যেই প্যারোলে বেরিয়ে আসছে, ১৫-২০টা বিলাসবহুল গাড়ির কনভয় নিয়ে আশ্রমে ফিরে ভক্তদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, এটাই তো আপনার সবকা সাথ, সবকা বিকাশ তাই না স্যর? তো সংস্কারী ব্রাহ্মণদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে এত কলরব কেন? যারা মারা গেছে, মানে যাদের খুন করা হয়েছে, তাদের হত্যাকারীদের কেন সাজা দেওয়া হল না? এটা একটা প্রশ্ন হল, আমাদের হুজুরে আলম এত প্রশ্ন শুনবেন কেন? তাই স্রেফ ব্যান করে দিয়েছেন, বাতিল করে দিয়েছেন একটা ডকুমেন্টারিকে। অমনি প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, জামিয়া মিলিয়া, জেএনইউতে দেখানো শুরু হয়ে গেল, ২০২৪ এ আবার ফিরে আসতে দাও আমাদের চৌকিদার সাবকে, তারপর দেখবে, তেড়েমেড়ে ডান্ডা করে দেবে ঠান্ডা। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: একটা আত্মহত্যা, বেকারত্ব আর ছাঁটাইয়ের গল্প   

কিন্তু চৌকিদার সাব, সমস্যা একটাই, ওই যে এই আকালেও স্বপ্ন দেখা মানুষজন, যারা আবার প্রশ্ন তুলছে, ২০০২-এ ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধেতে আপনার ঘরে বসে রাজ্যের প্রত্যেক পুলিশ অফিসারকে বলে দেওয়া হয়েছিল, লেট ইট হ্যাপেন, আপনি স্যর বলেছেন, আদালত বা তদন্তের রিপোর্টও বলছে যে সেই বৈঠকের কোনও প্রমাণ নেই। যিনি সেই বৈঠকের হাজির থাকার কথা নিজেই বলেছেন, তিনি, সেই আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট তো নিজেই জেলে, সত্যিই তো কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু ডকুমেন্টারি দেখাচ্ছে, বিশ্বশুদ্ধ মানুষ জানেন ২৮ ফেব্রুয়ারি রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়েছিল, সব্বাই জানে সেদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নামে অস্ত্র নিয়ে মিছিল বেরিয়েছিল, তারা ঘর বাড়ি জ্বালাচ্ছিল, খুন করছিল বেছে বেছে, এও তো সবাই জানে, আগের দিনের বৈঠক না হলে, রাজ্য সরকারের সায় না থাকলে এসব হওয়া সম্ভব ছিল? এবং সেদিনের সেই তীব্র ঘৃণার মেরুকরণের ফসল আজও বিজেপি ঘরে তুলছে, মিঃ চৌকিদার, আপনার কাছ থেকে এই তথ্যচিত্র সেই বর্বরতার জবাব চাইছে আর আকালে স্বপ্ন দেখা মানুষ জনের হঠাৎই মনে পড়ে গেছে নরোদা পাটিয়ার বর্বরতা, বিলকিস বেগমের ওপর নারকীয় অত্যাচার, দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে ছাই হয়ে পুড়ে যাওয়া দাওয়া মানুষের হাহাকার আজ হঠাৎই সামনে। 
আমি স্যর ভিতু মানুষ, স্বপ্নে যা দেখলাম, মানে ওই তথ্যচিত্র আর কী, সেটা তো কাউকে দেখাতেও পারছি না, কারণ সে তো স্বপ্ন, কিন্তু আকালে স্বপ্ন দেখা মানুষজন সেই ডকুমেন্টারি ছড়িয়ে দিচ্ছে, অন্তর্জালে বিছিয়ে দিচ্ছে সেই বর্বরতার ইতিহাস। ২০০২-এ যাদের জন্ম হয়নি, জন্ম হলেও যাদের বোঝার সামর্থ্য ছিল না, আজ তারা এই বর্বর ইতিহাস দেখছে, দেখছে ২১ বছর পরেও ইমরান দাউদ জাস্টিস চাইছে, খুনিদের জেলে পোরার ন্যায় দাবি। বিলকিস বেগম জাস্টিস চাইছে, ধর্ষণকারীদের জেলে পোরার দাবি। আপনার কাছে দুটোই রাস্তা ছিল স্যর, এক হল বিবিসির তথ্যচিত্রকে ইগনোর করা, পাত্তা না দেওয়া। দুই হল মানুষকে দেখতে না দেওয়া, ব্যান করা। আপনি দ্বিতীয়টি বেছেছেন, ঠিক করেছেন স্যর, আপনার রাজত্বে আপনারই বিরোধিতা কিন্তু সেখানেও সমস্যা, এ তো প্রাচীন কাল নয় স্যর, এখন এসব ব্যান করা কঠিন নয়, অসম্ভব। লখিন্দরের লোহার বাসরঘরে তো একট ছ্যাঁদা ছিল, এখানে সহস্র ছিদ্র, দেখছেন না কপি না খেয়েও ভোর রাতের স্বপ্নেও এসে যাচ্ছে সেই ডকুমেন্টারি, কাজেই এই ইতিহাস চাপা দেওয়া যাবে না, আজ না কাল, কাল না পরশু, পরশু নয় তো তরশু এ প্রশ্ন আপনা পেছনে পেছনেই ঘুরে বেড়াবে। দেখছেন না কংগ্রেসের অবস্থা, ক্ষমতায় নেই, দল রক্তাল্পতায় ধুঁকছে, কিন্তু এখনও মাঝেমধ্যেই তাদেরকে জরুরি অবস্থার ভূত তাড়া করে, ৮৪-র দাঙ্গা তাড়া করে বেড়ায়। স্যর বাংলায় একটা গোদা প্রবাদ আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না, কাজেই জবাবদিহি করার জন্য তৈরি থাকুন মিঃ প্রাইম মিনিস্টার, ওই গণহত্যার দায় আপনাকে নিতেই হবে, ওই গণহত্যার জবাবদিহি আপনাকে করতেই হবে, একটা ডকুমেন্টরি, কোনও এক অপাপবিদ্ধ শিশু বা রাস্তায় জন্ম নেওয়া কোনও এক আন্দোলনের বর্শামুখের সামনে পড়ে আপনাকে এই বর্বরতার জবাবদিহি করতেই হবে।         

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ধৃত মনোজিতের বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্যের চিঠি লালবাজারে
00:00
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | মহাকুম্ভের মৃ/ত্যুর সরকারি হিসেব ভুয়ো? বিবিসির অন্তর্তদন্তে ফাঁ/স চাঞ্চল্যকর তথ্য
00:00
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীক রাজ‍্য সভাপতি, ডুগডুগি হাতে নিয়ে কী বললেন দিলীপ?
00:00
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
00:00
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
03:29
Video thumbnail
Ali Khamenei | খামেনিকে মা/রা অসম্ভব কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
04:22:14
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:45:12
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীক রাজ‍্য সভাপতি, ডুগডুগি হাতে নিয়ে কী বললেন দিলীপ?
01:23
Video thumbnail
Alifa Ahmed | বিধানসভায় শপথ গ্রহণ আলিফার, দেখুন এই ভিডিও
04:28:10
Video thumbnail
Stadium Bulletin | চূড়ান্ত একাদশ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক! ব্যাট হাতে শাসন শুভমানের
19:03

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39